প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় কাজল দা আর আমি তোদের বাড়ির সামনে কু-উ কু-উ ডাকতাম। আর সেটা শুনে তুই নিশ্চিত হতি আমি এসে গেছি। দৌড়ে বের হতি। তুই একদিন স্কুলে না গেলে বুকে বসন্তের বেদনার কোকিল ডাকতো।।।
কাজল দা ছিলো আমাদের প্রেমের আমরণ সাক্ষী। তোর সাথে ঝগড়া হলেই কাজল দা’র কাছে ছুটে যেতাম। আর তার কতো কদর তখন দেখতো কে?
দু’পয়সার বিড়ি না দিলে কিছুতেই মিল করিয়ে দিতো না কাজল দা।
–
– বট গাছটার নিচে তোর জন্য কতো দিন অপেক্ষা করেছি তা কেবল ঐ বটগাছটাই জানে।
একবার তো তোর সেই জ্বর!
কাকা বাবুর সাথে ৩ ক্রুশ হেটে কবিরাজ এনেছিলাম শহর থেকে। পুরো দশ দিন তুই প্রকান্ড এক জ্বরে ভুগে ছিলি।
বট গাছটার তলায় কাজল দা’র গলা ধরে কতো কেঁদেছি ।
–
এন্ট্রাস পরীক্ষা দেবার আগেই তোর সমন্ধ পাকা হলো।
বর সরকারি স্কুলের মাস্টার। ২ টাকা বেতনে দিব্বি চলবে তোদের সংসার।
কাজল দা তোকে অনেক বুঝিয়ে ছিলো আমার সাথে পালিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু তুই কিছুতেই রাজি হলি না…
আরেহ্ —
রাজি হবি কি করে রে। তুইও হয়তো বুঝে গিয়েছিলি ২ টাকায় দিব্বি ভালো থাকবি তুই।
তোকে হারিয়ে কি কষ্টে ছিলাম তা কেবলি বটগাছ টা আর কাজল দা’ই জানতো। এন্ট্রাস পাশ দেবার পর মা অনেক চেষ্টা করেছিলো বিয়ে করানোর। তুই হয়তো মিছে ভালোবেসে ভুলে গেছিস। কিন্তু তোর দেয়া মিছে ভালবাসাটা ছিলো আমার জীবনের পরম পাওয়া। তাই মিছে ভালোবাসা ছেড়ে সত্য কোন বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারিনি আর…।
অন্যের বউ হয়ে গেলেও তোকে দেখবার স্বাদ আমার এতো টুকুও কমে নি।
–
দেখতে দেখতে ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলো। পারার সেই ছোট্ট স্কুল টার মাস্টার আমি।
বড্ড আফসোস হয় তখন যদি মাস্টার হতে পারতাম তোকে হয়তো ২ টাকার লোভে অন্য একজন কে বিয়ে করতে হতো না।
কাজল দা আর নেই রে। দূরন্তি ক্যানসারে হারিয়ে গেছে দূরে বহুদূরে।
এখন বড্ড বেশী তোকে দেখতে ইচ্ছে করে। আমার মাথার চুল পেকে গেছে।
আচ্ছা তোরও কি একি অবস্থা?
এখনো বট গাছটা আছে। লিখা আছে তোর আর আমার নামের প্রথম অক্ষরটা এখনো…।
যেটা তুই আর আমি লিখেছিলাম। শুধু মাঝখানের যোগ চিহ্ন টা নেই।
আর থাকবে কি করে?
মিথ্যে ভালোবাসার কাছে নিজে কে বুঝি সপে দিয়েছে।
এখনো প্রতি দিনি বট গাছটাকে দেখি শুধু তোকে দেখি না। বৃদ্ধ সময় বড় চশমার লেন্সে শত কষ্টে এটে রেখেছে তোকে শেষ দেখার সে সময়…।
লেখক পরিচিতি : মিসবা তুহিন ; জামালপুর,দেওয়াগন্ঞ্জ, বাংলাদেশ।গল্প লিখি। অব্যক্ত যন্ত্রণা, হাসি–কান্না,প্রেম–বিরহ,বাস্তবতার আলোকে কথামালা গাঁথি। ভালো লিখি কিনা মোটেও ভাবিনা। সাহিত্যিক হবো কিনা জানি না। তবে লিখে যাবো আমৃত্যু…।
বিঃ দ্রঃ লেখাটি মন_ও_মৌসুমী র #ত্রিমাসিক_লেখা_প্রতিযোগিতার (জানুয়ারি ,২০১৯) এর একটি Entry .
ফলপ্রকাশ জানুয়ারি ,২০১৯ এর দ্বিতীয় সপ্তাহ , পড়তে থাকুন -যোগাযোগ বজায় রাখুন #মন_ও_মৌসুমী র ওয়েবসাইট এর সাথে।
[…] হাসি কে প্রতিবন্ধী!! চোখ-গেলো বেলা শেষে প্রতীকের দুঃখ| অনুগল্প জীবনের গল্প […]