জাপান ভুমিকা :পর্ব ১ (একান্ত ব্যাক্তিগত )

2
2507
Photo By M K Paul,Kyoto,japan

ছোট থেকেই মা ঘেঁষা ,বকবক করে কারোর মাথা যদি আজ খাই,সে হলো মা। তা এরকম মা ঘেঁষা ঘর কুনো মেয়ে ,৪ বছরের হোস্টেল জীবনেও আড়াই বছর ২ ঘন্টা ২০ মিনিট -৬৩ কিলোমিটার ( সেই গড়িয়া থেকে ইছাপুর ) দৈনিক যাত্রা বেশি পছন্দ করেছে ,কারণ তার ওই বাড়ি ভালো লাগে।সে দিনের কয়েক ঘন্টা ঘুমোতে আসার জন্যই হোক না কেন।
এর পর চাকুরী জীবনের প্রথম ধাপে , কিছুতেই কলকাতা যেন না ছাড়তে হয়, তার জন্য দ্বিগুন মাইনের Honeywell র চাকরি হাতে পেয়েও অবিরত অফ-ক্যাম্পাস দিয়ে গেছে যাতে চাকরিটা কলকাতাতেই জোটে।অগত্যা Cognizant .সেখানেও কোনো বিরল স্বভাব দেখতে সে ইচ্ছুক ছিল না। যেখানে সহ-কর্মী দের বিদেশ যাত্রা র জন্য লড়তে ছাড়েনি, সেখানে সে কখনো তার চিন্তাধারা তেও , ঠাঁই দেয়নি onsite তথা বিদেশযাত্রা। এক সময় ম্যানেজার পর্যন্ত অবগত হন , আর তার উক্তিতেই বলি “তুই তো মা কে ছেড়ে যাবিনা ,তাই তো ” .যথারীতি হাসি মুখে সম্মতি।

এই সেই ঘর কুনো, কুয়োর ব্যাঙ ইত্যাদি ইত্যাদি , যা বলে তাকে তার বন্ধুগণ খেপাতো, অবশেষে শহর ছাড়লেন, চাকরিও। প্রথম প্রথম ঝটকা টা বেশ জোরেই লেগেছিল , মিথ্যে বলে লাভ নেই, রান্না জানেনা, এক থাকা জানেনা , একান্নবর্তী পরিবারে হেসে খেলে কাটানো জীবন কেমন যেন একটা একলা -একাকীত্বের মোড় নিল। তা বেশ।
নতুন শহরে ,মুম্বাই , দু একমাসে আবার একটা চাকরি।চলে যাচ্ছিল। তারপর , কন্যা , র তথা কথিত চাকরির অবসান। না , না , অনেকে অনেক ভাবে বোঝালো , কেউ কেউ জিগ্যেস ও করে বসলো ,কারণ কি ?হাহা। কারণ ছিল , স্বাধীনতা। কেমন যেন জীবন বদ্ধ হয়ে উঠেছিল। এতো আর দশটা পাঁচটার চাকরি ছিল না। যাক সে কথা।
তথাকথিত চাকরি চলে গেলো, আজ আট বছর পরেও ,সে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে , হ্যাঁ ,অবশ্য ই টাকার মূল্যটা সে পরিমান না হলেও ,স্বাধীনতা তার হাতের মুঠোই।

এবার আসল কথাই আসা যাক, যার জন্য এতো ভনিতা। মানুষ টা একটু একগুঁয়ে ,এরে ,রকচটা। তার যা বিশ্বাস, তার যথাযত যুক্তি সে পকেটে নিয়ে ঘোরে।
যেমন ধরুন, আজ তার সব থেকে প্রিয় জায়গা তার গ্রামের বাড়ি ,প্রিয় শহর কলকাতা। হ্যাঁ , হয়তো শেষ জীবন পর্যন্ত মুম্বাইতেই তার আস্তানা। মুম্বাই কেও আজ তার বেশ লাগে।তবে সেই বেশ লাগাতে , তার ৮-৯ বছর লেগে গেলো।কেউ যদি তার গ্রাম, তার শহর নিয়ে বাজে বলে, সে রাজনীতি -উন্নতি -শিক্ষা যাই হোক না কেন,সব সময় প্রতিবাদ না করলেও ,ভেতরের মনটা কখনো তাকে সায় দেয়না তালে তাল মেলাতে। তেমন ই তার দেশ। হ্যাঁ জানি , অনেক অসুবিধা,অনেক নোংরা ,আরো আরো অনেক অনেক কিছু ঠিক অন্য উন্নত দেশ গুলো র মতো নয়। তবু।

যে শহর ছাড়তে ভয় পায় , তাকে যদি দেশ ছাড়তে হয় , হোক না কয়েক মাস বা বছর। তার কাছে সেটা এক দুঃস্বপ্ন সমান।

হ্যাঁ , এটাই ঘটে যখন জানতে পারে তাকে জাপান যেতে হবে। ঠিক কতদিন মনে নেই, তবে প্রায় একমাস, দুপুরে রাতে , ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠেছে, নিজেকে জাপানে অনুভব করে। জানি হাস্যকর লাগছে, তা বৈকি। এর পরের দিন গুলো চলেছে মানসিক ভাবে নিজেকে বোঝাতে , যেতে হবে , আজ নিজের জন্য নই (নিজের হলে কোনো দিনই কেউ তাকে বিদেশ আনতে পারতো না), ৮ বছর আগে যার জন্য শহর ছাড়া ,তার জন্য।মানুষ টি যদিও তাকে কথা দিয়েছে এই প্রথম এই শেষ।

এতক্ষননে নিশ্চয় বোধগম্য হলো, জাদুঘরে রাখার মতো মানুষ টি কে ! হা হা। হ্যাঁ আমি, একটু পাগল। যুগের সাথে আমার মত মেলেনা। আর না আমি মেলাতে চাই;তাই আমি পাগল।আমার মায়ের ভাষাতে ও আমি পাগলী।

Kolkata Airport,26th Feb,2018

জাপান যাত্রা শুরু হয় ২৬র ফেব্রুয়ারী,২০১৮ ,তার এক সপ্তাহ আগে থেকে আমার ঘুম খাওয়া প্রায় বন্ধ। কান্না পেত। কাঁদতাম ও  লুকিয়ে।সময় শেষ। রাত দুটো র  ফ্লাইট ,কলকাতা থেকে ব্যাংকক। প্রায় ৯টা ছোট বড়ো ব্যাগপ্যাক নিয়ে হাজির এয়ারপোর্টে। কন্যা তো আনন্দে অস্থির, বাবাকে পেয়ে। আর আমার ঠিক অবস্থা টা আমি নিজেও বুঝতে পারছিলাম না শেষমেশ।  ভারতের টাইম এ ৪.৩০ আর ব্যাংকক-র ৬  টা ,পৌঁছলাম ব্যাংকক এয়ারপোর্ট। খুব একটা ভালো অভিজ্ঞতা বলবো না। কারণ অনেক কিছু drawback বা অসুবিধা ছিল এয়ারপোর্ট এ ব্যাবস্থাপনায়। এক কোনো ঘোষণা আন্তর্জাতিক ভাষায় হচ্ছিলো না , আর সামান্য জল কিনতে গেলেও Thai Currency দরকার লাগছিল, যা সে মুহূর্তে আমাদের কাছে ছিল না। ব্যাংককের সময় অনুযায়ী ৮ টা র আমাদের ৬:৩০ এ THAI Airways উঠে বসলাম।ছাড়তে ছাড়তে ৯ টা। শরীর-র ক্লান্তি কখন যেন মন কে আবছা করে দিয়েছে।কেটে যায় ৫:৩০ ঘন্টা।নামলাম Kansai International Airport , তখন জাপান সময় দুপুর ৩ টা ,ভারতে সকাল ১১:৩০ ( ৩:৩০ ঘণ্টা এগিয়ে জাপান ) .আমাকে আর মেয়ে কে আলাদা করে দেওয়া হলো ভাস্কর , আমার Husband র থেকে, কিছু সরকারি কাজ,হ্যাঁ , মুহূর্তে আমার কার্ড (Residential Card ) চিত্রসহ ,আমার হাতে। অনেক কষ্টে এ মাকে ফোনে পেলাম, আর কি !  চোখের জলে ঝাপসা ঝা চকচকে এইপোর্ট র সব আলো

Kansai International Airport,Osaka

আগে থেকেই গাড়ি বলা ছিল। শুরু হলো যাত্রা,  ওসাকা থেকে কিয়োটো  (Osaka to Kyoto ). গাড়ি ছুটতে থাকলো, প্রথম ৫ মিনিটে গাড়ি ছুটলো সমুদ্র -র ওপর দিয়ে। অনেকটা মুম্বাইর Vashi ব্রিজ র মতো ,কিন্তু এই ক্ষেত্রে সমুদ্র ওপর দিয়ে আমরা ১৫ মিনিট র ওপর চলতে থাকলাম। জাপান নিয়ম অনুযায়ী,প্রতি ১০-১৫ মিনিট এ গাড়িটা থামছিল এক একটা স্টপ এ ,আর চালক নেমে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে দিছিলো, কেউ যদি টয়লেট যায় বা কিছু কিনে খায়। সেই ৫ মিন এ দরজা খোলা তে বেশ বুঝছিলাম কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। ৫-৬ ডিগ্রী হবে। দুদিকে যা দেখা যাচ্ছিলো , তাতে  যেকোন কেউ একবারে বলবে Well-Planed-Clean-City .মাঝে মাঝে মুম্বাই র সাথে মিল পেয়েছিলাম নির্মাণেদিক থেকে , তবে  বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর মতো পরিচ্ছন্নতা। দু ঘন্টার যাত্রা তে কোথাও চোখে পড়েনি ত্তঁচলাকুড়।

On the way, Osaka to Kyoto, via car

জাপানের রাত ৮:৩০ , আমরা পৌঁছায় ,Shugakuin International House ,যেখানে আগে থেকেই ভাস্কর এর দুই সহকর্মী মহিলা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একজনের নাম তারাসেভা (Taraseva), অন্যজনের নাম আর জিগেস করা হয়নি । একজন ইংলিশ বোঝে না আর একজন ভাঙা ইংলিশ এ অনেক কিছু বোঝালো। Room No :B ৫০৪। আমাদের আগামী কিছুদিনের ঘর।

Shugakuin International House, Kyoto

দুটি ঘর -রান্না- হল -টয়লেট-বারান্দা ।৫ তলার এই হাউস টার অনেক গুলো Wings .ব্যবস্থাপনা অনেকটা হোটেল সমান।দীর্ঘ লবি , common room এ পিয়ানো-টেলিভিশন  আর খেলার ঘর এ অনেক অনেক বই আর টেবিল টেনিস। আমাদের রূমটা ফ্যামিলি রুম, তাই যথাযত সব সুবিধা মজুত, টেলিভিশন  ছাড়া (যার খুব একটা প্রয়োজন ও এখানে অনুভব হয়না ) .

Shugakuin International House :Room No 504

প্রথম দিনে আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ induction ওভেন,কারণ আমরা সব বাসন এ  গ্যাস সুবিধাজনক।তাই সেই রাতেই দৌড়োতে হলো ,চাটু খুঁজতে। পেলাম ,না  সেঁকে রুটি খাওয়ার প্রথম দিন। খুব এ বাজে একটা রুটি।কোনো ক্রমে আর কি। এর পর আর কি। লেপমুড়ি আর ঘুম।

>>  পরবর্তী পৃষ্ঠা : জাপান :পর্ব ২

                                             পর্ব ১ :CopyRight M K Paul, March,2018

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here