<< জাপান পর্ব ৬ ২৬শে মার্চ থেকে ১ম এপ্রিল
যবে থেকে এসেছি , প্রায় যখন তখন বৃষ্টি। প্রথম প্রথম ঘাবড়ে গেছিলাম , কারণ বলা নেই কওয়া নেই সকালে উঠে দেখি মুখ ভার করা মেঘ আর একটু পরেই বৃষ্টি। ঠান্ডা কম তো দূর, দিন দিন বাড়ছে। গত একমাসে গড়ে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির কাছাকাছি। এমন ও দিন হয় যে ঘুরে বেরিয়ে যখন ফিরি তাপমাত্রা ৩ এ নেমে যায়। হাত যেন হিম হয়ে যাওয়ার জোগাড়। বৃষ্টি আমার পছন্দের নয়। বৃষ্টি ভালো লাগে অলস দিনে , সন্ধ্যেবেলা যখন প্রিয়জনেরা বাড়িতে থাকে , কোনো কাজ নেই , তখন। এই সক্কাল সক্কাল বৃষ্টি দেখলে ভারি মেজাজ গরম হয়। প্রথম যেদিন বৃষ্টি হয়েছিল এখানে এসে , সকাল ৭ টাই বর্ষাতি- ছাতা কিনতে বেরোতে হয়েছিল, মেয়ের জন্য। কি আপদ। এখন আমরা অনেকটাই স্থায়ী, মানসিক ভাবে। কোথায় কি আছে ? কোন দিন কি রাঁধবো ? কি খাবো? কোন রাস্তায় কি আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর কখন বৃষ্টি হবে , কবে মেঘ এসে জুড়ে বসবে আর কখন সূর্য হাসবে , সেটাও বেশ বুঝে গেছি। আরে মশায় , সত্যি বলছি , মজা নয়। শুনতে বোধহয় কানে কেমন লাগছে , বিশেষ করে ভারতীয় হলে তো বেশিই কানে লাগবে। অন্য দেশের বাসিন্দাদের কথা আমি জানিনা ,তবে, আমাদের দেশে আবহাওয়াবিদ যদি পূর্বাভাস দেয় যে অমুক দিনে ঝড় হবে , বৃষ্টির সম্ভাবনা , এতো বয়েসে খুব কমই (৫%) হবে তা মিলতে দেখেছি। কিন্তু এটা জাপান ,বুঝলেন। মোবাইলে এখন রোজ চেক করি , আগামী এক সপ্তাহের যা আবহাওয়া পূর্বাভাস থাকে তা কেমন যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় , ঠিক আমাদের দেশের উল্টো। গত দেড় মাসে ২% ও ভুল দেখিনি। নিজের দেশের আবহাওয়াবিদ এর গণনাকে হেয় করছিনা , কিন্তু যে ধারণা ছিল , যে বোধহয় এভাবেই পূর্বাভাস হয় , ঠিকঠাক কখনো মেলেনা , সেই ধারণাটাকে একদম পাল্টে দিলো জাপান। আমার বর জাপানীসদের খুব প্রশংসা করে , আমার বাপু গা জ্বলে মাঝে মাঝে। বেশির ভাগ প্রশংসা ওদের কাজ ,উৎসর্জন ,একাগ্রতা আর কাজ করার মানসিকতা নিয়ে।আমি বেশিরভাগ সময় নিজের দেশের গান এ বেশি গাই , যেখানে যুক্তি দাঁড়াইনা সেখানে অজুহাত দিয়ে জেতার চেষ্টা করি বৈকি। কিন্তু মনে মনে জানি , বা এখন বুঝতে পারি , জাপানীস রা কেন এতো এগিয়ে। অনেক হলো জাপানীস আর জাপানের প্রশংসা।
আমার মতো আমার বর বেশ শৌখিন। অফিস থেকে আসার পথে প্রায় এদিক ওদিক যখন ঘুরে আসে , আর নিয়ে আসে বৌ মেয়ের ভালো লাগার কিছু উপহার। আমরা অনেক জায়গা ঘুরেছি গত কিছু সপ্তাহে , গিনকাকুজির সামনের রাস্তায় চোখে পড়েছিল অনেক দোকান , জাপানীস ঘর সাজানোর জিনিসের,পুতুল আর ব্যাগ এর। প্রচন্ড দাম হওয়াতে , পছন্দ হওয়া সত্ত্বেও , মুখ ঘুরিয়ে বলেছিলাম , না না , এ আমার পছন্দ নয় , এসব নিয়ে কি হবে। শুধু একটা মোমেন্টো কিনে এনেছিলাম , আমাদের বাজেট অনুযায়ী। মনে হয় ঠিক বলবনা , জানতাম ভাস্কর বুঝতে পেরেছিলো। তাই এই সপ্তাহে একদিন নিয়ে হাজির হলো অনেকে গুলো জাপানীস কার্টুন চরিত্রের পুতুল মেয়ের জন্য আর আমার জন্য একটা জাপানীস পুতুল show piece .এখন সেই পুতুল আমার এখানকার ঘরেও সুন্দর করে সাজানো। নিয়ে যাবো মুম্বাই , আমার ঘরে ,আমার স্মৃতি হয়ে থাকবে। এমনিতেও ভারতের বা বাইরে যেখানে গেছি ভাস্করের সাথে, একটা অতি ক্ষুদ্র জিনিস (বিশেষ করে Show piece ) হলেও ,কিনেছি ,যারা এখন আমার showcase এ সাজানো। অনেকে ভাবে কিসব ছাই ভস্স showcase ভর্তি , কিন্তু ওগুলো সবই আমাকে স্মৃতিচারণ করায় , আমার খুব ভালো ভালো মুহূর্ত গুলোর।
মেয়ের পুতুল |
মায়ের পুতুল |
দিন যত যাচ্ছে , কেমন যেন ভালো লেগে যাচ্ছে শহরটাকে , এতো সহজে তো মুম্বাইকেও আমি ভালোবাসতে পারিনি। এতো সৌন্দর্য্য আমাকে যেন টানে। প্রায় চোখে পরে কিমোনো পরিহিত জাপানীস মহিলা , সেজে গুজে যেন শহরকে মায়াময় করে রেখেছে , সাথে বসন্তের সদ্য ফোঁটা চেরি ফুল। আমার ঘরের সামনের রাস্তায় চার পাঁচটা গাছ ধীরে ধীরে অল্প সাদা থেকে তুলোর মতো সাদাফুলে ঢেকে গেলো এক সপ্তাহে। রোজ সকাল বিকেল ঘুম থেকে উঠে আমাদের যেন কাজ হয়ে দাড়িয়েছিল, ফুল গুলোর পরিণতিকে লক্ষ করা। অপূর্ব সে দৃশ্য। শুনেছি এই সময় মানে বসন্ত নাকি জাপান ঘোরার যোগ্য সময়। দেশ বিদেশ থেকে মানুষ নাকি এসময় জাপান ভ্রমণে আসে। চেরি Bloosooms দেখতে , যাকে জাপানীস ভাষায় সাকুরা বলে (Sakura ).আমার ভারি আশ্চর্য্য লাগছিলো , যা দেখতে লোকেরা দুরদুরান্ত থেকে জাপানের এই শহরে আসছে , সেই সাকুরা আমার ঘরের উঠোনে। কি ভাগ্য আমার।তাকে ধীরে ধীরে অনুভব যেন করলাম শেষের ৭-৮ দিনে।
Shugakuin Internation House -Back Side |
Sakura in Shugakuin International House, view from my window |
এই শহরটি জাপানের প্রাক্তন রাজধানী ছিল, যা আমি আমার আগের লেখাগুলিতেও উল্লেখ করেছি। যতটুকু চোখে পড়েছে , মনে হয়েছে , অনেক দিনের পরিশ্রমে তৈরি করা একটা সাজানো গোছানো শহর , ঠিক যেমন আমরা আমাদের ঘর গোছায়। অবশ্যই এর কৃতিত্ব জাপানীস দের , এই সৌন্দর্য্যকে বাঁচিয়ে রাখার। শুধু তৈরী করলেই তো হয়না , তাকে যত্নে রাখতেও তো হয়। বললাম না , অনেক অনেক কিছু শেখার মতো এই দেশ, এই শহর , এই জাপানীসদের থেকে। রাস্তার মাঝে মাঝে বসার জায়গা ,ভেন্ডিং মেশিনে পছন্দের পানীয় প্রায় ৫ মিনিট অন্তর। আমার তো মনে হয় , যদি ওই বসার জায়গা নাও থাকতো , তাও অনায়াসে যে কেউ মাটিতে বসে পড়তো , কোনো দ্বিধা ছাড়াই। কারণ জায়গা গুলো এতো পরিষ্কার , যে ঘেন্না তো দূর , যে কেউ এই পরিবেশে , এই প্রকৃতিকে উপভোগের খাতিরে যেখানে সেখানে বসে অনেক সময় অতিবাহিত করতে পারে। এটা একান্ত আমার মনের ভাবনা। যাক। কিয়োটোতে এই বসন্তে যেমন নদীর ধার গুলো চেরি ফুলে জ্বলজ্বল করছে , তেমন হাতছানি দিচ্ছে বেদনাপূর্ণ বালি এবং হাইকু-প্রণয়ক শিলায় তৈরী জেন বাগানগুলো ।এসব কিছুর সাথে এই শহর বিখ্যাত তার চা এর জন্য , বিশেষ করে গ্রীন টি। এখানে ফুড মল গুলো তে বিভিন্ন পানীয়র সাথে গ্রীন টি , লেমন টি , মিল্ক টি আরো অনেক রকমের চা আমাদের ঠান্ডা পানীয়র মতো বিক্রি হয়। ভেন্ডিং মেশিন গুলো তার ব্যতিক্রম নয়। আমরাও ব্যতিক্রম নয় , তাই অনেক বার অনেক রকমের গ্রীন টি এনে খাওয়াও হয়ে গেছে এটি মধ্যে। এর মধ্যে কোকাকোলা ব্র্যান্ডের টি আমাদের ভালো লেগেছে। এছাড়া চায়ের পাতা , বিভিন্ন মোড়কে দোকানে বিক্রি হয় , অনেক টুরিস্ট স্পটেও লক্ষ করেছি চা এর ষ্টল।
এই সপ্তাহে আগে থেকেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম আরাশিয়ামা Arashiyama যাবো। মানসিকভাবে কথাটা এই কারণে ,গন্তব্য বেশ দূরে , নতুন শহর , নতুন মানুষ আমরা , একা একা , ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে ইত্যাদি। মেয়েকে নিয়ে কোথাও দূরে ঘুরতে যাওয়া মানে খুব চাপ। তার খাবার , কাপড় , মন ভোলানোর খেলনা সব বয়ে নিয়ে যেতে হয়। ভাস্কর অনেকবার গন্তব্য পাল্টানোর চেষ্টায় ছিল কিন্তু আমি যাবোই যাবো মনোভাবে দৃঢ় একদম। জানতাম চাপ সামনে , তো কি ! এখনো এটুকু চাপ না নিলে তো আরো দূরে দূরে যাওয়ায় হবে না। শনিবার সকাল থেকে চাপা উত্তেজনা , দশবার করে ইন্টারনেট এ চেক করছি কি কি বাস যায় , কত সময় লাগে , কোথায় কোথায় স্টপ। তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার খেয়ে , বিকেলের সব কেক , মিষ্টি, চা, চিপস , ডিম্,কলা , (আসলে হাতের কাছে যা যা পাই) , সব ব্যাগ এ পুরে রওনা হলাম। জাপানীস ভিসা অফিস এ যে যে ছবি আমার চোখে পড়েছিল তার মধ্যে অন্যতম প্রধান আরাশিয়ামার ব্যাম্বো গ্রোভ।কিয়োটোর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটা শান্ত , শহর থেকে অনেকটা দূরে , একটা জেলা আরাশিয়ামা। এসময় টা এমনিতেও আরাশিয়ামা নতুন সাজে সেজে ওঠে। ফুলে ফুলে , চারিদিকে গোলাপি , চেরি blossoms.হুজ্জা নদী, ঐতিহাসিক মন্দির ও রাস্তায় নেমে আসা গাছের নীচু বৃক্ষ-আচ্ছাদিত পর্বতমালা আরাশিয়ামা কে একটি জাতীয় ঐতিহাসিক স্থান ও সান্নিধ্যের স্থান মনোনীত করেছে জাপান ।
যাত্রা শুরু।যতটা উৎসাহ নিয়ে বাঁশ বাগান দেখতে বেড়িয়েছিলাম , ততটা বেশি বোধহয় বাঁশ পেছনে লেগেছিলো আমাদের সেদিন। প্রতিপদে আমাদের মনে করাচ্ছিল , আমরা বাঁশ বাগান দেখতে এসে বেশ ভালো রকম বাশঁ খাচ্ছি। প্রথমে নিলাম ৫ নম্বর বাস সুগাকুইন মিচি বাসস্টপ থেকে। ভাস্কর এতো ইন্টারনেট এ রাস্তা চেক করে রেখেছে দশবার ভেবে একটু আসস্ত্ব ছিলাম , কিন্তু আমাকে ঠিক প্রমান করে , আবার আমার গুণী বর , কিছু মনে রাখেননি। দেখেছেন মোবাইলে সব জানা যাচ্ছে , আর কে কি মনে রাখে !নাও এক নম্বর বাঁশ খাও। বাস এ উঠে কিছুক্ষন পর থেকে দেখলাম তিনি একটু অস্বস্তি প্রকাশ করছেন , কেন কি , কোন বাস এর পর ধরবো , কোথায় নামবো , ঠিক বুঝতে পারছেন না। ভাব কান্ড। দিব্যি ভালো মুড টাকে দিলো চটকে। আমি বললাম কেন ?তুমি চেক করোনি আগে। যা উত্তর এলো আর আমি তার যা জবাব দিলাম , তা সব স্বামী স্ত্রীর একান্ত ব্যাক্তিগতর মতো না বলায় ভালো। হঠাৎ করে আসলে ইন্টারনেট কাজ করা বন্ধ করে দিলো। কি করি কি করি।
বাস তো চলছেই। একের পর এক স্টপ এগোচ্ছি। আমার এটুকু মনে ছিল আরাশিয়ামার সব বাস কিয়োটো স্টেশন থেকে ছাড়ে। তাই ভাবলাম চলো কিয়োটো স্টেশন। কিন্তু হঠাৎ আমার বড় উঠে পড়লো সিট্ থেকে , বললো ওঠো , আমি জিগেস করলাম এসে গেলো এতো তাড়াতাড়ি !! কে কার কথা শোনে। বাস এর সামনের দরজার দিকে হুড়হুড় করে এগিয়ে গেলো , অগত্যা আমাকেও নামতে হলো। ওমা , এতো Sanjo Kawaramachi Stop .মানে Sanjo তে আমরা। ভাস্কর বললো এখন থেকে নাকি ১৭ নম্বর ৯৩ নম্বর বাস ছাড়ে। কিন্তু যে স্টপ এ আমরা নামলাম , তাতে ওই বাস গুলো দাঁড়ায় না। জিপিএস ও কাজ করছে না। এখানে বাসস্টপ গুলোতে ইন্টারনেট ফ্রি। সেখান থেকে যেটুকু দেখলাম পাশের কোনো সমান্তরাল রাস্তায় কোনো বাসস্টপ এ ওই বাস আসবে। কিন্তু বাসস্টপ থেকে এগোলেই আমাদের ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ,রাস্তা দেখাচ্ছে না। কি জ্বালা , মনে মনে অনেক গালি দিলাম। এখানে ৩০ মিনিট দেরি হয়ে গেলো। মাথায় শুধু ঘড়ির কাঁটা চলছে , ৫ টাই যে সব বন্ধ হয়ে যায়।
Kyoto Station Busstop |
এখন এ পৌনে দুটো। চড়লাম আবার ৫ নম্বর এ। যা আধা ঘন্টা আগে পৌঁছাতাম , তা আধা ঘন্টা দেরিতে , পৌঁছালাম কিয়োটো স্টেশন বাসস্টপ এ। বিশাল বড়ো সেই বাস স্টপ। অজস্র বাস ছাড়ে। এদিক ওদিক দেখতে দেখতে দেখি ৭৩ নম্বর বাস , লেখা আছে আরাশিয়েমা যাবে। আর কি দৌড়ালাম , চড়ে বসলাম। ওমা একই একি , দ্বিতীয় বাঁশ। বাস যে পথে এলাম সে পথে উল্টো চলছে , মানে sanjo র দিকে। কি করা যাবে। হাত কামড়াচ্ছি আর কি। মন তা খুব খারাপ লাগছে। অনেক মনে জোর নিয়ে বেরোলাম আর তার এই হাল। এক ঘন্টার মতো বাস চললো , পৌঁছলাম আরাশিয়ামা।
View from the Arashiyama Busstop |
দূর থেকে টঙ্গসেক্সো ব্রিজ (চন্দ্র ক্রসিং সেতু) |
না !আসা সার্থক। বাস থেকে যে দৃশ্য দেখলাম , তা কোনো ক্যামেরা ,কোনো ফটো বা ভিডিও ধরে রাখতে পারবে না। অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ। মুখ যেন হা এ থাকলো। এতো সুন্দর ও কোনো জায়গা হয় !হ্যাঁ । মনে মনে বললাম জাপান আসা সার্থক। অনেক নাটক করেছি যাতে জাপান না আসতে হয় , কিন্তু প্রতি মুহূর্ত আমাকে ভুল প্রমান করছে। সামনেই চলমান এক বিস্তৃত নদী, Katsura নদী , আর তার ওপর দিয়ে Togetsukyo সেতু।পাহাড়ি নদী নিজের ছন্দে চুপ চাপ বয়ে চলেছে , চারপাশে যেন পাহারায় দাঁড়িয়ে উঁচু খাড়া পাহাড়। পাহাড় গুলো সেজে উঠেছে , বিভিন্ন রঙে , লাল, সাদা, সবুজ, গোলাপি। নদীর ধার দিয়ে সাদা-গোলাপি ফুলের গাছ যেন আরো শোভা বাড়াচ্ছে ।এলাকাটির প্রধান আইকনটি হল টঙ্গসেক্সো ব্রিজ (চন্দ্র ক্রসিং সেতু) (নাম টা যে সার্থক তা বুঝেছিলাম ফেরার পথে , পূর্ণিমার চাঁদ ঠিক ব্রিজের মাঝ খান দিয়ে , নদীর ওপর জ্বলজ্বল করছিলো ), যা হজু নদীর উপর প্রবাহিত হয়।জাপান এর Heian সময়ের (794-1185) সময় নির্মিত, কিয়োটো জাপানের রাজধানী যখন, এটি 1930 সালে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল।
টঙ্গসেক্সো ব্রিজ (চন্দ্র ক্রসিং সেতু) |
রাস্তার চারপাশে অনেক রকম খাবার দোকান, ভিড় আর ভিড়। বিভিন্ন রকম আইসক্রিম ,রাইস বল ,আরো অনেক কিছু , যার নাম আমার জানা নেই। নেমে গেলাম নদীর পারে , ছুঁয়ে দেখতে তাকে। পাহাড়ি নদীর সাথে আগেও আলাপ হয়েছে আমার নামচি ,সিকিমে। সে ও ছিল খুব সুন্দর ,স্রোতময় কিন্তু এতো দীর্ঘ নয়। অনেক জাপানীস বিদেশি পর্যটক পিকনিক করার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে নদীর পাড় ধরে বসে। এগিয়ে চললাম সেতুর দিকে। এটিও বিখ্যাত সেতু এখানকার। কিচকিচ ভিড় , কিন্তু কোথাও কোনো আওয়াজ , চিৎকার চেঁচামেচি নেই। শান্ত পরিবেশ কিন্তু জমজমাট। অনেক অনেক ফটো তুললাম।সেতু পেরিয়ে অন্য দিকে বসার অনেক জায়গা করা , সেখানে কিছুক্ষন বসলাম।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পর্যটকদের ভিড় |
Sakura in Arashiyama |
এই নদীর অন্য দিকে কিছুটা জায়গায় , যেখানে স্রোত শান্ত , সেখানে রয়েছে পর্যটক দের জন্য boating এর আয়োজন। না এবার করা হয়নি। কারণ মাথায় ছিল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত মন্দির দেখার উদ্দেশ্য। জানতাম কিছু খোলা থাকবে না ৫ টার পর।
আশ্চর্য্য ভাবে ভাস্করের মোবাইল এ ইন্টারনেট এর উঁকি। গন্তব্য টেনু-জি, কিয়োটোর ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলির একটি এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী একটি স্থান।জিপিএস রাস্তা দেখালো সামনের বাসস্টপ থেকে দ্বিতীয় স্টপ। দৌড়ে গেলাম বাসস্টপে। বাস ছেড়ে দিলো। জায়গা পেলাম না। রাস্তায় লাইন এ দাঁড়িয়ে আরো ৫-৭ মিনিট। ঘড়িতে ৪:১০ বিকেল। মনে আনন্দ হলো, যাক মন্দিরটা দেখতে পাবো অন্তত। কে জানতো তৃতীয় বাঁশ ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাস এলো চড়ে বসলাম। হু হু করে বাস এগোচ্ছে , বাসস্টপ মনিটর এ শো করছে ঠিকই কিন্তু বাস থামছে না। দ্বিতীয় স্টপ চলে যেতেই টনক নড়লো। দিলাম বাস এ সিটের পাশে থাকা পুশ (Push Button)বাটন টিপে। তৃতীয় স্টপ এ বাস থামলো। একি , আমরা কোথায়?মানুষের দেখা নেই , একদম ছোট গলি ,শুধু বসতি। বুঝলাম খেয়ে গেছি , বাঁশ। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এর চারপাশ যে এরকম হয়না আগের কয়েক সপ্তাহের অভিজ্ঞতা তে জানা আছে। মাথায় জোর দিয়ে বুঝতে বাকি থাকলো না , ইন্টারনেট আমাদের ভুল পথ দেখাতেই অন হয়েছিলেন , মানে যাতে আমরা গুগলি খায় আর কি। বুঝলাম যে দিকে যেতে হতো ঠিক তার উল্টো দিকের দু স্টপ নয় তিন স্টপ চলে এসেছি। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একটা বাসস্টপ এলো, কিন্তু বাসের দেখা নেই। ঘড়িতে ৪:৩৫। কান্না পাচ্ছে। এতো দূরে এসেও দেখতে পাবো না। ভাস্কর সান্ত্বনা বাক্য উচ্চারণ করছিলো , যে আমরা আরো একবার এসব এখানে। বাস এলো , আবার পৌছালাম সেই সেতুর কাছে। সেখানে ওই মন্দিরের কথা জিগেস করতেই সবাই বললাম , এই তো কাছেই , হাঁটা পথে। মনে যা হচ্ছিলো না !!যত রাগ শুধু ভাস্করের ওপর। সত্যি আর টাইম পেলো না ফোন অন হবার। আবার বাস নিয়ে শেষ মেশ পৌছালাম, টেনরিজি /তেনিউজি (Tenryuji ) তে। ঘড়িতে ৫ টা বাজছে আর আমরা গেট এ ঢুকছি , কি সমাপতন, ভাবা যায় !ভাস্কর বললো আজ আর হলো না। তাও আমি বললাম জিগেস করো না , যাওয়া যাবে নাকি। উত্তর এলো হ্যাঁ। হ্যাঁ ? শুধু গার্ডেন খোলা ৫:৩০ অবধি কিন্তু ব্যাম্বো গ্রোভ আর বাকি মন্দির যাওয়ার রাস্তা ৫ টাই বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সই।ভগবান মুখ তুলে চাইলেন আর কি !!
প্রবেশ মূল্য ৫০০ ইয়েন মাথা পিছু। ভেতরে ঢুকতেই নজরে পড়লো গিনকাকুজির মতো সাদা বালুর কাজ। দারুন দারুন ফুলের গাছ। মন্দির , যা বন্ধ হয়ে গেছিলো। মনোকামনা পূর্তির ছোটো জলাশয়।চোখে পড়লো ,বেগুনি গোলাপি ফুলের ওপর। এখনো পর্যন্ত এই প্রথম এদের সাথে আলাপ। মন্দিরের পাশ দিয়ে ওপরে উঠে ঘুরে দেখার রাস্তায় তারা শোভাবর্ধন করছিলো। দেখা হলো উইপিং চেরির সাথেও। একটা মায়াময় পরিবেশ। সামনে ছিল LOVE pond , যত ক্ষনে তার কাছে এসে পৌছালাম , ৫:৩০ ঘড়িতে। পেছন থেকে মন্দিরের এক লোক এসে সবাই কে বাইরে চলে যেতে আদেশ দিলো। লভ পন্ড নাম , তার আকারের জন্য। ওপর থেকে দেখলে সেটা heart এর আকার ধারণ করে। ওপর থেকে সেটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু নিচে দেখে বুঝতে পেরেছিলাম হার্ট এর ভাঁজ টা ঠিক কোথায়। যথারীতি যত পারলাম ফটো নিলাম , কিন্তু ভালো ভাবে নেবার সময় আর হাতে ছিল না।
ছোট করে মন্দিরের ইতিহাস :
সাদা বালুর কারুকার্য |
—————————————————————————-
Tenryuji(天龍寺, টেনরিয়জি)Temple (南禅寺)
—————————————————————————————————–
টেনরিজি (天龍寺, টেনরিয়জি) কিয়োটো আরাশিয়মা জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। শহরটির পাঁচটি বিখ্যাত জেন মন্দিরের মধ্যে এটি প্রথম স্থান অধিকার করে, এবং বর্তমানে এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে নিবন্ধিত। টেনরিজি জাপানি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর রেনজাই জেন সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজস্ব স্কুল প্রধান মন্দির।শাসক শোগুন আশিকগা টাকুজি 133২ সালে টেনরিয়ী নির্মাণ করেন। টাকুজি মন্দিরকে সম্রাট ডোগোকে নিবেদিত করেছিলেন, যিনি সবে মাত্র মারা গেছেন।
আমার দেখা মায়াময় টেনিউজি |
টেনরিয়িজের ভবনগুলি বারবার আগুন ও যুদ্ধে হেরে যায় এবং প্রধান হল (হোও), অঙ্কন হল (শয়ন) এবং মন্দিরের রান্নাঘর (কুড়ি) সহ এর বর্তমান ছোট ছোট টাওয়ারের সাথে বর্তমান হলগুলির তুলনামূলকভাবে বেশি সাম্প্রতিক( মেজি পিরিড (1868-19 1২)) .
Wish Pond |
মন্দিরের ভবনের বিপরীতে, টেনুয়েজির বাগানটি তার আসল রূপে শতাব্দী ধরে বেঁচে আছে । বিখ্যাত বাগান ডিজাইনার মুসো সোজিকি তৈরি করেছেন, যিনি কাকিডেরা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরের বাগান ডিজাইন করেছেন, সুন্দর আড়াআড়ি বাগানটি পাথর, পাইন গাছ এবং বনভূমি আরাশিমাম পর্বত দ্বারা বেষ্টিত একটি কেন্দ্রীয় পুকুর দেখায় (love Pond)।
Love Pond |
ফেরার পথে |
কি করে পৌঁছাবেন :
টেনরিউজি কেইফুুুু আরাশিয়ামা স্টেশন থেকে মাত্র পা হেঁটে , যা ছোট কৈফুউ ট্রেন (রান্ডেন নামে পরিচিত) শিয়ো-ডোরি স্ট্রিটের সাথে রওনজি / কিংকাকুজি এলাকা এবং ওমিয়া স্টেশন দিয়ে সংযুক্ত। জার সাগা-আরাশিয়ামা স্টেশন থেকে 5-10 মিনিটের একটি হাঁটা রাস্তার মধ্যেও মন্দিরটি পৌঁছানো যায়, যা কিয়োটো স্টেশনে ট্রেন (10-15 মিনিট, ২40 ইয়েন) সাথে সংযুক্ত।
প্রবেশ সময় :8:30 থেকে 17:30 (অক্টোবর থেকে শেষ পর্যন্ত মার্চ পর্যন্ত 17:00 পর্যন্ত)
প্রবেশ মূল্য :500 ইয়ান (মন্দিরের বাড়ির প্রবেশপথের জন্য অতিরিক্ত 300 ইয়েন)
অফিসিয়াল সাইট Official Site
**__**__**
মন্দির থেকে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তায় আরো একটা মন্দিরের রাস্তা দেখলাম , কিন্তু সেও তো এতক্ষনে বন্ধ হয়ে গেছে। চললাম ব্যাম্বো গ্রোভের উদ্দেশে। বাঁশ বাগান এর আসল পথ ও বন্দ হয়ে গেছে , তাই অন্য দিক দিয়ে একবার চেষ্টা চালালাম। মন্দির থেকে বেরিয়ে , বাঁ হাতের রাস্তা ধরে , ৫-৭ মিনিটে পৌঁছলাম বাঁশ বাগান তথা বিখ্যাত arashiyama bamboo groove এ।
দুপাশ দিয়ে বাঁশের ঝার , সে আর এক অন্য রকম অনুভূতি। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধে হয়ে এসেছিলো প্রায় , তাই সেভাবে ক্যামেরা এ ছবিরা সুন্দর হয়ে ফুটে উঠতে পারেনি। এপাশ দিয়ে ওপাশ দিয়ে, অনেক দৃষ্টিকোণে অনেক ছবি তুললাম। আমাদের মতো অনেক পর্যটকের ভিড় ছিল সে সময়েও। চোখে পড়লো রিক্সা চেপে জাপানীস দম্পতিকেও।
জাপানের সাগানো বাম্বো ফরেস্টে,পশ্চিম কিয়োটো প্রান্তে, বিখ্যাত হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে , যখন থেকে এটি বুমফিড-এএসকে নিবন্ধের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় সমৃদ্ধ হয়েছে। যা এটিকে অতিবহুল-ভারী ভ্রমণের তালিকাগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।এর ও কয়েক বছর আগে পরিবেশ মন্ত্রণালয় Sagano বাঁশ বনকে “জাপানের 100 Soundscapes” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে; প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি জনসাধারণকে উৎসাহিত করতে।
সেরা অভিজ্ঞতার জন্য, সকালে বা সন্ধ্যা সন্ধ্যায় বেরিয়ে আসুন এবং সপ্তাহান্তে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যান (কোনও প্রবেশ মূল্য নেই এবং এটি খোলা আছে 24/7)।
বাঁশের বন প্রবেশদ্বারের বাইরে ডানদিকে তেনইরু-জি মন্দিরের উত্তর গেট (8:30 am-5:30 অপরাহ্ন, প্রবেশ মূল্য 500 ইয়েন, প্রায় 5 ডলার), ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং কিয়োটো-গুজান-এর একটি। – কিয়োটোয়ের পাঁচটি প্রধান মন্দির একটি .।যতক্ষনে আমরা ওখানে পৌঁছায় , মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে গেছিলো , তাই দেখার সৌভাগ্য দূর থেকে হয়েছিল। অবশ্যই আগামী কয়েক মাসে , আরো একবার আরাশিয়েমা এলে , এই মন্দির আমরা অবশ্যই দেখবো।
তেনইরু-জি মন্দির |
এটি কোন কাকতালীয় নয়।জাপানে, শিন্তো (Sinto)মন্দির এবং বৌদ্ধ মন্দিরগুলি প্রায়ই বাঁশের বাগানের পাশে বা কাছে অবস্থিত থাকে, যা দেখতে খারাপ হিসাবে বিবেচিত হলেও , জাপানীসরা বাঁশকে শক্তির প্রতীক হিসাবে দেখে ।জাপানের সম্মানিত সম্রাট শৌগানের 14 তম শতাব্দীতে নির্মিত, টেনরিয়-জী দেশের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য জেন বাগানগুলির মধ্যে একটি এবং আজ জিন বৌদ্ধধর্মের রঞ্জযাই স্কুল এর সদর দপ্তর।
এসব দেখে প্রায় ৬ টা তখন ঘড়িতে , দেহ -পা কিছুই চলছে না ,এদিকে মন ভরেনি। একটা ভালো জায়গা দেখে বসে আমরা তিনজনে আগে চা খেলাম। খুব ঠান্ডা লাগছিলো। আর হাঁটা যাচ্ছিলো না। এদিকে ক্যামেরা আমার মোবাইল সব কিছুর এ চার্জ শেষ। শুধু ভাস্কর এর ফোনে একটু চার্জ বাকি। ফেরত পথে হাঁটা লাগলাম। সামনেই আরাশিয়ামা রেল স্টেশন। খুব জাঁকজমক , অনেক খাবার দোকান। দেখে আমরা ভেতরে গেলাম। ভেতরে যেতেই দেখলাম , অপূর্ব আলোর প্রদর্শনী। আসার আগে যখন ইন্টারনেটে Arashiyama রদর্শনীয় জায়গার খোঁজ নি , তখন কিমোনো ফরেস্ট বলে একটা জায়গা ছিল , যা আমাদের মাথা থেকে একদম সরে গেছিলো। মনের ফাঁকা জায়গাটা যেন ভরে গেলো।
কিমোনো ফরেস্ট |
কিমোনো ফরেস্ট , সিলিন্ডার-আকারের স্তম্ভর একটি সংগ্রহ, যা ২013 সালে পুনর্নবীকরণের অংশ হিসেবে ইনস্টল করা হয়েছিল। এটি একটি “বন” নামে পরিচিত, যেহেতু স্তম্ভগুলির মধ্যে একটি ক্লাস্টার রয়েছে ,যেখানে প্রতিটি স্তম্ভে কিমোনো (জাপানীস দের ঐতিহ্যগত পোশাক ) প্রদর্শিত হয়। 2 মিটার উচ্চ স্তম্ভ প্রতিটি এক্রাইলিক ফাইবার দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়। স্তম্ভ গুলির মোট সংখ্যা ৬০০,প্রদর্শিত হয় 32 ধরনের টেক্সটাইল নকশা , যা আরাশিয়েমা স্টেশনের দু ধার দিয়ে সাজানো। এই প্রদর্শনীর জন্য ব্যবহৃত ক্যো-ইউজেন টেক্সটাইলটি দীর্ঘদিনের দীর্ঘস্থায়ী টেক্সটাইল কারখানার কমেদাতোমি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
কিমোনো টেক্সটাইলের প্রতিটি প্যাটার্নটি এই প্রকল্পটির শিল্পী ইয়াসুমিচি মরিতা দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল। এই ইনস্টলেশনের মূল ধারণা ছিল “পুরানো ঐতিহ্যকে ধারণ করে স্টেশনের এক নতুন রূপ দেওয়া “। তিনি এই স্টেশনে একটি নতুন জীবন দিতে চেয়েছিলেন যাতে আরো মানুষ এখানে আসে এবং Arashiyama Randen লাইন ট্রাম স্টেশনে তাদের সময় উপভোগ করতে পারেন ।রাতে প্রতিটি স্তম্ভ LED বাতি দিয়ে আলোকিত করা হয়। যা স্টেশন চত্বরকে এক আলাদা রূপ দেয়। কিমোনো ফরেস্ট এর মাঝখানে ছিল ড্রাগন পন্ড , একটা ছোট্ট WISH এর জলাশয় , যেখানে পর্যটকরা এসে তাদের মনের আশা নির্দ্বিধায় ভাগ করে যান।
Dragon Wish Pond |
আমরা এগোতে থাকি আবার সেতুর দিকে , চোখে পরে সেতুর মাঝ বরাবর , নদীর বুক চিরে পূর্ণিমার উজ্বল চাঁদ। ক্যামেরা আর ফোনে আর কোনো চার্জ ছিল না ,তাই এই অতি অপূর্ব দৃশ্য আর ক্যামেরাবন্দি করা হলো না।
এখানেই সেদিনের বাঁশ শেষ হয়নি। ফেরার পথে আবার ধরি ৭৩ নম্বর বাস। বাস এ উঠতেই দেখি শুধু আমরা। না না , ভুল বাস নয় , তবে ভুল বাসস্টপ। ড্রাইভারকে জিগেস করতে জানাই , বাস টি এখনো তার আরাশিয়েমা যাত্রা সম্পূর্ণ করেনি ,অগত্যা আরও ১৫ মিনিট এদিক ওদিক ঘুরে আবার বাস ফিরে এলো সেতুর কাছে অন্য একটা বাসস্টপে , যেখান থেকে আগে আমরা বাস ধরলে ২০ মিনিট এগিয়ে থাকতাম।ব্যাগ এ আনা সব খাবারই তখন শেষ। সবাই ক্লান্ত ,আর ক্ষুধার্থ তো বটেই। আজ আমার মেয়ে অনেক অনেক হেঁটেছে। ভালো লাগছিলো ভেবে , ছোট্ট মেয়েটা সাথ না দিলে , আমাদের কি আর এসব জায়গা ঘোরা হতো ! বাস পৌছালো কিয়োটো স্টেশন , সেখান থেকে ২০৬ বাস ধরে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় ,রাতের খাবার এখানেই এক ভারতীয় রেস্টুরেন্টে। বাঙালি রেস্টুরেন্টে খেয়ে দিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা র ওপর হলো। তবে সেদিনের বাঁশ আরো একটু বাকি ছিল , কারণ খাবার পর শেষ বাস ৯:২১ মিনিটে ছিল। যা আমরা মিস করি। বাস আর তার টাইম টেবিল নিয়ে কথা নয় পরের পর্বে চলুক। এই পর্বে এটুকুই।
[…] << জাপান পর্ব ৭ ১ম এপ্রিল থেকে ১৫ই এপ্রিল […]