<<জাপান পর্ব : ৫ ১৯শে মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ
এ সপ্তাহে আমার বিল্ডিং এর চার তলায় থাকা পোলিশ প্রতিবেশী এসেছিল সন্ধ্যেবেলা আলাপ করতে। এর আগে ভদ্রলোকের সাথে আমার, ভাস্করের আলাপ হয়েছে কিন্তু আজ ভদ্রমহিলার সাথে প্রথম আলাপ। কবে আর ওলগা , হ্যাঁ স্বামী-স্ত্রীর নাম। সাথে বাচ্চা গুচা আর রোমা। রোমার সাথে আমার মেয়ের খুব ভাব। কয়েকবার খেলাও হয়ে গেছে , আর বার বার আমার মেয়ের আনন্দ উত্তেজনায় রোমা ধপাশ, মানে পড়ে গেছে।
ওলগা আর কবে দুজনেই খুব প্রাণবন্ত জুটি। ওদের ইচ্ছে আমরা ওদের সাথে সপ্তাহান্তিক কালে কোথাও ঘুরতে যায়। দেখা যাক পরিকল্পনা কতদূর এগোয়।
কবে আর ওলগা |
এই সপ্তাহ থেকে আমার মেয়ের বসন্ত (spring) ছুটি শুরু , আগামী তিন সপ্তাহ পুরোদমে কন্যা সামাল দেওয়া , ভাবলেই কান্না পাই। আজ স্কুল যেতে জানলাম , স্কুল কুটির শেষ দিনের সাথে সাথে আজ বাবির ক্লাস টিচার এরও শেষ দিন এই স্কুলে। আমার মেয়ে একটুতেই কাঁদে। কতটা সহানুভূতিশীল ঠিক জানিনা , তবে খুব তাড়াতাড়ি লোককে আপন করে। ক্লাস টিচার এর বয়েস খুব এ কম , শুনলাম বিয়ে করে অন্য শহর চলে যাচ্ছে। মহিলা, নিজেও বাচ্চাদের উদ্দেশে কিছু কথা বলতে বলতে যেমন বার বার চোখ মুচ্ছিলেন , তেমন বাচ্চাগুলো , বিশেষ করে ছোট ছোট মেয়ে গুলো, তাদের প্রিয় দিদিমনি কে জড়িয়ে ধরছিল। আমার মেয়েরও সে কি কান্না। স্কুল থেকে বাড়ি এসেও অনেক কষ্টে তাকে ভোলাতে হয়েছে। সে দিদিমনির ভাষা বোঝে না, দিদিমনিও বাবির কথা বোঝে না , কিন্তু দু সপ্তাহে এরকম দৃশ্য সত্যি বিরল দেখা যায়।
আধ্যা তার জাপানীস বন্ধুদের সাথে |
মেয়ে খুব একঘেয়ে যেন মনে না করে , মায়ের কর্তব্য পালন করতে প্রায় নিয়ম মাফিক পার্ক এ যাওয়া শুরু করলাম সকালে। দোলনা- স্লাইডিং-ফুটবল- ছুটোছুটি- লুকোচুরি আর সব ব্যাঙের মাথার খেলা ।দিনের ১ ঘন্টা এখন নিয়ম করে পার্কে কাটে।
মেয়ের সাথে মা ও মাঝে সাথে দোলনা বা কখনো স্লাইডিং , কখনো বা ফোনের ক্যামেরা নিয়ে এদিক ওদিক ফুলের খোঁজে। পার্কের পাশেই রেললাইন, প্রতি সাত মিনিটে একটি করে ট্রেন। সাথে একটা ছোট্ট ব্রিজ আর তার নীচে দিয়ে বয়ে যাওয়া পরিষ্কার নালা। সত্যি এদের নালা দেখলে ঘেন্না তো দূর , বরং চেয়ে রই , কি পরিষ্কার , স্বচ্ছ , শুধু সাফ জল আর তার স্রোত। একদিন মেয়েকে পার্কে রেখে একটু এগিয়ে ওপারে গিয়ে কিছু গাছ ফুল পরিদর্শন ও করি। তার মধ্যে একটা ছিল লেবু গাছ , কিন্তু সে যে কি লেবু জানিনা। দেখতে পাতিলেবু আর ভেতর খুললে কমলালেবুর গঠন।কয়েকটা পেড়েও আনলাম ,চেখে দেখতে। মা গো , বিষ টক। থাকে বাবা গাছের লেবু গাছে ,আমার চাইনা। অবস্থাটা মোটেও আঙ্গুর ফল ত্বকের মতো নয় কিন্তু 🙂 .
একজনের বাড়ির বেড়া ডিঙিয়ে , না না , আমি না , আমার মোবাইল ক্যামেরা যখন সুন্দর সাদা ফুলের ছবি তুলছে ,বাড়ির কর্তা গেটএ এসে দাঁড়ালেন। না ভয় কিসের!!বললাম ফটো তুলছি , প্রথমটা কিছু বুঝতে পারেননি মনে হয় , পরে মোবাইল আর ফটো দেখাতে বেশ খুশি হলেন। মনে মনে হয়তো ভাবলেন , এই পাগল আবার কথা থেকে উদয় হলো।
পার্কের চারপাশে যারা আমাকে টেনেছিল |
দোলনা আমি অনুশক্তিনগরে ও চড়ি , কে কি ভাবলো , ভাবুক ,আমি নির্লজ্জ। কিন্তু স্লাইডিং টা এখানে এসে শুরু করেছি। বেশ মজবুত স্লাইডার , আমার ওজন যে অনায়াসে নিতে পারে বুঝেই এই প্রচেষ্টা। দারুন লাগে, কখনো কখনও মেয়ের সাথে বাচ্চা হয়ে যেতে।
এর মধ্যে আমরা কয়েকটা জাপানীস মিষ্টি ট্রাই করে দেখলাম। দুটো মিষ্টি তো বেশ ভালো ,অনেকটা কেক র মতো আর একটা আমার অতটা পছন্দ হয়নি , সেটা অনেকটা আমাদের ইডিলি র মতো ,শুধু ভেতরে মিষ্টি আর ইডলির মতো শুধু সাদা না হয়ে বিভিন্ন রঙের। নাম জানিনা খেতেও মন্দ নয় , তাই মিষ্টিমুখে দোষ নেই।
খেতে আমি বেশ ভালোবাসি , আর অনেক বছর বিয়ে হয়ে গেল ,তাই মায়ের আদরের রান্না তো আর রোজ জোটে না ,তাই নিজের পছন্দের রান্নায় আমি বেশ পটু। পটু কিন্তু নিজের পছন্দের স্বাদ অনুযায়ী। কারণ আমার রান্না অনেকের পছন্দ হয়তো হবে না। কিন্তু আমি বর – মেয়ে বেশ আমেজেই খায়। আর হ্যাঁ , আমার সব রান্না আমার মায়ের ও খুব পছন্দের।বলেছিলাম ,এখানে এসে ইনডাকশন এ রান্না করে করে রান্নার স্বাদ আর গ্যাসের রান্নার মতো হয়ে ওঠে না। যেহেতু ইন্ডাকশনের সব পাত্র ফ্লাট , অনেকটা তেল না দিলে ঠিক রান্না বাঙালির মসলাদার রান্না হয়ে ওঠে না।
এখানে এসে স্প্যাগিটি , তন্দুর গ্রীলড চিকেন , ব্রোকোলি ফ্রাই এসব খেয়ে বিকেলের সময় কাটে।নয় নয় করে রান্না ঘর বাসন পত্রে ভরে দিয়েছি। এ কদিনে কিছু কিছু এখানকার খাবার ও চেষ্টা করছি গেলার। কোনটা বেশ ভালো লাগে কোনটা একদম না।এসে অবধি এতো রকমের পাউরুটি খাচ্ছি যে বলার না। এখানে বেকিং জিনিস তা খুব ভালো। বিভিন্ন ধরণের কুকিজ , কেক , পাউরুটি বেশ ন্যায্য মূল্যে পাওয়া যায়। আর কি। আমিও বেশ ঘুড়ি ফিরি , আর পছন্দের কেক আর কুকিজ খেয়ে মজা পাই।এসে অবধি দশ বারো রকমের কুকিজ খাওয়া হয়ে গেছে।
এ সপ্তাহের আমাদের গন্তব্য নিনজানজি মন্দির বা কিয়োটো চিড়িয়াখানা। যেটা পথে আগে আসে আর কি।এবার আমরা আগে ভেবে রেখেছিলাম। হা হা। ব্যাতিক্রম কি বলেন। আগের সপ্তাহে অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এখন রাস্তাঘাটে বিশেষ করে বাস চড়তে বেশ পটু। শনিবার বেরিয়ে পড়লাম , বিকেলের খাবার ব্যাগ এ ভর্তি করে ,দুপুর ১ টা নাগাদ। সামনের বাসস্টপ থেকে ৫ নম্বর বাস। আগে এলো নানজিনজি টেম্পল।নেমে পড়লাম। জিপিএস অন (GPS ON) করে রাস্তা খোঁজার পালা। এদিক ওদিক ঘুরে শেষ মেশ পৌছালাম।
Back of Sanmon |
Front entry of Sanmon gate |
আরে বাসস।!!! এতো প্রকান্ড এক দরজা। নাম সানমন গেট। দরজার সামনের লেখা পরে জানলাম এটা জাপানের তিনটি বৃহত্তম দরজার একটি। সামনে একটা গাছে সাদা ফুল সবে ফুটেছে। সবাই তার সামনে গিয়ে গিয়ে ফটো তুলছে। এটা নাকি সাকুরা , জাপানের বসন্তে এটা বিখ্যাত (Cherry Bloossoms ). ভিনদেশি মানুষ শুধু এই দেখতে আসে জাপানে এসময়ে। এমন কি চোখে পড়লো অনেক জাপানি পর্যটকও , বিভিন্ন শহর থেকে কিয়োটো তে।
Sakura /Cherry Blossoms |
মন্দির গুলোতে সব সময় নজর পরে ঐতিহ্যগত কাপড়ে জাপানীস ছেলে মেয়েকে। দারুন লাগে ওই পরিচ্ছদ এ বিশেষ করে জাপানীস মেয়েদেরকে। একদম পুতুল পুতুল। ভালো করে সেই বিশালকায় দরজার চারপাশ পরিদর্শন করলাম। ওপরে ওঠার মূল্য মাথা পিছু ৫০০ ইয়েন।
Japanese @ Sanmon Gate |
এর পর এগিয়ে গেলাম আসল মন্দিরের দিকে। সামনে আমাদের হিন্দু মন্দিরের মতো ধূপকাঠি জ্বালানোর একটা জায়গা ,একটা Wish বাক্স। যেটুকু দেখলাম ,এখানে এসে থেকে , এটা বোঝা যায় জাপানীসরাও আমাদের মানে হিন্দুদের মতো ভগবান বিশ্বাসী। সব মন্দিরে Wish বাক্স , এছাড়াও অনেক কিছু যা বুঝিয়ে দেয় জাপানীসদের ধর্ম মানসিকতাকে। অসাধারণ পরিবেশ ,অসাধারণ কারুকার্যময় মন্দির আর ভেতর বসে আছে সোনালী বৌদ্ধ মূর্তি। অনেক ফটো তুললাম ,খুব বেশি করে উপভোগ করলাম পরিবেশটি কে। মন্দিরের ডান হাতের রাস্তায় পোড়োবাড়ির শৈলীতে হিন্দু মন্দিরের কাঠামো। সেখানে দেশি বিদেশিরা ভিড় করে ফটো তুলছে। আসলে এটা নালার (Aqueduct) পরিকাঠামো। পাশের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। দেখলাম ওপর থেকে নানজিনজি মাখানো শহর।
ধুপ |
এতো হলো আমার পরিদর্শন , কিন্তু আর একটু বেশি যদি জানতে চান এই মন্দিরের সম্পর্কে , তাহলে ছোট করে বলেদি এর ইতিহাস তথা ভূগোল ও।
——————————————————————————————————
Nanzeni Temple (南禅寺)
——————————————————————————————————
Nanzenji Temple (南禅寺) , যার প্রশস্ত মাঠগুলি কিয়োটো বনভূমি Higashiyama পর্বতমালার ভিত্তিতে অবস্থিত, জাপান সব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেন মন্দির এর একটি । এটি জাপানের জিন বৌদ্ধধর্মের রেনজাই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি স্কুলের প্রধান মন্দির এবং একাধিক উপমুখ্যসম্পর্কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই অন্য বড় বড় মন্দির ভবনগুলির তুলনায় বড় আকার ধারণ করেছে ।নানেনজেনের ইতিহাস 13 শতকের মাঝামাঝি সময়ে ফিরে আসে, যখন সম্রাট কুময়াম মন্দিরের বর্তমান অবস্থানে তার অবসর ভিলা নির্মাণ করেন এবং পরে এটি একটি জেন মন্দিরের মধ্যে রূপান্তরিত করেন। এর প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর, নেনজেনজী ক্রমাগতভাবে বেড়ে যায়, কিন্তু এর বিল্ডিংগুলির সবই মৃতু্যর মরমোমি পিরিয়ড (1333-1573) -এর গৃহযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভবনটি নির্মিত হয়েছিল।
Nanzenji Temple |
নানজিনজির কেন্দ্রীয় মন্দিরের ভিত্তিগুলি জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত, তবে মন্দিরের বাড়ী এবং উপমুখ্যস্থানে প্রবেশের জন্য পৃথক মূল্য প্রয়োগ করা হয়। দর্শকরা প্রথমে নেঞ্জেনজী এর বিশাল সানমন প্রবেশপথের গেটে আসবেন, যা গাছের শীর্ষর উপর প্রসারিত । 16২8 সালে 1681 সালে ওসাকা কাসেলের অবরোধে নিহত সৈনিকদের শাসনকারী টোকুগাউ গোষ্ঠীর দ্বারা গেটটি নির্মিত হয়।গেটের ওপরে উঠতে বা প্রবেশ মূল্য ৫০০ ইয়েন। গেট পিছনে হাটতা (ধর্ম হল), একটি বড় বক্তৃতা হল যে জন দ্বারা প্রবেশ করা যাবে না।
Side View of Nanzenji |
এখনকার HOJO , প্রাক্তন প্রধান পুরোহিতের বাসভবন এবং নেনজেনজির প্রধান হল ছিল । Hojo বিখ্যাত তার শিলা বাগানের জন্য ,যার মধ্যে দেখা যায় , বাঘ আর সিংহ শিশু জলের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে।এছাড়াও অত্যন্ত সম্মানিত দরজাগুলি (ফুসুম) উপর পেইন্টিং, যেখানে স্বর্ণের পাতার উপর বাঘ এর আরো একটি বাস্তবসম্মত চিত্রণ অন্তর্ভুক্ত। পর্যটক প্রাক্তন মন্দিরের রান্নাঘর (কুড়ি) এর মাধ্যমে Hojo বিল্ডিং কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেন, যেখানে তারা একটি মিনারেজ জলপ্রপাতের দৃশ্যের সাথে তাদের ডানদিকে একটি ছোট চা রুম খুঁজে পাবেন।
মন্দিরের ভেতরে সোনালী বৌদ্ধমূর্তি |
Hojo দর্শক বাইরে একটি বরং অদ্ভুত দৃষ্টিশক্তি জুড়ে আসতে হবে: মন্দির স্থল মাধ্যমে পাস যে একটি বৃহৎ ইট জলবিদ্যুত্। মেজি পিরিয়ড (1868-19 1২) সময় নির্মিত, নিচু একটি খাল সিস্টেমের অংশ যা শিয়া প্রিফেকচারের পাশে কিয়োটো ও লেক বিভাতে পানি ও পণ্য বহন করে নির্মিত হয়েছিল।
Nanzenin মন্দির Nanzenji এর subtemples এক যে দর্শকদের জন্য খোলা হয়। এটি সম্রাট কুমিমার মূল অবসরকালীন ভিলার প্রাক্তন অবস্থানের সমুদ্রে অবস্থিত, সম্রাটের একটি সমাধিসৌধ, একটি মন্দিরের হল এবং একটি পুকুরের কেন্দ্রস্থলে একটি বাগান রয়েছে যা বিশেষত শরত্কালে আকর্ষণীয় হয়।
নানেনজঞ্জি মন্দির কমপ্লেক্সের উপকণ্ঠে, কোচি-ইন-টেম্পলটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। মন্দির 1400 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু 1600 এর গোড়ার দিকে তার বর্তমান অবস্থান সরানো। কনিচি-এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিল্ডিং, ফুসুম (স্লাইডিং দরজা) পেইন্টিং, শিলা বাগান, একটি চা ঘর এবং তোশোগু শেরাইনের একটি ছোট অংশবিশেষ রয়েছে।
কিছু তথ্য পর্যটকদের জন্য :
——————————————
প্রবেশ মূল্য :
সানমন গেট – ৫০০ ইয়েন
নানজিনজি মন্দির HOJO – ৫০০ ইয়েন
প্রবেশ সময় : সকল ৮:৪০ থেকে বিকেল ৫ টা
বন্ধ থাকে : ২৮ থেকে ৩১ এ ডিসেম্বর
কি করে পৌঁছাবেন ?
———————–
নেঞ্জেনজী নিকটতম সাবওয়ে স্টেশন, তোজাই লাইনের কিয়েজ স্টেশন (প্রায় ২0 মিনিট,কিউটো স্টেশনের কারাসুমা-ওকি স্টেশন থেকে ২60 ইয়েন ভাড়া ), অথবা নিকটতম বাস থেকে 5-10 মিনিটের হাঁটা পথ নেনজেনজি-ইিকান্দো-মিচি বাস স্টপ থেকে (35 মিনিট, কিয়োটো স্টেশন থেকে ২4২ ইয়ান, কিয়োটো সিটি বাস নম্বর 5)।
Nanzenji এছাড়াও দ্য ফিলোসফার এর পাথ Philosopher’s Path দক্ষিণ প্রান্ত থেকে একটি ছোট হাঁটা রাস্তা , যার উত্তর প্রান্তে Ginkakuji মন্দির।
( দ্য ফিলোসফার্স পাথ (哲学 の 道) কিয়োটো জগতের উত্তরে উত্তরাংশের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর পাথর পথ।একটি খাল যা শত শত চেরি গাছ দ্বারা প্রণীত হয় । সাধারণত এপ্রিলের প্রথম দিকে, এই গাছটি রং বিস্ফোরিত হয়, এটি শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় হানামি (চেরি ব্লসম দেখার) দাগগুলির একটি।প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ, পথটি গিনকাকুজি (সিলভার প্যাভিলিয়ন) এর চারপাশে শুরু হয় এবং নানজানজির আশেপাশে শেষ হয়। জাপানের বিখ্যাত দার্শনিক নিশিদা কিতোরোর কারণে এই পাথটি তার নাম পায়। বলা হয় কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনন্দিন যাতায়াতের পথে তিনি তার ধ্যান চৰ্চা করতেন। )
**_**_**
এবার ফেরার পালা ,নানজিনজি থেকে। সময় দুপুর ৩ টের কাছাকাছি হবে। আবার পৌছালাম বাসস্টপ এ। ধরলাম ৫ নম্বর বাস। উদ্যেশ্য কিয়োটো চিড়িয়াখানা , শুনেছিলাম কাছেই। কথা মতো নেমে পড়লাম চিড়িয়াখানার স্টপ এ। কিন্তু অন্য কিছুই আমাদের অপেক্ষায় ছিল। দু সপ্তাহে আগে যখন এখন দিয়ে বাসে করে Sanjo যাই , সেদিন এখানে একটা shrine চোখে পড়েছিল। ভাবলাম চিড়িয়াখানা নয় পরে হবে , এখন একটু shrine টা ঢুঁ মেরে আসি।
shrine সামনে প্রশস্ত মাঠ। সে মাঠ ও দেখার মতো। ছোট বড় সবার ভিড়। এদিক সেদিক ছিটিয়ে বসে আছে অনেক পরিবার। চারিদিকে বাচ্চাদের হাসি- আওয়াজ-শোরগোল। আমার আবার এরকম পরিবেশ বেশি পছন্দ , ছিমছাম নিরালা নির্জন থেকে। ২ মিনিট হেঁটে সামনেই shrine ,নাম হেইয়ান (Heian Shrine ) . আমি এই প্রথম shrine দেখলাম। অনেক বার কানে শুনেছি , দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সামনে প্রকান্ড গেট। এদিক ওদিক , যেদিক দিয়ে দেখো , সে বোঝা ভার।
জাপান ভ্রমণের সময় মন্দির(Temple ) ও তীর্থযাত্রা (Shrine ) দুটি সবচেয়ে প্রচলিত ঐতিহাসিক ভবন যে কেউ দেখতে পাবে।গঠনকার দেখে পার্থক্য বুঝলেও ,আসলে কি যে তফাৎ তা কি জানেন ?তাই যারা জানে না , তাদের উদ্যেশে বলি Shrine আর Temple র তফাৎ টা কোথায়।সহজ কথায় , মন্দিরগুলি বৌদ্ধ, Shrine শিনটোর (Shinto)। মানে ধর্ম পার্থক্য।
** তাই প্রথমতঃ , Shrine Shintoism যা জাপানে উদ্ভূত হয় তার সম্পর্কিত আর অন্যদিকে, মন্দিরটি বৌদ্ধধর্মের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে যা ভারতে থেকে এসেছে (ঠিক যেমন আমরা মন্দির, গির্জা এবং মসজিদ মধ্যে পার্থক্য রাখি সেরকম এ )।
** দ্বিতীয়ত :টেম্পলে আর shrine এর গঠন একদম আলাদা।
** তৃতীয়তঃ এদের প্রার্থনার প্রক্রিয়াতেও অনেকটা পার্থক্য আছে ( shrine এ প্রার্থনার আগে হাতে তালি রেওয়াজ যেখানে আছে ,সেখানে মন্দিরের প্রার্থনা একদম নিস্তব্ধ ) .
** চতুর্থতঃ জাপানে সব মন্দিরের নামের শেষে Ji , যেমন কিনকাকুজি ,গিনকাকুজি আর Shrine র নামের শেষে Jingu থাকে।
** পঞ্চমতঃ Shrine যেমন একের বেশি ভগবান বা দেবদেবী কেন্দ্রিক ,Temple শুধু মাত্র বৌদ্ধ মূর্তির পূজা করে।
** ষষ্ঠত : Temple গুলো জাপান , চীন ও ভারতের একই রকম কিন্তু shrine শুধু মাত্র জাপানেই দেখা যায়।
** সপ্তমত : Shrine এর সামনের গেট , যার কথা একটু আগে বললাম একদম আলাদা দেখতে ,একে Torii বলে আর Temple এ আমরা Pagoda (বহুস্তর )দেখতে পায়। Temple র গেট কে sanmon গেট ও বলে , ঠিক যেমন টি নানজিনজির সামনে Sanmon গেট ছিল।
** অষ্টমতঃ Shrine এ সাধারণত বিয়ে বা আনন্দ উপলক্ষে এখানকার জাপানীস রা যায় আর Temple এ শোক প্রকাশে বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে।
Heian Shrine |
এই সব কথা আমি এখানে এসে জানতে পারি। আগে কখনো আমিও এসব জানতাম না। তবে Heian Shrine দেখার পর আরো বেশি উৎসাহ বেড়েছিল Srine সম্পর্কে জানবার। ভেতরে ঢুকতে হাত ধোঁয়ার জায়গা যেমন চোখে পড়লো , চোখে পড়লো সাদা বালুর বিশাল মাঠ গেটের ভেতরেও। ভিডিও করা শুরু করি আর এগোতে থাকি Shrine এর দিকে। দুদিকে কিছু দোকান ছিল , যেখানে ধর্ম তাত্বিক জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছিলো। আমিও কিনলাম কিছু গিফট আমার প্রিয়জন বন্ধুদের উদ্যেশে। ভেতরে ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতেই এক গার্ড দৌড়ে এসে ক্যামেরা বন্ধ করে দিলো , সামনে লেখা ছিল ফটোতোলা নিষিদ্ধ। খেয়াল করাও খেয়াল হয়নি। হা হা। ফেরার পথে চোখে পড়লো , একটা বিয়ের অনুষ্ঠান। বর বৌ কে দূর থেকে দেখলাম। বড় তো বেশ ঐতিহ্যগত জাপানীস জামাকাপড়ে দাঁড়িয়ে কিন্তু বৌকে একদম সাদা কাপড়ে ঢেকে রেখেছে , ঠিক আমাদের কলা বৌ এর মতো। শত চেষ্টা তেও র মুখ দেখতে পাইনি।
জাপানীস নতুন বৌ |
এতো গেলো আমার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা তাও খুব স্বল্প। কারণ , মন যা অনুভব করে তা পৃষ্টার পর পৃষ্টা লিখে ও শেষ হবে না। এবার ঝটপট সেরে ফেলি হেইয়ান শেরাইন এর ঐতিহাসিক কিছু কাহিনী :
ঢোকার দরজার সামনে |
—————————————————————————–
Heian Shrine (平安神宮, Heian Jingū)
—————————————————————————————————–হেইয়ান শেরাইন (平安 神宮, হেইয়ান জিংহু) একটি তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস রয়েছে, যা কেবলমাত্র একশ বছর আগে 185২ সাল পর্যন্ত ছিল। এই কবরস্থানটি কিয়োটোতে রাজধানী ভিত্তির 1100 তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি প্রথম এবং শেষ সম্রাটরা , সম্রাট কামু (737-806) এবং সম্রাট কোমি (1831-1867) আত্মার উদেশ্যে উৎসর্গীকৃত । হেইয়ান কিয়োটো এর সাবেক নাম।
ভেতর থেকে |
বাইরে থেকে |
ঢোকার পথে একটি দৈত্যকার টরিরি (Torii) গেট । কেন্দ্রে একটি প্রশস্ত খোলা মাঠের সাথে প্রকৃত পাহাড়ের ভিত্তিগুলি খুব স্পষ্ট। মঠের প্রধান ভবন হেইয়ান পিরিয়ড থেকে মূল ইমপেরিয়াল প্রাসাদগুলির একটি আংশিক প্রতিরূপ, কিছুটা ছোট স্কেলে নির্মিত।প্রধান ভবনগুলির পিছনে একটি আকর্ষণীয়, প্রদত্ত বাগান রয়েছে যা বিভিন্ন গাছপালা, পুকুর এবং ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির সাথে। বাগানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য তার অনেক কাঁদানো চেরি গাছ, যা অন্য কয়েকটি চেরি গাছের চেয়ে কয়েক দিন পরে উদ্দীপ্ত হয়।
হেইয়ান এর দৈত্যাকার Torii গেট |
হেইয়ান এর পেছনে বাগান |
মাঝে মাঝে, মঠের প্রশস্ত খোলা মাঠে আদালত হিসাবে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২২ শে অক্টোবর, কিয়োটো প্রবর্তনের বার্ষিকী, প্রতি বছর যিদাই উৎসবের একটি স্থান হিসেবে এই মন্দিরটি কাজ করে। উৎসবের দিনে জাপানীসরা ইতিহাসের বিভিন্ন সময় কে বিভিন্ন রঙের কাপড় পরে , প্যারেড এর মাধ্যমে দেখায়ও।
প্রশস্ত খোলা মাঠ |
কিছু তথ্য পর্যটকদের জন্য :
কি ভাবে পৌঁছাবেন?
হেইয়ান শেরাইন ,কিয়োটো সিটি বাস নম্বর 5 বা 100 ধরে কিয়োটো স্টেশনে প্রায় অর্ধ ঘন্টা (২30 ইয়েন) দ্বারা পৌঁছাতে পারেনা । বিকল্পভাবে, Karasuma Oike স্টেশন থেকে Higashiyama স্টেশন (20 মিনিট, 260 ইয়েন) মাধ্যমে পাতাল রেলের পথ ,সেখান থেকে হাঁটা ১০ মিনিটের পথ।
প্রবেশ মূল্য :
হেইয়ান শেরিন : বিনামূল্যে
হেইয়ান শেরিন বাগান :৬০০ ইয়েন
প্রতিদিন খোলা
প্রবেশ সময় : সকল ৮;৩০ থেকে বিকেল ৫ টা
বেরিয়ে আমাদের বিকেলের চা খাওয়া হলো আর মেয়ের ও। তারপর আবার ৫ নম্বর বাস নিয়ে Sanjo .আমার এখন পর্যন্ত সব থেকে ভালো লাগার জায়গা , কেন বুঝতেই পারছেন , ঝা চক চক দোকান আর অনেক শপিং। সেই দুপুরে বেরিয়ে রাত ১০ টাই বাড়ি ফেরা। ফেরার পথে নিশিভোজ ,পাড়ার কাছে (হো হো ), মানে কাছের , MacDonald এ সেরে এসেছিলাম। আমার মেয়ে আজ অনেক হেঁটেছে , মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত করছিলো যে না তা নয়। তবে চকলেট চিপস,ললিপপ খাইয়ে খাইয়ে বেশ ভালোই এনার্জি দিয়েছিলাম ওকে , শেষমেশ ভালোভালোই বাড়ি ফিরেছে।
এই সপ্তাহের শনিবার এর ফটো অ্যালবাম থেকে বেশ খুশি খুশি মুখে আমরা :
হেইয়ান এ আমরা |
নানজিনজি তে |
নানজিনজি তে আমরা |
রবিবার তো সেই মনে করিয়ে দেয় , আবার এক সপ্তাহের অপেক্ষার কথা। অলস রবিবার কেটে যায় , নিজের মতো ঘর সংসার টুকিটাকি আর বিকেল বেলা তিনজনের সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পরার মধ্যে। এবার গিয়েছিলাম অন্য দোকান ,তারপর দরদাম আর কেনাকাটা।
<< জাপান পর্ব : ৫ পরবর্তী : ক্রমশ
[…] << জাপান পর্ব ৬ ২৬শে মার্চ থেকে ১ম এপ্রিল […]
[…] জাপান পর্ব ৬ >> SOURCEMousumi Kundu […]
Ꮃow! This could be one ρarticular of thе most
benefiсial blogs Wе have eve arrive across on this subject.
Basicalⅼy Excellent. I am also a specіalist іn this t᧐pic therefore I can understand our haгd work.
very good!!