জাপান :পর্ব ২

1
1532
Photo By M K Paul

<< জাপান ভূমিকা :পর্ব ১                                                                         ২৮ এ ফেব্রুয়ারী ,২০১৮ 

প্রথম সকাল , জাপানে। বেশ ঠান্ডা। মুম্বাই তে থেকে অনেক বছর ই ঠান্ডা কি বলে ভুলে গেছিলাম।শেষ দুমাস কলকাতার ঠান্ডাতেই কাবু ছিলাম, এখানে তো আরও বেশি।আজ আমার কন্যার স্কুল -এ ভর্তি।আগে থেকেই ভাস্কর সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল। আজ যাবো জাপানীস স্কুল আরআগামী কাল ইংলিশ স্কুল এ। কথামতো বেড়িয়ে পড়লাম সকল ১০টা নাগাদ,ব্রেকফাস্ট করে (প্রথম ব্রেকফাস্ট, বলাবাহুল্য , আলু-পেঁয়াজ ভাজাআর সেই ওভেন এর শক্ত রুটি) ।

বারান্দা থেকে Sakyo-ku Ward, সামনের রেল লাইনে দু-বগির ট্রেন

Shugakuin International  House থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরে হাঁটা পথে ১০-১২ মিনিট। শহর টা সাজানো , তবে, যতই সাজানো হোক , আমার অগোছালো কলকাতা আর কিছুটা আধুনিক মুম্বাই এর থেকে ভালো না। মনে একটা হু হু ভাব। সব থাকতেও কি যেন হারিয়েছি। আমার এই স্বভাব আমাকে সবার কাছে (পরিবার-বন্ধু সব) হাসির পাত্র করেছে ঠিক ই , তবুও যে বদলাতে চাই না। অনেক কিছু নজর এড়ালনা। যেমন ,ছোট্টো গলি.দুটোফুটপাথকে যোগ করছে, তার  কাছেও সংকেত (শুধু মাত্র পথযাত্রীর জন্য ) . যদিও কোনো গাড়ি নেই , তবুও যদি সিগন্যাল লাল থাকছে, মানুষ গুলোঅনুগত হয়ে চুপ করে অপেক্ষারত, কখন সংকেত সবুজ হবে।

ফুটপাথ পার হবার সিগন্যাল

ডানদিক থেকে প্রথম সংকেত পেরিয়ে ১ মিনিট এ আবার ডানদিকে ,একটা ছোট্ট বাজারের ভেতর দিয়ে পথ ২ মিনিটের। দুদিকের বেশির ভাগদোকান ই বন্ধ, দু একটা ছাড়া।যার মধ্যে ভালো লাগার দোকান ছিল ফুলের।

দুদিকে ছোট বড় দোকান
আমার প্রিয় দোকান ,সব সময় সুন্দর

বাজার থেকে হেঁটে আবার ডানদিক। সামনে রেল গাড়ির সংকেত, (সুগাকুইন স্টেশন -Shugakuin Station ) .এপাশে ওপাশে মিলিয়ে মাঝারি ৪ টিmall ( দৈনন্দিন জীবনের কেনাকাটা,মূলতঃ খাবার ) . এগিয়ে চললাম।

সুগাকুইন রেল ক্রসি

একটা সংকেত এর পর  রাস্তা পেরিয়ে এগুতেই চোখে পড়লো একটা Tunnel . ভাস্কর বললো এই এসে গেছি।ডানহাতে ঘুরতেই Mercedes এর মেলা ।হ্যাঁ , আগে বলা হয়নি , এখানে গাড়ির সংখ্যাই বেশি (চার চাকা ), বাকি রা সাইকেল। সাইকেল এর ও অনেক ধরণ , সে নয় পরে বলবো।

এই সেই tunnel
আরো কিচুক্ষন হাঁটা পথ

আরো কিচুক্ষন হাঁটা পথ ,পৌঁছালাম , কন্যার জাপানীস স্কুল এ। নাম সেইকো কিন্ডার গার্ডেন (Seiko Kinder Garden)। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।কড়া নাড়তেই একজন বেরিয়ে এলো হাসি মুখে।সাথে পড়তে দিলো ভেতরে ঢোকার জুতো।এখানে কোনো প্রতিষ্ঠানএ  বাইরের জুতো ভেতরে নিতেদেয়না , নিজেদের জুতো থাকে (প্রাপ্তবয়স্কের একরকম মাপ আর ছোটদের অন্য ) .আগে থেকেই কথা বলা ছিল। মেয়েকে নিয়ে গেলো ভেতরেআমাদের ও। সবাই মেয়ে কে অভিনন্দন জানালো “আধ্যা চা ” বলে।  হাহা।

অনেক কষ্টে অধ্যক্ষ কে বোঝানো গেলো আমাদের ইংলিশ।কথা হলো , আগামী শুক্রবার ক্লাস এ আসবে আধ্যা।চোখ পড়লো নোটিশ বোর্ড এ  (বিজ্ঞপ্তি), কিছুই বোধগম্য হবে তা আশাতীত।

আধ্যার জাপানীস স্কুল
আধ্যার জাপানীস স্কুলের প্রবেশ দ্বার

ছুটির সময় চোখে পড়লো , আমাদের মতো অনেক মা -র ভিড়,আর হাসি ঠাট্টা. কে বলে,জাপানীসরা শুধু কাজ করে। সবাই কে দেখে প্রথম দৃষ্টিতে পার্থক্য বুঝলাম না , সবাইকে কেমন যেন একই লাগলো। ভালো লাগলো ড্রেসিং সেন্স আর চুলের স্টাইল।

ফেরার পথে চোখে পড়লো জাপানীস ঘরের নির্মাণ কেমন যেন টেলিভিশন এ দেখা কার্টুন মতো , একদম মিলে যাচ্ছে।ছোট্টবেলার কল্পনাতে যেমন দেখতাম পুতুলের ঘর , ঠিক তেমন।পরিষ্কার পরিছন্ন , কেমন যেন ছবি ছবি।  বাড়ি গুলোর সামনে একের বেশি সাইকেল রাখা কিন্তু চালকের দেখা মেলা ভার।

বিকেলে বেরোলাম সামনের Food Mall গুলো একটু উঁকি মারতে।আমার চারপাশে ৫-৬ টা ফুড মল। 7/11, Freshco, Windy, Ikari আর সাথে একটা জাপানীস মল  (নাম এখনো অনুবাদ করা হয়নি ), আর একটি বেকিং শপ। এগুলো সব কটাই দাম অনুযায়ী ঠিকঠাক। দোকান গুলো রাস্তার এপার আর ওপার। তাই যে দোকানে দাম যৌক্তিক লাগে , সেখান থেকে সব্জি বা অন্য খাবার জিনিস নেওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নই।

আমাদের এই সুগাকুইন রাস্তা ( Shugakuin Michi -bus stop )  থেকে দুদিকে রাস্তা বেঁকে গেছে। একদিকে Higashioji Dori আর অন্য দিকে Kitayama Dori  (Dori কথার মানে হচ্ছে রাস্তা )।

বাইরে থেকে দেখতে তো বেশ লাগলো , কিন্তু ভেতরে যেতে মাথা যেন ভ ভ ।  একি ! কি খাবো ? মানে,  নূন্যতম বেঁচে থাকতে  (আমার মতো খাদ্য রসিক ,খেয়ে বেঁচে থাকার কথা ভাবছে!!! ), কিছু তো রান্না করবো? এমনিতেও আমার পাঁচ বছরের কন্যা কলকাতার হাজার পছন্দ-এর খাবার দেখেও ,খুব একটা আনন্দ পাননা। তাহলে বোঝো মা হয়ে কি জালায় পড়েছি।প্রথমেই খুঁজতে থাকলাম সব্জি। মাছ মাংস ডিম্ যতই খাই না কেন , আমার সাপ্তাহিক মেনুতে সবসময় অনেক সব্জি থাকে। কিন্তু না। পছন্দ সীমিত। ৮.৫ বছর আগের মরিশস এর কথা মনে পরে গেলো , এক সপ্তাহে বর কে যা জ্বালিয়ে খেয়েছিলাম , কিছু খাবার নেই বলে , এখন এতো বছর পরে , মেয়ে আমাকে জ্বালাবে না ,আমি বাবা আর মেয়ে কে জ্বালাবো ঠিক  ভেবে পেলুম না।

আমিষ section এ গিয়ে যাদের দেখা মিললো , তা দেখে , আর ঘ্রান অনুভবে সব যেন চটকে গেলো।

কে যে মুরগি , কে যে গরু আর কে যে কি , রং দেখে ধারণা করলেও , নিশ্চিত হতে পারছিলাম না , সব যে জাপানীস লেখা।তার ওপর মোবাইল আনতে ভুলে যাওয়া তে অনুবাদক সফটওয়্যার টাও প্রযোজ্য হলো না। এরকম ধারণার ধার দিয়ে , নিয়ে গেলাম একটা প্যাকেট কাউন্টারে , দেখলাম আর ইশারায় ইঙ্গিতে বোঝালাম , এইটা কি মুরগি মানে চিকেন ?অনেক কষ্টে উত্তর এলো , হ্যাঁ।  যাক বাবা, কালকের খাবার জোগাড় হলো তাহলে। সাথে নিলাম পরিচিত আর দৈনন্দিন অপরিহার্য কিছু সবজি, ডিম্  আর অলিভ অয়েল।

<< আগের পৃষ্ঠা :1                                                                                   >>পরবর্তী পৃষ্ঠা :৩

                                         পর্ব ২ :CopyRight M K Paul, March,2018

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here