অঙ্গীকার
লেখক পরিচিতি : শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মুম্বাই
জিতবই ভরসা রেখো
লেখক পরিচিতি : রাণা চ্যাটার্জী ,বর্ধমান
আক্রান্ত মনের স্বীকারোক্তি
এই স্তব্ধতা,
এই বিবর্ণ বিচ্ছিন্নতা,
দৃষ্টিজোড়া এই অপার হাহাকার-
একি আমাদেরই ‘প্রাপ্য’ নয়?
নয় কি এ আমাদেরই ‘পুরস্কার’?
আমরা কি শুনেছি মাটির কান্না?
শুনেছি কি সবুজের যন্ত্রণা?
শুনেছি কি পাখির আর্তরব?
নাকি আমিত্বের কংক্রিটে চাপা পড়েছে সব?
আমরা শুষেছি,
আমরা পিষেছি,
আমরা নিংড়েছি,
আমরা আরও চেয়েছি;
চাইনি শুধু ‘তার’ শান্তি।
তবু, ‘মানুষের’ মাঝেই ”মানুষ” বাঁচে,
তবু, ‘মানুষের’ মাঝেই ”মানুষ” আছে,
যাদের নিঃশ্বাস আজও পৃথিবীর ক্ষত জুড়ায়;
আমরা সবাই সেই আলোভরা আগামীর আশায়।
লেখক পরিচিতি : – প্রসেনজিৎ মন্ডল, বসিরহাট, পশ্চিমবঙ্গ
কোরোনার গ্রাস
লেখিকা পরিচিতি : ববিতা সরকার (গুহ রায়), ব্যারাকপুর, পশ্চিমবঙ্গ
আমি সচেতন নই (ইতালীর জনৈক চিকিৎসকের জবানী)
আমি সাবধান নই বিন্দুমাত্র
আমি শঙ্কিত
কিন্তু আতঙ্কিত নই
আমি তোমাদের মতো নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারিনি
বিচ্ছিন্ন রাখতে পারিনি আমার দেশের মৃতপ্রায় ভাই বোনদের থেকে
তাই শৃঙ্খল ভাঙার আহ্বানকে উপেক্ষা করে
আমি বেরিয়ে এসেছি আমার পেশাগত শৃঙ্খলার প্রমান দিতে
যদিও আমি এখন আর পেশাদার নই
আমি নিযুক্ত নই কোনো দায়বদ্ধতা কিংবা কর্তব্যপরায়নতায়আমি এখন বেকার
পুরানো গাড়ির ইঞ্জিনের মতো বিকল
আমি ইতিমধ্যেই অতিক্রম করে এসেছি
সমস্ত সক্রিয়তা কিংবা স্বীকৃত কর্মক্ষমতার সীমা
আমি নিজেই এখন দুর্বল
নিজেই সকলের চোখে অক্ষম অথর্ব
আমার প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই নগন্য
আমার বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই
আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকহ্যা তোমাদের পরিভাষায় আমি বাতিল
আমারই তো এখন বেশী সচেতন থাকার সময়
সাবধানতার পরিমাপ তো সবচেয়ে বেশী আমার জন্যই
অথচ আমি নিজেকে নিয়ে একেবারেই সচেতন নই
আমি হয়তো একুশের যুবকের থেকেও বেশী হঠকারীআমি যখন প্রতিদিন ঘরে বসে খবর পাচ্ছি
মুহূর্তে মুহূর্তে বাড়ছে আমার দেশের বিপদ
ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে আমার আক্রান্ত দেশবাসীর সংখ্যা
ব্যালকনিতে বসে দেখছি আমার বাল্য বন্ধুর মৃতদেহ
সেনার গাড়ীতে করে বাহিত হয়ে দগ্ধ হচ্ছে
শহর বাইরে কোনো নির্জন প্রান্তরে
অথচ তার শেষযাত্রায় নেই তার পরিজন কিংবা বন্ধু
যখন আমি জানতে পারছি
দেশ আর দেশবাসীর সেবায় নিয়োজিত বছর তিরিশের
তরুন চিকিৎসক ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে
তখন আমি শুধুমাত্র আমাকে নিয়ে সচেতন থাকি কি করে
স্বার্থপরের মত সাবধনতা তখন আমাকে মানায় নাআমার তো এখন গোধূলীর সময়
কিছুক্ষন পরেই সন্ধ্যে নামবে
তখন হাজারো নক্ষত্রের মাঝে আমার খবর রাখবে না কেউ
তাই জীবন নাটকের এই যবনিকায়
সমস্ত সচেতনতা সমস্ত সাবধনতা ভুলে
গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে
আমি আবার স্বেচ্ছায় বেড়িয়ে পড়েছি কর্তব্যের টানেআমার দেশ বড়ো বিপদে আছে
আমার দেশবাসী ক্রমাগত কাঁদছে
প্রতেক্যের মনে এখন আতঙ্ক আর ভয়ের ক্ষত
হাজারো হাজারো দেশবাসী যে
আমার অসচেতন অসাবধান হওয়ার অপেক্ষায়
এমন নিদারুণ সময়ে উদাসীনতা আমায় মানায় না
আমি যে ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলর দেশের নাগরিকজানি হয়তো মৃত্যু আমাকেও টেনে নিতে পারে নিজের কোলে
আমাকেও যেতে হতে পারে আইসোলেশনে
আমার জন্যও বরাদ্দ হতে পারে নিঃসঙ্গ অন্তিম যাত্রা
আমার কফিনও পাবে না প্রিয়জনের স্পর্শ
কিংবা শেষ শ্রদ্ধার ফুল
তবুও শুধুমাত্র নিজের কথা ভেবে
আজ আমি আর সচেতন থাকতে পারছি না
জীবনে অনেক হিসেব নিকেশ বহু সাবধানে করেছি
উপসংহারের দিনগুলিতে না হয়
একটু বেহিসেবী কিংবা অসাবধানী হলাম
লেখক পরিচিতি : কৃষ্ণ বর্মন, পলতা, পশ্চিমবঙ্গ
হবোই হবো, করোনা জয়ী
এখন আমরা সবাই সৈন্য, এই বিশ্বযুদ্ধে সামিল –
জিততে হবে এই মহাযুদ্ধে, তাই দিলাম দরজা খিল।
খুলবো সে খিল হাসিমুখে,আমরা সবাই, একুশ টা দিন পরে –
আসুক করোনা স্পাইক হাকিয়ে, তাকে যেতেই হবে যে ফিরে।
প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, করছে লড়াই মানুষকে ভালোবেসে –
দেখিনি বিশ্বযুদ্ধ আমরা,ভীষন সে আজ “বায়োওয়ারের” বেশে।
যাঁরা দিনরাত এক করে লড়ে, ওই লড়াইয়ের ময়দানে –
তাঁদের পাশে আজ থাকতেই পারি , থাকলে ঘরের কোনে।
অনেক তো হলো আড্ডা, ঘোরা , চায়ের দোকানে বসা –
এখন না হয়, থাকলেই ঘরে, সেখানেই গপ্পো, হাসা।
দেশরক্ষার এমন সুযোগ, কেউ তো পাবোনা আর –
“দেশবাসী” শোনো, আর কটা দিন, যেওনা ঘরের বার।
স্পর্শে ছড়ায় করোনা দ্রুত, দুরত্ব তাই, একুশটা দিন রাখো–
বন্ধু, স্বজন যদি ভালোবাসো, তবে নিজে কটা দিন একা থাকো।
ফুটবলে এটি স্ট্রাইকার যে , বল পেলে গোল দিতে শুধু পারে –
তাই কেটে দাও, সেই “সাপ্লাই চেন”, “স্পর্শবিহীন”, থাকো নিজের ঘরে।।
বিশ্বযুদ্ধে জিতবে ভারত, প্রত্যয় আনো, আবার দেখবে সূর্যোদয় –
করোনার শিকড় এই দেশ থেকে ঠিক উপড়ে দেবো, একতাই বরাভয়।
কাঁদছে ইতালি, ফ্রান্স, আমেরিকা,জার্মানি, বাতাসে কান্না ভারী-
শুধু কটা দিন ঘরে থাকি, ঠিক হারাবোই করোনা মহামারি।।
লেখক পরিচিতি : ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
অন্য স্বাধীনতার যুদ্ধ
পারবেন আপনি। পারবো আমি। পারবো আমরা সবাই। শুধু কয়েকটা দিন। ঘর থেকে বের হবেন না কেউ
ঘরেই থাকুন,জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আমরা কেউ বেরোবো না। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে পারলেই আমরা এই ভয়ংকর রোগ করোনাকে হারিয়ে দিয়ে জয়ী হতে পারবো। আজ আমরা পশ্চিমী দেশগুলোর
দিকে তাকিয়ে দেখি একবার। ফ্রান্স, আমেরিকা, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, গ্রেট বৃটেন সহ নানা দেশ আজ
করোনা আক্রান্ত। আক্রান্ত বাড়ছে। এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে মানুষের সাথে মানুষের স্পর্শ থেকে এবং হাচি, কাশির থেকে নির্গত droplet এর মাধ্যমে। যেটি মুখের বা নাকের মাধ্যমে চলে যায় শরীরে
এবং সংক্রমণ ঘটায় । করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে অনেকটাই সাধারণ Influenza র মতো
উপসর্গ থাকে। তবে running nose থাকেনা সাধারণত। জ্বর,গলাব্যথা, গা হাত পা ব্যথা থাকে। শুকনো কাশি থাকে।
কয়েকটি জিনিস সবাই মেনে চলবার চেষ্টা করবেন।
A) ১) বাড়িতে থাকুন ২) খুব প্রয়োজন হলে
দুরত্ব বজায় রেখে বাইরে বের হতে পারেন । ৩)প্রচুর জল খান। গরম জল খাবেন।
৪) Immunity বাড়াবার জন্য protein খেতে হবে.. শাকসবজি খাবেন..
৫) breathing exercise করতে পারেন.. সকাল / বিকাল.. হাটবেন অবশ্যই
৬) এই সময়, একটা কথা বলবো, কোন রকম “জাঙ্ক ফুড” না খেলেই ভালো।
৭) আর সবচেয়ে বড় কথা, panic করবেননা.. এতে immunity down হয়, যেটা কখনোই কাম্য নয়,
কারণ আমরা যেমন মানুষের সাথে মানুষের দুরত্ব বজায় রেখে করোনা বা Covid -19 -এর সাথে লড়াই
করছি কারণ এই ভাইরাস নিজে ফুটবলের স্ট্রাইকারের মতো গোল করতে পারে, তখনই, যখন পিছন থেকে
কোন linkman তাকে বলটি বাড়িয়ে দেয়। সেই linkman বা মানুষের এই supply chain আমাদের কেটে দিতে হবে, তবেই আমরা একে আটকে দিতে পারবো।
B) প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহন করে, অর্থাৎ immunity বাড়িয়ে নিতে হবে।WBC র T lymphocyte যুদ্ধ করে রোগ প্রতিরোধ করবে, তাকে রুখে দিতে হবে দরজায়, যাতে সে বাড়ীতে অর্থাৎ রোগীর শরীরে প্রবেশ করতে না পারে।
C) কোন রোগ আক্রমন করলেও আমাদের রক্তের WBC যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করবে, যদি আমাদের
শরীর immune থাকে, বা immunity বাড়িয়ে নিতে পারি আমরা। আর সেটা এই ভিটামিন সহ সুষম খাদ্যগ্রহনের মাধ্যমে,
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে, শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে জলের যোগান রেখে ও শরীর কে সচল রেখে
হাটা চলা, হাল্কা ব্যায়ামের মাধ্যমে.আমরা করতেই পারি।
D) Virus একটি প্রোটিন অনুবিশিষ্ট এক পদার্থ যা, জড়পদার্থ ও জৈব পদার্থের মাঝখানে একট অবস্থায় । অবস্থান করে থাকে। Virus টি নতুন হবার ফলে, আমাদের শরীরের immune system তাকে identify করতে পারছেনা ।
জিনের পরিবর্তন ঘটা বা self mutated হবার একটা প্রক্রিয়া virus এর ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।
E) তাই একমাত্র রাস্তা, তাকে এড়িয়ে চলা, ধরা না দেওয়া। সংক্রমণের হার কমিয়ে দেওয়া।
F) এই Social distancing -এর ফলে কি হবে? ফল হবে সংক্রমণের হার বাড়বেনা, এবং
Community transmission হলে যে দ্রুত ভাবে করোনার সংক্রমণ হতে পারে বা পারতো,
তা তখন আর হবেনা।
G) আমাদের মতো,আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা ও বিপুল জনসংখ্যার দেশে, একসাথে বেশী সংখ্যক মানুষ
আক্রান্ত হলে বেশি, হাসপাতাল, চিকিৎসার সরঞ্জাম, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগ পরীক্ষার সরঞ্জামের
প্রয়োজন হবে, যা সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে না পেলে, সমস্যা বাড়বে।
H) সেক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান কথা হলো, “Prevention.is better than cure”.. এই নীতিতে চলাটাই, এই
মুহুর্তে প্রথম ও প্রধান কাজ, কারন এই virus একটি নতুন virus যার ওষুধ কিছু পাওয়া গেলেও ( ম্যালেরিয়া
ও AIDS -এ ব্যবহৃত হয়) করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনো আবিস্কৃত হয়নি ।
I) একটা কথাই বলা যায়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা immunity বাড়িয়ে, রোগকে আটকে রাখবার
প্রক্রিয়া চালাতে হবে। সেক্ষেত্রে hypertension, Diabetese, বা শ্বাসযন্ত্রের অসুখ থাকলে সেই মানুষদের অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে। বাইরে না বেরিয়ে কয়েকটি দিন নিজের বাড়ীতে থেকে, সামাজিক দুরত্ব
বজায় রাখতেই হবে, তাহলেই আমরা পারবো এই করোনা রোগকে হারিয়ে দিতে।
J) সুতরাং একটা কথাই বলতে পারি, লক ডাউনের এই সময়টা সেই সামাজিক দুরত্বকে বজায় রাখার কৌশল। প্রতিটি যুদ্ধের যেমন একটা গোপন কৌশল আছে, নভেল করোনা ভাইরাসে ( Novel
Corona Virus) এর সাথে যুদ্ধের এটিই সর্বোত্তম কৌশল। শত্রু কিন্ত নিজে কখনো আমার বাড়ী আসবেনা
যদিনা আমি তাকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসি, অর্থাৎ কোন সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এড়িয়ে থাকতে
পারি, আর সেটা করতে হলে, বাড়ি থাকতে হবে, কয়েকটি দিন, সরকারি নিয়ম, নির্দেশিকা মেনে।
H) কয়েকটি দিনের ঘরবন্দী অবস্থা যে আমাদের আগামী দিন টাকে মুক্ত, সতেজ, সবুজ করে তুলবে,
এটা যেন আমরা মনে রাখি। এই যুদ্ধ মারীর থেকে রক্ষা করবার এক স্বাধীনতার যুদ্ধ।
দেশরক্ষার এই ব্রতে ভারত হবে বিশ্বজয়ী।
লেখক পরিচিতি : ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
ছবি : নেহা সরকার , বারাকপুর
ছবি : প্রিয়াঙ্কা গোগোই
ছবি : বিতুপান গোগোই
যুদ্ধে যা
ওরে ও ছেলে , যুদ্ধে যা তুই চলে ,
কতজন তোর পথের পানে চেয়ে ,
ভরসা-হাতের একটু ছোঁয়া পেলেই
উঠবে দেখিস নতুন জীবন পেয়ে ॥
তুই তো মা আর ,আমার একার নয় ,
সবাইকেই তো , দেখতে হবে তোকে ,
সবার মাথায় বুলিয়ে দিলে হাত
তবেই না ‘মা ‘, বলবে তোকে লোকে॥
এখন কি আর বাছার সময় আছে !
কে হিঁদু আর , কে ই বা মুসলমান ,
মারণ রোগের চক্রব্যূহে পড়ে
বড়ো অসহায় ,বাঁচাতে নিজের জান ॥
সবার মাঝে ফুল হয়ে ফোট্ তোরা ,
লড়াইয়ে নাম্ , জীবন রেখে বাজি ,
আমরা তোদের মা-বাবা ,এ – পরিচয়
চিরতরেও ভুলে যেতে রাজি ॥
শুধু আজ তোরা একটা শপথ কর্ ,
পিছু হটবি না , রাখবি না মনে ভয় ,
সংকটকাল কেটে গিয়ে তোরা দেখিস
জয় আমাদের হবেই হবে নিশ্চয় ॥
লেখক পরিচিতি : শ্রী অমিতাভ কর
করোনার জীবনপালা
লেখক পরিচিতি :—অয়ন কর্মকার
দীপ জ্বেলে যাই
ঠাকুরের সামনে মঙ্গল দীপ প্রজ্জ্বলন করে
ছেলের মঙ্গল কামনায়
নাম প্রদীপ হলেও জীবনে অন্ধকার
অমাবস্যার থেকে কিছু যে কম নয় তারআশ্রয় বলতে ইটভাটার একটি ঘর
যাতে প্রবেশ করতে হয় ঘাড় নীচু করে
ঘরে আলো বলতে ষাট ওয়াটের বাল্ব
বাবা অক্ষম হয়েছে দশ বছর আগে
সে এখন পড়ে থাকে ঘর লাগোয়া
প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা অস্হায়ী বারান্দায়
প্রদীপ বিয়ে করেছে সাত বছর
পাঁচ বছরের ছেলে তিন বছরের মেয়ে স্ত্রী বাবা মাকে নিয়ে
তার সংসারশুধু প্রদীপ নয়
ইটভাটায় কাজ করে প্রদীপের মা স্ত্রীও
আর বাবা তো অথর্ব এক জরা
তিনজন উপার্জনক্ষম হলেও
প্রদীপের পরিবারে ঝা চকচকে আলো ছিল না কোনো দিনই
কারণ মজুরি যা পায় তার অর্ধেক নিয়ে নেয় দালাল
না দিলে যে ইটভাটার কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেবেছেলে সবেমাত্র অ অ শিখছে ফ্রী স্কুলে
প্রদীপের স্ত্রী সুনীতার বুকের দুধ ফুরিয়েছে কবেই
যেদিন প্যাকেটের দুধ ব্যবস্হা করতে পারে
মেয়ের দুধ জোটে শুধু সেদিনই
নতুবা ভরসা চালের গুড়ো
কোনোদিন মেয়ের দুধ থেকে বাঁচিয়ে
শ্বশুরকে এক কাপ দুধ দিলে
প্রদীপের বাবা তা রেখে দেন ছেলের জন্য
ছেলের উপর তো আর কম বোঝা নয়
নাম প্রদীপ হলেও
জীবনটা তার অন্ধকারে ভরা
এ এক অদ্ভুত ট্র্যাজিডি
যে আশায় ছেলের নাম রেখেছিল প্রদীপ
প্রদীপের মার সে আশা পূরণ হোলো না আজও
তবুও প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে
সে প্রদীপ জ্বালে ঠাকুরের সামনে
দীপাবলীতে চৌদ্দ প্রদীপ সাজায় কুড়ে ঘরের দরজায়
ছেলের মঙ্গল কামনায় আর এই আশায়
যে ছেলে একদিন সমস্ত অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে
তাদের জীবনকে আলোয় ভরে দেবে
লকডাউনের আজ বারোতম দিন
ঘরের উনুন জ্বলে না আজ সাতদিন
বেঁচে থাকা বলতে কিছু সহৃদয় মানুষের করুণা আর ভালবাসা
তাই তিনবেলা না হলেও
দুপুরের খাবার জুটে যায় ঠিক
কোনো দিন ভাত সোয়াবিন
কোনো দিন ডিম ভাত
কোনো দিন বা খিচুড়ি
সন্ধ্যা হলেই জ্বলে ওঠে ষাট ওয়াটের বাল্ব
আবছা আলো আঁধারিতেও
প্রদীপের মা নিয়ম করে এই বারো দিনও
দীপ জ্বেলেছে ঠাকুরের সামনে
ছেলের মঙ্গল কামনায়
পরিবারের মঙ্গল কামনায়
জগতের মঙ্গল কামনায়
প্রদীপের মার বিশ্বাস
একদিন সত্যি সত্যিই তাদের জীবন আলোয় ভরে উঠবে
আলোয় ভরে উঠবে সকলের জীবন
এভাবেই পৃথিবীর সব ভয় কেটে যাবে
কেটে যাবে সব অন্ধকার…
লেখক পরিচিতি :— কৃষ্ণ বর্মন
অবুঝ কেন?
লেখক পরিচিতি : শ্রী অমিতাভ কর
অতিথি করনা
মানুষ কভু জানত না যে,
আসবে এমন সময়।
বিশ্বজুড়ে দাপট তাদের,
বাড়বে তত ভয়।
না না তারা ডাকাত নহে,
নহে অশরীরী।
তারা হল ভাইরাস,
বিশ্ব মহামারী।
জানতো না মানুষ তখন,
করল অবহেলা।
শুরু হল মৃত্যুমিছিল,
মানুষ মরার খেলা।
হায় ঈশ্বর,তুমি এতকী পাথর?
বাঁচাও সকল প্রাণ।
এই জীবাণু ধ্বংস হলেই,
হবে মানব কল্যাণ।
অহংকার হল সবার,
পতনের কারণ।
“বেরাস না ঘর থেকে”,
করল কত বারন।
কে শোনে কার কথা,
শুধুই অবিশ্বাস।
এর পরিনাম হল কী ভালো?
পড়ল শত লাস।
হঠাৎ শোনা যাচ্ছে,
করনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
সবাই প্রাণ হারাচ্ছে,
সবাই প্রাণ হারাচ্ছে।
তোমরা নাকি মানুষ,
বুদ্ধিমান প্রাণী।
এই তোমাদের বুদ্ধির নমুনা,
হচ্ছে প্রাণহানি।
রোধ করতে চাইলে একে,
মানো কিছু নিয়ম।
ঘরবন্দি হয়ে থাকো,
ঝামেলা করো কম।
হাত মেলানো বন্ধ করো,
করো তবে প্রণাম।
“তোমার কী বুদ্ধি আছে”?
দাও তার প্রমাণ।
সাবান দিয়ে হাত ধোয়,
খাবার আগে পরে।
যতই হোক অনটন,
বন্দি থাকো ঘরে।
চিন্তা করেছ,’অভাব যাদের’,
চিরকালই ছিল।
দিন আনে দিন খায় তারা,
তারা কী আছে ভালো।
জীবন খুবই অল্পদিনের,
আনন্দ করে কাটাও।
বন্দি হয়ে থেকে ঘরে
পরিবার টাকে বাচাও।
লেখক পরিচিতি : বিশাল সাহা
ভয় হয়
ভয় পাই সেই মানুষকে….
যারা স্বেচ্ছাচারিতায় বহির্মুখী,
মারণ ভাইরাসের আত্মঘাতী বাহক,
নিজের ভুল নাকি পাগলে বোঝে,,,
কিন্তু,এই রক্তবীজদের চিনি না,
যারা নিজের বংশকেই ধ্বংস করে চলেছে অজ্ঞাতে,অবহেলে নিজের বুদ্ধিকে বন্ধক রেখে আজ তারা গুপ্ত হন্তক,
নিজ জাতির তো বটেই, সেইসঙ্গে দেশেরও।
তাই, ভয় হয়.. এই সব
বেওয়াদপদের দেখে
যারা সব সতর্কতা,
শত অনুরোধ উপেক্ষা করে আজ মানব বিধ্বংসী।
ইতিহাস কি পারবে এদের ক্ষমা করতে???
ভয় হয় তাদেরকে দেখে
অর্থকৌলিন্যে কিম্বা ধর্মের ধ্বজা ধরে যারা প্রশাসনকে
বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সমানভাবে সর্বগামী আজও,
ইতিহাস কি পারবে এদের
ক্ষমা করতে???
ভয় হয়,
মনের মাঝে ফেনিল উচ্ছ্বাসে কেবল একটাই আশঙ্কা জাগে
দিবারাত্র,
মানুষের হাসি কেড়ে নেওয়ার ইতিহাস পাঠ করার কেউ থাকবে কি আদৌ অবশিষ্ট !!!
লেখক পরিচিতি : রমেশ জাঠি