অরুনাংশু টেবিলের ওপর ফাইলটা রেখে দিলো সশব্দে, তারপর চেয়ারে বসে একটা পায়ের ওপর আর একটি পা রেখে গম্ভীর গলায় বললো ,ডিভোর্স চাইছো !

দেন ইউ ফাইনালি ওয়ান্ট ডিভোর্স ?
মিউচুয়াল ডিভোর্স উইদআউট এনি অ্যালিমনি?

রনিতা হেসে বললো,
ডোন্ট কল ইট ডিভোর্স, ইউ ক্যান কল ইট ফ্রিডম ৷

ফ্রিডম ! কিন্তু হঠাৎ এইধরনের ফ্রিডমের তোমার ঠিক প্রয়োজন কেন পড়লে জানতে পারি ? দীর্ঘ তিন বছর সম্পর্কে থেকে বিয়ে করার একবছরের মধ্যে এখন মুক্তি চাইছো !
হাউ কুড ইউ ?
এই এক বছরে আমাদের একদিনও ঝগড়া হয় নি,তোমার সব চাওয়া পাওয়া কে আমি সন্মান করেছি,তোমার মা বাবার সব দায়িত্ব আমি কাঁধে তুলে নিয়েছি ,তারপর ও !

হাউ কুড ইউ টেল দিস রনিতা ?প্লীজ টেল মি দ্যা রিজন ,হোয়াই ডু ইউ ওয়ান্ট ডিভোর্স ! আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লুস ইউ !!
আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না রনিতা,তোমার কোন বিষয় খারাপ লাগলে বলো প্লীজ, আমরা আলোচনা করে ব্যাপারটা সমাধান করেনি নিজেদের মধ্যে কিন্তু ডিভোর্স ফাইল করো না !

রনিতা একটু চুপ করে রইলো, তারপর অনেক ভেবে উত্তর দিলো,
সরি অরুনাংশু!সবকিছু আগের মতো হবে না আর,সরি !

কিন্তু আমার অপরাধ!আমাদের একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো তুমি এভাবে মিথ্যে করে দিতে পারবে রনিতা ?আমাদের ভালোবাসা এতটাই ঠুনকো ছিলো ?

রনিতা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো ,’এই নিয়ে আলোচনা করতে আমার ভালো লাগছে না,ফাইলটা ভালো করে পড়ে দেখে নিও’ ৷

অরুনাংশু ঘেমে অস্থির হয়ে উঠলো তারপর কাঁপা গলায় বললো, এইতো দুদিন আগে তুমি আমাকে ভালোবাসতে ,আর এখন বলছো !

রনিতা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো ,হ্যাঁ তোমাকে ভালোবাসতাম,বাসতাম,নাউ ইউ আর মাই পাস্ট,তুমি এখন আমার অতীত!আমি তোমাকে এখন আর ভালোবাসতে পারছি না!!আজকাল তোমার সাথে এই বিবাহিত জীবন বড্ড বেশী একঘেয়ে লাগে,আমি যেন নুইয়ে পড়ছি ভালো থাকার আর ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে ! তুমিতো জানো আমার কেউই আমাদের মনের উপর জোর খাটাতে পারি না !

অরুনাংশু রনিতার দুটো হাত শক্ত করে ধরে অনুরোধ করলো,আচ্ছা বলো আমি কি করলে তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসতে পারবে?আমি অফিস থেকে কদিনের ছুটি নিয়ে নি,আমরা বরং চলো কদিন ঘুরে আসি ,দেখবে তোমার ভালো লাগবে ,কেরল যাবে ? তুমি কতবার কেরল যাবে বলেছিলে না ! সত্যিই তো তোমাকে অফিসের চাপে কয়েকদিন একদম সময় দিতে পারি নি,আমার ভুল হয়ে গেছে,ফরগিভ মি রনিতা !
রনিতা নিজের হাত দুটো এক ঝটকায় অরুনাংশুর কাছ দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বললো,
ডোন্ট ফোর্স মি,ডোন্ট ফোর্স মি টু লাভ ইউ !আমাকে জোর করো না,তোমাকে ভালোবাসতে জোর করো না !!ডোন্ট ইউ লিসন,আই ওয়ান্ট ফ্রিডম,আই ওয়ান্ট ফ্রিডম !আই ওয়ান্ট ডিভোর্স!

অরুনাংশু এবার একটু শান্ত ভাবে বললো ওকে,তুমি যা চাইছো তাই হবে ,বাট আই ওয়ান্ট টু নো দ্যা রিজন,কারনটা বলবে রনিতা,এটুকু জানার অধিকার তুমি আমাকে নিশ্চয়ই দেবে,আফটার অল আমরা এতদিন একে অপরের পাশে থেকেছি,প্রেম করেছি, সংসার করেছি ৷
তোমার মনে আছে রনিতা আমাদের বিয়ের আগে তিনটে বছরের প্রতিদিন তোমার ঘুম ভাঙতো আমার গুড মর্নিং ম্যাসেজে আর রাতে তুমি আমাকে প্রথম গুড নাইট ম্যাসেজটা দিতে আর ওই যে মনে আছে আমাদের বিয়ের পর সারাদিন অফিসের কাজ করে আমি ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যা বেলাটা কেমন একসাথে চা খেতে খেতে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতাম দুজনে ব্যালকনিতে বসে,আমার অফিসের বস আর কলিগদের গল্প করতাম তোমার সাথে !
রনিতার এখন এসব শুনতে যেন অসহ্য লাগছে, সে বিরক্ত হয়ে বললো চুপ করো,স্টপ ! স্টপ অল অব দিস ,ননসেন্স !

এই মাসের মধ্যে আমাদের মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে যাবে আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি,তুমি শুধু সইটা করে দিও,বাই দ্যা ওয়ে,তোমাকে জানিয়ে রাখি,আমি কোন খোরপোষ দাবি করছি না,তাহলে তোমার তো অসুবিধা থাকার কথা নয় !

অরুনাংশু এতক্ষণে বুঝে গেছে, যে ভালোবাসার তীর তার সীমানা অতিক্রম করে চলে গেছে অনেক দূরে তাকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়,জোর করে আর যাইহোক ভালোবাসা পাওয়া যায় না,ভালোবাসার ভিক্ষা চাওয়া যায় না,যেখানে একজন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেখানে অন্য আর একজনের চাওয়ার কোন মূল্য নেই তাই শুধু পাথরের মতো একদৃষ্টিতে রনিতার দিকে তাকিয়ে বললো কারনটা বললে না যে !

রনিতা এবার যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো তারপর ফুরফুরে মেজাজে বললো আই আ্যাম ইন লাভ !

অরুনাংশু চমকে উঠলো লাভ !ভালোবাসা, কাকে ভালোবাসো তুমি ?এইতো দুদিন আগে অবধি তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসতে !
রনিতা জানালার পর্দাটা সরিয়ে জানালাটা খুলে দিলো, অস্ত যাওয়া সূর্যের রক্তিম বর্ণ আলোটা ঘরে প্রবেশ করলো বিনা বাধায় তারপর অসতর্ক ভাবেই বললো, তোমাদের অফিসের সিনিয়র ম্যানেজার,তোমার ছোট্ট বেলার বন্ধু প্রিয়তোষ কে ৷

অরুনাংশুর মাথায় এক মুহূর্তের জন্য আকাশ ভেঙে পড়লো,এত সহজেই রনিতা কথাটা বলে দিতে পারলো একটুও হেলদোল নেই ওর !অরূনাংশুর চোখ বেয়ে একসমুদ্র নোনাজল নেমে এলো কিন্তু না রনিতার কাছে এই অনুভূতির আর কোন মূন্য নেই তাই চোখের জলটা পকেট দিয়ে একটা রুমাল বের করে মুছে নিলো তাড়াতাড়ি রনিতার আড়ালে কিন্তু রনিতা কি সত্যিই কিছু জানতে পারবে না !রুমালটা তো সব জানে,সেটা যে রনিতার হাতে তৈরী,রুমলার এক কোনায় সেলাই করে লেখা আছে লাভ ফর অরু,ইওরস রনি….!!!প্রিয় মানুষের জন্য হাতে তৈরী রুমাল যেমন হয় আরকি !

অরুনাংশু নিজেকে শক্ত করে জিজ্ঞাসা করলো কবে থেকে ?কবে থেকে ভালোবাসো প্রিয়তোষকে ?

রনিতা এবার বেডরুমে চাদরটা চেঞ্জ করতে করতে এমনভাবে কথাগুলো বলতে লাগলে জানো এটা কোন ব্যাপারি না,একটা অতি তুচ্ছ ঘটনা !
আমাদের বিয়েতে প্রিয়তোষের সাথে তুমি ইনট্রোডিউস করে দিয়েছিলে,তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই ?
অরুনাংশু ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলো,

তারপর বিয়ের কয়েকমাস পর একদিন আমাদের বাড়িতে চায়ের আড্ডায় তুমি ওকে ইনভাইট করেছিলে,সেদিন আমাদের পরিচয়টা আরো গভীর ভাবে হয়েছিলো ,ওইদিন প্রিয়তোষ আমার ফোন নম্বার নিয়ে ছিলো,তারপর আমাদের নিয়মিত কথা হতো,সোস্যাল মিডিয়াতে আমাদের কথা হতো সারাক্ষণ,আর এখন আমার মনে হয় তোমার থেকে প্রিয়তোষের কাছে আমার সব কথা , একান্ত নিজের কথা শেয়ার করতে বেশি কমফোর্ট ফিল হয়, আমার কিছু করার নেই,সরি টু সে,মনকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি আমার নেই ,আমি জানি তোমার কাছে আজ আমি অপরাধী কিন্তু জীবনে নতুন,নতুন মোড় আসে,ভালোবাসা আসে,এগুলো আমরা অস্বীকার করতে পারি না,একদিন হয়তো তোমার জীবনেও ভালোবাসা আসবে আবার, সেদিন বুঝবে যেখানে আর ভালোবাসা থাকে না সেই সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না !আমি আর প্রিয়তোষ এই কদিনে অনেক স্বপ্ন দেখেছি,আমরা একসাথে থাকতে চাই অরু!

অরুনাংশু আর একটা কথাও বললো না,জানালার কাছে গিয়ে অর্ধমৃত সূর্যটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো,পাখিরা একে একে বাসায় ফিরতে শুরু করেছে সারা দিনের ক্লান্তির পর,তারা সবার ঘর আছে,অরুনাংশু মাথা নিচু করে নিলে ,তার আর বাসায় ফেরা হবেনা,তার আর ঘরে ফেরা হলো না !পর্দাটা টেনে দিয়ে ঘরের কোণে রাখা ইজি চেয়ারটায় দুলতে দুলতে রনিতাকে এক অভিমানী আড় চোখে দেখতে থাকলো, সামনেই রাখা টেবিলের ওপর খবরের কাগজের রবিবাসরীয় গল্পের শিরোনাম ‘বিশ্বাসঘাতক ও প্রতিশোধ ” তারপর কি সব সাতপাঁচ চিন্তা করে অরুনাংশু রনিতাকে বললো আজ সন্ধ্যায় একবার প্রিয়তোষকে ডাকতে পারবে,তোমাদের দুজনকে একসাথে কনগ্র্যাচুলেশন না বাংলায় কি যেন বলে ও হ্যাঁ অভিনন্দন জানাতে হবে তো,আর তিনজন না হয় শেষবারের মতো এক কাপ কফি,ও সরি সরি,প্রিয়তোষতো কফির থেকে চা বেশি ভালোবাসে ! কি ঠিক তো?তিনজন একসাথে চা খাওয়া যাক,এইটুকু কথা যদি রাখতে !

অরুনাংশুর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই রনিতা প্রিয়তোষের নাম্বার ডায়েল করলো,দুজন হেসে হেসে বেশ কিছুক্ষন কথা বলছিলো ,দেখে মনে হচ্ছিলো বহুকালের ,বহুযুগের অপেক্ষারত প্রেমিক প্রেমিকা কথা বলছে দুদন্ড ! অরুনাংশু সবটা দেখছিলো,একটা ঘরের মধ্যে দুজন আছে কিন্তু আজ কতটা দূরত্ব,এক আলোকবর্ষ সম দূরত্ব! ভিতরটা ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে তার, এখন আর চাইলেও সে ছুঁতে পারবে না তার রনিতাকে ,শুধু একটা ভুল এখন মাথায় ঘুরছে !সেদিন যদি প্রিয়তোষকে রনিতার সঙ্গে পরিচয় না করাতাম তাহলে!আবার পরক্ষনেই মনে হচ্ছে যে ভালোবাসার বাঁধন এত অগভীর তা আজ না হয় কাল ছিঁড়ে যেতোই!! এতক্ষনে ফোনটা রেখে রনিতা অনেকটা উৎসাহ নিয়ে বললো সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে আসছে প্রিয়তোষ,
অরুনাংশু ঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো ,ছোটো কাঁটাটা ২ আর বড়কাঁটাটা ছয় এর ঘরে তখন.. ৷
কিছু সময় পর রনিতা কিচেন দিয়ে স্পষ্ট শুনতে পেলো কলিং বেলটা বাজচ্ছে,দরজাটা খোলার জন্য দৌড়ে এলো রনিতা ,অরুনাংশু রনিতাকে থামিয়ে দিয়ে বললো ওয়েট, আজ প্রিয়তোষকে আমি ওয়েলকাম করবো,অরুনাংশু নিজের জামার কলারটা একটু ঠিকঠাক করে নিলো তারপর দরজা খুলেই প্রিয়তোষকে ওয়েলকাম,ওয়েলকাম করে ঘরের ভিতর নিয়ে আসলো,প্রিয়তোষের প্রথমে একটু অবাকই লাগলো অরুনাংশুর এই অদ্ভুত আচরণে,একটা মানুষ এরকম একটা বিষয় জানতে পেরে এতটা স্থির থাকতে পারে কি ভাবে!
অরুনাংশু দরজাটা বন্ধ করতে করতেই প্রিয়তোষকে জিজ্ঞাসা করলো
ডু ইউ লাভ মাই ওয়াই ?তুই আমার রনিতাকে ভালোবাসিস ?ঘর করবি একসাথে ?

প্রিয়তোষ একটু নড়েচড়ে বসলো তারপর জোর গলায় বললো, ইয়েস আই লাভ হার অ্যান্ড সি অলসো লাভ মি,উই ওয়ান্ট টু লিভ টুগেদার !

একটা মানুষ কতটা বিশ্বাসঘাতক হলে এরকম নির্লজ্জ বেহায়ার মতো বন্ধুর স্ত্রীর সাথে গোপনে সম্পর্ক করে বন্ধুকে ঠকাতে পারে ! অরুনাংশু প্রিয়তোষের পিঠে হাত রেখে বললো এইটুকুই জানার ছিলো,কনগ্র্যাচুলেশন প্রিয়তোষ,কনগ্র্যাচুলেশন রনিত,রনিতা কথা ঘুরিয়ে অরুনাংশুকে জিজ্ঞেসা করলো, তাহলে মিউচুয়াল ডিভোর্সে তোমার আর আপত্তি নেই তো কোন?

অরুনাংশু মুচকি হেসে বললো না নেই, একেবারে নেই !এবার তাহলে একসাথে চা খাওয়া যাক,তিন কাপ চা !

রনিতা কিচেনে ট্রেতে চায়ের কাপগুলো প্রায় সাজিয়ে ফেলেছে,প্রিয়তোষ আর অকারনে বাক্য ব্যয় করলো না, যেহেতু অরুনাংশু সহজেই সবটা মেনে নিয়েছে,তার উপরে অফিসের সিনিয়ার ম্যানেজর বলে কথা,এতটা ক্যাসুয়াল হলে চলে!রনিতা যেন এক সেকেন্ডে মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করল,খবরের কাগজে তখনও “বিশ্বাসঘাতক ও প্রতিশোধ” শিরনামীয় গল্পটা পড়া শেষ হয়নি অরুনাংশুর ,প্রিয়তোষের সাথে একটা কথাও আর না বলে বসার ঘরে প্রিয়তোষকে বসিয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেল অরুনাংশু !

আচমকাই,কেউ কিছু বোঝার আগেই ফল কাটার সব থেকে ধারানো ছুরিটা এনে প্রিয়তোষের গলায়,বুকে এলোপাথাড়ি ভাবে আঘাত করতে লাগলো,প্রিয়তোষ চিৎকার করে লুটিয়ে পড়লো মার্বেল ফ্লোরে, রনিতা চা রেখে সর্বশক্তি দিয়ে অরুনাংশুকে আটকাতে চেষ্টা করলো,অরুনাংশুর চাপা কষ্ট তাকে এতটাই হিংস্র করে দিয়েছিলো যে সে ভয়ানক এক পশুসুলভ জোরে ছিটকে সরিয়ে দিলো রনিতাকে ,রনিতা মুখ থুবড়ে পরলো মেঝেতে,তার মুখ নাক দিয়ে বেড়িয়ে আসা রক্তে ভরে গেল চারপাশ !
অরুনাংশু ছুরি ফেলে ছুটে গেল রনিতার কাছে ,রনিতাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে থাকলো, বিশ্বাস করো আমি তোমাকে মারতে চাইনি,আমি এটা ইচ্ছে করে করিনি,আমি শুধু প্রিয়তোষকে মারতে চেয়েছিলাম যার জন্য সেই পুরনো তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম তোমাকে আমি মারতে চাইনি,চোখ খোলো, চোখ খোলো রনিতা!
সারা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে,রাত গভীর হচ্ছে,দুটো মৃতদেহ পড়ে আছে ঘরে,অরূনাংশু উন্মাদ হয়ে উঠলো ,কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পুলিশ স্টেশনে ফোন করলো ,

হ্যালো, ৩৬ বালিগঞ্জ পুলিশ স্টেশন?
ইয়েস স্পিকিং
৩৬ বালিগঞ্জ সার্কেল রোডের ওপর “বেলাশেষে” অপার্টমেন্টে দুটো খুন হয়ে গেছে ,আমি অরুনাংশু সেনগুপ্ত খুনটা করেছি, আই অ্যাম দ্যা মার্ডারার, আমাকে অ্যারেস্ট করুন,অ্যারেস্ট ম,

ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকা পুলিশ স্টেশন থেকে পুলিশ এসে পৌছালো বেলাশেষের অপার্টমেন্টে ,মিঃ ও মিসেস সেনগুপ্ত নেমপ্লেট লাগানো দরজাটা ভিতর দিয়ে লক করা নেই,ঠ্যালা দিতেই খুলে গেল, মেঝেতে দুটো লাশ আর রক্ত,চারিদিকে রক্ত
!অরুনাংশু কোথায় আপনি বেরিয়ে আসুন…!
অরুনাংশুর কোন সারা না পেয়ে পুলিশ নিজেই বেডরুমটা সার্চ করতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলে,কিছুক্ষণ আগেই হয়তো অরুনাংশু রনিতার একটি শাড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে,পাশে একটা সুইসাইড নোট, লেখা রয়েছে “উই অল আর ফ্রি ফ্রম দ্যা বারডেন অফ লাইফ,উই অল আর ফ্রি নাউ ফ্রম দ্যা বারডেন অফ লাভ !
আমরা সবাই জীবন ও ভালোবাসার বোঝা থেকে মুক্ত,
ফ্রি,ফ্রি,ফ্রি!

বেডরুমের পাশে কিচেনের দরজাটা তখনও খোলা,একটু আগেই তো সব ঠিক ছিল,রনিতার ট্রেতে সাজানো তিনকাপ চা দিয়ে তখনও যেন ধোঁয়া উঠছে !!

লেখনীতে ইন্দ্রাণী দত্ত , পূর্ব বর্ধমান

ছোটোবেলা দিয়ে গল্প ও কবিতা লিখতে ভালোবাসি,একটি কবিতার বই “শব্দের ক্যানভাস” প্রকাশিত হয়েছে যা কিছুটা হলেও পরিচিতি এনে দিয়েছে ৷

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here