Sunday, December 22, 2024
Home অন্যান্য জীবনধারা ” শুভ বোন ফোঁটা “

” শুভ বোন ফোঁটা “

1
977

“..ও মা তোমার কত দেরি গো আর,দশ টা বাজলো, আশেপাশের বাড়ি থেকে দেখো শঙ্খ ধ্বনি বেজেই চলেছে।” এই যে হয়েই এসেছে, লুচি কটা ভেজে নিলেই হবে দাঁড়া,কি করি বলতো বলে হাঁফ ছাড়লো শ্রাবনী। সত্যিই মায়ের খুব কষ্ট,কাজের মেয়েও কটা দিন আসে নি,একা হাতে সব কিছু বাজার হাট জোগাড় তবু সংসারটা মাথায় করে রেখেছে,ছোট হলেও মায়ের কষ্ট বোঝে মোহর।কিরে তুই রেডি ,চুপ করে দাঁড়িয়ে যে,খুব খিদে পেয়েছে বল,আর একটু দাঁড়া শাড়িটা পড়িয়ে দিচ্ছি বলে মেয়েকে আলতো আদরে জড়িয়ে ধরলো মা।

“ওরে দাদা ,ফোঁটা টা দেই চল,আর দেরি করিস না দাদা,খুব,খুব খিদে পেয়েছে রে “বোন মোহরের কথাটা শেষ হতেই জ্যাঠুর ছেলে অভিক ,” না রে বোন,আমি আজ ফোঁটা নেব না,ফোঁটা দিতে ইচ্ছে করছে তোকে।একটু আয় তো,বোস তো চুপ করে আসনে!” দাদার কথা শুনে ফিক করে হেসে ওঠে মোহর ,, “মানেটা কি বলছিস রে তুই,খেয়াল আছে!

“হ্যাঁ,খেয়াল আছে পাকা বুড়ি ,আজ আমার যা ইচ্ছা,তাই করবো। সেই তোর জ্ঞান হওয়া থেকে দেখছি,কাকিমার সাথে উপোস করে কচি কচি হাতে দাদার মঙ্গল কামনায়,কত বেলা অবধি না খেয়ে আমায় ফোঁটা দিতিস”,এই বলে জোর করে মোহরকে আসনে বসিয়ে ব্যাগ থেকে খুব সুন্দর একটা হারের সেট বের করলো।সযত্নে বোনের গলায় পরিয়ে আয়নাও দেখালো দাদা। মিটি মিটি চোখে ,ঠোঁট কামড়ে চুপ হয়ে দেখছে মোহর আর ভাবছে ,”বাইরে পড়তে গিয়ে দাদার মাথাটা একদম গেছে”!

আরে বাহ,কি সুন্দর হারটা তোকে মানিয়েছে রে বোন,দেখ নিজে ,বলে একছুটে আয়না টা নিয়ে এলো অভিক। আজ তার দাদা যেভাবে, ঠাকুরের মতো বসিয়ে,যত্ন করছে,খুব লজ্জা লাগছে নিজেকে।বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে পয়সার জন্য পড়াটা মাঝ পথে বন্ধ হয়ে গেছিলো মোহরের।তবু শ্রাবনী কারুর কাছে হাত পাতে নি তার আপ্রাণ চেষ্টা সব কিছু ঠিক ঠাক করার।বড়লোক জ্যেঠু পছন্দ করে না অভিক মিশুক এদের সাথে কিন্তু বারণ সত্ত্বেও সে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে, টিউশনি করে ঘুণাক্ষরে কাউকে না জানিয়ে বোনের জন্য নিয়ম করে টাকা পাঠিয়ে আবার তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছে ! সব মনে পড়ছে আর ঝর ঝর করে কাঁদছে মোহর।অভিক দাদাকে নাকি মা বশ করেছে এমন কলঙ্কও দিয়েছে কেউ কেউ তবু দাদা নিজের জেদ বজায় রেখে আজ এই শুভদিনে হাজির। ধান-দুর্বার প্লেটটা হাতে তুলে নিলো অভিক,কড়ি আঙুলে চন্দনের ফোঁটা লাগিয়ে বোনের কপালে দিতে যাবে অমনি দেখে মা রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এসব কান্ড দেখে থ। ”

“ওরে দাঁড়া দাঁড়া ,এমন সুন্দর মুহূর্ত একটু শঙ্খ না বাজালে হয়” বলে মা ও বিহ্বল হয়ে উঠলেন।চোখের জল মুছতে মুছতে অভিককে বুকে জড়িয়ে বললো,” বাবা রে এইভাবে যদি প্রতিটা বাড়িতে ছেলে-পুরুষ,মা বোনেদের সম্মান করতো, তাহলে অন্তত মেয়েদের প্রতি সমাজের টালমাটাল ভাবনা, অবমাননাকর মানসিকতা পাল্টে সুদিন আসতো।আয় বুকে আয় তোরা দুটোতে আমার মানিক রতন,তোদের এই স্নেহ ভালোবাসা অক্ষত হোক এ আমার পরম প্রাপ্তি।

 

Writer Rana Chatterjee

লেখক পরিচিতি : রাণা চ্যাটার্জী, বিবেকানন্দ কলেজ মোড়, পোস্ট-শ্রীপল্লি, বর্ধমান পূর্ব

SOURCERana Chatterjee
Previous articleআত্মজা
Next articleঅপেক্ষা ও ঠিকানা : অনুগল্প
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

1 COMMENT

  1. খুব সুন্দর একটি পোস্ট,
    যদিও আমি বাংলা তে ব্লগ পোস্ট করিনা,
    তবুও পোস্ট টি খুব ভালো হয়েছে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here