কখনো খেয়াল করেছেন বস্তির গাদাগাদি কিমবা কাঁচা ছাঁদের ভিটে,
এদের সবারই জ্বলেছে চিতা, হয়েছে দাফন এই বিভিন্নতার মাটিতে।
দেশের লুকানো মুখ, খুঁজি আমার স্বজাতি এই আস্তাকুড়ের জীবনে
যুগ যুগ ধরে কেবল বয়ে যাচ্ছে অস্তিত্ব রক্ষায় বিনা পরিবর্তনে।
সমাজের একটা অবিছিন্ন অংশ দূরে আজ, এ সত্য চিরকালের
শিক্ষিত ভদ্র সমাজ মানতে নারাজ, তবুও আমরা জানি,
যারা দেখেছে শুধু আশা, উপলব্ধিতে কিছু হয়নি বাস্তবেও
রোজ বাঁচার যুদ্ধে, তাদের জীবনময় কেবল অনিশ্চয়তার হাতছানি।
এরকম কত হাজার পরিবার, স্বচ্ছ ভারতের আনাচে কানাচে
এরকমই কত বস্তির মেয়ের হাসি পোড়ে আজও কাঁচা উনুনের আঁচে।
তারা বঞ্চিত যোগ্য অধিকার হতে, পায়না রেশন,
হয়তো বা নেই জন্ম প্রমানপত্র,
রাষ্ট্র তাই চেচিয়ে বলে, বাঁচিয়ে রেখেছি এদের
এটাই তো স্বাভাবিক লোকতন্ত্র।
নেতাদের প্রতিশ্রুতিতে প্রতি ভোট উৎসবে
পণ্য স্বরূপ বিক্রি হয় এদের জীবন,
হোক সেই ঝুপড়ির ঠিকানা , কলকাতা কিমবা সুন্দরবন।
এরাই তো সেই শ্রমজীবি, সর্বহারার একাংশের সংজ্ঞা
রাষ্ট্রগড়ার ভীত এরা, চিরকালই যারা পায় সরকারি অবজ্ঞা।
জনগণও আজব বড্ড, সরকার কে দোষ দিয়েই খালাস আমরা,
দেখিনা নিজেদের স্বভাব, লুকোতে তে মুখের সামনে আয়না।
আমাদেরও হয় অস্বস্তি, এ কথা সত্য যে , সামনাসামনি এদের সাক্ষাতে,
অপরিচ্ছন্ন পোশাক, কালি মাখা দেহে,
সব কিছুতেই কেমন যেন এরা সরলতায় মাতে।
অভদ্রতায় দাগিয়ে কত লোক এড়িয়ে চলে এদের ভদ্রতার আড়ালে,
ওরা তবুও দেশ গড়ার কারিগর, চোখে মুখে যাদের অনার্যতার ছাপ,
রাষ্ট্র পেয়েছে সস্তার শ্রমিক, রাস্ট্রশ্রম যাদের কাধে চাপালে,
ওরা আমরা পৃথক নয়, এটা বোঝানোয় স্বার্থক শিক্ষার প্রকৃত ধাপ।
এরা দেয় কারখানায় রক্তঘাম শ্রম, শিল্পায়নে খাটে সস্তায় জোগালে
এদের প্রতিভায় শিল্পসত্ত্বা কত চাপা পড়ে, ঝা চকচকে বিজ্ঞাপনের আড়ালে
আমরা কি দিয়েছি তাদের দায়িত্ববোধের মূল্য ?
নিজে জ্বলে যেই জীবনগুলো আমাদে রসদ জোগায়,
আমরা কি দেখেছি একবারো,
ঝড় বৃষ্টি ক্ষুধায় এদের সংসারগুলো থাকে কি অবস্থায়।
ঝোড়ো বাতাস, মেঘলা আকাশ, বিদ্যুতের এক ঝলকে
নিশ্চিন্ত ঘুমে, চপ মুড়ি খিচুরির গন্ধে যখন নস্টালজিয়া দোলে হৃদয়ে,
এদের তখন হৃদয় কাপে, সামান্য প্রকৃতির ভ্রুকুটিতে,
ডরায় আবার কাঁচা ছাদ ভেদে ভাঙে সংসার , এই সংশয়ে।
দামি রেস্তোরাঁতে আমাদের যাওয়া আসা,
শরীরচর্চায় দেয় মন অনেকে সুস্থ স্বাস্থ্যের অনুপ্রেরণায়,
এদের কাধের আমাদের ভার, চেনেনি এরা নিজেদেরকে,
তবুও বেঁচে থাকার সংঘর্ষে , কঠোরতা এদের দেহের মজ্জায় মজ্জায়।
সমাজের একটা বিরাট অংশ, এদের করেছে পরিচয়ে আলাদা
বিচার করে এমন ভাবে যেন আলাদা প্রজাতির মানুষ,
এতো অবজ্ঞার পরেও কেন জাগেনা প্রতিরোধ ?
কারন এরা ব্যস্ত খিদে মেটাতেই, রাস্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হতে সকলে বেহুশ।
কিছু ব্যতিক্রম হয়ে যায় কোনো মতে, সেটা ভবিতব্য না,
সকলে পাবে তাদের অধিকার, সুস্থ্য দেশের প্রতি সকলের কামনা।
তবুও মাঝে মাঝে এরা এমন বিপ্লব জাগায়
রাস্ট্র তখন দমাতে অগ্রনী এই যন্ত্রের বেহাল দশায়,
এদের শিক্ষায় রাস্ট্রের ক্ষতি, চুরমার হবে ঔদ্ধত্যের রাজত্ব,
তাই তো এরা পিছিয়ে এখনো, এভাবেই দমে যায় কত বিপ্লবীর অস্তিত্ব।
কখনো কখনো কোনো প্রান যদিও বা দেখে মুক্তির আলো
নিজেদের দক্ষতায় হয়ে ওঠে প্রশ্নকর্তা যোগ্য
এভাবেই অল্প অল্প করে এগোচ্ছে তাদের অধ্যায়,
তবুও সব কিছুর পর কোথায় যেন থেকে যাচ্ছে একটা চেষ্টা ব্যর্থ।
চলছে লড়াই, এ লড়াই সবার বলো,
চাই সকলের জীবনের অধিকার সমান
ক্ষেত, খামার, শিল্পায়ন গড়ে তুলেছে এরা
নিজ শ্রমে পরিচয় এদের ,এরা সকলেই মেহনতি ইন্সান।।
কলমে রিতম সাহা, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ
বিএসসি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, কল্যানী ইউনিভার্সিটি। পড়াশোনার সাথে সাথে পার্টটাইম কাজ করি মাঝে মাঝে। এছাড়া সক্রিয় বামরাজনীতির সাথে যুক্ত। এবং আমাদের নিজেদের একটা সংস্থা আছে, যারা আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ায়, তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। ভবিষ্যতে এইজাতীয় বিভিন্ন প্রকল্পটাকেই আরো দৃঢ় করার লক্ষ্যে আছি। সাথে সিনেমা, ঘুরতে যাওয়া জীবনের অন্যতম নেশা।