সময় কি ?

3
988
  “এই পৃথিবীর রহস্যময়  
      সময় এর রহস্য কোন অংশে কম নয়  “
 এই বিশাল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে হাজার হাজার কোটি  কোটি রহস্যের মধ্যে ‘একটি রহস্য’ নিয়ে লেখাটা একটু কষ্টদায়ক । কষ্টদায়ক বলছি এই কারণে যে এর মধ্যে কোন একটি উল্লেখযোগ্য রহস্য খুঁজে বের করাই মুশকিল । কিন্তু কথায় আছে ,মনের জোর থাকলে অনেক মুশকিলই সহজ হয়ে যায়। তাই অনেক ভেবে এই সৃষ্টির প্রধান রহস্যটা কি, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম।               এই প্রবন্ধের নাম দেখে নিশ্চয়ই বোঝা গেছে যে আজ  সময়ের রহস্যের কথা বলব। তবে চলো দেখি,সময় এর রহস্যটা ঠিক কেমন?
● সময়ের রহস্য :
                          পৃথিবীর সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রমণের ফলে  এক বছর হয় ।আবার পৃথিবীর নিজের অক্ষের সাপেক্ষে একবার আবর্তনে  একদিন হয়। সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, মাস, বছর ইত্যাদি সবই আমাদের সৃষ্ট সময় এর পরিমাপক । কিন্তু সময়, নদীর স্রোতের মতো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই প্রবাদ আছে ,
          ” Time and tide waits for none   “
সময়ের স্রোতটা কি অদ্ভুত রহস্যময় তাই না ?তাই সময় যে কেমন রহস্যময় তার কিছু
ঘটনাবলি চলো দেখি –
ক) যদি কেউ সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে
দেয় ,তবে সে হারিয়ে যায়। আবার কেউ যদি সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার করে, তবে সে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয় অর্থাৎ জীবন যুদ্ধে জয়ী হয় ।এইসব কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রেই ঘটে অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও কী এমন ঘটে ?
     এটা একটু গভীরে বুঝলে দেখা যাবে,  যে ছোট থেকেই যদি আমরা পড়াশোনা বা নিজের কাজ না করি তবে ভবিষ্যতে আমাদের তার জন্য ভুগতে হয়। কিন্তু অন্যান্য প্রাণীরাও  যদি ছোট থেকে নিজেদের কাজ গুলো নিজেরা না করে, তবে তবে সময় কি তাদেরও  শাস্তি দেয় ?
এই রহস্যের উত্তর আমাদের জানা নেই। হয়তো ভবিষ্যতের বিজ্ঞান এই রহস্যের সমাধান করবে।
খ) সময়ের স্রোতে সমস্ত কিছুরই বয়স বাড়ে । এখানেও  একটা রহস্য আছে –  সময়ের স্রোত বিপরীতমুখী হয় না কেন ?  অর্থাৎ সবাইয়ের বয়স সময়ের সঙ্গে বাড়ে কিন্তু সময়ের সঙ্গে বয়স কমে না কেন ?
গ) বিজ্ঞানের এত অগ্রগতি হলেও, আমরা কিন্তু এখনও সময়কে আটকে রাখতে পারি না ।মানুষের জীবনে কোনো এক সময় পেরিয়ে গেলে তা আর কখনোই ফিরে আসে না। সময়টা সত্যিই  কি অদ্ভুত !
ঘ) এই সময়ের স্রোতের টানে কেউ ধনী হয়ে যায় আবার কেউ গরীব হয়ে যায়। আজ যে ধনী সেই কালকে সর্বস্ব হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায় ।আবার আজকে যে গরিব সেই কালকে সময়ের জোরেই  কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়।
           আবার বিভিন্ন খেলায় যেমন ক্রিকেট ফুটবলে একসময় একদল অন্যদলের থেকে পিছিয়ে ছিল, কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে অর্থাৎ খেলা শেষে দেখা গেল সেই পিছিয়ে থাকা দলটিই  জিতেছে , আবার কোন এগিয়ে থাকা দল খেলা শেষে দেখা গেল হেরে গেছে । আবারও তাই প্রমাণিত হয় যে সময় রহস্যময়।
তাই বলা যায়  –
    ” স্রোতের বেগে বয়ে যাওয়া সময় , 
               নয় কি রহস্যময়  ? “
ঙ) কোন ব্যক্তি নিজের কাজে বিফল হলে নিজের ভাগ্যের দোষ দেয়। অথচ সময়ই ভাগ্যকে বয়ে আনে । অর্থাৎ এই সময়ই এই জগতের নিয়ন্ত্রণকর্তা নয় কী ?
চ) সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীর ও মনে অদ্ভুত পরিবর্তন হয়। কিন্তু কেন এমন হয়?
     বিজ্ঞান বলে বৃদ্ধির জন্য এমন হয়, কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে আমাদের শরীরের বৃদ্ধি না হয়ে ক্ষয় হয় অর্থাৎ সময়ের জন্য এমন হয় না কী ?
     এখানে আরও একটা রহস্য আছে, মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীদের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়, এবং তারপর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় অথচ উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সারাজীবন ধরেই বৃদ্ধি হয় ।  তাহলে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে এটাও কি একটা রহস্য নয় ?
ছ) জীবনে কখনই থেমে যেতে নেই, তাতে যতই বাধা বিপত্তি আসুক না কেন  ? সব সময়ই এগিয়ে যেতে হয় । এই শিক্ষা আমরা সময় এর কাছ থেকেই তো পাই । সময়ই আমাদের বুঝতে শেখায়  এসব । অর্থাৎ এই রহস্যময় সময়ই আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক । অথচ সময়ের কোন প্রাণ নেই, শুধু পরিমাপ করা যায় । এটা কি স্বাভাবিক ব্যাপার মাত্র নাকি রহস্য !
জ) কোন ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছুই সময় মাপে । কিন্তু কেন ?
   আরো এই সময়ের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে –
1) সৃষ্টিকর্তা রূপে সময় :
     আদিম পৃথিবীতে মানুষ কাঁচা মাংস খেত , গাছের ছাল পরে লজ্জা-নিবারণ করত , কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ আগুনের ব্যবহার শিখল , শিকারের জন্য অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করল , শিখল চাকার ব্যবহার এবং চাষবাস ।আস্তে আস্তে মানুষ দলবদ্ধ হলো, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের জন্ম হল। আর তার ফলেই আদিম মানুষ সভ্য এবং উন্নত মানুষে পরিণত হল। মানুষ নানা দুর্গম স্থানে পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছায় নতুন দেশ, মহাদেশ, আবিষ্কার করল ।এসব কিছুই সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে ঘটেছে । সময় কি উন্নত সভ্যতার সৃষ্টিকর্তা নয় ?সময়ই কি পৃথিবীর বিধাতা নয় ? এর উত্তর আমরা আজও জানি না । তাই সময় কি আজও রহস্যময় নয় !
2) বিনাশকর্তা রূপে সময়ে :
      সময় আমাদের সৃষ্টিকর্তা যেমন তেমনি বিনাশকর্তা নয় কি? একটু বিশ্লেষণ করে দেখলে ব্যাপারটা বোঝা যায় – সময়ের সাথে সাথেই কত প্রাচীন সভ্যতা ,ঐতিহ্য কত প্রাচীন নগরী ধূলিসাৎ হয়ে গেছে । সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে কত ভাষা , কত জাতিগোষ্ঠী বিলুপ্ত হয়ে গেছে  । আবার সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন প্রাণী (যেমন – গোলাপি মাথা যুক্ত , ডোডো পাখি )ও উদ্ভিদও  বিলুপ্ত হয়ে গেছে । কিছু প্রাণী ( যেমন – রয়েল বেঙ্গল টাইগার) আজ বিলুপ্তির মুখে । সময়ের সঙ্গেই  এই পৃথিবীতে কত ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ ঘটেছে যা সারা পৃথিবীকে আতঙ্কে কাঁপিয়ে দিয়েছে ,  কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে  । তাহলে এখনও কি মনে হয় ,  সময়  রহস্যময় নয়  ? তাই সময় একধারে যেমন  নবীন সৃষ্টি করেছে তেমনি পুরাতন সবকিছু ধ্বংসও করেছে ।
3) রক্ষাকর্তা রূপে সময় :
      সময় আমাদের কাছে রক্ষাকর্তা । আগে আদিম পৃথিবীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটত ।  কিন্তু সময়ই  মানুষকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়তে শিখিয়েছে । মানুষ বিজ্ঞানের ব্যবহার করে , নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিপর্যয় মোকাবিলা করেছে । আবার বর্তমানেও করোনা মহামারির  সঙ্গে লড়াই করার জন্য সময় রক্ষাকর্তা হিসেবেই আমাদের সাহস যুগিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে সময়ের পরিবর্তনই  আমাদের আশ্বাস যোগাচ্ছে যে আমরাও এই মহামারির কবল থেকে রক্ষা পেতে পারি ।কারণ ,সময় থেমে থাকে না । আবার সময়ের পরিবর্তনেই আমরা  সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পেতে পারব । অর্থাৎ সত্যিই সময়টা রহস্যময় ।
তাই  বলা যায়  –
 সময়ই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা , বিনাশ কর্তা, রক্ষাকর্তা ,
এই সময়ই আমাদের কাছে যেন এক রহস্যময় বার্তা  । 
 
কথা শেষ:
  যতদিন কোন মানুষ বেঁচে থাকে ততদিন তার হাতে সময়ও  থাকে । আবার মানুষ মারা গেলে তার সময়ও  শেষ হয়ে যায় । অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের কাছেই সময় নির্দিষ্ট  । কিন্তু সময়ের শেষ নেই ,  কি অবাক ব্যাপার !
   যতদিন এই সৃষ্টি থাকবে ততদিন সময়ও থাকবে । সময়, প্রকৃতি ,সৃষ্টি – এই সব কিছুই রহস্যময় যাদের উত্তর আমরা জানি না । তাই আমাদেরও সময়কে কাজে লাগাতে হবে এবং উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে যখন আমরা এই সময়ের আসল রহস্যটা যে কি তা নিয়ে জানতে পারব ।
পরিশেষে তাই বলা যায় –
 সময় যত এগিয়ে যায় ,
   সময়ের রহস্য আমাদের ততো ভাবায় । ” 

কলমে সৌম্য পাইন ,বাঁকুড়া

3 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here