শিষ্টাচার কথাটার অর্থ হলো শিষ্ট আচার। শিষ্ট কথার অর্থ মার্জিত বা ভদ্র এবং আচার মানে আচার আচরণ। অর্থাৎ, শিষ্টাচার এবং সৌজন্য হলো এক বিশেষ মানবিক বৈশিষ্ট্য যার মাধ্যমে মানুষের বিনম্র বা মার্জিত আচার আচরণ ফুটে ওঠে। শিষ্ট আচার বিশিষ্ট মানুষকে বলা হয় শিষ্টাচারী এবং দুর্ব্যবহারকারী মানুষকে বলা হয় দুরাচারী।
সন্তান-সন্ততিদের প্রথম শিক্ষালয় হলো তাদের নিজ গৃহ। আর তাদের প্রথম শিক্ষক হলেন তাদের পিতা মাতা। পিতা মাতাই সন্তান সন্ততিদের শৈশব থেকে পুঁথিগত শিক্ষার সঙ্গে আচার-আচরণ গত শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এরপর তারা যখন শিক্ষার্জনের জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন তারা সেখানে ক্রমাগত শিষ্টাচার এবং সৌজন্য শেখে। বিদ্যালয়ে পাঠগ্ৰহণকালে শিক্ষার্থীদের মার্জিত আচরণ শেখা খুবই প্রয়োজনীয়। এতে শিক্ষক- শিক্ষার্থী সম্পর্কের বন্ধন বেশ দৃঢ় হয়। শিক্ষক মহাশয়রা সেজন্য বুদ্ধিমান ছাত্রদের প্রশংসার পাশাপাশি বিনম্র ছাত্রদেরও ভূয়সী প্রশংসা করে থাকেন। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই মানুষের সৌজন্যবোধ থাকা উচিত। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের আচরণ অভিপ্রেত না হলে পরস্পরের মধ্যে ঈর্ষান্বিত মনোভাব গড়ে ওঠে। আবার কেউ কেউ ধৈর্য্য হারিয়ে প্রতিযোগিতার বাইরে চলে যায়। তেমনি কর্মক্ষেত্রেও সহকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক আলাপ আলোচনায় সৌজন্যের ঘাটতি দেখা দিলে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। বন্ধু বান্ধবরা একে অপরের সঙ্গে ঠাট্টা তামাশা করে ঠিকই কিন্তু যখনই এর সীমারেখা পেরিয়ে যায় তখনই সমস্যার সূত্রপাত হয়। তাই এক্ষেত্রেও শিষ্টাচারের প্রতি অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে।
পিতা মাতা এবং গুরুজনদের প্রতি ছেলেমেয়েদের শিষ্টাচার প্রদর্শন করা অবশ্য কর্তব্য হওয়া উচিত। কেননা মার্জিত ব্যবহারের মাধ্যমেই একে অপরের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। যে যতই রাগান্বিত অবস্থায় থাকুক না কেন মিষ্টি ব্যবহারে তারও হৃদয় গলে যায়। তাই অকস্মাৎ রূঢ় ব্যবহারে পুরানো সম্পর্ক ভেঙে ফেলার চেয়ে মিষ্টি এবং বিনম্র ব্যবহারে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যেমে সেই সুপ্রাচীন কালে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই যে আজকের আধুনিকতা এবং ব্যস্ততায় মোড়া সমাজে মানুষের ভদ্রতা যেন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা পড়ছে। সামান্য অসুবিধায় তারা একে অপরকে সহজেই শত্রু বানিয়ে ফেলছে। কেউ পরকীয়া,কেউবা অর্থলোভে আবিষ্ট হয়ে ন্যায় নীতি বিসর্জন দিয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে। এই ডিজিটাল যুগে মানুষ পাশের মানুষটির প্রতি দৃষ্টি বিনিময় করার সৌজন্যও হারিয়ে ফেলছে। বিশেষ করে যুবসমাজ গুরুজন এবং শিক্ষাগুরুর প্রতি সামান্য সম্মান জ্ঞাপন করতেও ভুলে যাচ্ছে। মানুষের সামাজিকতা আজ অনেকটাই দিকভ্রান্ত হয়ে গেছে। পরিশেষে বলা যায় যে আজকের দিনে সুসম্পর্কে মোড়া একটা সুস্থ এবং সুন্দর সমাজ টিকিয়ে রাখতে হলে শিষ্টাচার এবং সৌজন্যের গুরুত্ব প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করা ভীষণ প্রয়োজন।
কলমে অমিত কুমার জানা, খড়্গপুর, পশ্চিমবঙ্গ
স্নাতক, বি.এড । বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘উত্তরবিল বিধানচন্দ্র শিক্ষায়তনে (গড়বেতা) -র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। ভারত এবং বাংলাদেশের বহু অনলাইন এবং অফলাইন পত্রিকায় লেখালেখি করেন। প্রকাশিত কাব্যগ্ৰন্থের নাম ‘মরীচিকা’, পরমাণু কাব্যগ্ৰন্থ ‘অন্য আগুন’, এবং গল্প সংকলন ‘অন্তরালে’। মরীচিকা কাব্যগ্ৰন্থের জন্য 2021 ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায়’ স্মৃতি পুরস্কার পান। বর্তমানে আরও কয়েকটি পুস্তক রচনায় নিযুক্ত আছেন।