বেদের দল এলো এক দেশে । খুব সুন্দর । সব যেন ছবির মতোন । সমুদ্র , পাহাড় , শহর – সব যেন পটে আঁকা ছবি ।
বেদেদের সর্দার অবাক হয়ে গেল । বাড়ি-ঘর আছে কিন্তু কেউ থাকে না । ঘর-দোর সব খোলা ।
ভিতরে উঁকি দিয়ে বেদিনীরা দেখে নিয়েছে থরে থরে মণি-মাণিক্য , খাওয়ার দাওয়ার প্রচুর আয়োজন কিন্তু লোকজন নেই ।
এতো সুন্দর দেশ দেখেও মন ভরলো না । কোলাহল নেই আর চুরি করেও তো মজা হবে না ।
বেদেদের রাণীর বয়স হয়েছে । সে সর্দারকে বলল – মণি-মাণিক্য কিছু নিলে দলের আর কোন চিন্তা থাকত না ।
রাজকন্যা বলল – বাবা , আমি একটা সুন্দর কানপাশা দেখলাম , নেবো !
সর্দার বলল – এই তো সবে এলাম , এখনই চুরি করা ঠিক হবে না । হয়তো কোন অভিসন্ধি রয়েছে । রাত নামল । তাঁবু খাঁটালো বেদের দল । রান্নাও চাপাল পুরোনো রসদ থেকে ।
চাঁদ উঠল গোল হয়ে । আর বকুল গাছের ডালে বসা দুটো লক্ষ্মী পেঁচা বেদের দলকে দেখে বেজায় খুশী হল । কতোদিন পর তারা মানুষের দেখা পেল ।
বেদের সর্দারও সাদা ধবধবে চাঁদের আলোয় স্পষ্ট হয়ে ওঠা লক্ষ্মী পেঁচা দুটোকে দেখে বেজায় খুশী হল ।
বেদেরা পাখিদের ভাষা জানে । ফলে ভাব জমে গেল কথায় কথায় । তারাও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল । পেঁচারা তো রাতে দেখতে পায় । ফলে চাঁদের আলোয় বেদেদের ছোট্ট রাজকুমারকে দেখে আহ্লাদে গলে পড়ল ।
এবার সর্দার বলল – এই দেশে এমনটা কেন ! সবই আছে কিন্তু মানুষজনের দেখা নেই । এমন ধারা কেন !
পেঁচাদের মধ্যে পুরুষ পেঁচা বলে উঠল – হাওয়ায় , মাটিতে এক রকমের জীবাণু – মানুষ দেখলেই – ঢুকে পড়ছে নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে । প্রথম বাজার বন্ধ হল । এখন তো কোন কিছুই আর খোলা দেখিনা ।
বেদেদের রাণী বলল – উপবাস করছে সবাই !
একরকমের ।
বেদেদের রাজকন্যা বলল – আহা-রে তবে তো সবাই অনাহারে মরে যাবে ।
এবার মেয়ে পেঁচা বলল – ওদের অনেকগুলি ঝিনুক বোন রয়েছে শুনেছি । তারাই এখন রান্নাবান্না করে খাওয়াচ্ছে ।
বেদেদের দলে পাকা চোরও রয়েছে । সে বলল – কোন কোন ঝিনুকে শুনেছি মুক্তোও তো থাকে ।
নারী পেঁচা বলল – তবে তো হত্যা করতে হয় । ঝিনুকের পেটেই তো মুক্তো থাকে ।
সর্দার বলল – সভ্য মানুষদের লোভ কি পুরোপুরি গেছে ! বলেই আড়চোখে তাকাল দলের বাকী সবার দিকে ।
পেঁচারা দুজনই তখন সমস্বরে বলে উঠল – কতো মানুষ যে মারা গেল । শকুনের দলে আকাশ ছেয়ে গেছিল । মানুষ বুঝি আর লোভ করবে না ।
দীর্ঘশ্বাস পড়ল সর্দারের । বলল – তাই যেন হয় ।
রাণী বলল – ওরা কি আর বের হবে না , আমি যে আতর এনেছিলুম আরব দেশের ।
মেয়ে পেঁচা বলল – তোমরা আরব দেশেও যাও ! ‘হ্যাঁ’ । ঘাড় কাত করে বলল বেদের রাণী ও রাজকন্যে ।
লক্ষ্মী পেঁচাদেরও খুব শখ হচ্ছে কিন্তু তাদের ডানায় তো অতো জোর নেই ।
মনের ভাব বুঝতে পেরে সর্দার বলল – ডানার জোর বাড়িয়ে দেওয়ার আযুর্বেদের ওষুধ আছে । তা খেলে আরব দেশে উড়ে যেতে পারবে ।
শুনে খুশীতে ডানা ঝাপটাতে শুরু করল দুজনে ।
এবার পেঁচাদের একজন বলল – তোমরাও তো মানুষ । সেই রোগের ভয় নেই তোমাদের !
রাণী বলল – আমরা তো লোভী নই অতো । গাছ-পালা , রোদ , আকাশ আমাদের বন্ধু ।
রাজকন্যা বলল – পথই যে আমাদের ঘর ।
সর্দার বলল – শামুকদের কি খবর !
এবার গোপন কথাটা ফাঁস করল সুন্দরী লক্ষ্মী-পেঁচা ।
মানুষেরা সব শামুক হয়ে গেছে ।
মানে !
হ্যাঁ-গো । তারা আর কেউ মানুষ নেই ।
চোর বেদে বলল – সর্দার , এবার যে প্রাণ অকালে যাবে !
সর্দার বলল – কতোদিন তোকে বলেছি , লোভে পাপ , পাপে মৃত্যু ।
যদিও চোরের সবে হাত পাকতে শুরু করেছে । পরদিন ভোরেই সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পাততাড়ি গোটালো বেদের দল । লাল নিশান উড়িয়ে যে গূঢ় সংকেত দেয় , তা আর দিলো না।
ওরা চলে যেতেই দিনের বেলাকার পাখির দল খিলখিল করে হেসে উঠল ।
তারা কিচির-মিচির করে বলতে থাকল – ভালোমানুষের পো – এবার তোমরা বের হও ।
নর-নারী যারা কিনা মানুষ মুখে মাস্ক বেঁধে হুটোপুটি না করে , একে একে দূরত্ব বজায় রেখে বের হতে থাকল ।
খুব সুখ্যাতি হল দুই লক্ষ্মী পেঁচার বুদ্ধির । আসলে তারা শুধু বেদে ছিল না । তারা ছিল ডাকাতের দল । সঙ্গে ছিল লাল নিশান । তা ওড়ালেই চলে আসত সত্যিকারের ভয়ংকর ডাকাতের দল ।
জানি না , এসব সত্যি কিনা ! তবে সেই থেকে সেই দেশের নাম হয়ে গেল – শামুকের দেশ ।
সেই দেশে শামুক আর মানুষের বড্ডো ভাব । ভাব গাছ-পালা পাখিদের সঙ্গেও ।

 

 

কলমে অভিজিৎ চৌধুরী, গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর

মদনমোহন তর্কালংকার সন্মাননা২০১৭,   নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্মৃতি পুরস্কার, কবিতা পাক্ষিক সম্মান , তারা বাংলা বিশেষ লেখক সন্মাননা , রেডক্রস বিশিষ্ট সাহিত্যিক সন্মাননা আইফেস্ট জীবনকৃতি সন্মাননা

প্রকাশিত উপন্যাস (১৬)  – প্রকাশিত অপ্রকাশিত ছোটগল্প    অনধিক ২০০

SOURCEঅভিজিৎ চৌধুরী
Previous articleক্যানভাসে বৈশাখ
Next articleবাতাবরণ
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here