আমি এক নতুন ত্রিদশ। কবির কল্পনায় সৃষ্ট ত্রিদশ,
যাহার মগজে চলছে হাতুড়ি
পচা, গলা কণ্টকময় মানবিকতায়।
যাদের বিবেক আজ,
নাক টিপে নর্দমায়।
তথাপি, আমার সর্বত্র অস্তিত্ব জুড়ে ভাংচুর।
আমি আজ নিমন্ত্রিত পৃথিবীর বুকে,
গন্তব্য শত আলোকবর্ষ – বহুদূর
শত কুঞ্জ পালক করে অপসারণ ।
অবশেষে পড়িলো ধুলোয় আমারই চরন।
গোল টেবিলে এ কিসের বৈঠক?
অজস্র কবির যেথা আনাগোনা।
একজন এসে, মুখে আমার বাধিলো বাধন।
বলিলো ইহা মাস্ক।
এভাবেই হলো আমার, পুষ্পবিহীন বরন।
সারি বেধে চলিলো সবে
মাঝে ক্ষানিক দুরত্ব।
আমি শুধিলাম, আমি নিমন্ত্রিত
খানাপিনা হবে কিনা-?
গর্জে উঠিলেন কবি।
চলুন তালে তাল, সবে সমেত
দেখিবেন এক মজার যুদ্ধ।
আমি চলিলাম, অনেক হইলো বেলা
চোখ মেলিয়া দেখিলাম শান্তির নীড়।
এ কোথায় আনিলে মোরে?
সব দেখি, ঘেরা প্রাচীর।
প্রবীণ কবি মাথা তুলিলো।
-সবুর করো গুরু।
দেখিয়া লও চক্ষু মেলিয়া, টুকিয়া লও ফর্দ
এখান থেকেই সব, হয়েছে শুরু।
বহু পথ হেটে, বহু দেশ ঘুরে
অবশেষে আমি এলাম
রূপসী নগরে।
এ মা, এখানে হাজারে হাজারে যুদ্ধে শহীদ
তথাপি, তাদের ঠিকানা আজ
জানাযাবিহীন কবরে।
আমি জিজ্ঞাসা করিলাম
এ কোথায় আনিলে আমায়, এ কেমন নগরী?
এক তরুণ কবির অট্টহাসি
কোটিপতি হতে চান? লাখপতি হবেন এটা নিশ্চিত
চলুন হয়ে যাই আমরা, মাস্ক ব্যাপারী।
বুঝিলাম, কোনো গন্ডগোল অবশ্যই আছে।
পেটে প্রচন্ড খিদে, খাবার চাইতেই
বলিলেন তারা-
তিন ফুট দূরে থাকুন, আসবেন না কাছে।
বেলা তখন প্রায় শেষ, পশ্চিম আকাশে
গোধূলি লগ্ন।
আমরা যখন পান চিবুই,
তখন সাদা পোশাকের কর্মীগুলি
যুদ্ধাহতের সেবায় মগ্ন।
আমি দেখিলাম নিজ চোখে
তারা সমগোত্রীয়।
এক দল নিজেদের সব টা দিয়ে
করছে যুদ্ধাহতের সেবা।
তাদের সাফল্যে আমরা আনন্দে মাতি।
আরেক দল- সাবরিনা, শাহেদ
করছে রিপোর্ট জালিয়াতি।
অবশেষে পরিষ্কার বুঝিলাম
ইহা এক মহামারী
সুযোগ সন্ধানী কারো কাছে ভালো,
আসলে তাহা মন্দ।
পৃথিবী হলো মৃত্যুপুরী
চোখের নিমিষে স্কুল, কলেজ
অফিস আদালত সব কিছু হলো বন্ধ।
তারপর, রাত তখন অনেক গভীর।
ছোট ছোট পায়ে, হেটে চললাম মেঠো পথ ধরে
কেটে গেছে জনপদের হাজারো ভিড়।
আচমকা শুনিলাম এক, বুক চাপা ক্রন্দন।
কৃষ্ণ গাত্রের মেয়েটির নাকি
আবারো ভেঙেছে মন।
বয়স তাহার তলানি ছুইছুই
গরীব বাবার,কালো মেয়ে
বিয়েটা তাই হয়নি তার।
অবশেষে ঠিক হয়েছিলো, সপ্ন বেধেছিল বুকে
লকডাউনে বিয়েটা, হয়ে ওঠেনি আর।
ওদিকে পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে।
গোল্ডেন পেলেই সাইকেল,
বাবা যে কথা দিয়েছে।
ওো বাবা, কবে আসিবে?
লাল রঙের সাইকেল আনিবে
এই ভেবে আমি সময় কাটাই।
ফোনের ওপাশে বাবার বুক ফেটে যায়
বেতন পাবো না রে বাপ,
শহরে চলছে শ্রমিক ছাটাই।
আমি নিরূপায়, আমিতো কেবল
কবির কল্পনায় সৃষ্ট।
তবে কেনো আমার চোখে পানি?
পৃথিবী কেনো হচ্ছে, পদতলে পিষ্ট।
যেদিকে তাকাই শুধুই আতংক
চারিদিকে মৃত্যুর হাতছানি।
সকলের মুখে ক্লেশ, অর্থহীন কবিতার বানী।
আমি অপারগ, নেই কোনো ক্ষমতা
তবু প্রশ্ন কিছু করতে পারি।
শোনো হে মহামারী।
তোমাকে এক প্রশ্ন করি।
ঘুরলে দেশ দেশান্তর।
তবুও ছুটেছো নিরন্তর।
শুনতে কি পাও না কোটি মানুষের আহাযারী?
যদি নাই শোনো
তবে ভেবে নিব, তুমি বধির।
তুমি হিংস্র, মানবতাহীন।
তুমি দুষ্টের পূজারী, তুমি অস্থির।
অবশেষে উনি জবাব দিলেন-
তোমাদের কর্মই ডাকিয়া আনিছে আমায়।
এইযে এত মৃত্যু, এত অশ্রু
এ কেবল তোমাদেরই দায়।
বলো দেখি আমায়, আমারই কারনে
হওনি কি তোমরা কোমল?
শত গোত্র ভুলে, তোমরা কি গড়ে তুলোনি
এক মানবিকতার দল?
তোমরা নিয়েছো একে অপরের খোজ।
বুজেছো দারিদ্র্যের কষ্ট,
বন্ধ করেছো অপচয়ী ভোজ।
বলো আমায়, শেষ কবে
বৃদ্ধ বাবার সাথে খেয়েছো দু মুঠো ভাত?
পরিবারের সবার সাথে, শেষ কবে
গল্প করে কাটিয়েছো রাত?
আমারই কারনে, গরীবের তরে
তোমাদের বেড়েছে দান।
সঠিক পথে এসেছে তারাও
যারা ধর্মের নামে করিতো ভান।
জানি আমি কেড়ে নিচ্ছি কোটি প্রান
বিশৃঙ্খল করে দিচ্ছি সবি।
যদি এ যাত্রায় বেচে যাও তুমি
গুছিয়ে নিও নতুন করে,
নতুন এক শান্তির পৃথিবী।
মির্জা নয়ন