বিকেল ৪ টে ৫০ এ রাজধানী এক্সপ্রেস ছাড়ল, রাই এর বুক টা ধুকপুক করছে, না হানিমুন এ যাচ্ছে বলে নয়, জীবনে প্রথম সে পাহাড় দেখবে, মনে মনে খুব চাইছে যেন স্নো ফল হয় ।
বাকিরা অবশ্য চায় না স্নো ফল হক, কারণ তাতে নাকি ঘোরা পন্ড হবে, সে হোক তবু রাই মনে মনে ঠাকুর কে ডাকছে,আর বলছে রাই এর ইচ্ছাই যেন পুরো হয় ।
হোই হোই করতে করতে যাচ্ছিল রাই রা, রাই আর রাই র বর বাদে আরো একটা ফ্যামিলি ছিল রাই দের সাথে, ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ এর মধ্যেই সন্ধ্যার টিফিন দিয়ে গেল, চা, সিঙাড়া, জুস, নোনতা সব মিলিয়ে বেশ জমে গেল ট্রেন এ সন্ধ্যের আড্ডা টা ।
রাই একটু লাজুক, introvert আসলে, মজা করতে খুব ভালবাসে ঠিকই কিন্তু পেরে ওঠে না, রাই একটা গল্পের বই খুলে পড়া শুরু করল, কিন্তু না হলো না পড়া, যতই হোক জীবনে প্রথম বার দূরপাল্লার ট্রেন এ করে কোথাও যাচ্ছে রাই, বার শুধু এদিক ওদিক চোখ যাচ্ছে ।
সবাই যখন গল্পে ব্যাস্ত রাই একটু উঠে washroom এর দিকে গেল, washroom এর দরজা গুলো যে কেমন করে খোলে সেটাই তো জানে না রাই, এদিকে আসে পাসে কেউ নেই তখন, বর কে ডাকবে কিন্তু বাকিরা যদি রাই কে বোকা ভাবে..অনেক চেষ্টা করে দরজা খুলে রাই বাথরুমে ঢুকলো, কিন্তু দরজা টা রাই বন্ধ করার আগেই একা একা বন্ধ হয়ে গেল, মনে হলো কেউ যেন ইচ্ছে করে করলো কাজ টা,কিন্তু এই ট্রেন এ কে এমন করবে? বছর ৩০ এর একটি ছেলে এসে বলে গেল এই ট্রেন এর বাথরুম এমনি হয় ভয় নেই, মুখ খেয়াল করার আগেই ছেলেটি চলে গেল, রাই র যেন কেমন গা টা ভার ভার হয়ে গেল ।
রাই গ্রাম এর মেয়ে অনেক কিছুই বিশ্বাস করে সে, কিন্তু অভি, অভি কে বললে তো বিশ্বাস করবে না, উল্টে এক ট্রেন লোক এর মাঝে হাসা হাসি শুরু করবে ।
রাই washroom থেকে এসে নিজের জায়গায় বসে, হ্যান্ড ব্যাগ টা খুলে একটু চেক করে নিল, টাকা পয়সা আর তার বাকি সাজগোজ এর জিনিস সব ঠিক আছে কি, রাই ছোট থেকেই ব্যাগ এর উপর অদ্ভুত মায়া ।সব সময় হাত এ একটা ব্যাগ রাখতেই হবে রাই কে, আর তাতে থাকবে কিছু টিপ র পাতা, কিছু সাজ এর জিনিস, একটা ছুরি, রাই এর প্রিয় পুতুল এসবই টুকিটাকি কত কি।
রাত বাড়ল irctc এর staff রা একে একে রাত এর খাওয়ার দিয়ে দিলেন, রাই আর অভি একসাথে বসে খেয়ে নিল, তারপর অভি নিজের বিছানা করে নিয়ে upper বার্থ এ উঠে গেল, একে একে আসে পাসে সবাই শুয়ে পরলো, কিন্তু রাই কি করবে, রাই এর তো ট্রেন এ ঘুমোনোর অভ্যাস নেই, আর তাছাড়া এই প্রথম বার বেরতে এসেছে, রাত এর ট্রেন জার্নি কেমন হয় দেখবে না ? কিন্তু আলো গুলো সব নিভিয়ে দেওয়ার পর রাই এর গা ভার হয়ে যেতে লগলো, বার বার মনে হচ্ছে উল্টো দিকের আপার বার্থ থেকে যেন কেউ রাই এর দিকে এক ভাবে দেখছে, চোখ তুলে তাকিয়ে দেখার সাহস রাই এর হচ্ছে না ।
রাই নিজের হ্যান্ড ব্যাগ টাকে আগলে ধরে শুয়ে শুয়ে জানলা র বাইরে দেখতে লাগলো, শীত র পোশাক তার উপর মোটা কম্বল খুব গরম হতে লাগলো, কিন্তু কাকে বলবে রাই এই কথা, ট্রেন এ তো এতো লোক রয়েছে, নিশ্চয় রাই এর একার জন্য AC কমানো হবে না । এই ভেবে রাই কম্বল গা থেকে সরিয়ে দিলো, কিন্তু তাতে ভীষণ অসস্তি হচ্ছে রাই এর, কারন irctc র staff রা, ticket examinar মহাশয় তাদের কাজের জন্য বার বার যাওয়া করছেন ।
অভি কে কি ডাকবে একবার, জায়গা টা চেঞ্জ করে নেবে, ভাবতে ভাবতেই আবার সেই আপার বার্থ এর লোক টা, irctc র কর্মরত staff কে বললেন, দাদা ভীষণ গরম হচ্ছে, AC টা একটু কমিয়ে দিন না, সাথে সাথেই আরও কিছু যাত্রী তাল এ তাল দিল, ac র temparature শেষ পর্যন্ত সেট করে দেওয়া হলো ।
কে এই লোক টা, গলা টা কি কোথাও শুনেছে আগে রাই, হোক রাই এবার ঘুমিয়ে পরলো, ঘুম যখন ভাংলো তখন কানপুর স্টেশন ।
বেশ কিছুক্ষণ জেগে ছিল রাই, বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, বার বার শুধু ওই অচেনা লোক টার কথা মাথায় এসে যাচ্ছে রাই এর, আচমকা গা টা কেমন যেন ভার হয়ে এলো রাই এর, অভি অভি বার দুএক ডাকল …
চা চা Irctc র staff এর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল রাই এর, কখন যে রাত এ ঘুমিয়ে গেছে টের ই পায় নি রাই ।সকাল এর জল খাবার খেয়ে, ১০ টায় নিউ দিল্লী স্টেশন এ নামল রাই রা, স্টেশন থেকে বাইরে এসে অভি, রাই কে লাগেজ নিয়ে একটু অপেক্ষা করতে বলল, অভি ততক্ষণ কাছে পিঠে সস্তায় কি হোটেল পাওয়া যায় খুজতে চলে গেল । পিরিয়ড হয়েছে রাই এর পেট এ বেশ যন্ত্রণা করছে, তার উপর আসে পাশে সব লোক জন ঠেলে ঠুলে দিয়ে চলে যাচ্ছে, খুব বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে রাই, আর খুব রাগ হচ্ছে অভি র উপর, এভাবে অচেনা জায়গায় কেউ এতো গুলো ব্যাগ নিয়ে বৌ কে দার করিয়ে রেখে যায়, যদি রঞ্জন হতো তাহলে এমন টা কোনোদিন করত না, আনমনা হয়ে গেল রাই..
ম্যাডাম, আপনার ট্রলী টা গড়িয়ে চলে যাচ্ছে তো, এবাবা দাদা প্লিজ কেউ একটু হেল্প করুন বলে পেছনে ঘুরতেই আবার সেই লোকটা রাই এর ট্রলী টা জায়গা মতোন রেখে দিয়ে গেছে ।
আজব তো এবার লোক টা ডাকতেই যাচ্ছিল রাই, অভি এসে ডাক দিল, চলো একটা ভালো হোটেল পেয়েছি তোমার ভালই লাগবে, গ্রুপ এর বাকিরা তাদের রিলেটিভ এর বাড়িতে গিয়ে উঠেছে, অগত্যা অভি আর রাই কে তাদের থেকে আলাদা হতে হলো আপাতত।
দিল্লী র পাহাড়গঞ্জে হোটেল নিয়েছে অভি বেশ কনজেসটেড এরিয়া, তবে খুব ভালো লেগেছে রাই এর, কি সুন্দর মার্কেট, রাই এর মন চাইছে সব কিছু কিনে নিতে ।
হোটেল এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বেরল রাই আর অভি, দুজন এ হাত ধরেই হাটছে, এই প্রথম বার অভি কে রাই এর বেশ কেয়ারি মনে হচ্ছে ।রুটি, ডাল মাখনি, ভাত রাজমা, কোল্ড ড্রিঙ্কস, ডেজার্ট সব মিলিয়ে জমিয়ে খেল দুজন এ, রাই এর খাওয়া আগে শেষ হলো, বেসিন এ হাত ধুতে গিয়ে রাই থমকে গেল, কল খোলার আগেই জল পরতে শুরু করলো, কেউ তো নেই এবারে আসে পাশে তাহলে কল কে খুললো, এবার রাই অভি কে বলল, অভি হেসে আরে কল এ সেন্সার লাগানো ছিল হয়ত, তুমিও পারো সত্যিই, অভির যুক্তি রাই এর ঠিক মন মতন হলো না ।
সন্ধ্যে ৭টা পাহাড়গঞ্জের হোটেল ছেড়ে এবার ওরা ওল্ড দিল্লী স্টেশন এর দিকে রওনা দিল । রাত ৯ টা নাগাত ওদের নেক্সট ট্রেন, অভি আবারও রাই কে বসিয়ে রেখে রাত এ ট্রেন এ উঠে কি খাবে জিজ্ঞেস করে চলে গেল কিনতে ।
অভি র এই হঠাৎ হঠাৎ একা রেখে চলে যাওয়া টা বড্ড বিরক্ত করছে রাই কে, রাই এর যে ভয় লাঘছে সেটা কি একটুও বুঝতেই পারছে না অভি ?একা একা বসে রাই অভি র ফিরে আসার অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনিই গ্রুপ র বাকি রা চলে এলো, রাই একটু মনে জোর পেল ।
আবার হই হই শুরু হয়ে গেল, রাত ৯:৫৫ নাগাত ট্রেন এ উঠে পরলো রাই রা, এই ট্রেন এ বেশিক্ষণ থাকতে হবে না রাত ৪টে নাগাত ই নেমে যাবে রাই রা ।
রাত র খাবার খেয়ে একটু শুয়ে পরলো সবাই, রাই আর শোয় নি, এইটুকু সময় বসেই কাটিয়ে দেবে সে ।
রাত তখন প্রায় ৩টে বাজে, হঠাৎ টর্চ র আলো নিয়ে কে যেন হেটে হেটে আসছে, বুক টা ধরাশ করে উঠলো রাই র । টিকিট এক্সামিনর মহাশয়, রাই দের পিছনের সিট টাই যিনি ছিলেন তার কাছে গেলেন, খানিক কথা কাটাকাটি হলো, গলাটা রাই এর চেনা লাগল, রঞ্জন এর গলা তো, কিন্তু রঞ্জন এখানে কি করে আসবে? তাহলে কি রবি, একবার গিয়ে দেখতে পারলে ভালো হতো, পুরনো কথা সব একে একে মনে আসতে লগলো রাই এর…
রাই রাই ওঠো, অভি ডাকল, এই বললে ঘুমোবে না এদিকে এখন এমন ঘুম তোমার কি এতবার ডাকতে হলো, চলো কালকা এসে গেছে এবার নামতে হবে ।
রাত এর কথা তখন বেমালুম ভুলেই গেছে রাই, আহা কি যে ভালো লাগছে, এবার ফীল হচ্ছে পাহাড় এর কাছাকাছি এসে গেছি ।
এক কাপ চা নিয়ে বসে ওরা সবাই গল্প করতে লগলো, রাই এদিক ওদিক ঘুরে ফোটো তুলছে, আর শুধু টয় ট্রেন র লাইন এর দিখে দেখছে ।কখন যে টয় ট্রেন টা আসবে…
টয় ট্রেন এ উঠে রাই শুধু আকাশ এর দিকেই দেখছে আর ভাবছে কখন বৃষ্টি হবে, রাই গ্রাম এর মেয়ে হলেও সে জানে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমবে আর তাতে স্নো ফল হওয়ার সম্ভবনা বাড়বে ।দেখতে দেখতে অনেক ওপরের দিকে উঠে গেল ওরা, অভি ডেকে বলল ওই দেখো রাই বরফ ।রাই র মন টা আনন্দে নেচে উঠলো ।
দুপুর নাগাত হোটেল এ পৌছালো রাই রা, ফ্রেশ হয়ে খেয়ে, Mall রোড এর দিকে গেল সবাই ।আর তারপর থেকেই রাই এর মনের ভয় আর গাড় হতে লগলো, ওই তো রঞ্জন এবার সে স্পষ্ট দেখেছে, কি করতে চায় ও, প্রতিশোধ? না না রঞ্জন কি ভাবে আসবে, রবি কি তবে ঘুরতে এলো?
রঞ্জন রাই এর পুরনো প্রেমিক, পাঁচ বছরের সম্পর্ক তাদের, রঞ্জন এর যমজ ভাই রবি, রাই আর রবি একি সাথে টিউশান পরত।সম্পর্ক টা আর পাঁচটা সম্পর্কের মতন ছিল না, রাই সম্পর্কে আসার কিছু দিন এর ভিতর ই বুজতে পারে, রঞ্জন মোটেও তার মতন নয়, ভীষণ অহঙ্কারী একটা মানুষ, সাথে খুব সন্দেহবাতিক ও বটে, রাই এই সম্পর্কে থাকতে চায় না, একথা বার বার জানায় রঞ্জন কে, কিন্তু রঞ্জন তো ছাড়বে না রাই কে, সে এক র পর এক অপরাধ করতে থাকে আর দিন শেষে একের পর এক নাটক করে ক্ষমা চেয়ে রাই কে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে, রাই এর জীবন টা নরক হয়ে উঠেছিল রঞ্জন র সাথে, রাই মনে মনে সব সময় রঞ্জন এর মৃত্ত্যু কামনা করত…রবি কে বন্ধু হিসাবে সব কথা জানায় রাই, কিন্তু তাতে কোন সুরাহা হয় নি, উল্ঠে সম্পর্কের আরও অবনতি হতে থাকে…
১০ ই ডিসেম্বর ঠিক সকাল ৭টা, হঠাৎ ই পাড়ার মোরে চিৎকার চেচামেছি, একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, রাই এর বুক টা ধরাশ করে উঠলো, আজ ভোরেই রঞ্জন এর সাথে চরম ঝগড়া হয়েছে রাই এর, রাই মনে মনে খুব করে বলেছে আর কোনোদিন যেন রঞ্জন এর মুখ দেখতে না হয় তাঁকে ।কাকিমা ও কাকিমা কি হয়েছে গো ? ওপরের জানলা দিয়ে রাই চিৎকার করলো ।রাই, রঞ্জন আর নেই…রাই এর শিরদারা দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো যেন, কোনো কিছুই অনুভব করতে পারছে না রাই ।
দেখতে দেখতে মাস খানেক কেটে গেল, রাই এর জীবন থেকে সব অবাঞ্চিত অশান্তি চলে গেছে, শুধু একটা খালি জায়গা তৈরী হয়েছে, কিন্তু তাতে রাই এর মনে কোনো দুঃখ নেই বরং এখন রাই এর মন অনেক শান্ত । কিন্তু শান্তি যার কপালে নেই সে কি করে বেশিদিন ভালো থাকবে, হঠাৎ ই টিউশান থেকে ফেরার পথে রবি র সাথে দেখা, রবি কে আজকাল এড়িয়ে যেতেই চায় রাই, রঞ্জন এর কোনো কথাই মনে করতে চায় না রাই, আজ রঞ্জন নেই তবু সৃতি গুলো এতটাই তিক্ত আর ভয়ানক রাই এর মনকে অশান্ত করে দেয়, বার বার নিজের ছোট বয়সের ভুল টাকে মনে করিয়ে দেয়, মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে যায় রাই এর…
রাই দাড়া , জানি আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইছিস, কিন্তু তোর ভালো হবে না কোনোদিন দেখিস, কেউ না জানুক আমি জানি, দাদার সাথে সেদিন ও তোর সকাল এ ঝগড়া হয়েছিল, আমার দাদার মৃত্যুর জন্য তুই দায়ি…
রবি চলে গেলো, কোনো উত্তর দিতে পরলো না রাই, মনে মনে যে লড়াই টা এতদিন লড়েছিল সে, আজ সেই লড়াই এ রবি তাকে হারিয়ে দিয়ে গেল…সত্যিই কি তবে রাই এর জন্য আজ আর রঞ্জন বেচে নেই? নিমেষে যেন রাই এর মনের ভিতর ঝড় উঠলো, মাথা ঝিম ঝিম করতে লগলো…
রাই এই রাই কি হয়েছে মা তোর, রাস্তায় কি শরীর খারাপ লাগছিল, মাথা ঘুরছিল, রবি না থাকলে আজকে যে কি হতো..রবি তুমি বসো, আমি তোমার জন্যে চা নিয়ে আসি, তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব জানি না, আজকে তুমি না থাকলে আমার মেয়ে টা..চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো রাই এর মা ।
কাকিমা বলল তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে নাকি, তা নিমন্ত্রণ করবি তো? আমার দাদা তোকে কোনোদিন অন্য করো হতে দেবে না দেখিস, তুই এই বিয়ে তে কোনোদিন সুখি হবি না রাই, দাদা তো তোদের বিয়ের জন্য গয়নাও বানিয়ে রেখেছিল, তুই নিমন্ত্রণ করলে ওটা গিফট এ দেবো তোকে, এই বলে রবি বেরিয়ে গেলো ।
রাই এর খুব অসহায় বোধ হচ্ছে এবার,বার বার রবির বলা কথা গুলো মনে এসে যাচ্ছে, আজ রঞ্জন নেই, তাই ওর সব দোষ সব ভুল মাফ হয়ে গেল, আর সে, সে যে দিন এর পর দিন ওই খারাপ সম্পর্ক টাকে বয়ে বেড়াচ্ছিল, ভিতর ভিতর শেষ হয়ে যাচ্ছিল..
রাই তোমার কি হয়েছে বলবে ? ঘুরতে এসেছ ঘোরো, এখনি হোটেল ফিরে গিয়ে কি করবে ? এই তো আসার দিনও বললে এই কিনব সেই কিনব তো কেনো, ছবি তুলব । রঞ্জন আমদের ফলো করছে, তুমি কেনো বুঝতে চাইছো না, কোনো রঞ্জন নেই, তোমাকে এতো খরচ করে সাইকোলজিস্ট দেখলাম, ঘুরতে নিয়ে এলাম তাও রঞ্জন তোমার মাথা থেকে যাচ্ছে না ।
খানিকক্ষণ এর জন্য চুপ করলো রাই, কিন্তু কিছুতেই তার ভালো লাগছে না, অভি তো কোনোভাবেই এখন হোটেল এ ফিরবে না, তাই সে একাই হোটেল চলে যাবে বলে ঠিক করলো ।
কাউকে কিছু না বলেই যে রাস্তা দিয়ে Mall রোড এ এসেছিল তারা সেই রাস্তা ধরেই হাটা শুরু করলো রাই, আনমনে কতক্ষণ যে হেটেছেরাই নিজেই জানে না ।
একি এ আমি কোথায় এলাম, এটা তো হোটেল এর রাস্তা টা নয়, হারিয়ে গেলাম নাকি ?অভি তো খুব বকবে এবার, হয়তোবা রাগ করে আমাকে ফেলে রেখেই বাড়ি ফিরে যাবে, ভয় এ কেঁদে ফেলল রাই ।
এই রাই আমার উপর রাগ করে আছো নাকি? রাই সোস্তি পেল অভি এসে গেছে, পিছনে ঘুরেই রাই, একি রঞ্জন তুমি ? হা হা হা অবাক হলে ভাবলে এতো সহজে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি? চলো তোমাকে পাহাড় ঘুড়িয়ে দেখাই, তোমার খুব স্নো ফল দেখার ইচ্ছে না, চলো রাই আমি তোমাকে নিয়ে যাবো আজ ওই পাহাড়ের মাথায় ওখানে বরফ পড়ছে, রঞ্জন হাটতে শুরু করলো, রাই ও মন্ত্রমুগ্ধর মতোন রঞ্জন কে অনুসরণ করতে শুরু করলো, যেন সে কাঠ পুতুল ।
খানিক দুর গিয়ে একটা পাহাড়ের কিনারায় ওরা থামল। তুমি এখানে কেনো এসেছো ? আমি এখন বিবাহিতা, তুমি মোরে গিয়েও কি আমকে একটু শান্তি দেবে না? অশ্লীল ভাষায় রাই ওর মনের জমা সমস্ত ক্ষোভ উগরে দিতে লগলো, চিৎকার করে গালি দিতে লাগলো, রাই এর এতদিন এর মনের ভিতরের জমা রাগ রাই কে আরো হিংস্র করে তুলল, পাহাড়ের হাড় হিম করা ঠান্ডা তেও রাই এর সমস্ত শরীর ঘাম এ ভিজে গেছে, নিজের হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা ছুরি বের করে রাই ইচ্ছে মতন কোপ দিতে লগলো যেন দুপক্ষে ধস্তাধস্তি চলছে, সে কি পৈশাচিক রূপ তখন রাই এর,খানিক পর রাই এর চোখে মুখে এক শান্তি র হাসি, আর মুখে একটাই কথা এবার শয়তান টা পুরোপুরি শেষ হয়েছে আর ভয় নেই।
অভি আর রেসকিউ টীম যখন রাই এর ক্ষত বিক্ষত দেহ খুজে পেল,বরফে ঢাকা পাহাড় তখন লাল রক্তের স্রোতে রঙিন হয়ে গেছে ।রাইকে হসপিটাল এ নিয়ে যাওয়া হলো, ছুরি টা রাই এরই,অভি সনাক্ত করে পুলিশ কে জানালো সব ঘটনা ।
বেশ ম্যাডাম এর জ্ঞান ফিরলে আমাদের খবর দেবেন আমাদের কিছু জিগ্যেস করার আছে । আপনি কি কিছু জানেন এই ব্যপারে অভি বাবু? আমি জানি না কি হয়েছিল কিন্তু কিছু বলার আছে আপনাকে হয়তো আপনার তদন্তে সুবিধা হবে, রাই আসা থেকেই বলছিল রঞ্জন; মানে রাই এর পুরনো প্রেমিক এখানে এসেছে, রাই এর এমনিতেই কাউনসিলিং চলছে আর সব সময় ও এই নিয়ে ভয় পেয়ে থাকে; আমি তাই আর ওর কথায় গুরুত্ব দি নি, কিন্তু ছেলেটি অনেক বছর হলো মারা গেছে, তবে তার এক যমজ ভাই আছে রবি, এখন আসল ঘটনা রাই ই বলতে পারবে, ততক্ষণ অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই ।পরদিন দুপুরে রাই এর জ্ঞান ফিরল,রাই চোখ মেলে অভির দিকে তাকালো; রাই কে এর আগে এতো শান্ত স্নিগ্ধ লাগে নি অভি র, ডাক্তার বললেন উনি এমনি ভালো আছেন তবে; উনি আর কোনোদিনও কথা বলতে পরবেন না ।অভি শুনে কাঠ হয়ে দাড়িয়ে রইল, আর রঞ্জন রহস্য অধরাই থেকে গেল….