অফিস থেকে ফিরে চা খেতে খেতেই হাঁক দিলেন দিবানাথ-
“কই রে তোতা – মুন্নি – আয় -’’
শুনেই রান্নাঘর থেকে মুখ বেঁকালেন রত্না। এই শুরু হল আদিখ্যেতা! ছেলেটাকে ডাকছ ডাক! সারাদিনের পর একটু দেখতে তো হবেই – লেখাপড়া কী করছে না করছে – কিন্তু ও মেয়েটাকে কেন? তার কাজ নেই? না। দিবানাথের আক্কেল কোনদিনই হবে না। আর এদিকে ইনি! কান তো খাড়া হয়েই ছিল! এখন একেবারে ছটফটানি! সব গোলমাল করবে এবার। আর মন থাকবে কাজে? জ্বালিয়ে খেলে একেবারে!
“এ্যাই—কী হচ্ছে কী? ঠিক করে বেলে দে রুটিগুলো! ফুলবে একটাও? ” রাগটা না ঢেকেই খেঁকিয়ে ওঠেন রত্না।
“মুন্নি -কুইক! দাদু ডাকছে চল!” উৎসাহে টগবগ করতে করতে রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায় তোতা।
“এ্যাই-’’, মুন্নিকে ছেড়ে এবার নাতিকে তেড়ে ওঠেন রত্না, “এখানে কী? যা পড়তে বসগে। দাদু ডাকছে। কানে যাচ্ছে না?”
“বা রে! মুন্নিও তো যাবে! দাদু বলেছে আজ দুজনকে একসাথে এ্যালজেব্রা শেখাবে—’’
রাগে গা, মাথা আবার জ্বলে ওঠে। “দুজনকে একসাথে”- ছেলের কথার ছিরি দেখো! একপলক ওর মুখের দিকে চেয়ে আবার বলেন,
“তুই যা। ও রুটি ক’টা বেলে দিয়ে যাচ্ছে।’’
“বা-রে! দাদু বুঝি বসে থাকবে?”
“তুই গেলি?”, এবার কড়া চোখে তাকান রত্না।
আর দাঁড়াবার সাহস পায় না তোতা। ওর চলে যাবার পথের দিকে তাকিয়ে ভেতরের রাগকে কষ্টে দমন করেন রত্না। দিবানাথের এ যেন এক পাগলামি! লোকের বাড়ি কাজ করে খায় যে – তাকে এই ঘোড়া রোগ ধরিয়ে কোন লাভ আছে? কিন্তু শুনবেন না দিবানাথ। ও মেয়েকে তিনি বিদ্যেধরী করবেনই! আর মেয়েটাও হয়েছে তেমনি! রুটি ক’টা বেলে দিয়ে কখন নিঃশব্দে সরে পড়েছে! টেরও পাননি! এখন এই বেলনচাকি তোলা -আটার জায়গা গুছিয়ে রাখা – রুটি ক্যাসারোলে ভরে খাবার টেবিলে রেখে আসা – এ সব তাকেই করতে হবে। কী লাভ তবে একমুঠো টাকা দিয়ে লোক রেখে? এসবের জন্যই তো একটা হাত নুড়কুৎ মেয়ে চাইছিলেন কবে থেকে? মুন্নিকে পেয়ে প্রথম দেখাতেই বেশ পছন্দ হয়ে গেছিল। পরিস্কার –পরিছন্ন – চটপটে – দেখতে শুনতেও বেশ! কাজকম্মও জানে সব! যতটুকু যেখানে দরকার – শিখিয়ে দিতে গিয়ে দেখেছেন – বেশ চটপট শিখে নিতেও পারে ! মনে মনে আশা করেছেন রত্না এতদিনে একটা সুরাহা হল। কিন্তু হবে না। সর্ষের মধ্যেই যে ভুত! যা শুরু করেছেন দিবানাথ। এ সুখ রত্নার কপালে বেশিদিন সইবে না।
না। তা বলে মেয়েটাকে পুরো দোষ দিতে পারেননা। কপালের গেরো। কে খণ্ডাবে?
রুটি ক্যাসারোলে ভরে টেবিলে রেখে এলেন। গ্যাস ওভেন মুছে, পরিস্কার করে, এক কাপ চায়ের জল বসালেন। সাড়ে সাতটা বাজে প্রায়! এখুনি আরম্ভ হয়ে যাবে সিরিয়ালটা। এই সময় জমিয়ে বড় কাপের এক কাপ চা – বেশ কড়া মিষ্টি – বেশি দুধ – আর ঘন লিকার দিয়ে খান। অনেকদিনের অভ্যেস। বাড়ির বাকি সবার মত ওসব গ্রীন টি-ফি তার পোষায় না।
বিশাখা অবশ্য বলে, “এসব ছাড়ো মা। বয়স বাড়ছে! অসুবিধেয় পড়বে”।
কান দেননা। সব কথায় কান দেবার দরকারই বা কি! চা টা ছেঁকে নিয়ে সোজা শোবার ঘরে ঢুকে গেলেন। এবার শান্তিতে বসে টিভি দেখবেন। বাইরে ড্রয়িং রুমে বিরাট একটা টি.ভি লাগিয়ে দিয়েছে ছেলে। কিন্তু পারতপক্ষে ওখানে বসেন না রত্না। বসলে দিবানাথের হুংকারে একটা বর্ণও শোনা যায় না। এই তো আজও! ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই দিবানাথের দিব্য কণ্ঠ্য কানে আসছিল! অঙ্ক! ওই অঙ্কই কাল! এমনিতেই ও বিষয়টা বরাবরই ভীষণ গোলমেলে তার কাছে! আর সেদিন ওই অঙ্ক নিয়েই তো হল কাণ্ডটা!
মাসখানেক আগের কথা! সেদিনই দিবানাথের বাড়ি ফিরতে দেরী! এদিকে পরদিনই তোতার ক্লাসটেষ্ট। একটা অঙ্ক নিয়ে পাগলের মত হাবুডুবু খাচ্ছে ছেলেটা! সব ঠিক বলছে – এদিকে উত্তর মিলছে না। দুই-একবার “উত্তর ভুল থাকতে পারে” বলার চেষ্টা করে ধ্যাঁতানি খেয়ে ফিরে এসেছেন রত্না। নিজের ক্ষমতা নেই। এদিকে ছেলেটার উচাটন দেখে অস্থিরও লাগছে খুব! কখন যে ওই মেয়ে তোতার ঘাড়ের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে – মন দিয়ে অঙ্কটা জরীপ করেছে খেয়ালই করেননি। শেষে হি-হি করে হাসি শুনে চমকেছেন রত্না! তোতাও! ততক্ষণে মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসি থামাবার চেষ্টা করছে মেয়েটা। রত্নার গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে অপ্রস্তুতও একটু। আমতা আমতা করে ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছে।
“সাত আষ্টে ছাপ্পান্নো হয়। তুমি আগাগোড়া সেটাকে পঁয়ষট্টি লিখে গেছো।”
তোতা তো হাঁ! সঙ্গে রত্নাও! “তুই লেখাপড়া জানিস?”
“হুম-!”, একহাত ঘাড় কাত করে জবাব দিয়েছে মেয়েটা, “গ্রামের ইস্কুলে সিক্স অব্দি পড়েছি তো। মা জোর করে কাজে লাগিয়ে দিল –”
কথা শেষ করার মধ্যেই চোখে জল চিকচিকিয়ে উঠেছে। রাতে খেতে বসে সেই ঘটনা দাদুর কাছে রসিয়ে রসিয়ে পেশ করল তোতা। ব্যস। হুকুম হয়ে গেল —
“কাল থেকে তোতার সঙ্গে বই নিয়ে বসবি।’’
শুনে খুশীতে, আনন্দে উছলোতে উছলোতে নিজের শোবার জায়গা হাঁকড়ে এক পাঁজা বই নিয়ে এসে হাজির মেয়েটা! দেখে তো অবাক রত্না!
“কোথায় পেলিরে?”
একগাল হাসি মেয়ের, “মাকে লুকিয়ে নিয়ে এসেছি।”
বোঝ!
তাও, তখনও – বিশেষ কিছু ভাবেননি। দিবানাথ পড়াশোনা পাগল মানুষ। তোতাকে শেখাচ্ছেন – সঙ্গে মেয়েটাকেও বসাবেন। যাকগে। গরীবের মেয়ে। কাজকর্ম সেরে যদি শেখে একটু আধটু – শিখুক না। কিন্তু এখন তো উল্টো গাইছেন দিবানাথ! হপ্তা খানেক আগে রাতে খাবার টেবিলে বসে মুক্ত কণ্ঠেই নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ও মেয়েকে লেখাপড়া শেখাবেন তিনি। ইস্কুলে ভর্তি করবেন। দারুন! নাকি সাংঘাতিক ইন্টেলিজেন্ট মেয়ে! লেখাপড়া শিখলে এ মেয়ে ভবিষ্যতে জজ, ব্যারিষ্টার কিছু একটা হবেই বলে তার বিশ্বাস! অবাক হয়ে চেয়ে থেকেছেন রত্না! এতখানি বয়সে এসেও এতটুকু সাংসারিক বুদ্ধি হল না লোকটার! সংসারের কাজের সুবিধার জন্যই তো মেয়েটাকে আনা! সেখানে –
“কাজ! সে যেমন করছে করুক না!”, সাফ জবাব দিবানাথের, “ওতে লেখাপড়ার ক্ষতি হয় না। সকাল এগারোটা থেকে চারটে অব্দি স্কুল। ওই সময় আবার কী কাজ?”
কী কাজ? কী করে বোঝাবেন রত্না? সংসারের কাজের মাথামুণ্ডু ও মানুষ বোঝেই বা কী ! সকালে শান্তি এসে রান্না করে দিয়ে যায়। তারপর একে একে সবাইকে খেতে দেওয়া – জনে জনে টিফিন গুছিয়ে দেওয়া – টেবিল পরিস্কার করা – মেশিনে জামা কাপড় কাচতে দেওয়া – কাচা হলে সেসব আবার ছাদে শুকোতে দেওয়া – ফিল্টারে জল ঢালা। দুপুরেই কী কাজ কম? ওই সময়টাই বড় আলস্য লাগে। ইচ্ছে হয় ভাতটা কেউ বেড়ে দিক সামনে। একটু আধটু গরম ভাজা ভুজি ভালবাসেন। সেগুলো করা। খাবার পর এঁটো বাসন জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখা – এ ছাড়াও আছে ঘর দোর ঝাড়পোঁছ করা – ফার্নিচারগুলো মোছা – জানলা দরজার গ্রীল পরিস্কার করা – সংসারের ঊনকোটি কাজের কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবেন? তাই ওদিক মাড়াননি রত্না। অন্য পথে এগিয়েছেন।
-মুন্নিকে লেখাপড়া শেখাবেন দিবানাথ। ইস্কুলে পড়াবেন। সে বেশ। কিন্তু খরচ?
হা –হা করে হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন দিবানাথ।
“খরচ আবার কি? এখন সরকারি ইস্কুলে খরচ তো লাগেই না উল্টে সব সুবিধে পাওয়া যায়। নতুন বছরে এই পাড়ার ইস্কুলেই ভর্তি করে দেব। দিব্যি যাবে আসবে।’’
মনে মনে প্রমাদ গুনেছেন রত্না। দিবানাথ যখন জেদ ধরেছেন – করেই ছাড়বেন। তার মানে কাজের দফা গয়া! ও মেয়ে এখন ইস্কুলে যাবে আসবে আর এদিকে মাস গেলেই হাজির হয়ে যাবে ওর মা। গুনে গুনে আড়াইটি হাজার টাকা দাও! অর্থাৎ রত্নার লোকসান সবদিকেই। মাসে মাসে টাকাও দাও আবার ও মেয়েকে নিজেদের খরচ খরচা (দিবানাথ যতই বলুন কিছু তো লাগেই) ক’রে বিদ্যেধরীও বানিয়ে তোল! এসবের কোন মানে হয়? পরের মেয়েকে নিয়ে এত কিসের আদিখ্যেতা? বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকবে না? সারাদিন ইস্কুল করে এসে সন্ধেয় কাজ করতে পারবে ওইটুকু মেয়ে? ঢুল ধরবে না? তারপর সাড়ে সাতটা বাজলেই পড়তে ডাক দেবেন দিবানাথ! ব্যস! কাজগুলো হবে কী করে? কিন্তু ও মানুষের কাছে এসব তো অতি নগন্য ব্যাপার! মোট্টে মাথা গলাবেন না এদিকে! অথচ সর্ব কর্মটি ভণ্ডুল করতে ওস্তাদ! মেয়েটাও হয়েছে তেমনি! আগে সংসারের কাজে কী মন ছিল! দুদিন ছাড়া ভাঁড়ার গুছোনো, কৌটো কাটা ধোয়া, কাবার্ড মুছে ঝকঝকে করা – দেখে চোখ জুড়োত। আলমারী গুছোতে আজকাল বড় বিরক্তি আসে নিজের। একদিন বলতেই একগাল হেসে কেমন সুন্দর, পরিপাটি করে গুছিয়ে দিল! পাটে পাটে শাড়ী, থাকে থাকে ব্লাউজ। দেখে তো মুগ্ধ রত্না! আর এখন? ওসবে একফোঁটা মন আছে? কোনরকমে নিয়মমাফিক কাজটুকু সারতে পারলেই হল। গিয়ে বসে পড়লেন বইখাতা নিয়ে! পেছন থেকে মাঝে মাঝে ওই দুলে দুলে বই মুখস্থ করা দেখলে গা জ্বলে! এদিকে যে রান্নাঘরে ঝুল জমছে – জামাকাপড় ডাঁই হচ্ছে – গ্রীলগুলোয় ধুলো পড়ছে – সেসবের দিকে আর নজর নেই। তাও এখনও ইস্কুল শুরু হয়নি। হলে ও মেয়েকেও ইস্কুলের ভাত বেড়ে দিতে হবে। এসব কিন্তু মোটেই তলাবেন না দিবানাথ! ছেলে, বউ মাথা গলাবে না। অগত্যা! নিজেকেই হাল ধরতে হচ্ছে। মাথা খাটাতে হচ্ছে বিস্তর। সহজ পথে এ সমস্যা তো মিটবে না। দিবানাথ শুধু চটবেন না – রীতিমত প্রলয় বাধাবেন। সমাজসেবার ভুত ঘাড়ে চেপেছে তার। সংসার চুলোয় যাক।
অনেক ভেবে উপায় বার করেছেন একটা। তবে সবটাই করতে হবে সকলের অজ্ঞাতে। জানলে অনর্থ বাধবে। ওই একফোঁটা তোতাও কি কম! মেয়েটাকে তো এখনই নিজের সমগোত্রীয় ভাবতে শুরু করেছে ও। ক’দিন আগেই তো রাতে কী কাণ্ডটা করল! টেবিলে খাবার বেড়ে দিয়েছেন। হঠাৎই সবার চোখের সামনে নিজের থালা নিয়ে মেঝেতে ওই মুন্নির পাশে বসে খাওয়া শুরু করে দিল ছেলে! শুধু কি তাই? নিজের পাত থেকে মাছ ভেঙ্গে ওর পাতে তুলে দেওয়া! দেখে তো হাঁ রত্না! দুপুরে ওকে মাছ দিয়েছেন তো! তবে? এই যদি শুরুতেই হয় -এর পর ও মেয়ে ইস্কুলে যেতে শুরু করলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ব্যাপারখানা ?
কলিংবেলটা বাজছে। সম্বিত ফেরে রত্নার। বিশাখা এসে গেল? সাড়ে আটটা বেজে গেল! যাঃ। ঠিক করে দেখাই হল না সিরিয়ালটা। চেয়ে বসেছিলেন ঠিকই – কিন্তু এক বর্ণও মাথায় ঢুকল না এই হাবিজাবি চিন্তার ঠেলায়। বালিশে ঠেসান দিয়ে আচমকা শুয়ে পড়লেন। একটু পরেই বিশাখা আসবে। জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে। এই সময়ই আধ ঘণ্টা শাশুড়ী বউএর খোশ গল্প চলে। ধ্রুব ফেরে সোয়া নটা থেকে সাড়ে নটার মধ্যে। তখন উঠে পড়তে হয় দুজনকেই। মুন্নিকে খাবারগুলো গরম করতে হুকুম দিয়ে রত্না নিজেও বসে পড়েন সবার সাথে। রাতের খাওয়াটা একসাথে সবাই খাবে এটা দিবানাথের ইচ্ছে। খাবার পরে এঁটো পাট সেরে, বাসন কোসনে জল দিয়ে, বাকি খাবার দাবার ফ্রীজে তুলে, টেবিল মুছে শুতে যায় মুন্নি। এখন আর সবটা পেরে ওঠেন না রত্না একা হাতে। মেয়েটাকে শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরী করে নিলেন – এখন ঘরের লোকের বেআক্কেলে স্বভাবের জন্য সেটাও হাতছাড়া হবে বেশ বোঝা যাচ্ছে। রাগে দুঃখে চোখে জল এসে যায়। চিরটাকাল পরের ভালমন্দ দেখে এলেন দিবানাথ! নিজের স্ত্রীর দিকে দেখলেন একবারও?
“সাবাস রে মেয়ে! দ্যাখ! দ্যাখ তোতা! মুন্নি করে ফেলেছে! তোর এখনো হলনা?”
দিবানাথের চীৎকারে চিন্তার রেশ কেটে যায়। বাহবা দিচ্ছেন মেয়েটাকে।
“নাঃ তোতা। স্বীকার করতেই হচ্ছে – মুন্নির মাথা তোর চেয়েও পরিস্কার!”
টি.ভি টা বন্ধ করে সটান উঠে দাঁড়ান রত্না। সোজা গিয়ে দাঁড়ান তোতার পড়ার ঘরে।
“মুন্নি – ওঠ। খাবারগুলো গরম কর। এক্ষুনি..’’
“আঃ থামোনা,” বিরক্তমুখে তাকান দিবানাথ, “অঙ্কটা শেষ হোক। সবে তো পৌনে নটা। ধ্রুব তো এখনো আসেনি।’’
“না আসুক,” দিবানাথের দিকে দৃকপাত না করে আবার হুকুম করেন রত্না, “খাবারগুলো ফ্রীজ থেকে বার করতে হবে। একটু বেগুন ভাজতে হবে। কাজ আছে। কই রে? উঠলি!”
“তুমি বার করনা। বেগুন ভাজতে তোমারই বা কী অসুবিধে! ও একটা কাজ করছে তো নাকি?”
“আমি! আমি করব!” আহত বিস্ময়ে চোখ তুলে তাকান রত্না।
ততক্ষণে লাফিয়ে উঠেছে মুন্নি, “আমি করছি। দাদু, বাকিটা কাল দুপুরে করে রেখে দেব। রাতে দেখে দিও।”
“না।’’, কড়া কন্ঠে ধমক দিয়ে ওকে বসিয়ে দেন দিবানাথ, “আগে শেষ কর। কাজ কিছু পালিয়ে যাচ্ছে না।’’
স্তব্ধবাক রত্না। এতদূর! বাড়াবাড়ির সীমা পেরিয়ে যাচ্ছেন না কি দিবানাথ? তবে তো আর দেরী করা যায়না। খুব শীগগিরি এর একটা বিহিত করতে হবে। কাল-ই খবর পাঠাবেন মুন্নির মাকে। তারপর খেলাটা শুরু। দেখা যাক। কতদূর যেতে পারেন দিবানাথ? সাংসারিক বুদ্ধির দৌড়ে কতটা পাল্লা দিতে পারেন রত্নার সাথে?
দুই
রুটিগুলো ছিঁড়ে নাড়াচাড়া করে উঠে পড়লেন দিবানাথ। খান তো মোটে তিনখানা। তাও খেলেননা আজ। খাবার নষ্ট করা তার স্বভাব নয়। তবু – দুধের বাটি পড়েই রইল। তাকালেনও না। ক’দিন আগের অপমানের দাহ ও মুখ দেখে জুড়োচ্ছিলো বটে – কিন্তু শেষে আর পারলেন না রত্না,
“ও কী? উঠছ যে! দুধটা চুমুক দিয়ে খেয়ে যাও’’
“থাক। ভাল্লাগছে না।’’, বেসিনে হাত ধুতে ধুতে মুখ না ফিরিয়েই জবাব দিলেন দিবানাথ।
তোতা তো শুধু ভাতগুলো নিয়ে নাড়াচাড়াই করছে। অমন পমফ্রেট গ্রিল করেছেন আজ! খুঁটেই দেখল না। সবার অলক্ষ্যে দুবার চোখ মুছতে দেখেছেন। বিশাখা মাথা নিচু করে রুটি ছিঁড়ছে, তরকারি লাগিয়ে মুখে পুরছে। সবটাই যন্ত্রের মত। একমাত্র ধ্রুবরই কোন প্রতিক্রিয়া নেই! বাঁ হাতে মোবাইল ধরে, মেল চেক করতে করতে খেয়ে যাচ্ছে। ও ছেলে কী খাচ্ছে – জিজ্ঞেস করলে বলতেও পারবে না। অফিস নিবেদিত মনপ্রান। আজকের সমস্যাটা কানে ঢুকেছে কিনা জানেন না রত্না তবে মগজ অবধি যে পৌঁছোয়নি এ বিষয়ে নিশ্চিত। শুনলেও দু মিনিটেই ভুলে যাবে। হুমড়ি খেয়ে পড়বে ল্যাপটপে। ভুলে যাবে তোতাও। দু-একদিন। তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়বে নিজের বন্ধু-বান্ধব, পড়াশুনো – খেলাধুলো নিয়ে। দিবানাথের ঘাড় থেকেও কিছুদিনের মধ্যেই সরে যাবে এই সমাজ সেবার হিড়িক। মেতে উঠবেন অবসরপ্রাপ্ত বন্ধুদের নিয়ে সিনিয়ার সিটিজেন ক্লাব গড়ার হুজুগে। বিশাখার জীবনও একই ভাবে আবর্তিত হতে থাকবে অফিস আর সংসারের বৃত্তে। শুধু রত্না একাই অনুভব করবেন প্রতি পদে পদে। এতদিনের অভ্যস্ত আরামের জায়গা ছেড়ে আবার ঝাঁকুনি দিয়ে নেমে পড়তে হবে সংসারের হাজার একশো কোটি ঝঞ্ঝাটে।
তবে- খাবারগুলো ফ্রীজে ঢোকাতে ঢোকাতে মনে মনে ভাবেন রত্না – এ যা হয়েছে, ভালোই হয়েছে। সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল। হ্যাঁ। মন খারাপ হচ্ছে সবার। বিশেষ করে তোতাটার চোখের জল বুকে মোচড় ফেলছে বৈকি। বড্ড বেশি সরল ছেলেটা। দুনিয়ার জানেই বা কতটুকু! আর দিবানাথ! তার মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কি যেন একখানা প্রলয় ঘটে গেছে জীবনে! বাপস্ রে! কী মেজাজ! যেন কী –কত বড় অন্যায় করে বসে আছেন রত্না। আরে বাবা সকলে তো তোমার মত দেশ উদ্ধারের, সমাজসেবার ব্রত নিয়ে বসে নেই! টাকাপয়সা রোজগার, খেয়ে পরে বেঁচে থাকা ইত্যাদি অকিঞ্চিতকর কাজগুলোর ভাবনাও তো কিছু মানুষ ভাবে; না কি? মুন্নির মাও সেটাই ভেবেছে! তা সে কথা বুঝতে চাইলে তো দিবানাথ! কেবল প্রশ্নের পর প্রশ্ন। কেন নিয়ে গেল? কোথায় নিয়ে গেল? তুমি যেতে দিলে কেন? ইত্যাদি, প্রভৃতি! এসবের কী উত্তর আছে? তার মেয়ে। সে এর থেকে বেশি মাইনের কাজে ঢোকাবে। রাখবে না এখানে। – তো? রত্না কি জোর করে রেখে দেবেন? দিবানাথ কি নির্বোধ? না অবুঝ? আগে থেকে একটি কথাও বলেনি মুন্নির মা। একটু আভাস পর্যন্ত দেয়নি। যেমন মাসমাইনে নিতে আসে – তেমনই এসেছে। হঠাৎই! অমনি দিবানাথের চোখে সন্দেহের মেঘ!
“বলা নেই – কওয়া নেই -অমনি দুম করে এসে মেয়েটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল! আর তুমিও ছেড়ে দিলে! একবার আমার সাথে বা বিশাখার সাথে পরামর্শও করলে না?”
এরপরও ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবে না রত্নার? পরামর্শ! কবে – কোন দিন – সংসারের কোন ব্যাপারে – কী – পরামর্শ দিয়ে উপকার করেছেন দিবানাথ? চাকরীটুকু করা ছাড়া আর কোন দিকটা দেখেছেন – যে আজ হঠাৎ ‘তাকে’পরামর্শ দেবার জন্য ডাকবেন রত্না? আর বিশাখা! সে জানেই বা কী! আর খোঁজই বা রাখে কতটুকু ! সব ঝামেলা, দায়িত্ব, রত্নার ওপর রেখে সংসারের বাকি লোকগুলো তো নিশ্চিন্তে, নিরুপদ্রবে কাটাচ্ছিল এতদিন ! আজ –যখন একটা সিদ্ধান্ত তিনি নিজে নিয়েছেন – তখন এত মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত কী হয়েছে? হ্যাঁ। ছাড়িয়ে দিয়েছেন মুন্নিকে। ছাড়াবেন না? কথা নেই বার্তা নেই দুম করে এসে টাকা বাড়াতে বলবে –
“টাকা বাড়ানো!”, ভ্রু কুঁচকে তাকান দিবানাথ, “এখনো তো এক বছরও হয়নি! এরই মধ্যে! ওর মা বলল টাকা বাড়াবার কথা?”
-শুধু তাই নয়। টাকা এই মাস থেকেই বাড়াতে হবে – নইলে এখানে রাখবে না সে মেয়েকে! তো? কী করার ছিল? এভাবে হঠাৎ এসে চাপ দিয়ে টাকা বাড়াবে! মেনে নেবেন রত্না? রাজি হয়ে যাবেন? না ‘পরামর্শ’ করার জন্য দিবানাথকে ফোন করবেন? খাওয়া পরা ছাড়াও মাসে মাসে আড়াই হাজার টাকা! সেটা কী কম? ভারী কাজও এমন কিছু নয়। সেগুলো করার জন্য শান্তি, বিমলা তো রয়েইছে। তবে? না। কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি রত্না। স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন – টাকা তিনি বাড়াতে পারবেন না। এতে যদি থাকতে হয় থাক নচেৎ –
“আর মুন্নি? ও কিছু বলল না?”
আলগোছে গলায় জল ঢালতে গিয়ে বিষম খেলেন রত্না। তোতার সরল চোখ তারই দিকে! চাইতে পারলেন না। মুখ ঘুরিয়ে নিলেন,
“আরে! বুঝিস না? এরা এরকমই। এক বাড়িতে কাজে ঢুকিয়ে অন্য জায়গায় চার ফেলে বসে থাকে। যেখানে টাকা বেশি সেখানেই যায়। ওসব ভালবাসা, আদর যত্ন গায়ে মাখে না ওরা। দিব্যি চলে গেল! –মার পিছু পিছু।”
কয়েক পলক নির্বাক চোখে চেয়েছিল তোতা। তারপর সরে গেছে সামনে থেকে। হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন রত্না। দিবানাথ, বিশাখাকে যা খুশি বুঝিয়ে দিতে পারেন- মিথ্যে বলতেও আটকায় না। কিন্তু তোতার নিস্পাপ চোখের দিকে তাকিয়ে এতক্ষণ পরে বুকে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করেন। হয়ত বা সামান্য একটু অপরাধ বোধও! তবে কি কাজটা? কয়েক মুহূর্ত দোলাচল! পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেন। অহেতুক দুর্বলতা অশান্তি ডেকে আনে। নাহ। ওসব নিয়ে ভাববেন না।
কাজ কিছু আর বাকি নেই তো? চারদিকে একবার তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে দেখে নেন। এবার তবে শুয়ে পড়া যাক। সকাল সকাল ওঠা আছে। কাল থেকে তো হাতে হাতে এগিয়ে দেবার কেউ নেই। বুকের কাছটায় একটু খালি খালি ভাব আসে কেন কে জানে? চেষ্টা করেও যেন সরানো যায়না। একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে অন্যদিনের মত সপ্রতিভ ভাবে নয় – একটু যেন দ্বিধাগ্রস্ত পায়েই নিজের শোবার ঘরে ঢুকে পড়েন রত্না।
তিন
আজ আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছেন দিবানাথ। অন্যদিন রত্না না আসা পর্যন্ত রিডিং ল্যাম্প জ্বেলে বই-টই পড়েন। সারাদিনের কথাবার্তাও হয় কিছু কিছু। আজ মন খারাপ। তাই বোধহয়। যাক। ভাল হয়েছে। শাড়ী ছেড়ে রাতের পোশাক পরতে পরতে মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন রত্না। এখন আর কথা বলার মত মানসিক অবস্থা নেই। সন্ধে থেকে একনাগাড়ে কৈফিয়তের বোঝা টানতে টানতে ক্লান্ত লাগছে। ভয় ছিল ঘরে ফিরেও না আবার জেরার মুখে পড়তে হয়! পাশ ফিরে যখন শুয়ে পড়েছেন দিবানাথ- ঘুমিয়েও পড়বেন খুব শিগগীর। এ অভ্যেস চেনা তার। রেহাই এতক্ষণে। এবার শুধু নিজের সঙ্গে নিজের মুখোমুখি হবার অবসর। বিকেল থেকে যে নাটকের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে চলেছেন – তা শেষ করার পালা এতক্ষণে। ড্রেসিংটেবিলের মাথার ওপরের আলোটা জ্বেলে মুখে ক্রীম মাখতে মাখতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখেন রত্না। দারুন! নিখুঁত ছিল তার অভিনয়! মুখের একটা রেখাও কাঁপেনি। আগেও না। পরে তো না – ই। এত কম আয়াসে যে ব্যাপারটা মিটে যাবে তা ভাবা যায় নি।। বেশি বেগ পেতে হল না মুন্নির মাকে বোঝাতে -বেশি কৈফিয়ত দিতে হল না তোতাকে। হ্যাঁ। নানা প্রশ্ন তুলেছেন বটে দিবানাথ। তো সেগুলোও সুন্দরভাবে কাটিয়েছেন। কখনো মারমুখী হয়ে –আবার কখনো বা আত্মরক্ষার ভঙ্গীতে। না। তার নিজের মধ্যে কোন দ্বিধা নেই। যা করেছেন – ঠিক-ই করেছেন। করেছেন সংসারের স্বার্থে। ভবিষ্যতের মঙ্গল চিন্তা করে। সেসব ভাববার বা বুঝবার ক্ষমতা দিবানাথের কোনদিন-ই নেই- আর হবেও না। হ্যাঁ। জানলে হয়ত ছি-ছি করবেন- কিন্তু জানলে তো? সে সূযোগ আর রত্না দেবেন না। কেন জানাবেন? কেন বলবেন? কিভাবে অতি সহজ – অতি প্রাঞ্জল ভাষায় মুন্নির মাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন সত্যটা?
– মুন্নি পড়াশোনায় এত ভাল! লেখাপড়া শিখুক – থাক এখানে, এমন কি দিবানাথ যে ওকে সামনের বছর ইস্কুলে ভর্তি করে দেবার কথা ভাবছেন… সেটাও বলতে ভোলেন নি। খাবে দাবে লেখাপড়া শিখবে, একটা গরীবের মেয়ে মানুষ হবে -তা কে না চায় বলো? এ তো ভাল কাজ! শুধু একটাই অসুবিধে!
অথৈ বিস্ময় তখন মুন্নির মার চোখে মুখে! স্পষ্টই বুঝছিলেন রত্না -ও প্রাণপন চেষ্টা করছে রত্নার কথার মর্মাথ বুঝতে। তা বেশিক্ষণ আর ওকে অন্ধকারে রাখেননি। মনে মনে কঠিন হেসে মোক্ষম চালটি দিয়েছেন শেষে। মুন্নি থাকুক। লেখাপড়া শিখুক। কিন্তু তাহলে মাসে মাসে আড়াইটি হাজার করে টাকা আর গুনতে পারবেন না রত্না।
মানে? হাঁ করা মুখ আরো হাঁ মুন্নির মার! টাকা না পেলে চলবে কী করে? এর পরেও আরো ছোট ছোট দুটো মেয়ে আছে। বলতে গেলে এই টাকার ওপরই তো বেশি ভরসা ওর! নিজের শরীরের যা অবস্থা! বেশি কাজই তো আর করতে পারে না এখন! দ্রুত অভ্যস্ত চোখ বুলিয়ে নেন রত্না। আসন্ন প্রসবার সমস্ত লক্ষণ ফুটে উঠেছে ওর মধ্যে। ভেতরে ভেতরে তখন আরো দৃঢ়, আরো আত্মস্থ লেগেছে নিজেকে।
— আহা! সে কি আর বুঝতে অসুবিধে হয়? দরকার না হলে কি আর কেউ অতটুকু মেয়েকে কাজ করতে পাঠায়? বিশেষ করে সে মেয়ে যখন লেখাপড়ায় এতটাই ভাল! কিন্তু সংসারের কাজগুলো? যদিও লেখাপড়ার মত বিরাট মাপের কাজ নয় সেগুলো – খুবই নগন্য ! কিন্তু আছে তো! সেগুলো করে কে? রত্নার তো একার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার একজনকে মাইনে দিয়ে বসিয়ে রেখে আর একটা লোক রাখাও এ বাজারে —-
লাফিয়ে উঠেছে মুন্নির মা,
“কই! কোতায় সে হারামজাদী! লাত মেরে মুক ভেঙ্গে দোব। করাচ্চি নেকাপড়া!”
নিজের শোবার ঘরের বন্ধ দরজার দিকে শঙ্কিত চোখে চেয়েছেন রত্না। ঘরেই ডেকে এনে বসিয়েছিলেন ওকে। মুন্নি রান্নাঘরের দিকে আছে। কানে গেলে মুশকিল। সামাল দিয়েছেন কোনরকমে।
ওসব একদম নয়। তাতে উলটো বিপত্তি হতে পারে! বরং এক কাজ করুক মুন্নির মা। বুঝিয়ে সুঝিয়ে মেয়েকে এ বাড়ি থেকে নিয়ে চলে যাক। এখানে থাকলে ও লেখাপড়ার ভূত আরো চড়ে বসবে! পরে হয়ত জেদই ধরে বসবে – কাজ করবনা। পড়ব। তখন! এমন মেয়ে! যে কোন জায়গায় এর চেয়ে বেশি টাকার কাজ পেয়ে যাবে। বরং এখানে যতদিন থাকবে তত শক্ত হবে ওর মাথা থেকে লেখাপড়ার ভূত ছাড়ানো! এ বাড়িতেই তো যত গোলমাল! নইলে রত্নারও কি ইচ্ছে এমন একখানা মেয়ে হাতছাড়া করেন? কত যত্নে, আদরে শিখিয়ে নিয়েছিলেন সব! সইল না কপালে! আর খবরদার! মুন্নিকে এসব কিচ্ছু বলার দরকার নেই। ভুলিয়ে ভালিয়ে এখন গ্রামে নিয়ে গিয়ে দুদিন রাখুক। তারপরে কাজ জুটে গেলে –
নাঃ। বুঝতে অসুবিধে হয়নি মুন্নির মার। তবু যেটুকু দ্বিধা ছিল সেটাও চলে গেল – যখন কড়কড়ে ছ’টা পাঁচশো টাকার নোট ওর হাতে গুঁজে দিলেন রত্না। এ মাসে মোটে দশদিন কাজ করেছে। তবু পুরোটাই দিলেন। সঙ্গে পাঁচশো বেশি। আহা! তোমারও তো শরীরটা ভাল না – একটু দুধ-টুধ –
মেয়ে নিয়ে আহ্লাদে গদগদ হয়ে বেরিয়ে গেছে মেয়েছেলেটা। নিশ্চিন্ত হয়েছেন রত্না। আর ফিরে আসবে না ও। হ্যাঁ। অসুবিধে একটু হবেই। তা আর কী করা যাবে। দেখা যাক। বলে রেখেছেন একে ওকে। পেয়ে যাবেন হয়ত আবার কাউকে!
ছোট্ট একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দিবানাথের দিকে পিছন ফিরে শুলেন রত্না।
কলমে কাকলি ঘোষ