আম গাছে তোতাপাখি, চার দু-গুনে ছয়,
দুই এ দুই পাঁচ নাকি সাত এর পরে নয়!
ও স্যার এবার বন্ধ করুন নামতা ধারাপাত।
চোখের সামনে ভাসছে কেবল মিড্-ডে মিলের ভাত।
পেটের ভিতর ছুঁচো-র কীর্তন, লেখা-পড়ায় বসছে না মন।
সকাল গিয়ে দুপুর হলো, খিদের পেটে খিল,
নাকের সামনে ঝুলছে মুলা, গরম মিড্-ডে মিল।
বলছে ওরা খেতে পাবে, এইট অবধি পড়লে,
বুঝেগেছি বোকামি হবে, ভুল করে পাস্ করলে।
দরকার নাই বিদ্যান হয়ে, কি হবে পাস্ করে?
ইস্কুল-এ এলেই রোজ ডাল-ভাত, ফি-রি-তে পেট-ভোরে।
হাট- টিমা-টিম-টিম, আমার পাতে জোটেনা ডিম্,
মাছ মাংস বাড়াবাড়ি, ওসব আমার ডি-রি-ম।
সয়াবিন, চাটনি, পোস্ত যত সব বিলাসিতা,
মধ্য দিনে পেটের টানে, ডাল ভাত বড় কথা।
আমার ভাগে-ও চিল -শকুন,পাওয়া না পাওয়া-র শঙ্কা,
বরাত জোরে রুটি আর নুন,না হলেই লবডঙ্কা।
গাছের তলায় ভাতের হাঁড়ি টগবগিয়ে ফোটে,
আয়েশ করে ডালের কড়াই, নেড়ি কুকুরে চাটে।
কুকুর বেড়াল গরু ছাগল একসঙ্গে আছি,
মিড্ মিলের দুই-মুঠো তে মিলেমিশে বাঁচি।
ভাতের ভিতর টিকটিক,আর ডালে আরশোলা,
বিষের ফাঁড়া পাশ কাটিয়ে জীবন মৃত্যু খেলা।
কাল রাত্রের শুকনো মুড়ি, দুই ক্রোশ পথ হেঁটে,
মিলিয়ে গেছে কোন সকালে, কিচ্ছুটি নেই পেটে।
মা টা বাঁচে বাবুঘরের এঁটো-কাঁটা পাতে,
স্বপ্ন শুধু বাছা আমার থাকুক ডালে-ভাতে।
ঘন্টা ওই বাজলো খাবার, মিড্ ডে মিলের পালা
হাপুস হুপুস শব্দে সাবাড়, গরম ভাতের থালা।
ভীষণ খিদে, পেট ভরেনি, আর একটু কি পাবো।
বেশি তো নয়, বড় জোর আর এক হাতা খাবো।
কি পড়ছি, কি লিখছি, মিথ্যা মাথা-ব্যাথা,
জীবন থেকে রোজ শিখছি সার সত্য কথা,
বাঁচার জন্য খেতে হবে, বাঁচার জন্য ভাত,
বাঁচলে আগে তার পরে তো নামতা ধারাপাত।
অ আ ক খ, যোগ-বিয়োগ সব হিসাব-ই ভুল,
আসল কথা এই বুঝেছি, ভাতের জন্য-ই ইস্কুল।
কবি পরিচিতি : শিল্পী দত্ত , সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার , ওহিও ,ইউনাইটেড স্টেট অফ আমেরিকা। ভালোবাসেন ঘুরতে, রান্না করতে, সেলাই করতে এবং একই সাথে পড়তে ও লিখতে। অবসর সময় পড়তে বেশি ভালোবাসেন।তার কিছু লেখা ইন্দো-আমেরিকান ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যে।