বাড়িটার বয়স হয়তো সত্তর পেরিয়ে গেছে,
আজকাল পাঁচ কাটা, তিন শতক জমির উপর,
ঘোষাল পাড়ার মোড়ের ,
ছয় কামরার দোতলা বাড়িটার দিকে
অনেক জোড়া চোখের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ;
যার হাত এই জমিটাকে করায়ত্ত করতে পারবে
তার হাতে আকাশছোঁয়া ইমারতের হাত ধরে,
সোনার ফুলঝুরি হবে,
হবে হীরের বিচ্ছুরন ;
এপাড়ায় ইদানীং আধুনিক অথচ
গ্রাম্যছোঁয়া লাগা, চার, পাঁচ,
কিংবা ছয়তলা সুইমিং পুল ঘেরা ফ্ল্যাটবাড়ির
আকাশচুম্বী চাহিদা –।
ভাষ্কর ঘোষাল আর নন্দিনীর বড় যত্নে বানানো
এই বাড়িটায় আজ বিবর্ণতার ছোঁয়া –
পলেস্তারা খসা,মরচে ধরা বাড়িতে
ইট, কাঠ, পাথর, ছবির মধ্যে,
স্মৃতির নীরব উন্মাদনা।
ভাষ্কর – নন্দিনী চলে গেছেন
এই বাড়ির মায়া কাটিয়ে, তিন বছর আগে;
শহরতলির এই পৈতৃক ভিটে
আগলে রাখার মতো মন বা সময়
কোনটাই নেই রনদীপ আর সন্দীপের,
যাঁরা আজ কলকাতায়, কাল দিল্লীতে,
পরশু ব্যাঙ্গালোরের আইটি হাবে
অথবা লসএঞ্জেলসর ফার্মহাউসের
আরাম কেদারায়, নিশ্চিন্ত ঘুমে,শান্তির যাপন;
ভাষ্কর- নন্দিনীর প্রথম সন্তান অনুপম
শুধু স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চায়,
অনুভূতির সলতেটাকে মাঝেমাঝে
ভীষণ উস্কে দিয়ে।
তাঁর অনুভূতিতে রক্তক্ষরণ হয়,
এই বাড়িকে টাকায় রূপান্তরিত করার
নিদারুণ প্রচেষ্টায়!
প্রতিমুহূর্তে টাকার উচ্ছ্বাসের কাছে,
অপমানিত হয় তাঁর হৃদয়,
ভালোবেসে স্মৃতিকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার
বোকামি তাঁর মতো আর কেই বা করে আজকাল!
কড়ির মতো শক্তিশালী, শানিত তরবারির কাছে
স্মৃতির মূল্য কতটুকু!
অনেকটা পচা, বাসি খাবারের মতো
বাড়ির প্রতিটি ঘরে,
বাবা- মা- আর হারিয়ে যাওয়া বোনের
নীরব উপস্থিতি –
হারমোনিয়ামে মায়ের হাতের ছোঁয়া –
বাবার স্পর্শ মাখা নাটকের মঞ্চ,
সব মাটিতে মিশে যাবার অপেক্ষায়।
সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে,
এমন অসম প্রতিযোগিতার রসদ
তাঁকে কে জোগাবে –
কেউ নয়, এ যুদ্ধ তার একার ;
একেবারেই একা রনক্ষেত্রে,
তার পদচারণা, সঞ্চালনা –
স্মৃতির দাম বোঝে অন্তর,
ভালোবাসার মূল্য বোঝে মন;
অনুভুতির মুল্য বোঝে মূল্যবোধ,
তবু সবকিছুই কেমন যেন
বিবর্ণ হয়ে যায়,টাকার হাকডাকে-
স্মৃতি সেখানে বড়ই অপাংক্তেয়,
একা একা পথচলা,
সে যে তখন এক অসহায় মানুষ-
নিতান্তই এক ব্রাত্যজন।।
সেই সময় থেকেই, “ভারতবর্ষ”, “দিশারী” সহ নানা পত্রিকায় কবির, কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে।
কবি, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পেশার বাইরে সেবামুলক কাজের জন্য স্থাপন করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ডাঃ চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখা, সংবাদপত্রে ও “প্রসাদ” পত্রিকায় ইতিপূর্বে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে।
Khub sundor lekha..mon chhuye gelo..
অনবদ্য ভাবনার প্রকাশ… নিরন্তর শুভেচ্ছা আগামীর জন্য…
অনবদ্য ভাবনা-প্রকাশ এবং লেখনী..নিরন্তর শুভেচ্ছা জানাই ডাঃ নীলাঞ্জন চ্যাটার্জী ,আপনার আগামীর প্রতিটি শুভ কাজের জন্য..