ফেরি করে বেড়াতেন তিনি!
ফেরি করতেন সংস্কৃতিকে
কতকাল ধরে, মনের আনন্দে
কখনও ছবি আঁকার শিক্ষালয়ে
কখনও একটা পত্রিকাতে,
কত কবির লেখা কবিতা প্রকাশ করে,
ফেরি করে বেড়াতেন,
জীবনের লাভ বা ক্ষতি নিয়ে
বেশি ভাবতে চাইতেন না!
আবৃত্তি করতেন, আপন খেয়ালে
কেউ এগিয়ে এসে কিনতেন, স্বল্পমূল্যে,
কেউ বা শুধু হেসে পাশ কাটিয়ে যেতেন
কেউ বা মুগ্ধ হয়ে তাঁর সারল্যমাখা কথা,
শুনে যেতেন;
সুধা পান করবার আনন্দ নিয়ে।
এভাবেই আজ একুশটা বছর,
সংস্কৃতিকে ফেরি করে বেড়াতেন অবকাশ দাদা,
ফেরি করে বেড়াতেন রবীন্দ্রসদন,আকাদেমি,নন্দন চত্বরে,
অনেকেই তাঁকে দেখতেন, চিনতেন,
ওখানে আসা আরও পাঁচটা মানুষের মতো,
নিতান্ত আটপৌরে, এক সংগ্রামী জীবন চরিত,
শুনেছিলাম থাকেন শহরতলির কোন এক জায়গায়,
প্রতিদিন নিয়ম করে অফিসে আসবার মতো,
নন্দন,রবীন্দ্রসদন চত্বরে বিকেল চারটের মধ্যে,
অবকাশ দাদার উপস্থিতি নিশ্চিত ছিল।
নিশ্চিত ছিল না তাঁর প্রতিদিনের রোজগার,
যার জন্য বাড়িতে থাকা চার চারটে মুখ,
অপেক্ষা করে থাকতো,
পথের দিকে চেয়ে-।
অবকাশ দাদা, মাঝেমাঝেই আমাদের সাথে
রসিকতা করতেন -বলতেন
আমি আপনাদের কবিতা, গল্প, নাটকের কথা,
আমার এই ছোট্ট পত্রিকাতে প্রকাশ করছি কত অনায়াসে,
কাল যখন আপনাদের নাম হবে, যশ হবে, অর্থ হবে;
খবরের কাগজে কখনও হেডলাইন হয়ে যাবেন
আপনাদেরই কেউ কেউ,
তখন, তখন আর হয়তো, আপনাদের সাথে দেখা হবেনা আমার-
আপনাদের লেখা, আমার পত্রিকায় প্রকাশ করতেও পারবোনা,
না আর দেখা হবেনা অবকাশ দাদার সাথে,
যাঁদের হাতে তাঁর কাগজ পৌঁছে দিতেন,
প্রকাশ করতেন, তাঁরা হেডলাইন হবার আগেই,
অবকাশ দাদা নিজেই হয়ে গেলেন হেডলাইন,
খবরের কাগজে তাঁর ছবি,তাঁর কথা ;
ফুল,মালায় মোড়া তাঁর সংগ্রামী মুখটা
কি যেন বলতে চায়-
তাঁর বাড়িতে কত মানুষের সমাগম এখন;
কত আশ্বাস, কত আশা,
কত ভাল ভাল কথা –
তিনি যে আজ পথ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে,
স্মৃতি হয়ে গেলেন, হয়ে গেলেন হেডলাইন,
অনন্ত অবকাশ নিয়ে।।
কবি পরিচিতি : ডাঃ নীলাঞ্জন চ্যাটার্জী,পশ্চিমবঙ্গ .বিশিষ্ট আইনজ্ঞ,নট- নাট্যকার মিহির কুমার চট্টোপাধ্যায় ও সাহিত্য – শিল্প অনুরাগিনী নিয়তি চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় – এর সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ কলেজ জীবনের প্রারম্ভেই।
সেই সময় থেকেই, “ভারতবর্ষ”, “দিশারী” সহ নানা পত্রিকায় কবির, কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে।
কবি, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পেশার বাইরে সেবামুলক কাজের জন্য স্থাপন করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ডাঃ চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখা, সংবাদপত্রে ও “প্রসাদ” পত্রিকায় ইতিপূর্বে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে।