রহিমা বেগমের হাটুর ভাঁজে মাথা রেখে গা এলিয়ে দিল শরিফ সাহেব। সেই উনিশ বছর বয়সের প্রেমটা গড়াতে গড়াতে ষাটে এসে এরকম একটা দিনে পৌঁছাবে ভাবতেই পারেননি রহিমা বেগম।
রাতের খাবার শেষ করে মেঝেতে হাঁটু ভেঙ্গে বসে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে সেই যে গল্প বলা শুরু করত, চোখ না লেগে আসা অবধি থামতই না! বয়সের সাথে সাথে তাদের গল্পের বিষয়বস্তু বদলাত।
উনিশে বাড়ি ফেরার সময় রোজ এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে আসা মানুষটাই পঞ্চাশের পর বাড়ি ফিরত রোজ ওষুধপত্র নিয়ে। উনিশের প্রেম পত্রটাই যেন একটা সময় এসে থামল প্রেসক্রিপশনে! উনিশে মাথায় হাত বুলিয়ে চুলের প্রশংসা করা মানুষটা ষাটে এসে হাত বুলিয়ে প্রেশারের খোঁজ নিত। কতো কালবৈশাখী কতো টর্নেডো তারা কাটিয়ে দিল একটা ছোট ছাতার নিচে। যে মানুষটা সবসময় ছাতার হাতলটা ধরে রাখত, সেই মানুষটার এমন করুন অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না রহিমা বেগম।

ফজরের নামাজের পর শরিফ সাহেব গেছেন, “কেয়া নার্সারী” টকটকে লাল গোলাপ নিজের হাতে তুলতে।
রহিমা বেগম বারবার গেটের দিকে তাকাচ্ছেন।  সেই কখন হাটতে গেছে, এত দেরি হচ্ছে কেন? অসুস্থ হয়ে গেল না তো মানুষটা।

কেয়া নার্সারী চারদিক মনোযোগ সহকারে গোলাপ দেখলেন শরিফ সাহেব। তারপর পরম যত্নে পাঞ্জাবির পকেটে পুরে নিলো দুটো গোলাপ।  বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলেন। মনে হচ্ছে, বিশ মিনিটের পথ এক ঘন্টা লাগবে। মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। পথ আর বেশি বাকি নেই। সামনে মোড়টা পার হয়ে একটি গলি, গলি পার হলেই গন্তব্য।
গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে রহিমা বেগম। শরিফ সাহেব হাসিমুখে ঢুকলেন। পকেট থেকে গোলাপ দুটো হাতে নিয়ে বললেন, ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন’স ডে সোনা বউ।’
চোখে টলমল করতে থাকা জলটা টুপ করে পড়েই গেল রহিমা বেগমের। ঘামে ভেজা পাঞ্জাবিটা দেখেই বুঝে গেলেন সবটুকু। কপট রাগে বললেন, ‘তুমি, তুমি একটা পাগল।’ শরিফক সাহেব ফিরে গেলেন চল্লিশ বছর আগের এই দিনটিতে।

কলমে মোঃ আনারুল ইসলাম রানা, রংপুর, বাংলাদেশ।

আমি সম্মাননা ৪র্থ বর্ষের একজন ছাত্র। পড়াশুনা শেষ করে শিক্ষক হতে চাই। আমার জন্য দোয়া করবেন।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here