(১)

সারা গাঁয়ে তো হুলুস্থুল পড়ে গেল !

রতন কাকুর ছেলে খোকনকে কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । বেলা আটটা নাগাদ কেবল নিশ্চিত হওয়া গেল, সে নাকি গল্পের গাছ খুঁজতে বেরিয়েছেে !

“তা আর যাবে না ! পইপই করে বলেছিলাম, ওকে রাতে আমার কাছে শুতে দে… তা না । বাপ-মায়ে মিলে তাকে হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে গেল গো । আহা বাছা আমার ঘুমোনোর আগে দুখানা গপ্পো না শুনলে ঘুমোতে পারে না ।তা শুনলে তো আমার কথা…” কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ওঠেন খোকনের ঠাকুমা । খোকনের চিন্তায় তিনি ভুলেই গেছেন যে সকাল থেকে চশমাটা খুঁজে পাচ্ছেন না ।

তা ঠাকুমার দুঃখেরও যথেষ্ট কারণ আছে বই কি… দশটা নয় পাঁচটা নয়, একটি মাত্র নাতি । সারা দিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায়, রোদের মধ্যে ক্রিকেট খেলে আর সন্ধ্যে হলে পড়াশোনা চুকিয়ে ঠাকুমার কাছে । তারপর শুধু গল্প । সব গল্প কী আর মনে থাকে বাপু ! স্মৃতিরও তো বয়স হয় । তাই যতটা মনে পড়ে, তার সাথে বানাতে হয় । বানাতে বানাতে গল্পের শিকড়-বাকড় গজায়, গল্পও ডাল-পালা মেলে । কখনো সখনো গল্পের গাছের ফল-পাতার লোভে গল্পের গরু গাছেও চড়ে বই কি!

তো সেরকমই একদিন বানাতে বানাতে খেই হারিয়ে ফেলে ঠাকুমা বলে ফেলেছিলেন, “তোমার পাল্লায় পড়ে আচ্ছা গাছে চড়লাম বাপু, এবার নামি কী করে !”
“কীসের গাছ ?”
“কীসের আবার ! গল্পের !”
“যাহ্ গল্পের আবার গাছ হয় না কি !”
“হয় না আবার ! না হলে রোজ এতো গল্প পেতাম কোথায় ?”
“কেমন দেখতে সে গাছ ?”
“বোঝো … কোন্ বয়সের গাছ তার ওপর নির্ভর করে, কেমন দেখতে !”
“ছোটো হলে ?”
ঠাকুমাও মজা করে বলেন, “ছোটো হলে দেখতে লাগে ঠিক পুঁই মেটুলির মতো !”
“আর বড়ো হলে ?”
“ওরে বাবা সে বড়ো হলে আর দেখতে হবে না… সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে যাবে ।”
“এরকম কটা গাছ আছে ?”
“খুব বেশি নেই । বাড়তে দিলে মুশকিল কি না । তাই একটু বড়ো হলেই কেটে দেওয়া হয় । কিন্তু ওই… মৃত্যু নেই, অজর অমর !”
“আমার একটা ওই রকম গাছ চাই ।”
“তার আর ভাবনা কি ! বড়ো হও… খুঁজে পেতে আনা যাবেখন একটা !”
“ওরে বাবা ! সে যে অনেক দেরি ! অত দিনে যদি সবাই মিলে সব কটা গাছ কেটে ফেলে তাহলে কি হবে !”
“তা বটে… মানুষকে বিশ্বাস নেই !”
“তাহলে উপায় ?”

“এ তো দেখছি ভারি মুশকিল হলো । আচ্ছা ভেবো না… লক্ষ্মণ বাবুদের বাগানখানা তো বেশ বড়ো । ওখানে কাল পরশু একবার খুঁজে দেখলে হয় । পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন !”

“না না ঠাম্মা সে হবে না । আরে আমি তো ওদিকটা চিনিই না মোটে ! আর তুমি কি জানো না যে, লক্ষ্মণ বাবুর বাবা বল্লাল বাবু কেমন রাগী ? ধরতে পারলে হাড়গোড় ভেঙে দেবে !”

“আচ্ছা সে হবেখন ! এখন যাও দেখি.. শুয়ে পড়ো । রাত হয়েছে ।” – তখনকার মতো ব্যাপারটা মিটে গেছে আর সকালে ঘুম থেকে উঠে খোকনের কিছুই মনে থাকবে না, ভেবে ঠাকুমা তো নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন । কিন্তু খোকন কি আর তেমন ছেলে ! জেদ ধরল, ঠাকুমার কাছে শোবে । তারপর তার বাবা-মা এসে চেঁচামেচি করে তার ডানা ধরে উঠিয়ে নিয়ে গেল । সকালে উঠেই জানা গেল, খোকনকে কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।

(২)

পাওয়া যাবেই বা কি করে ! সে যে সেই সাত সকালে বেরিয়ে গিয়েছে । লক্ষ্মণ বাবুরা বিলক্ষণ গ্রামের জমিদার, কিন্তু সেনবাবুদের সে সমৃদ্ধিও নেই, হাঁকডাকও নেই । লক্ষ্মণ বাবু রোজ ভোর বেলায় ওঠেন, গরম জল ফুটিয়ে, নুন দিয়ে, গারগেল করেন আর তারপর গলা সাধতে বসেন । তো সবে হারমোনিয়ামটা নিয়ে বসেছেন, খোকন সেই সাত সকালে, একে-তাকে জিজ্ঞেস করে সেকেলে জমিদার বাড়িতে এসে হাজির ।

“ও গানওলা !”
“এই কে রে ! বেয়াদপ !”
“ছিঃ ছোটোদের সাথে কেউ ওভাবে কথা বলে ! ইস্কুলে পড়ো নি বুঝি ?”
বিস্মিত লক্ষ্মণ বাবুর গলায় তা শুনে কথা আটকে যায়… কোনোমতে বলেন, “তা কী চাই ?”
“তোমাদের বাগানে গল্পের গাছ হয় ?”
“কীসের গাছ ?”
“আরে ধুরর্… কিছুই জানো না দেখচি ! গল্পের গাছ গো.. হয় ?”
“পাগল না কি রে তুই !”
“আমার পা কি গোল ?”
“গল্পের গাছটি তোমার কেমন দেখতে চাঁদু ?”
“ধুরর্ আমি চাঁদু হতে যাবো কেন ! সে তো আমার সেজো মামা !”
“ও তা তোমার নাম কী ?”
“আমি অচেনা লোকেদের নাম বলি না ! গল্পের গাছ আছে কি না বলো ।”
“ও নামে কোনো গাছ হয় না… যত্তসব !”
“হ্যাঁ হয় না আবার ! তবে যে ‘ঠাকুমার ঝুলি’-তে গল্পের শেষে ঠাকুমা বলে, ‘আমার কথাটি ফুরলো, নটে গাছটি মুড়ালো !’ তার বেলা ?”
“তা নটে গাছ নেবে না কি খোকা ?”
“না নটে গাছ তো আমাদের বাগানেও ছিল গতবছর ! তোমরা কেমন জমিদার গো ! প্রজার ঘরেও নটে আছে… তোমাদের ঘরেও নটে আছে ?”

এই কথায় লক্ষ্মণ বাবু ভারি দুঃখ পেলেন । তাঁর চোখ অমনি চলে গেল সিলিং-এর দিকে । ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ছে দু বছর হলো । বাগান ঝোপঝাড়ে ভর্তি । বাড়ির এখানে ওখানে চুন-সিমেন্ট খসে পড়ে ইঁট বেরিয়ে আসছে । ছাদে ভয়ে ভয়ে উঠতে হয়, সিঁড়ি এতো দুর্বল হয়ে পড়েছে । নিজের হাতে লাগানো পেঁপে গাছগুলো অযত্নে শেষ হয়ে গেল । এই সেদিনও হাটে গিয়ে নিজের কানে শুনেছেন, জহর শেখ বলছিল স্বপন বাবুকে, “কীসের জমিদার ! নুন আনতে পান্তা ফুরোয় ! জমিদার ! গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল !”

এমন কথা প্রজাদের মুখে শুনলে কোন জমিদারের না দুঃখ হয় বলো ! সেই দুঃখে বাবা বল্লাল সেন সারাক্ষণ ঘরে বসে রেডিও শোনেন আর মাঝেসাঝে বাগানে গিয়ে সব গাছের গায়ে নাম খোদাই করে রাখেন । উপায় নেই… এদিকে আবার ভারি চোরের উপদ্রব কি না !

এদিকে খোকন ততক্ষণে অধৈর্য হয়ে গেছে । তার চোখ ইতিউতি গাছ খুঁজছে । লক্ষ্মণ বাবু বারান্দা থেকে ঘাস-পাতা ভরা উঠোনে নামলেন । তারপর মাথা চুলকে বললেন, “তা তোমার ওই গাছটি মাটির উপরে হয় না নীচে ?”

খোকন হাঁ করে ভাবে, ইস্ বড্ড বোকামি হয়ে গেছে ! এটা তো ঠাকুমাকে জিজ্ঞেস করা হয় নি ! তারপর বুদ্ধি করে বলে, “মাটির উপরেই হয় নিশ্চই… নইলে তাতে গল্পের গরু ওঠে কেমন করে ?”

“তাই তো ! তোমার তো খুব বুদ্ধি দেখছি ! তা একখান গাছ আছে বটে আমার বাগানে, তাতে বেশ গল্প গল্প ভাব ।”
“কোথায় কোথায় ?” – উত্তেজিত খোকন জানতে চায় ।
“চলো দেখাই ।” – এই বলে লক্ষ্মণ বাবু তাকে নিয়ে যান ফাটল-ধরা পাঁচিলের ধারে ।

আর একটু এগোলেই প্রাচীন চন্ডীমন্ডপ । খোকনের জন্মেরও আগে ওখানে দুর্গাপুজো হতো । এখন সে রামও নেই আর অযোধ্যাও নেই ।

পাঁচিলের কাছে নিয়ে গিয়ে লক্ষ্মণ বাবু নীচে একটা চারাগাছ দেখান, যেটায় এক্কেবারে ছোট্ট জিলিপির মতো পাকানো আশ্চর্য নীল রঙের ফুল হয়ে আছে । খুব কড়া গন্ধ ছেড়েছে ফুলটা আর গাছের গা থেকে ছোটো ছোটো শুঁড়ের মতো কি সব বেরিয়েছে ।
খোকন ভেবে দেখল, এই গাছই সেই গাছ কি না, একমাত্র ঠাকুমাই তা বলতে পারবে ! পুঁই মেটুলি জিনিসটা যে ঠিক কেমন, তাও মনে পড়ে না ছাই ! সে সবে ক্লাস ত্রি-তে পড়ে, সে আর কটা গাছ চেনে !

লক্ষ্মণ বাবু ভাবগতিক দেখে নিশ্চিন্ত হলেন । বললেন, “নেবে ?”
“দেবে ? তোমাদের অসুবিধে হবে না ! আর আমি মোটেও এমনি নেবো না… আমাদের পেয়ারা গাছে পেয়ারা হলে, তোমায় সবচেয়ে বড়ো দুটো দিয়ে যাবো !”

লক্ষ্মণ বাবু ভাবলেন, ছেলেটার মনটা বড়ো ভালো । তিনি অতি সাবধানে পাঁচিলের নীচ থেকে এক খাবলা মাটি-সমেত গাছটা খোকনের ছোট্ট হাতে গাছ-টা দিলেন আর বললেন, “সাবধানে নিয়ে যাও খোকা । আর দেখো যেন হাতে লাগিয়ো না… খুব চুলকোয় ।

(৩)

এরপর সেই আশ্চর্য গাছ নিয়ে লাফাতে লাফাতে খোকন বাড়ির পথ ধরলো । কিন্তু মুশকিল হলো কচুরি পানায় ঢাকা গড়পুকুরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা হলো দাশু পাগলার সাথে । কী যে মুশকিল !

“এই সোনা ইদিকে আয় !”
“আমি কোনো সোনা রুপো নই । আমার গায়ে হাত দেবে না । তুমি দুষ্টু লোক ।”
“কেন আমি কি পাঁঠা খাই ! যারা পাঁঠা খায়, তারা দুষ্ট লোক । তাছাড়া আমি রোজ পাউডারও মাখি… !” – বলেই কোলে ছাগল ছানা নিয়ে গাছতলায় বসে দাশু পাগলার সে কী হাসি ! সে কোনো দিন না মাজা দাঁতগুলো বের করে হাসতে লাগলো ।
“এই তুমি দাঁত মাজো না কেন !”
“মাজলে বুঝি কেউ আমায় ভয় পাবে ! যে পাগলকে কেউ ভয় পায় না.. সে আবার কেমন পাগল ?”
“ভালো তুমি পাগল হয়েই থাকো ! আমি যাই !”
“এই তোর হাতে ওটা কী রে ?”
“কিছু না…” বলে হাত চাপা দেবে, তার আগেই দাশু লম্বা হাত বাড়িয়ে চারাগাছখানা ছিনিয়ে নেয় আর হতভম্ব খোকনকে আরো হকচকিয়ে দিয়ে ঘোষণা করে, “সামনের মাসে আমায় বিয়ে, টোপরে এই ফুল লাগাবো ! খুব সুবাস !”
কাঁদো কাঁদো খোকন মিনতির সুরে বলে, “দিয়ে দাও বলছি… নইলে বাপিকে বলে দেবো । তোমায় পুলিশে ধরবে ।”
“হ্যাঁ পুলিশে ধরবে ! যত বড়ো মুখ নয় ততো বড়ো কথা ! ধর দেখি আমায়… ধরতে পারলে গাছ তোর !”

এই না বলে দাশু তো দৌড় দিল আর তারপর তার পিছনে পিছনে চক্কোত্তিদের গোয়াল ঘর, সত্যপিসিদের কুনো ব্যাঙ-ডাকা পুকুরধার, রায় বাবুদের দোল মঞ্চ, অশোক দাদুদের বাড়ির লাগোয়া তেঁতুল তলা সব পেরিয়ে গেল খোকন । আর তার পরেই খেয়াল হলো এদিকটা সে একেবারেই চেনে না । বাবার সঙ্গেও কক্ষনো আসে নি । দু পায়ে ব্যথা, পেটে খিদে আর দাশু পাগলাও ভ্যানিস । তাকে কোথাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না ! খোকন এবার কী করে !

“এই তোর মা তোকে চান করিয়ে দেয় ?” – খোকনের সমবয়সী লম্বা চুলওয়ালা, গামছা গায়ে একটা মেয়ে হঠাৎ বললো ।
“এটা কোন গ্রাম গো ?”
“আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে !”
থতমত খোকন একটু ভেবে বললো, “মাঝে মাঝে দেয় ।”
“কানের পিছনে, বগলে সাবান দিয়ে দেয় !”
খোকন এসব আপত্তিকর কথার জবাব না দিয়ে বললো, “আমার খিদে পেয়েছে । আমি বাড়ি যাবো !”
“বাড়ি থেকে পালিয়েছিস্, বুঝেছি, তোকে একানড়েতে ধরবে !”

এ কথায় খোকন বেজায় ঘাবড়ে যায় । বেলা হয়ে গেছে । এদিকে তাল গাছও কম নেই । কোন গাছটায় একানড়ে আছে, কে জানে !

“মাধব পুরের রাস্তাটা বলো না গো ! মা বকবে… বাড়ি যাবো !” কাঁদো কাঁদো হয়ে আসে খোকনের গলা ।
এদিকে খোকন অবাক হয়ে দেখে, সেই মেয়েটা পুকুর ঘাটে গামছা রেখে কোথায় উধাও হয়ে গেছে । ভ্যাবাচাকা খেয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে ভুস্ করে মাঝ পুকুরে সে ভেসে উঠলো । ওহ্ তাই বলো ডুব সাঁতার ! নাহ্ সাঁতারটা এবার শিখতেই হচ্ছে ।

(৪)

ক্ষুধার্ত খোকন সবে দু পা এগিয়েছে, থানার দারোগা বিষ্টুগোপাল বাবু সাইকেলে চেপে হাজির ।

“এই যে খোকা ! কার ছেলে গা তুমি ?”
“রতন ব্যানার্জির । মাধবপুরে বাড়ি । আমি বাড়ি যাবো ।” – দারোগা দেখে ভরসা পেয়ে গড়গড়িয়ে বলে যায় খোকন । কিন্তু দারোগা চোখ টোক পাকিয়ে রেগে গিয়ে বলেন, “বাপ মা গুলোও হয়েছে বলিহারি যাই… দুধের শিশুকে কেউ এভাবে ছেড়ে দেয় !” তারপর ভেবে চিন্তে বলেন, “এই সাইকেলে ওঠ দেখি । একটা চোর ধরেছি, পরীক্ষা করে, তারপর তোকে বাড়িতে পৌঁছে দেবো !”

“চোরের পরীক্ষা আবার কী গো !”
“সে দারুণ পরীক্ষা । প্রথমে দেখতে হয়, গলা শুকনো কিনা, তারপর দেখতে হয় গা তেল-চুপচুপে কিনা, তারপর দেখতে হয়, মাথায় চুল এক ইঞ্চির চেয়ে বড়ো না ছোটো আর একেবারে শেষে দেখতে হয়, লাঠির বাড়ি সজোরে এক ঘা দিলে, মা বলে না বাবা বলে । … তা তুই এদ্দূরে কী মনে করে এলি ?”

“আমি একটা গল্পের গাছ খুঁজছিলাম গো । গানওয়ালা একটা গাছ দিয়েও ছিল, কিন্তু দাশু পাগলাটা নিয়ে পালিয়ে গেল !” – খোকনের চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো । দেখে দারোগা বাবুর মায়া হলো । তিনি সুজিত হালুইকরের দোকান থেকে খোকনকে ইয়া বড়ো বড়ো দুটো সিঙারা আর চারটে ছানার জিলিপি খাওয়ালেন । তারপর বললেন, “খোকা গল্পের গাছ চোখে দেখতে পাওয়া যায় না মোটেই । সারা জীবনে যতো গল্প শিখবে, তোমার মনের মধ্যে ততো গল্পের গাছ গজাবে । একেবারে গল্পের জঙ্গল হয়ে যাবে… বুঝেছ ! কিন্তু শুধু শুনলে চলবে না, বলতে হবে । ভাগ করে নিতে হবে, সকলের সাথে । এই গাছের খাদ্য আর জল হচ্ছে, গল্পের শ্রোতা আর পাঠকেরা । বড়ো হও… তখন বুঝবে ।”

খোকন ঠিক কতটা বুঝলো বলা মুশকিল । কিন্তু দারোগা এতো সুন্দর করে বললেন যে, বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছে হলো ।

এদিকে তখন বিকেল হয়েছিল । রাস্তার মোড়ে আলো জ্বলেছে । দারোগা সাইকেলে খোকন-সমেত থানায় গেলেন । থানার জানালা দিয়ে ঝিঁঝিঁ পকার ডাক শোনা যাচ্ছিল । সেখানে চোর পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই, খোকনকে অবাক করে বাবা এসে হাজির ।

“বাঁদর ছেলে… সবাইকে কাঁদিয়ে তুমি এখানে বসে আছো ! চলো এবার বাড়িতে… তোমার একদিন কি ..”

দারোগা বাবু মুড়ি-তেলেভাজা খাচ্ছিলেন । ব্যস্ত হয়ে বললেন, “বসুন বসুন । বকাবকির অনেক সময় পাবেন । কিন্তু তার আগে বলি শুনুন, খোকন সোনা গল্পের গাছ খুঁজছে । ওকে মাধবপুর সাধারণ পাঠাগারে একটা কার্ড করে দিন ! গল্প চায় তো… ওই ওর সঠিক বাগান ।”

তারপর… খোকন তো পাঠাগারে নিয়মিত যেতে লাগলো । আর ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারলো, বইয়ের চেয়ে বড়ো বন্ধু আর হয় না.. আহা ওরাই যে গল্পের গাছ ! ডাল পালা মেলে মনের মধ্যে বাড়তে থাকে ।

 

কলমে অভিষেক ঘোষ, কসবা , কলকাতা

পেশায় শিক্ষক, নেশায় কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক । প্রকাশিত হয়েছে ‘শব্দের অভিযান’ কবিতা সংকলন ।

5 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here