জীবন অনেকটা বিধস্ত এখন। অজানা ভাইরাসের দাপটের সাথে সাথে গতকাল হয়ে গেলো আমফন এর তান্ডব। মানুষ শুধু তুরুপের তাস , কোন পরিস্থিতিতে কখন যে অস্তিত্ব হারাবে, তা সে নিজেই জানে না। জানে শুধু লড়ে যেতে, কিছু ভাবে এগিয়ে যেতে, সমস্ত বাধা বিপত্তিকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে লড়ে দেখিয়ে দিতে।
রবিঠাকুরের গানে সেই প্রার্থনা "বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে যেন করিতে পারি জয় "
আজ অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ রাস্তায় রাস্তায় বাড়ি ফেরার পথে , অপেক্ষায় প্রিয়জনের স্পর্শের। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কোথাও না কোথাও দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলেছে, কেউ দু মুঠো ভাতের জন্য , কেউ আশ্রয় আর কেউ তার প্রিয়জনের অসহায়তায় পাশে থাকতে না পারার বিষণ্নতায়। ছোট ছোট শিশুদের মুখগুলো টেলিভশন আর সোশ্যাল মিডিয়ার পর্দায় দেখে সত্যি নিজেদেরকে অনেক ভাবে দায়ী মনে হয়। দায়ী নয় !! অবশ্যই আমরা সবাই দায়ী কোনো না কোনো কারণে। আসলে আমরা প্রকৃতিকে ভালোবাসতে পারিনি, শুধু দিনের পর দিন তার থেকে নিয়ে গেছি , তাকে সেভাবে কিছু দিতে পারিনি , বা চাইনি দিতে , আর এসবই সেই অর্থে প্রকৃতির প্রতিশোধ।
আজ ভাইরাসে সংক্রামিত লক্ষাধিক মানুষ ভারতবর্ষে , আরো কত মানুষ সংক্রামিত হবে তার হিসেব কোনো বিজ্ঞানী -ডাক্তার আজ আর দিতে পারেন না। তা বলে কি জীবন থেমে গেছে !! না জীবন এখনো থামেনি , যতদিন একটিও প্রাণ, এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে সে আপ্রাণ চেষ্টা করবে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার। ব্যাতিক্রম পরিস্থিতিতে নিজেকে অভিযোজিত করে অভিব্যক্তির প্রমান তো রেখেছে এই পৃথিবীর প্রতিটি জীব বার বার।এবারের যুদ্ধ খুব বেশি কঠিন। তবে কঠিন পরীক্ষায় উক্তীর্ণ হলেই না , আসল আনন্দ। মানুষ গৃহবন্দী -কিছুটা হতাশ , তবে থেমে থাকতে সে জানে না , নিজের চলার পথ ঠিক সে খুঁজে নেয়। আজ এই প্রতিকূল দিনে মানুষ অনেক কিছু শিখছে ,শিখবে। আশা করা যায় আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে এখন থেকেই বোঝাবো/শেখাবো ‘কি দামি এই পৃথিবী আর তার সম্পদ‘। তার একটি সামান্য থেকে সামান্যতম সম্পদের অভাবেও আমাদের তথাকথিত সমাজ- সংসার, কি পরিমানে বেহাল।
আমাদের চাওয়া-পাওয়া গুলো খুব সাধারণ, চিন্তা ভাবনা আরো সাধারণ। আমরা আমাদের পারিপার্শ্বিক সুবিধা অসুবিধার উর্দ্ধে সেভাবে আর কিছু ভাবতে পারিনা। সেই অর্থে আত্মোপলব্ধি হওয়া খুব কঠিন কাজ। কিন্তু মানুষের জীবনের তো দুটি দশা বা ভাব ,সে ভুলে গেলেও তা কঠোর সত্য। জীবভাব ও বিশ্বভাব। মানুষ জীবভাবে আঁকড়ে বেঁচে থাকে তার অস্তিত্বকে, আর বিশ্বভাব, আসলে মানুষের জীবনের তিন চতুর্থাংশ তো এই বিশ্বভাবই।
ঋগ্বেদে ভাষায় 'পাদোহস্য বিশ্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি'
এখন বোধহয় সময় এসেছে, সেই বিশ্বভাব বুঝে নেওয়ার। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও মানুষই পারবে তার নিজের অবস্থানকে বুঝে নিতে , তাকে নতুন ভাবে সাজাতে। নিজের মনের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে তাকে সঠিক পথে চালিত করতে। সাম্প্রতিক অবস্থায় প্রতিটি মানুষ আজ বিমর্ষতা- অবসাদের শিকার। কিন্তু নিজের মনকে দৃঢ় করে শক্তি আনতে হবে লড়াই করার , আবারো নিজের অস্তিত্বের সাথে বিশ্বমানবজাতির অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখার।
আসুন নিজেদের একটু আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যায়, মন-চিন্তা-অন্তর-বুদ্ধি -মত -ভাবকে যথার্থ মহৎ উদ্যেশে এগিয়ে নিয়ে যায় একটু একটু করে।
নিজেকে বাঁচান -পরিবারকে বাঁচান -সমাজকে -সর্বোপরি ভারতবর্ষ -পৃথিবীর নবরূপায়ণ, এখন শুধুমাত্র আমাদেরই হাতে।
সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন, শুধু এই কামনায়।
মৌসুমী কুন্ডু
মুখ্য সম্পাদক – ‘মন ও মৌসুমী’