দিন দুয়েক আগে আমার এক পরিচিত এর শেয়ার করা একটা রেসিপি দেখলাম।কৌতুহলবশত নামটা জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম।জানতে পারলাম ওটি ডালগোনা কফি।নামটা শুনে একটু ভিরমি খেয়ে ভাবলাম টাইপিং মিসটেক হবে হয়তো।আর কথা না বাড়িয়ে একটু দ্বিধা নিয়েই গুগল দাদুর শরণাপন্ন হলাম।যখন তার ছবি আর প্রণালী দেখলাম,বেশ লাগলো।ঠোঁটে এক টুকরো হাসি খেলে গেলো আমার।কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস।সেই হাসি শুধু আমার ঠোঁটেই না আমার ছয় বৎসরের কন্যাটির ও ঠোঁটেও দেখা গেলো।তারপরের দিন থেকে শুরু হলো তার অত্যাচার।“মা, সংমং কফি বানিয়ে দেবে না”,”মা,সন্ডাসন্ডি কফি বানিয়ে দেবে না”।ওর উচ্চারণের খোঁচায় জর্জরিত হয়ে তাকে শেষমেশ ডালগোনা কফির নাম শিখিয়েই দিলাম।সত্যি বলতে এরপর শুরু হলো আমার নিত্যনতুন পন্থা কফি বানানো থেকে নিষ্কৃতি পেতে।প্রথম দিন বলা হলো যদি ইংরেজিতে আর বাংলাতে কফিটির নাম লিখে ফেলতে পারে তবে বানানো হবে।লেখা হলো।তবে ও বুঝে গেল বড্ড দেরি হয়ে গেছে তাই আজ আর হবে না।লকডাউন এ ঘরের কাজ আর মেয়ের নিত্যনতুন খেলার আইডিয়া তে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত তখন দ্বিতীয় দিনে বোঝাতে সক্ষম হলাম “দুধ নেই সোনা বাড়িতে”।তাই কফি বানানো বন্ধ।তৃতীয় দিনে “কফি নেই” প্ল্যান টা প্রায় সাকসেসফুল হচ্ছিল, কিন্তু মাঝখানে নিউ এন্ট্রি তার বাবার”কেন,কফি তো নতুন রাখা আছে”।অতঃপর শুরু হলো ডালগোনা কফি বানানো।মেয়েকেই বানাতে দিলাম।তবে মিশ্রণ টা ফোম এ পরিণত করতে যে পরিমান কসরত প্রয়োজন তার জন্য শেষ পর্যন্ত আমাকেই হাত লাগাতে হলো।তবে এত কষ্ট সাধনার পর অতি লোভনীয় কফি তৈরি হলো।যেমনটি দেখেছিলাম অবিকল সেরকম।ততক্ষনে আমার ভিডিও আর ফটো তলায় মোটামুটি শেষ।কিন্তু গোল বাধলো এরপর।যত জায়গায় দেখেছি এই এত অবধি।মানে টা হলো কাচের পাত্রে রাখা সুসজ্জিত কফি।কিন্তু এটা খাবো কি ভাবে সেটা তো দেখাই নি কোথাও।বুঝতে পারলেন না নিশ্চই।আসলে ঘটল এই, আমি তো আমার কন্যা কে বললাম খাও সোনা আর ও খাওয়া শুরু করলো বটে কিন্তু কিছুটা খেয়ে বলে কিনা “ও মা এতো শুধু দুধ খাচ্ছি উপরের টা তো গ্লাসেই থেকে যাচ্ছে”।বললাম কিছু হবে না (ততক্ষনে তার গ্লাস প্রায় শেষের পথে)চামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে খাও।কিন্তু ফোম বাবাজি অত সহজে মিশবেই বা কেন।যাই হোক কন্যা তো ‘ইস তেতো’ বলেই খালাস।শেষে আমি তাতে দুধ মিশিয়ে চামচ দিয়ে নেড়েচেড়ে, খানিকটা আঙ্গুল দিয়ে চেটে কোনোক্রমে অতি কষ্টের তৈরি সাধের কফি তো উদ্ধার করলাম।মনে মনে একটা শান্তি যেমন ছিল যাক মেয়েটার পেটে দুধ টুকু তো গেল।কিন্তু মনের খটকা থেকেই গেল।কি জানি বাবা এভাবেই খায় তো।এত সুন্দর সুসজ্জিত,প্রায় সকলের whatsapp স্ট্যাটাস,ফেসবুক এ জায়গা করে নেওয়া পানীয়টি কিনা শেষে আঙ্গুল দিয়ে চেটে চেটে খাবো।ডালগোনা কফি তাই আমার কাছে এই লক ডাউন এর সময়ে একটি চ্যালেঞ্জিং টাস্ক হিসাবেই থেকে গেল আমার সাধের পানীয় আর হয়ে উঠলো না।
লেখিকা পরিচিতি : মৌমিতা দত্ত বিশ্বাস
Khub bhalo laglo