”মা হওয়া নয় মুখের কথা মাকে দেখেই বুঝি
ভালোবাসার শেষ ঠিকানা মায়ের কাছে খুঁজি।”
বিশ্বের একমাত্র ক্ষুদ্রতম মধুর শব্দ ‘মা’। পিতার পরিত্যক্ত পদার্থ নিজের গর্ভে ধারণ করে দশ মাস দশদিন অসহ্য যন্ত্রণা কষ্ট শারীরিক অসুবিধা সহ্য করে অসহ্য প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করে একজন নারী সন্তানের জন্ম দিয়ে নতুন পরিচিত পায় ‘মা’ শব্দে।তার পরিচয় তখন শুধু কারো মেয়ে বা কারো স্ত্রী মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না,তার পরিচয় তখন সে মা,তার গায়ে তখন মা মা গন্ধ –কত দায়িত্ব তখন তার কাঁধে।বিশ্বের সমস্ত মূল্যবান সম্পদ একত্রিত করলেও মায়ের স্নেহ ভালোবাসার কাছে তা নিতান্তই তুচ্ছ মূল্যহীন। মাতৃত্ব কেবল মানুষের মধ্যেই দেখা যায় তা নয়,পশু পাখি সমস্ত প্রাণীর মধ্যে এমনকি উদ্ভিদের মধ্যেও মাতৃস্নেহ লক্ষ করা যায়,একথা বিজ্ঞানাচার্য জগদীশ বসু তাঁর ”অব্যক্ত” প্রবন্ধ গ্রন্থে ‘গাছের কথা’ শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন।
●উনিশ–বিশের পার্থক্য :- ডান বা বাম চোখের মধ্যে কোন্ টির গুরুত্ব বেশি সে প্রশ্ন যেমন অমূলক ও অর্থহীন তেমনই বাবা ও মায়ের মধ্যে সন্তানের জীবনে কে বড়ো?কে বেশি আপন?কার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি?—এই প্রশ্ন গুলি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অর্থহীন।সন্তানের জীবনে বাবা-মা উভয়ের ভূমিকায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে তর্কের বিষয় ছেড়ে যদি মনের গলি পথ দিয়ে হেঁটে আসি আর উনিশ-বিশের পার্থক্য করতে বসি তাহলে দেখব একজন বাবার থেকে সন্তানের জীবনে মায়ের ভূমিকা অনেক বেশি। যদি সমীক্ষা করে দেখা যায় তাহলে দেখতে পাব একজন সন্তানের জীবনে মা যতটা সহজে বন্ধু বা কাছের হয়ে উঠতে পারে একজন বাবা ঠিক ততটা হয়ে উঠতে পারেনা।বাবা হলো নারকেলের উপরের খোলাটা আর মা ভিতরের সুস্বাদু নরম শাঁসলো অংশ।এ প্রসঙ্গে তুলসী লাহিড়ীর ”ছেঁড়া তার” নাটকের নায়িকা ফুলজানের একটি উক্তি বিশেষ ভাবে স্মরণীয় ”বাচ্চা পয়দা হবার আগে আল্লা মায়ের বুকে দুধ আনি রাখি দ্যায়।বাপের বুকে তো দ্যায় না।বাচ্চাক্ বাঁচানোর দায় বাপের চায়া মায়ের বেশি।” একজন সন্তানের প্রথম স্পর্শ ‘মা’ ,তার মুখের প্রথম ভাষা ‘মা’।কথা না ফোটা শিশুর সমস্ত কথা মা যত সহজে বুঝতে পারে একজন বাবা তা পারে না।সৃষ্টিকর্তাও তাই মায়ের সঙ্গে সন্তানের নাড়ির যোগ স্থাপন করেন,বাবা যেন সেখানে উপেক্ষিত। তর্কিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করে নিজের নিজের জীবনের দিতে তাকালেই বাবা-মায়ের উনিশ-বিশের এই পার্থক্য সহজেই আমাদের চোখে পরবে।
●কেন মাতৃদিবস:-
এই বিশ্বে দিবসের ছড়াছড়ি। প্রতিটি দিবস ঘোষণার পশ্চাতে থাকে কিছু কারণ ও উদ্দেশ্য।এরকমই একটি দিবস হল বিশ্বমাতৃ দিবস।
এই সংসারে মা-রা মুখ বুঝে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সমস্ত কাজ করে যায়।পরিবারের অন্যরা ক্লান্ত হয়ে পরলেও মা শত ক্লান্তি কে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেও সংসারের সমস্ত কাজ করে চলে,শুধু সংসার কে ভালোবেসে।সে কখনও বৌমা,কখনও স্ত্রী, আবার কখনও মা। মা যেন সাক্ষাৎ দশভুজা, যে দিকে জল পরে সেদিকেই ছাতা ধরে। পরিবারের অন্য সদস্যদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আরাম বিরামের দিকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সর্বদা নজর রাখে— মা।সেখানে নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আরাম বিরাম সমস্তই গৌণ। যে মেয়েটা পিত্রালয়ে এক গ্লাস জল গড়িয়ে খেত না ,সেই মেয়ে যখন স্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন তাকে কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয় নিতে হয় সংসারের দায়িত্ব।আবার সেই স্ত্রী যখন ‘মা’ হয়ে যায় তখন তার দায়িত্ব কর্তব্য বহু গুণিত হয়।তখন একদিকে থাকে স্ত্রীর দায়িত্ব কর্তব্য অন্য দিকে থাকে মায়ের দায়িত্ব কর্তব্য।সেই মায়ের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেই এই মাতৃদিবসের ভাবনা।
●সূচনার ইতিহাস:- মাতৃদিবস পালনের ইতিহাস নিয়ে ‘নানা মুনীর নানা মত’ প্রচলিত।ধর্মীয়,ঐতিহাসিক,পৌরাণিকতার সঙ্গে এই দিনটির ইতিহাস যুক্ত হওয়ায় দিনটি অন্য মাত্রা লাভ করেছে।
কারো কারো মতে প্রাচীন গ্রিসের মাতৃআরাধনার প্রথা থেকে এই বিশেষ দিনটির সূত্রপাত হয়।তাদের মতে গ্রিক দেবী সিবেলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন থেকে এই মাতৃদিবসের সূচনা।
একটি গোষ্ঠীর মতে প্রাচীন রোমানদের থেকে এই দিনটির সূচনা।সেখানে ম্যাত্রানালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে একটি ছুটির দিনে মায়েদের নানা উপহার দিয়ে সম্মান ও ভালোবাসা জানানো হতো।সেই থেকেই এই দিনটি পালন করা হয়।
কারো কারো মতে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের মাদারিং সানডের ধারণা থেকে এই দিনটির সূত্রপাত।ষোড়শ শতকে খ্রিস্টানদের মধ্যে একটি প্রথা প্রচলিত ছিল।সেটি হল বছরে অন্তত একবার নিজের মাদার চার্চ বা প্রধান গির্জায় যাওয়া।এই রেওয়াজ থেকেই এই দিনটির উৎপত্তি বলে মনে করা হয়।
খ্রিস্টানদের ক্যাথলিক পঞ্জিকার মতানুসারে এটি ‘লেতারে সানডে’ নামে পরিচিত। ভার্জিন মেরি বা কুমারী মা মেরির ও ”প্রধান গির্জার”সম্মান প্রদর্শনার্থে লেন্টের সময় চতুর্থ রবিবার মায়েদের উপহার দিয়ে ও তারা পরিবারে যে সমস্ত কাজ করে সেইদিন তাদের সে সমস্ত কাজ থেকে অব্যহতি দিয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিয়ে পরিবারের পুরুষরা সেই সমস্ত কাজ করে মায়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এই দিনটি পালন করত। এখান থেকেই মাতৃদিবসের সূচনা হয়।
ভিন্ন মত থাকলেও অধিকাংশের মতে আমেরিকার আনা জার্ভিসের প্রচেষ্টায় এই দিনটির সূচনা হয় এবং পালিত হয়।
●মাতৃদিবসের সূচনা:-
১৮৭২ সালে ‘দ্য ব্যাটল হিম অব দ্য রিপাবলিক’গানের স্রষ্টা মার্কিন কবি ও লেখক জুলিয়া ওয়ার্ড হাও আমেরিকার বস্টনে প্রথম মাতৃদিবসের সভা আয়োজন করে এই দিবসটির ধারণা মানুষের মনে জন্মদেন। শুরুটা তার হাত ধরে হলেও এই দিবসটি আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছিল আনা জার্ভিসের হাত ধরে।
‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যান মারিয়া রিভিস জার্ভিস ছিলেন আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময়ের একজন সমাজ কর্মী। তিনি ছিলেন মাতৃদিবস পালনের অনুপ্রেরণাদানকারী।তিনি মাতৃদিবসে জাতীয় ছুটির ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। তিনি চার্চে ‘Sun day school’ এ পড়াতেন।সেখান থেকেই তার মেয়ে মাতৃদিবস পালনের অনুপ্রেরণা লাভ করে।অ্যান বলেছিলেন
”I hope and pray that someone, sometime,will found a memorial mothers day commemorateing her for the matchless service she renders to humanity in every field of life.She is entitled to it.”
১৯০৫ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার তিনি মারা যান। আনা মারিয়া জার্ভিস মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের স্বপ্ন পূরণের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেন। অবিবাহিত আনা জার্ভিসের প্রাণ ছিল তার মা,যাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। তাই মায়ের মৃত্যুতে শোকাহত জার্ভিস মাকে শ্রদ্ধা জানতে ১৯০৫ সালে মাতৃদিবস পালনের ডাক দিয়ে মাতৃদিবসকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য লড়াই শুরু করেন।তার এই লড়াই শুধু নিজের মায়ের সম্মানের জন্য ছিল না,তা ছিল বিশ্বের সকল মায়েদের সম্মানের জন্য। ১৯০৮ সালে জার্ভিস মাতৃদিবস পালন শুরুর জন্য আমেরিকা জুড়ে জাতীয় স্তরে প্রচার শুরু করে।১৯০৮ সালের ১০ মে আনা জার্ভিস প্রথম এই দিনটি পালন করে তার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরের Andrews Methodist Church এ। সে তার মায়ের প্রিয় ফুল Carnation দিয়ে মাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।এরপর ওই একই দিনে তাঁর উদ্যোগে সন্ধ্যায় ফিলাডেলফিয়া Wanamaker Store auditorium এ প্রায় পনেরো হাজার মানুষ সমবেত হয়ে মাতৃদিবস পালন করে।কিন্তু মার্কিন কংগ্রেস জার্ভিসের মাতৃদিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব কে নাকচ করে দেয়। ১৯১২ সালে
‘মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন’ স্থাপন করে জার্ভিস “মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার” আর ”মাতৃদিবস” এই শব্দবন্ধের বহুল প্রচার চালায়। কার্নেশন ফুলকে মাতৃদিবসের সরকারি প্রতীক হিসেবে ঘোষণার দাবি করে।
“She was specific about the
location of the apostrophe;it
was to be a singular possessive,
for each family to honour their
mother, not a plural possessive
Commemorating all mothers in the world.””
এরপর দীর্ঘ ৬ বছর সংগ্রাম চালিয়ে যায় জার্ভিস।অবশেষে মার্কিন কংগ্রেস জার্ভিসের আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করে ১৯১৪ সালের ৯ই মে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন একটি আইন পাশ করে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার কে মাতৃদিবসের স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। সেই থেকে আজও মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মাতৃদিবস পালিত হয়ে আসছে।
●কবে কোথায়:- বিশ্বের সর্বত্র একই দিনে মাতৃদিবস পালিত হয় না।আমেরিকা ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মাতৃদিবস পালিত হয়।অন্য দিকে গ্রিসে ২ ফেব্রুয়ারি,ব্রিটেনে মার্চ মাসের চতুর্থ রবিবার মাতৃদিবস পালিত হয়।থাইল্যান্ডে রানি সিরিকিটের জন্মদিন আগস্ট মাসে মাতৃদিবস পালিত হয়। আরব বিশ্বে ২১শে মার্চ,আলবেনিয়ায় ৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের সঙ্গেই মাতৃদিবস পালন করা হয়।আবার আর্জেন্টিনাতে ১১ অক্টোবর ,ইন্দোনেশিয়ায় ২২ ডিসেম্বর,ইরানে ইসলামিক ক্যালেন্ডারের যষ্ঠ মাসের ২০ তারিখ,ইতালিতে ২৪ডিসেম্বর মাতৃদিবস পালন করা হয়।বলিভিয়ায় করনিলার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মহিলা সৈনিকদের স্মৃতিস্মারক হিসেবে ২৭ মে মাতৃদিবস পালন করা হয়।
●কীভাবে পালিত হয়:- উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনের রীতি অনুসারে মাতৃদিবস একটি ছুটির দিন হিসাবে পালিত হয়।অনেক দেশে মাতৃদিবস পালন না করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় । অনেক দেশে আবার একে বিদেশি সংস্কৃতির অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।এই দিনটি পালনের রীতি অনেক রকম।এই দিনটি মূলতঃ মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা,সম্মান ও ভালোবাসা জানানোর উদ্দেশ্যে পালন করা হয়ে থাকে।বর্তমানে এই দিনটিতে বেশিরভাগ দেশেই ছুটি থাকে এবং সন্তানরা তাদের মাকে ফুল বা বিভিন্ন উপহার দেয়।এছাড়া বাইরে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া বা মায়ের সঙ্গে কিছু সময় কাটানো কিংবা মাকে বিশেষ রান্না করে খাওয়ানো ইত্যাদি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও মাতৃদিবস পালন করা হয়।বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় মায়ের ছবি পোস্ট করে মাকে নিয়ে কবিতা লিখে বা মনের কথা লিখে দিনটি পালন করে। পাশাপাশি মাকে বিভিন্ন উপহারও দিয়ে থাকে।
● কিংবদন্তির মাতৃদিবস :-হিন্দু ধর্মপ্রধান দেশ,বিশেষত নেপালে একে “মাতা তীর্থ অনুসি”বা “একপক্ষ ব্যাপী মাতৃ তীর্থ যাত্রা”বলা হয়।ইংরেজি এপ্রিল মাস অর্থাৎ বাংলার বৈশাখ মাসে অমাবস্যার সময় এই উৎসব পালিত হয় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।এই শব্দবন্ধে ‘মাতা’ মানে ‘মা’ আর ‘তীর্থ’ অর্থাৎ তীর্থযাত্রা।নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর পূর্বে মাতৃদিবসের একটি অঙ্গ ”মাতা তীর্থে অনুসি”।এই উৎসবে মৃত মায়েদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় ও জীবিত মায়েদের ফুল,উপহার দিয়ে সম্মান জানানো হয়।
এই উৎসবের নেপথ্যে আছে একটি কিংবদন্তি।
মা দৈবকী ঘুরতে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে দেরি করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাড়িতে দীর্ঘ সময় মায়ের অনুপস্থিতিতে দুঃখিত হয়ে ওঠেন ও মায়ের সন্ধানে বের হন।কিন্তু অনেক জায়গায় খুঁজেও মায়ের সন্ধান পান না।শেষে তিনি ”মাতা তীর্থ কুন্ড”এ মাকে স্নান করতে দেখতে পান।মাকে খুঁজে পেয়ে কৃষ্ণ আনন্দিত হয়ে ওঠেন এবং মায়ের দীর্ঘ অদর্শন জনিত মনবেদনার কথা মাকে জানালে মা বলেন,”আহা!তাহলে এই স্থানটিকে আজ থেকে প্রত্যেক সন্তানের তাদের ছেড়ে আসা মায়েদের সঙ্গে মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক”। সেই থেকেই এই জায়গাটি মৃত মায়ের সঙ্গে সন্তানের মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয় ও স্থানটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়।এখনও সেই জলাশয়টি বিদ্যমান। প্রাচীন পুঁথি ও লোকমুখে প্রচলিত এ কাহিনীর সত্যতা নিয়ে মতভেদ লক্ষ করা যায়।
●একদিন মাতৃদিবস পালনের যুক্তি:-
”এক ফোটা দুধের ঋণ শোধ হবে না কোনোদিন”–এই জগৎ সংসারে আমরা আমাদের জীবদ্দশায় পাঁচটি ঋণ কোনো দিনই শোধ করতে পারব না,যার মধ্যে একটি হল মাতৃঋণ। জীবনের প্রথম শিক্ষক স্নেহ ভালোবাসার প্রতিমূর্তি মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন কখনওই পর্যাপ্ত ও যথার্থ নয় –প্রতিদিনই মাতৃদিবস হওয়া উচিত। তবুও আমরা একটা বিশেষ দিনকেই বেছে নিয়েছি মাতৃদিবস হিসাবে।প্রতিদিনই মাতৃদিবস কিন্তু একটা বিশেষ দিন থাকাটা বাঞ্ছনীয়।ঠিক যেমন প্রতিদিনই আমরা আমাদের বাড়িতে বিভিন্ন দেবতা বা দেবীর পুজো করি কিন্তু একটা বিশেষ দিন বা বিশেষক্ষণ নির্দিষ্ট আছে এক একজন দেবতা বা দেবীর পুজোর জন্য । আমরা সেই নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ক্ষণে সেই দেবতা বা দেবীর পুজোর আয়োজন করি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে এক্ষেত্রেও যুক্তিটি অনুরূপ। এক বাটি দুধে একফোঁটা লেবুর রস দিলে যেমন ছানা তৈরি হয় ঠিক তেমনি একটা বিশেষ দিনে মাতৃদিবস পালন করে আমরা মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করে সামান্য হলেও মাতৃঋণ পরিশোধে সচেষ্ট হয়।
আর পাঁচটা দিবসের মতো দিবস পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে মাতৃদিবসও আজ কেবল একটা দিবসে পরিণত হয়েছে।যদিও মাতৃদিবস ঘোষণার পরেই এর সাথে ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত হতে দেখে আনা এই দিবস বয়কটের ডাক দেন।আনা দেখেন বিভিন্ন সংস্থা লাভের আশায় মাতৃদিবসকে উপলক্ষ্য করে কার্ড তৈরি করছে।যার তীব্র বিরোধিতা করে আনা।তাঁর মতে সন্তানরা মায়ের জন্য সময় পায়না,তাই তাদের উচিত মায়ের জন্য সময় বের করে কেনা কার্ডের বদলে নিজে হাতে মায়ের জন্য কার্ড তৈরি করে মাকে উপহার দিয়ে মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা । তাছাড়া এই দিনটির আসল উদ্দেশ্য ভ্রষ্ট হবে।
আনার বিরোধিতায় কেউ কর্ণপাত করেনি।বরং শান্তি ভঙ্গের দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।আনা এই দিনটিকে ”হলমার্ক হলিডে” বলে আখ্যায়িত করে ও আক্ষেপ করে,”এই দিনটির সূচনা নখ করলেই ভালো হতো কারণ এটি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে…”। তাই এই দিনটি আসল উদ্দেশ্য চ্যুত হয়ে ব্যবসায়িক হয়ে উঠেছে।মাতৃদিবস আমেরিকায় বানিজ্যিক ভাবে সবথেকে সফল উৎসবে পরিণত হয়েছে।ভারতের মতো দেশে এই উৎসব পালন কতখানি যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। কারণ যেখানে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান সেখানে মাতৃদিবস পালন কি আদৌ যুক্তিগ্রাহ্য?কেবল লোকদেখানো পালনের জন্য পালন করলে ঠিক আছে,কিন্তু যে উদ্দেশ্যে দিনটির প্রচলন হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য যেখানে গৌণ সেখানে আবার কীসের মাতৃদিবস?
কলমে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
Khub sundor
Thank u
Thank u
Khub sundor hoa6e 🥰
দারুন হয়েছে