কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ভগবানের মুখ নিঃসৃত বাণীর লিখিত রূপ ভগবৎগীতা। হিন্দু দের কাছে ভীষন ভাবে আদৃত।এর প্রভাব নিয়ে একটা ঘটনা শুনেছিলাম আমার ছোটদাদুর কাছে । আমার ছোট দাদু জ্যোতিষী। সন্ধ্যা বেলায় এইসব গল্প আমাকে খুব আগ্রহ করেই শোনাতেন।
পাঞ্জাবে এক ভদ্রলোক থাকতেন ।তাঁর নাম ছিল সুরেন্দ্র সিং। বংশ পরম্পরায় কাঠের ব্যবসা ছিল তাঁদের। তিনি ও তাতেই নিযুক্ত ছিলেন। তবে মানুষের কষ্টে বুক দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন ।যথাসম্ভব সাহায্য করতেন ।সেজন্য মানুষের ভালোবাসা পেতেন খুব ।ব্যায়াম করা পেশীবহুল শক্তিশালী সুন্দর পেটানো শরীর ছিল তাঁর।প্রতিদিন রাতে খাওয়ার শেষে একবার করে হাঁটতে যেতেন ।এটা ছিল তাঁর নিত্য অভ্যাস।
এরকমই একদিন রাতে হাঁটতে বেরিয়েছেন ।হঠাৎই দেখলেন একটি সুন্দরী যুবতী মেয়ে রাস্তার পাশে ঝোপের ধারে বসে কাঁদছে।কিছুটা অবাক হয়ে গেলেন। এতরাতে কোথা থেকে আসল মেয়েটি?তিনি মেয়েটির কাছে গেলেন ।তাকে তার নাম ধাম জানতে চাইলে সে আরো বেশি করে কাঁদতে থাকল।
যাইহোক কিছুটা কান্না র পর মেয়েটি মুখ তুলে তাকালো। রূপ যেন ফেটে পড়েছে ।অপরূপ সুন্দরী সে।একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল যে তার নাম মীরা ।তার দেশ বেনারস।কাল বাবার সাথে ব্যবসার কাজে এসেছিল ।বিকেল থেকে বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।তাই সে কাঁদছে ।সে আদৌ ঘর যেতে পারবে কিনা কে জানে!
সুরেন্দ্র বিপদে পড়ে গেলেন।এত রাতে মেয়েটিকে বাইরে ছেড়ে যেতে মন চাইছে না ।যদি ওর সাথে কোন খারাপ কিছু হয়! আবার নিজের বাড়িতে যে নিয়ে যাবেন লোকের কাছে কি জবাব দেবেন ।যাইহোক সাতপাঁচ ভেবে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন ।মা-বাবা মারা গেছেন অনেকদিন।প্রতিবেশী দের পরামর্শে তিনি মীরাকে বিয়ে করলেন ।মীরা খুব কাজের মেয়ে ।কয়েক দিনে সুরেন্দ্রর ঘরের রূপ বদলে গেল ।মীরার বাবার অনেক খোঁজ করা হলেও খবর পাওয়া যায়নি ।মীরা তার মিষ্টি গুণে সুরেন্দ্রর মনে জায়গা করে নিতে দেরি করল না ।
কেটে গেল মাস চারেক । ইদানিং সুরেন্দ্র একটা অজানা অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন।রোজ সন্ধ্যার সময় জ্বর আসে আর সকালে ছেড়ে যায় ।সারারাত একটা ঘোরের মধ্যে থাকেন তিনি ।ভীষণ দূর্বল বোধ করেন ।আর রাতে হাঁটতে যেতেও পারেন না । সুন্দর শরীর ভেঙে গেছে। বাধ্য হয়ে ডাক্তার দেখালেন।ডাক্তার বললেন তাঁর অসুখের কারণ রক্তের কমতি।শুনে চমকে উঠলেন সুরেন্দ্র ।কারণ যে খাবার তিনি খেয়ে থাকেন তা যথেষ্ট পুষ্টি কর।কি হয়েছে তবে?
খুব চিন্তিত হয়ে বাড়ি ফিরে এলেন ।আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করলেন এই কয়েকদিনে মীরা যেন খুব সুন্দরী হয়ে উঠেছে ।কিন্তু অসম্ভব ঝগড়া ঝামেলা করে ।কিছু বলতে গেলে খ্যাঁক করে আসে।
খুবই দূর্বল সুরেন্দ্র ।তাঁর শরীর বিছানার সাথে মিশে যেতে বসেছে ।আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখলেন ।হঠাৎই দেখলেন গলার কাছে দুটি খুব সূক্ষ্ম ছিদ্র ।কিসের দাগ এই দুটি?
ডাক্তার সাহেবের পরামর্শে একটি দোকান থেকে ওষুধের পুরিয়া এনে খান।কিন্তু কোন লাভ হয়নি ।একদিন তো ওষুধ খেয়ে কাগজ টাই পকেটে নিয়ে শুয়ে পড়লেন ।সেদিন ঘটে গেল এক সাংঘাতিক ঘটনা ।
তখন রাত একটা বাজে ।হঠাৎই এক অজানা কারণে ঘুম ভেঙে গেল সুরেন্দ্রর ।চমকে উঠে দেখলেন সামনে দাঁড়িয়ে আছে মীরা ।সেই সুন্দরী মীরা নয় এক মীরা রূপী সাংঘাতিক ভয়ঙ্করী ডাইনী।চোখ দুটো দিয়ে আগুন ঝরছে ।দুই ঠোঁটের কোণে দুটো সূঁচালো দাঁত।সে সুরেন্দ্র কে বারবার বলছে যে ওনার পকেটে যে ওষুধের পুরিয়া র পাতাটি আছে সেটা যেন ফেলে দেয় ।কখনো সে ডাইনী র রূপ ধারণ করছে ।কখনো মীরার ।সুরেন্দ্র খুব ভয় পেয়ে গেলেও বুদ্ধি হারালেন না।পাতাটি বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লেন ।এদিকে ঐ ডাইনী যখন দেখলো যে সুরেন্দ্র ওর কথা শুনবে না সে বাধ্য হয়ে ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল ।
সকাল হতেই সুরেন্দ্র ছুটে গেলেন কাছেই একটি কালীমন্দিরে।ওখানকার পুরোহিত কে সব বলে ওষুধের পাতাটি দিলেন ।সেটা দেখে পুরোহিত বললেন পাতাটি হল ভাগবত গীতার একটি ছেঁড়া পাতা।ঐটা সুরেন্দ্রর কাছে থাকার জন্য ডাইনী আঘাত হানতে পারে নি।
আরেকটা কথা বললেন যে ডাইনীরা নানা রকম রূপ ধরে।মানুষের রক্ত চুষে ওরা ওদের যৌবন ধরে রাখে।তাই মীরা সুরেন্দ্রর রক্ত চুষে অত সুন্দর হয়েছিল।তিনি সুরেন্দ্র কে পরামর্শ দেন ঐ পাতাটি মাদুলির ভিতরে ভরে ডানহাতে ধারণ করতে।অসীম এর ক্ষমতা ।যে কোন অশুভ শক্তি ভাগবত গীতার কাছে আসার সাহস করে না ।
পুরোহিতের কথা মত সুরেন্দ্র পাতাটি কে মাদুলি তে ভরে ডানহাতে ধারন করেন ।আর তাঁকে ডাইনীর ফাঁদে পড়তে হয়নি ।