আজ -শনিবার ,অন্যদিনের থেকে আলাদা -জীবন যাপন! ঘরদোর মুছে চান করে স্টেশনের দিকে বেরিয়ে পড়লাম -উদ্দেশ্য বড় ঠাকুরের পুজো …শুদ্ধ ভাবনায় একটার পর একটা পা ফেলে হাঁটতে লাগলাম ,পর পর কয়েকটা ঠাকুরের মন্দির পার হলেও আমার উদ্দেশ্য স্টেশনের নিচে -বড় ঠাকুরের মন্দিরে যাওয়া তার কারণ দক্ষিণ দিকে দেবমূর্তি যদি না তাকায় তাহলে তা সঠিক দেবমূর্তির অবস্থান নয় ।এসব পুরাণ থেকে পাওয়া।
আগের মত মিষ্টি দোকানে হাজির হলাম সন্দেশ কিনলাম দু প্যাকেট দক্ষিণা কালী ও বড় ঠাকুর এর জন্য মোট -30 টাকা, 100 টাকার নোট বার করার পর মনে হলো পকেটে 50 টাকার নোট আছে ,হাতড়াতে হাতড়াতে তা পেলাম ,ভীড়ের মধ্যে দোকানের ছেলেটি টাকাটা নিলো, ফেরত নেয়ার সময় ভাঁজ করা কিছু টাকা পকেট এ ঢুকালাম ।দোকান পেরিয়ে কয়েকটা পা যেতে মনে হল -টাকাটা ঠিক দিয়েছে কিনা- গুনতে গিয়ে দেখি, কুড়ি টাকার বদলে 70 টাকা ফেরত দিয়েছে তাহলে কি আমি দোকানে ফিরব !এক্সট্রা বাকি টাকাটা ফেরত দিয়ে দেবো !মনের ভিতরে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে মনের ভিতর লোভ বস্তুটি বলে উঠলো -তুই তো অন্যায় কিছু করিস নি! সে ভুল করেছে -তোর তাতে কি ?তুই এক্সট্রা টাকা নিয়ে নে !মনটায় বেস পুলক জেগে উঠে! কয়েক পা হাঁটতেই কে যেন মনের ভিতর বলে- তুই কেমন মানুষ হে ,নিজেই যখন বুঝতে পারছ- তুমি অন্যায় করেছ ,তবুও টাকা ফিরিয়ে দিলে না!
মনে পড়ে যায় -কয়েক বছর আগের কথা ,বাসন্তী পূজার মেলায় -বাইকে করে ,স্বামী-স্ত্রী গিয়েছিলাম কিছুক্ষণ ঘোরার পর- মনে হল ,কাছেই তো মামার বাড়ি অনেকদিন যাইনি, হ্যাঁ প্রায় 10 বছর হবে !এই সুযোগে স্বামী-স্ত্রী ঘুরেই আসি ,খালি হাতে তো যাওয়া যায় না তাই কিছু টাকার মিষ্টি কিনলাম… সেদিন আজকের মতো অবস্থা হয়েছিল -কিছুদূর গিয়ে দেখি 60 টাকা বেশি দিয়ে ফেলেছে -আমার স্ত্রী ফিরিয়ে দিতে বলেছিল বিজ্ঞের মতো বললাম -আমি তো অন্যায় করিনি! সে ভুল হিসাব করেছে ,তার খেসারত তো -তাকে দিতেই হবে! তখন স্ত্রী হেসে বলেছিল -আমরা জানি যে আমরা অন্যায় করছি! আমাদের কে খেসারত দিতে হবে উপরওয়ালার কাছে …ধুৎ !রাখ তো -ওই সব সেন্টিমেন্টাল কথা! বলেই ,গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলাম ,প্রায় অন্ধকার হয়ে আসছিল, অনেক আগের সেই চেনা রাস্তা- গাড়ির লাইটের আলোয়, অনেক বাল্য স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছিল.. সেই তালগাছ -সেই বটগাছ -ডান দিকে অপুর বাড়ি, যার সাথে- প্রায় খেলতে বেরোতাম এখানে এলে …তারপর রাস্তা ক্রমশ ছোট হতে শুরু করেছে মামার বাড়ির ঠিক পিছনটায় এসে গেছি- একটা টান নিলেই, বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাব ,কিন্তু হায়! টার্ন নিতে গিয়েই স্লিপ খেয়ে উলটে পড়লাম !দুজনই ধাক্কা খেলাম !একটা বড় গাছের গুঁড়িতে- মাথায় গুরুতর চোট পেলাম কিন্তু স্ত্রীর কিছুই হলো না! মাথার চোট ও আঘাত সারাতে দুমাস লেগে গেল !বেশকিছু হাজার টাকাও খসে গেল !আশ্চর্য একটাই- দুজনে ধাক্কা খেলাম ওর কিছু হলো না আমার হলো! তা শুনে মা বলেছিল তুই তো দোকানদারের কাছে এক্সট্রা টাকা নিয়েছিলি তা জানার পরও ভুলটা করলি- বৌমা তোকে শুধরে দিতে চেয়েছিলো, তুই শুনিস নি -ঈশ্বর সেদিন রেগে ,তোর অন্যায় কে প্রশ্রয় না দিয়ে- শোধরানোর জন্য, শাস্তি দিয়েছিল! আর জীবনে কখনো অন্যায় করবি না.. ঘটনাটা মাথায় আসতেই -আবার ফিরলাম, দোকানের দিকে, টাকা ফেরত দিলাম -মনের ভিতরে, কিছুটা অস্থিরতা কমলো ,এরপর ফুল দোকানের দিকে পা বাড়ালাম। এই দোকানটা এমন জায়গায় -যেখানে প্ল্যাটফর্মের লোকগুলোও এই পথে যাতায়াত করে, যিনি ফুল দোকানদার -তার সাথে তার স্ত্রীও বসে, তাকে সাহায্য করার জন্য …ওদের ব্যবহার টা খুবই সুন্দর !তাই কাস্টমারের ভীড় প্রচুর অথচ কয়েকটা ফুলের দোকান পাশাপাশি ছড়িয়ে রয়েছে তা সত্বেও এখানে ভীড় শুধু মিষ্টি ব্যবহারের জন্যই ।সবাইকে -দাদা, দিদি ,বলে সম্বোধন করে ।ওদের বয়েস প্রায় 50-55 এর কাছাকাছি হবে ।আমাকে দেখে -দাদা, একটু দাড়ান ,ওদেরকে তাড়াতাড়ি দিয়ে দিচ্ছি। এক্ষুনি হয়ে যাবে ।মুখে টুকরো হাসি হেসে দিয়ে -ওদেরকে দিতে থাকে ,আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম ।একজনকে ,অনেক ফুলের মালা ও বেশ কিছু ফুল -আকারে বেশ বড় পলিতে, প্যাকিং করে দিতে দিতে বলে -150 টাকা হয়েছে আপনি রেগুলার নেন তো তাই 130 । আপনি 130 টাকা দেবেন। লোকটি বলে 130 টাকা !ফুলওয়ালা বলে, আমি অনেক কম করে বলেছি- ক্রেতা লোকটি 100 টাকার নোট ধরিয়ে বলে- রাখ ত —-কাচুমাচু করে ফুলওয়ালা বলে ,তাহলে আমার কিছুই থাকবে না ,বরং ক্ষতি হয়ে যাবে !ক্রেতা লোকটি রাখ তো 100 টাকা বলেই ,ফুল নিয়ে হনহন করে চলে যায়! ফুলওয়ালা মুখটি শুকনো হয়ে যায়! ততক্ষণে তার স্ত্রী গর্জে উঠে- তুমি ফুল দেবে কেন ?ঠিকঠাক টাকা না দিলে -ফুল একেবারে দেবে না! তর্ক এড়ানোর জন্য ফুলওয়ালা -শুকনো মুখে ,সামনে আর একজনের ফুল রেডি করতে থাকে ।তার স্ত্রী গজ গজ করতে থাকে এমনিতে অভাবের সংসার !কোনদিন ফুল বিক্রি হয় তো কোনদিন বা হয়না !কোনদিন বহু ফুল নষ্ট হয়ে যায়! তার ওপর যদি -ইনারা এইরকম করে ,গরিব মানুষ এরা তো টিকতে পারবে না! সামনের দুই একজন সায় দেয়– ঠিক বলেছ ,ফুলওয়ালা ! এবার ফুলওয়ালা হাসতে হাসতে বলে -আমাদের মত গরীবের টাকা না মারলে যে ওরা বড়লোক হতে পারবে না !সামনে একজন বৃদ্ধা ছিল যে সায় দিয়ে বলে ,বাহ! ভালো বলেছ, ঠিক সেই সময় এক 41-45 বছর বয়সের একজন বাইকে করে হাজির হয় -এই দে দে ,তাড়াতাড়ি দে ।ফুলওয়ালা তখন অন্যজনকে দিচ্ছিল, চিরাচরিত -ভাবেই ,হাসিমুখে বলে দাদা একটু দাড়ান, ওদের দিয়ে দিচ্ছি- এক্ষুনি হয়ে যাবে… তারপর বাইক ওয়ালার গর্জন! এই শুয়োরের বাচ্চা -আমাকে চিনিস না, এক্ষুনি দে – ফুলওয়ালা বলে দিচ্ছি দাদা বলেই অন্যদের বাদ রেখে ওর টা দিতে থাকে হাবু বোঝাতে শুরু করে- জানিস ,কালকে তোদের পাড়ার ছিঁচকে মস্তান দেবুকে -বেধড়ক কেলিয়েছি সারা জীবন আমাকে মনে রাখবে !হাবু সরদার যে কি -তা এখনো জানতো না -এবার বুঝবে ব্যাটা, আমার এলাকায় পাঙ্গা !তার ওপর আমার সাথে !ফুলওয়ালা হাবিব ছোট হাসি ছুঁড়ে দিয়ে সামনের লোককে ফুল দিতে থাকে -আরে কি করছিস !তুই ফুলটার দিবি না চলে যাব ?উনার স্ত্রী বেলপাতা গুলোকে বেছে বেছে অন্যত্র রাখছিল ।ফুল ওয়ালা বলে- দাদা দিচ্ছি তোমার টা –আরে দিচ্ছি কি ,এক্ষুনি দে! ফুলওয়ালা তাড়াতাড়ি তার জন্য ফুল গোছাতে থাকে ,দু মিনিটের মধ্যেই ফুলমালাগুলো গুছিয়ে দেয়, হাবু ভালো করে দেখে নিতে গিয়ে -আরে হাফগান্ডু, তোকে কতবার বলবো চারখানা গাঁদা মালা, দশ খানা জবার মালা !কাচুমাচু হয় ফুলওয়ালা -হ্যাঁ দাদা ভুলে গেছিলাম, দিচ্ছি দিচ্ছি- বলে সাজিয়ে দেয় ফুলওয়ালা ।ওর স্ত্রীর মুখটা গোমড়া হয়ে যায় ,নিচের দিকে তাকিয়ে বেলপাতা বাছতে থাকে
— কত হয়েছে ?
–কাচুমাচু হয়ে বলে–90 টাকা
–কি বলিস! আমার কাছে ডাকাতি করবি !
–কেন দাদা !আমি অন্যদের থেকে বরাবরই আপনার কাছে কম পয়সা নিই
–চুপ কর !ষাট টাকা কাটবি
–না দাদা, অনেক কম হয়ে যাবে !
—চুপ কর ,দিনে ডাকাতি করিস -তার উপর আমার কাছে! যা দিচ্ছি নিয়ে নে- একটা কথা বলবি না !
ইচ্ছে না থাকলেও কাঁচুমাচু মুখে ফুলওয়ালা বলে- ঠিক আছে
ফুলটা নিয়ে হাবু বাইকটা স্টার্ট দেয়, চলে যাওয়ার সময় প্যান্ট এর পেছনে পকেট থেকে মানি ব্যাগটা পড়ে যায়! ফুলওয়ালার বৌয়ের চোখে পড়ে- তা তুলে আনে ততক্ষণে হাবু অদৃশ্য !সেদিকে আমার খেয়াল ছিল না। আমার রাগটা -ওই লোকটার ভাষায় ব্যবহারে !তাই ফুল ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম ওনাকে আপনি চেনেন? ফুলওয়ালা একগাল হাসি নিয়ে বলে -চিনি, উনি সবুজ সংঘ ক্লাবের সেক্রেটারি ,ওখানকার পার্টির বড় নেতা ও বড় প্রোমোটার !ওনার এলাকায় উনার পারমিশন ছাড়া কোন কাজ হয়না !ততক্ষণে আমার ধৈর্যের পারদ সীমানাটা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে ,বিরক্ত স্বরে বললাম “”তাই বলে ন্যূনতম সম্মানটা থাকবে না -আপনার সাথে কি ব্যবহার করে গেল ! “”
–সঙ্গে সঙ্গে সায় দিয়ে গর্জে ওঠে তার স্ত্রী “”কতবার প্রতিবাদ করতে বলি, এ লোকটা ও শোনে না ,শুধু ঘরে গর্জন ,আমার উপর শুধু গর্জন !বলতে গেলে- তুই কিছু বুঝিস ?
—দাদা আমি প্রতিবাদ করলে ওরা এই জায়গা থেকে হটিয়ে দেবে ,আর কোথায় বসবো ,খাওয়া পরাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে ,বউ বাচ্চা নিয়ে, আমাদের ভিক্ষা করা ছাড়া ,উপায় থাকবে না!
মনে মনে ভাবলাম কথাটা খারাপ বলেনি -পাল যুগের সময় শুধু মাৎস্যন্যায় হয়নি সেই মাৎস্যন্যায় আজও চলছে !তাছাড়া গরিব মানুষ -দুমুঠো, যাদের অন্ন সংস্থানের জন্য ,প্রতিমুহূর্তে লড়াই করতে হয় -তবে পেটে খাবার জুটবে, তাদের প্রতিবাদ করাটা বেহাল্লাপনা! প্রতিবাদ করতে হলে নিম্ন মধ্যবিত্ত -মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে… গরীব মানুষের কাছে পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি !আবার বাইকে হাজির হাবু !একটা মানিব্যাগ পেয়েছিস? কোথায় যে হারালাম তোর এখানে ফেলে দিই নি তো!
দাদা বাইক স্টার্ট দেয়ার সময় পড়ে গিয়েছিল- তোমাকে পেছন থেকে ডাকলাম ,তুমি শুনতে পাও নি- মনে হয়! তাই চলে গেছিলে ।
—দে দে ,বার কর ,বলে হাবু -হাত বাড়ায়..
ফুল ওয়ালার স্ত্রী পাশে বস্তার ভাঁজে রেখেছিল, বার করতে দেখে -কয়েক ফোঁটা জল লেগে রয়েছে !তা দেখে নিজের শাড়ির আঁচলে মুছতে মুছতে স্বামীর হাতে দেয় –––কোথায় রেখেছে দেখ !তারপর ওই নোংরা শাড়িটা দিয়ে মুছলে !ফুল ওয়ালার দিকে তাকিয়ে- দে দে বলে নিয়ে নেয় হাবু ,খুলে একটা দুটো কাগজের সাথে এক গোছা 100 ও 500 টাকার নোট বার করে গুনতে থাকে। তার ফাঁকেই বলে -কিছু টাকা সরিয়ে নিস নি তো, তোদেরকে বিশ্বাস নেই!
তখন ফুলওয়ালা স্ত্রী বলে -নেওয়ার থাকলে পুরো মানিব্যাগটাই হাপিস করে দিতাম -আপনি টের পেতেন না ,স্বামীও মাথা নেড়ে বলে -ও ঠিক বলেছে, যদি আমাদের সেই রকম ইচ্ছা থাকতো- আমরা অস্বীকার করে যেতাম।
এবার তেজ দেখিয়ে বলে- তোরা ভুলে গেছিস ,আমি কে- আমার টাকা হাতানো- অত সহজ নয়! টাকাটা না পেলে ,তোদের গুষ্টির- ষষ্ঠী পুজো করে ছাড়তাম !বলেই বাইক স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে যায় – হাঁ করে শুকনো মুখে ফুলওয়ালা দম্পতি তাকিয়ে থাকে, কি অহংকার !কী দম্ভ !ক্ষমতা পেয়ে, ক্ষমতার কি অপপ্রয়োগ !আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে -তাই ফুল নিয়ে মন্দিরের দিকে হাটা দিলাম , মন্দিরে ঢুকতেই দেখি একটি মহিলা বড় ঠাকুর এর দিকে তাকিয়ে ধুপ ঘোরাচ্ছে ,আর মনে মনে কামনার কথা -বলে চলেছে ..তা দেখে মন্দিরের পূজারী তাকে সতর্ক করে বলছে- মা তুমি বড় ঠাকুরের মুখের দিকে তাকিয়ে ধূপ ঘুরাবে না ,এতে তোমার বিপরীত ফল হবে -সব সময় তার পায়ের দিকে তাকিয়ে -ঘোরাবে বা ফুল অঞ্জলি দেবে ,পারলে -আটটা ধুপ জ্বালাবে.. একটা মোমবাতি আর নীলকন্ঠ মালা ঠাকুরের জন্য নিয়ে আসবে,শনিবার সব সময় নিরামিশ খাবে ।ইচ্ছে করলে কাউকে ধনী বানিয়ে দিতে পারে -আবার কাউকে ভিক্ষারী করে দেয় !এই দিনে কম কথা বলবে, আর একবারেও মিথ্যে কথা বলবে না ।জীবন যাপন যেন খুব সাধারণ মানের হয় তবেই উনি খুশি হন ভক্তের আশা পূরণ করেন ।আর হ্যাঁ- শনির একটা মন্ত্র আছে- ধুপ ঘোরানোর সময় বলবে- নীলাঞ্জন চয় প্রেক্ষাং রবীসূত মহাগ্রহং ছায়ায়া গর্ভসম্ভুত্য বন্দোভূত শণিশ্চারম ।
8 বার উচ্চারণ করবে আর ঠাকুরকে ফুল দেওয়ার সময় বলবে -ওঁম ওই ং শনিশ্চ।রায় নমঃ । পুজোর শেষে কোন ভিখারি কে কিছু পয়সা দান করবে আর পারলে কালো কুকুরকে কিছু খাওয়াবে ,দেখবে কিছুদিনের মধ্যে তোমার জীবনের অনেক ভালো পরিবর্তন আসবেই।
পূজারীর এই চেনা কথা হয়তো কেউ অবিশ্বাস করবে বিজ্ঞানের যুগেও আমি বলি- কেউ মানুক আর না মানুক এক্সপেরিমেন্ট করতে ক্ষতি কি! যদি আলোর সন্ধান মেলে। অন্ধের মত কাউকে বিশ্বাস করতে বলছি না, যদি ভালো ফল মেলে- বিশ্বাস করতে ক্ষতি কি !বিজ্ঞান তো মানুষের জ্ঞান থেকেই–পরখ করতে গিয়ে যদি ভালো ফল পাই ;তাহলে কুসংস্কার না বলে তাকে অনুসরণ করা অবশ্যই ভালো। হয়তো বৈজ্ঞানিক কোন যুক্তি পাবনা কিন্তু এটাও ঠিক বিজ্ঞান তো সব জায়গায় পৌঁছতে পারেনি -এক একটা এক্সপেরিমেন্ট বিজ্ঞানের পরিধিকে বাড়ায় ।যাই হোক এর প্রায় দু তিন মাস পর বাজার করার সময় ফুল কিনতে গিয়ে ওই দোকানে গেলাম প্রায় দুপুর 12 টা হবে, ফুলের দোকানে দাঁড়িয়ে ফুল নিচ্ছি ঠিক সেই সময় ওই হাবু ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ওই রাস্তা দিয়ে প্রায় টলতে টলতে আসছিল !আমি ভাবলাম বুঝি সে ড্রিংক করেছে! ঠিক কয়েক হাত সামনেই- ফুটপাতেই পড়ে গেল! আমার মত সবাই ভাবছে ড্রিংক করে এই অবস্থা !অন্যান্যরা তাকে দেখেই মুখ ফিরিয়েই হাঁটা দেয় ।অনেকের ইচ্ছে থাকলেও ও কেমন জানে, তাই মুখ ফিরিয়ে নেয় ।ফুলওয়ালা ফুল দিতে ব্যস্ত থাকায় -ওর সেদিকে নজর যায়নি !এখন নজর যেতেই তার স্ত্রীকে বলে -ওই হাবু না !তার স্ত্রী ভালো করে তাকায় বলে -হ্যাঁ !ও তো -প্রায় ,প্রতিদিন ডাক্তারের কাছ থেকে ইনজেকশন নিয়ে ,এই সময় ফেরে। বলেই দুজন উঠে, ওর কাছে যায়, আমিও তাদের অনুসরণ করলাম- দেখে মনে হলো ও কোন ড্রিঙ্ক করে নি ।এমনিতেই শারীরিক কোন সমস্যায় -অজ্ঞান হয়েছে! ফুলওয়ালা দৌড়ে জল এনে কপালে মুখে তা দেয়। তার স্ত্রী কাপড়ের আঁচল দিয়ে জলে ভেজা চুল টাকে মুছে দিচ্ছে! কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে চোখ মেলে- তাকায় !হাবুর জ্ঞান ফিরে এসেছে ।এখন কেমন লাগছে ? ফুলওয়ালা বলেই -ছোট প্লাস্টিকের পাখায় ,হাওয়া করতে থাকে। হাবু উঠে বসে মাথা নেড়ে বলে “”ঠিক আছি- ইঞ্জেকশন টা, কোমরে ঠিকঠাক দেয় নি! ওইটা নেওয়ার পর -বেশ ব্যাথা লাগছিল! ট্রেনে আস্তে আস্তে মাথাটা চক্কর দিচ্ছিল! ট্রেন থেকে নেমে ,এই হেঁটে আসার সময় -মনে হচ্ছিল সবকিছুই আমার চারপাশে ঘুরছে !তারপর কখন পড়ে গেছি -খেয়াল নেই! তখন ফুলওয়ালা হাওয়া করে যাচ্ছে
এবার আমি মুখ খুললাম “”দাদা ,আপনি এখানকার বড় প্রোমোটার বা পার্টির লিডার হতে পারেন কিন্তু দেখলাম আপনার এই অবস্থায় কেউ আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না !অথচ আপনাকে অনেকেই চেনে কিন্তু এই ইনারা যাকে আপনি তুই তা দিয়ে তাচ্ছিল্যে কথা বলেন !এনারা আপনার সেবা করে সারিয়ে তুলল !আর একটা কথা মনে পড়ে গেল -একদিন ,আপনার হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ -এই মহিলা অর্থাৎ ওনার স্ত্রী কুড়িয়েরেখেছিল -আপনাকে দেওয়ার সময় তার আঁচল দিয়ে মানিব্যাগের ধুলা ঝাড়ছিল তা দেখে সেদিন আপনি উনাকে কটু কথা শুনিয়ে ছিলেন আজ তার আঁচলের পরশ দিয়ে আপনাকে সুস্থ করে তুলল! আপনার টাকা বা ক্ষমতার ঔদ্ধত্যে উনি সেবা করেন নি মানবিকতার কারণেই উনার ছেঁড়া স্যাঁতস্যাঁতে আচল জেগে উঠেছিল !হাবু ছল ছল চোখে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি তে মহিলার দিকে তাকায় -চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে পড়া জলটা বলছে -সেদিনের ব্যবহারে আমি খুবই লজ্জিত ,পারলে আমায় ক্ষমা কর !
কলমে চিত্তরঞ্জন গিরি, পশ্চিমবঙ্গ