শিমুল পলাশের মাথা থেকে
একমুঠো আবির উড়ে যেতে দেখেছিলাম
ফাল্গুনের বাতাসে।
আর কৃষ্ণচূড়া;
সে তো তখন রাধাচূড়ার বাসন্তী আঁচলের নিচে
একজোড়া লাবডুব ধ্বনির
অনুরণন আবিষ্কারে মত্ত!
কোকিলের রব ভেসে আসা
নিকট কোনো এক ভোরে,
ওরা হয়তো ঝরে পড়বে তাদের নেওয়া
শপথের জীবনকে রাঙাতে।
আবাহনের রসায়ন বার্তায়
পক্ষীকূল আজ বিচলিত,
ডানার পেশীতে লেগে থাকা শতাব্দীর ক্লান্তি
মুছে ফেলার সুযোগটুকু কাজে লাগাতে তৎপর।
সুখ যে বেশি দিন থাকে না
তুষার শুভ্র ঘেঁটু বনের মায়াবী আবাহনে
সম্মোহিত কীটেরা মেতেছে
কিঞ্জল আবির দেহে ছড়িয়ে,
রসায়নের অমোঘ আকর্ষণে।
ঝরাপাতার কার্পেটে ঢেকেছে বনতল
জীর্ণ শরীর ছুঁয়েছে মাটি,
অহর্নিশ শক্তির রসায়নের খেলা
খেলতে খেলতে পরিশ্রান্ত তারা।
তোমার ধমনী বাহিত অক্সিজেন আর শর্করাতে
খুঁজে দেখো, লেখা আছে তাদেরই নাম।
মাটিতে মিশে যাচ্ছে
জৈব কারখানার প্রতিটি অণু-পরমাণু।
কিশলয় রূপে নবজন্ম পেয়েছে তারা।
খেলার ঘুঁটি যে সাজানো হয়ে গেছে আবার,
মৃত্তিকা সুধায় সহস্র বসন্তে অমলিন যে যৌবন
দায়িত্ব পালনে হয়নি কখনো বিন্দুমাত্র অবহেলা।
সেই শত লক্ষ বছর পূর্বে যখন,
সূর্যের সাথে কথা বলার নিরব ভাষাটা
শিখে নিয়েছিল তারা,
যেদিন সবুজ ব্যাকটেরিয়ারা আশ্রয় পেয়েছিল
জরামুক্ত দেহের অনুপুঙ্খে,
অন্তঃস্থ সত্তায়,
তারপর থেকে শব্দহীন আখরে
নৈঃশব্দ্য কথন চলেছে অনুক্ষণ!
সুখ দুঃখ অস্তিত্ব অনস্তিত্ব
অভিব্যক্তি অভিযোজন বিবর্তনের কথন,
দায়বদ্ধতার কথন,
সবুজ থেকে সবুজে, শিকড় থেকে শিকড়ে,
জনিত্রী থেকে অপত্যে,
সংসক্তি আসঞ্জনের মধ্যে দিয়ে
প্রতিধ্বনিত হয়েছে
অরণ্য থেকে অরণ্যে, মহারণ্যে।
নগর হয়নি যখন মহানগর,
মহানগর যেদিন মাতেনি ধ্বংসের খেলায়,
কৃত্রিম ভাবে অগ্নিসংযোগে দগ্ধ করেনি তাদের
সেদিন মনুষ্য প্রাণের সশব্দ ভাষা শিখতে বড়ই
মন কেমন করতো তাদের।
আজ মানুষ নামক বিভীষিকার মোকাবেলায়
তারা সৈন্যবাহিনী গড়তে চায়।
এসো ক্ষুদ্র অণুজীব!
দেখিয়ে দাও ওদের!
হারাও ওদের অনাক্রমতাকে!
হারাও ওদের তুচ্ছ জ্ঞানের কারিগরী কৌশল!
হারাও ওদের হিংস্রতাকে!
খেলো তোমার রসায়নের জটিল খেলা!
দেখেনিক ওরা মৃত্তিকার সাথে তাদের অনাদি
আন্তঃসম্পর্কের গভীরতা!
শিকড়ে শিকড়ে মৃত্তিকার আদেশ তরঙ্গ
কম্পিত হয়েছে বার বার।
সঞ্চারিত হয়েছে জল, মেঘ, বাতাসেও
অনুকম্পা আর নয়!
আজ বিপন্ন অস্তিত্ব অরণ্যকুলের সঙ্ঘবদ্ধতা
যেন বিফল না হয়।
অনুভূত হোক অস্তিত্ব বিপন্নতার ভয়াবহতা,
অনুভূত হোক জীবন ও সবুজের মূল্যবোধ,
অনুভূত হোক ধ্বংস ও একাকীত্বের হাহাকার!
ক্ষমা যেন পায় না ওরা আর একটিও!
মনে রাখিস, যাদের আনতে বলেছিলি,
তারাই কেটেছে তোদের মূল, কেড়েছে প্রাণ,
তোদের সৃষ্ট অক্সিজেন বুকে পুরে
বেচেছে কাষ্ঠদেহ,
বৃন্তচ্যুত করেছে পুষ্প মুকুল,
উপড়েছে গোড়া!
বিষ পেরেক বিদীর্ণ করে
ক্ষতবিক্ষত করেছে দেহ!
বনসৃজনের বুলি আওড়ে
আখের গুছিয়েছে যারা,
তাদের শোণিতধারায় মিশছে
সভ্যতার ক্লেদাক্ত কার্বন ইন্ধন!
মনুষ্য রচিত দাবাগ্নিতেই হবে পরিসমাপ্তি।

কলমে অভিজিৎ মুখার্জী, হুগলী

বিজ্ঞান ও সাহিত্যের প্রবল অনুরাগী। মহাকাশ বিজ্ঞান ও বাংলা সাহিত্য সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। কুসংস্কার তথা অযৌক্তিক প্রথার ঘোর বিরোধী। মহাবৈশ্বিক প্রকৃতির রহস্যময়তা অনুধাবনের প্রচেষ্টা, লেখালেখি, শেখা ও শেখানোর মধ্যে দিয়ে জীবন আনন্দের অনুসন্ধানী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here