আমার অনুপ্রেরণা ভারতের বীর মাটির আপন সন্তান স্বামীজি তথা স্বামী বিবেকানন্দ।তাকে হয়তো অনেকেই চেনেন না।আর হ্যা, ঠিক কথা যে তিনি সশরীরে আমার চারপাশে নেই কিন্তু আজ আমি যা লিখতে চলেছিল তাতে আশা রাখি আপনারা বুঝতে পারবেন কেনো তিনি আমার অনুপ্রেরণা ও না থেকেও তিনি আছেন।আসলে শরীর যায় তার সত্তার শক্তি থেকে যায় ।সেই জন্য তিনি সারা বিশ্বব্যাপী খ্যাত । শিকাগোর কানায় কানায় এখনো তার সেই ধ্বনি স্পন্দিত হয়- “sisters & brothers of America,” যা বলেছিলেন তিনি । এটি সেই বাক্য যা শিকাগোয় স্বামীজির স্বর্ণ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে তার নিচে খোদাই করা আছে ,এই ৫ শব্দ।
“মন চলো নিজ নিকেতনে
সংসার বিদেশে, বিদেশীর বেশে
ভ্ৰম কেনো অকারণে?
“মন চললো নিজ নিকেতনে।
তখন তাঁর বয়স প্রায় ৩৯ বছর ৫ মাস ২৪ দিন। তার গুরুভাই তুরিয়ানন্দকে বলেছিলেন ৪০ বছর পেরবেন না।সেইমত ঠিক ৯ টা ১০ মিনিট এ সমাধিস্থ হয়েছিলেন । গুরুভাইইরা ভেবেছিলেন গভীর ধ্যানে মগ্ন। শরীরে যখন কোনো সার পাওয়া গেলনা,তখন কেউ কেউ বুকে হাত বোলাতে বা পদসেবা করতে লাগলেন। তাও যখন কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না ডাকা হলো ড মহেন্দ্রলাল সরকার ( তখন কর দিনে Homeopathy Allopathy র দুই ডিগ্রি ধারি , নামি ,গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের চিকিৎসক) কে।তিনি বললেন গলগন্ড রোগে মৃত্যু(পরে ডাক্তার বিপিন ঘোষ বলেন সন্নসযোগে সমাধি লাভ)।ভেঙে পড়লেন গুরুভাইরা বেলুড় মঠের নীচের দক্ষিণ কোন এর ঘরে। সালটা ১৯০২,৪ ঠা জুলাই। স্বামী তুরিয়ানন্দ ও স্বামী ব্রহ্মানন্দ তখন কলকাতা এ।
চিঠি পেয়ে ছুটে এলেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগেই ক্রিস্টিন গৃনিস্টাবেল কে বলেছিলেন”আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি”।সেই স্বামীজি কে আমরা হইতো পুরো চিনে উঠতে পারিনি।চেষ্টাও কতটা করেছি?!সেই তিনি তাই বলে গেছেন আর একজন বিবেকানন্দ থাকলে জানত এই বিবেকানন্দ কি করে গেলো।
বলেছিলেন ইস্পাতের মত স্নায়ু ও লোহার মত পেশী যুক্ত যুবক চাই যারা হবে তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন ও সুগঠিত ,বলিষ্ঠ তরুণ। যারা হবে ভারতের জন্য নিবেদিত প্রাণ,”জন্ম থেকেই মায়ের জন্য বলি প্রদত্ত”।তাইতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যিক রোমা রোলা কে বলেছিলেন” যদি ভারতবর্ষকে জানতে চাও তবে বিবেকানন্দ কে জানো,তার মধ্যে নেতিবাচক কিছু নাই সব ইতিবাচক”.।ভারত কে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসতেন।কন্যাকুমারী এর একটি বড়ো পাথরে বসে যোগ মাধ্যমে আত্বউপলদ্ধী করেছিলেন ভারতের অবস্থা।যে পাথর এখন বিবেকানন্দ রক নামে পরিচিত।
ইতিহাস সাক্ষ্য দিয়েছিল ,অতীতে যেমন বুদ্ধদেব এর ছিল বিরাট হৃদয়,চইতন্যদেবের ছিল অগাধ প্রেম ও শঙ্করাচার্য এর ছিল তীব্র মেধা ,সবকিছুর সঙ্গ মিশ্রণ ছিলেন তাঁর গুরু শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব।তার আলোকে তার প্রিয় শিষ্য(swami vivekananda) এর ছিল শুকদেব এর ন্যায় ত্যাগও।
বলেছিলেন নারী জাগরণের কথা।”যে রাধে সে চুলো বাঁধে” তাই অন্যান্য মনীষীদের মত তিনিও নারিজগরণ চেয়েছিলেন।(নারিজগরণ নিয়ে বেশি কিছু বললাম না পরবর্তী প্রবন্ধ তার সাক্ষ্য )
এবার আসা যাক শিক্ষা প্রসঙ্গে। শিক্ষা কি? এরও উত্তর দিয়ে গেছেন স্বামীজি।বলেছেন “শিক্ষা হলো পূর্ণ জ্ঞান যা মানুষের মধ্যে প্রথম থেকেই অবস্থিত।” সেই শিক্ষা নীতিগত,প্রকৃতিগত; ‘চলকলা ‘ বাধা’ বিদ্যা শুধু নয় আর শিক্ষকের কর্তব্য সেই জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশের চেষ্টা।
এটি হলো আসল শিক্ষা,শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আসল উদ্দ্যেশ্য।
সে শিক্ষা হবে দুর্বলতার শিক্ষা না,আত্ত নির্ভরশীল হবার শিক্ষা।
দরিদ্র শিক্ষা, শুদ্র জাগরণ,নিপীড়িত দিগের শিক্ষা।তাইতো স্বামীজি বলে গেছেন ” তোমরা বল পিতৃদেব ভবো, মাতৃ দেব ভব;আমি আরো যোগ করছি ‘ দরিদ্র দেব ভব ,মূর্খ দেব ভব”।
মানুষকে দেখানো হইছিল তারা অকর্মণ্য,তাই তারা ছিল পদদলিত।আমরা সকলে যে ‘ অমৃতের সন্তান ‘ তার সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে গেছেন এই মনীষী।
তিনি ছিলেন একাধারে ত্যাগী সন্ন্যাসী মস্ত সাধু ,বিরাট বিয়াপটি ছিল তার অপরদিকে, পণ্ডিত, বিশ্ব জয়ী বাগ্মী।
এই জীবন কেনো এসেছি ও আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে বলে এবং লিখে গেছেন অনেক বই।তার মধ্যে ৪ যোগ তথা কর্মযোগ,ভক্তিযোগ,রাজ যোগ ও জ্ঞান যোগ বিখ্যাত।তিনি মৃত্যুর পূর্বে ১৯০২ সালে১লা মার্চ যে কলজয়ী যন্ত্র তথা ” বেলুড় মঠ ” স্থাপন করে গেছেন তার স্বরূপ চিহ্ন ,প্রতীক হলো ” জ্ঞানের আলোকে ৪ যোগ”।আমরা দেখতে পাই – উত্তাল তরঙ্গের ঢেউ(কর্মযোগ),উদিত সূর্য(জ্ঞান যোগ), পেঁচানো সর্প(রাজ যোগ) ও পদ্ম (ভক্তিযোগ)।আর যে হাঁসটি দেখতে পাই তা নিজ স্বরূপ ব্রহ্ম এর প্রতীক। এই চার যোগের মাধ্যমেই আমরা জীবনের সকল কাজ সমাধা ও উবলদ্ধি তথা ব্রহ্ম লাভ করতে সক্ষম। অনেক কাজ করতে পৃথিবীতে এসেছি কিন্তু তার মধ্যে করতে পারছি কটা? বিলাসবহুল জীবন অতিবাহিত করতে ত আমরা জন্ম নি নাই ।তাহলে জীবনের উদ্দেশ্য কি!? জানেন কি? ‘ ব্রহ্ম লাভ ‘ ।
আজ পর্যন্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের, ইউনিভার্স (universe) সৃষ্টি সম্পর্কে যত তত্ত্ব ও তথ্য বেরিয়েছে তার মধ্যে কোনোটিই সঠিক বেক্ষা দিতে পারেনি, তা পদার্থ বিদ্যার বিগ ব্যাং (Big Bang Theory) থিওরি হোক বা জীব বিদ্যার কসমিক থিওরি হোক(cosmic Theory)। আসলে এই বিশ্ব শক্তিতে ভরপুর। আলো,তাপ ,বায়ু ,জল সব এক প্রকার শক্তি বা Elimelntal power (এলিমেন্টস),পাওয়ার; প্রথমে এটি এক জোট ছিল তার পর তা বিচ্ছুরিত (scatered)হয় ও জীবজগৎ সৃষ্টি হয়।সেই সর্ব প্রথমের এক জোট হওয়া শক্তি হলো supreme power যাকে আমরা ঈশ্বর বলে জানি।
আসলে এরূপ নামকরণ আমরা করেছি আর শক্তির যেমন কোনো আকার বা আয়তন নেই তেমনি ঈশ্বরের ও তা নেই ,এটি উপলব্ধি করেছেন বড় বড় বিখ্যাত মনীষীগণ ।তাই আমাদের সুবিধার্থে আমরা যেমন অনেক কিছু করি প্রাচীন কল থেকে সেই ভাবে অনেক রূপ আমরা দিয়ে এসেছি। আমরা সেই শক্তি হতে সৃষ্টি এবং জীবনের উদ্দেশ্য সেই শক্তিতে আবার মিলন ।
কেনো আমি একে শক্তি বলছি তার অনেক ব্যাক্ষা পাওয়া যায় ।আমি যতটুকু জানি তার একটি তুলে ধরছি।রসায়নের শক্তি ও তাপগতি বিদ্যায় আমরা পড়েছি শক্তির সৃষ্টি ও ধ্বংস নেই (প্রথম সূত্র),কেবল এক মাধ্যম হতে থেকে অন্য মাধ্যম বা স্টেট(state) এ স্থানান্তরিত হয়। এবার আমাদের ভিতরের শক্তি যাকে আমরা আত্মা ও বাইরের খোলস, চম্রস দেহ যাকে আমরা state (স্টেট) বা মাধ্যম ধরলে আমরা কি কিছু মিল খুঁজে পাবো?আপনারাই বলুন!সেই ভালো,শুভ শক্তিকেই ঈশ্বর ও খারাপ ,বাজে ,অশুভ শক্তিকে ভূত নামকরণ আমরাই করেছি,’ আমাদের সুবিধার্থে ‘।
এবার প্রসঙ্গে আশা যাক যে যোগ ও ব্রহ্ম কী? ব্রহ্ম হলো নিজ আত্তা শক্তি যা মানুষ জন্ম থাকাই শরীরে ধারণ করে। এর ব্যাপারে স্বামীজি ” পুনর্জন্ম বাদ” তত্ত্বে ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। বলেছেন – ব্রহ্ম হলো নিজ শক্তি স্বরূপ যা পূর্ণ হতেই বিরাজ মান।আর ব্রহ্ম আসলে শক্তি যা পুরো জগৎ সংসার (ইউনিভার্স) চালাচ্ছে। সেই শক্তিরই অংশ মাত্র আমরা।যে শক্তিকে আমরা আত্ত্বা বলে থাকি সচরাচর।আত্ত্ব ,শক্তি যাই বলিনা কেনো তার মূল লক্ষ হলো সেই পরমাত্মা বা পরম ব্রহ্ম(suprimpower) এর সাথে মিলন(যোগ)।ত আমরা করতে পারি আর ৪ যোগে এর মাধ্যমে।
(এই যোগ এর ব্যাখ্যা APJ Abdul Kalam এর পিতা দিয়ে গেছেন তাঁর ছেলের জীবনীতে তথা Autobiography এ)। সেটি পড়লে বুঝবেন তার এক জায়গায় বলা আছে আমরা প্রার্থনা কেনো করি। যা জিজ্ঞেস করে ছিলেন ছোট্ট কালাম তার পিতাকে।জবাবে এই সকল কথার প্রাসঙ্গিকতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কথা বলেছিলেন।
জ্ঞানের দ্বারা,ভক্তির দ্বারা,কর্মের দ্বারা ও মনন ,চিন্তন ধ্যানের দ্বারা আমরা মুক্তি লাভ করতে পারি। এটি হলো জীবনের প্রকৃত শিক্ষা।তাই ভারতের বহু মনীষীগণ বলে গেছেন যে এক জাযগায় গিয়ে বিজ্ঞান,সাহিত্য কলা,ধর্ম ও দর্শন এক, তা হলো ব্রহ্ম।আর যে সব কিছুর মাধ্যমে আমরা সেই পথ খুঁজে পাই সে পথ হলো ধর্ম।সবকিছুর ও সবধরনের ধর্মের লক্ষ এক,ব্রহ্মদর্শন।শুধু দিক আলাদা। একমাত্র হিন্দুধর্ম সেই পথ যার মূল উদ্দেশ্য হলো ” আত্তার
মুক্তি প্রাপ্তি “(এর মানেই আমি হিন্দু ধর্ম কে প্রাধান্য দিচ্ছিনা কিন্তু এই ধর্ম সবচেয়ে সহজে এই পথ দেখায়)।অন্য সকল ধর্মের পথ এক হলেও
মূল উদ্দেশ্য বহু দূর ও সুদুরপ্রসারী।তাই স্বামীজিPluralism ও secularism ব্যাখ্যা করত গিয়ে বলেছেন,অন্যান্য দেশের থেকে আমাদের যা গ্রহণ করতে হবে তা হলো – শিক্ষা,রাজনীতি,অর্থনীতি,প্রভৃতি।কিন্তু আমাদের দেশের চাষীদেরও ‘ধর্ম সম্পর্ক ‘ সম্মন্ধে যা জ্ঞান আছে তা অনেক বিদেশিদেরও নেই, ত হলো প্রকৃত ধর্ম সম্পর্কে অবগত হওয়া। হয়তো তারা ধর্মের নামে অজ্ঞানতার বসবর্তি,উচ্চ জ্ঞান নেই কিন্তু যা আছে টা ভক্তি ভরে আছে।তাইতো স্বামীজি শিকাগো ধর্মমহাসভায় বলে গেছেন হিন্ধুধর্মের বিস্তারিত আলোচনা,আর বলে গেছেন” ওঠো জাগো , লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না”। তাই আমরাও আজ শপথ নি যে থামবো না। পড়বো,মচকাব তবু ভাঙবো না ,আবার উঠে দাঁড়াবো ও ‘ জীব জ্ঞানে শিব সেবা করব‘।
কলমে স্বাগত খাঁড়া, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ
Very good article written by you. Great inspiration for all time people.