আমি প্রকৃতি বলছি

3
1358
আমি প্রকৃতি বলছি। না ,না, আমি বৃষ্টিস্নাত কোন রোদ্রজ্জল প্রকৃতি নই ,আমি কখনো অগ্নুৎপাত তো কখনো ভূমিকম্প ।আবার আমিই  মরুঝড় থেকে ঘূর্ণিঝড়। আমি সেই ভয়ালরুপিনী প্রকৃতি বলছি ।আমার তাণ্ডবে গ্রামের পর গ্রাম, মাইলের পর মাইল এক নিমেষে ধ্বংস হয়ে যায় ।আমি সেই প্রকৃতি বলছি!
    আমিই বন্যা ,আমিই  খরা, আবার আমিই ধ্বংস। তাও তোমরা মানবে না আমায়। এত অহংকার তোমাদের!  হতে পারো তোমরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব কিন্তু জেনে রেখো আমার কাছে তোমরা নিতান্তই অসহায় ।তোমরা বোঝো সে কথা কিন্তু মানতে চাও না । তাই আজ আমি প্রকৃতি বলছি- “সাবধান ” ,সতর্ক হও নইলে মানব সমাজ থেকে প্রাণিকূল কিছুই থাকবে না।
   হ্যাঁ ,আমি সেই প্রকৃতি বলছি যার ওপর তোমরা দিনের পর দিন অবিচার করে চলেছো
আমি সেই অসহায় মা যার কষ্ট হলেও তার সন্তানরা তার দিকে ফিরেও তাকায় না। আমিই তোমাদের জন্মদাত্রী ।তোমরা সবাই আমারই সন্তান কিন্তু তোমরা অবলীলায় গাছ কাট । তারাও তো আমারই সৃষ্টি ,আমারই সন্তান । আমি কি করে সহ্য করবো প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি নির্বাক সন্তানের মৃত্যু যারা প্রতিদিন তোমাদের খাবার যোগায়, তোমাদের পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত যত্নে রাখে , যাদের ছাড়া তোমরা এক মুহূর্তও বাঁচতে পারবেনা! আর তোমরা কি না তাদেরই হত্যা করো নির্বিচারে। আমার মনে হয় তোমরা হয় নির্বোধ না হয় বোকা ।তাই আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তোমরা না বদলালে  আমিও সব ধ্বংস করে দেবো। তাই আজ আমি তোমাদের মা নই  আমি প্রকৃতি বলছি।
 তোমরা বলবে আমি  কি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবো নিজের সন্তানদের ! কিন্তু তোমরা হয়তো ভুলে গেছো পুরনো সব ধ্বংস করে নতুন কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা আমার আছে । তাই আবারও আমি প্রকৃতি বলছি -পুরনো সব ধ্বংস করে নতুন করে ভরিয়ে তুলবো আমার কোল  যেখানে না থাকবে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি-,কাটাকাটি, হিংসা আর না থাকবে মৃত্যুদণ্ড।
 সৃষ্টির প্রথম লগ্ন থেকেই আমি তোমাদের লালন পালন করেছি। সমগ্র প্রাণীজগৎ উদ্ভিদজগৎ  সবাই আমার সন্তান ,সবাই আমার সৃষ্টি। শুধু জীবজগৎ নয় পাহাড়-পর্বত নদী-নালা ঝরনা সবকিছুই আমারই। এই সবকিছুর মধ্যেই আমি আমার সত্তা  কে বাঁচিয়ে রেখেছি । কিন্তু তা সত্বেও  তোমরা তোমাদের মায়ের ওপর সুবিচার করনি ।
আমার ভয়াল রূপ তোমরা প্রত্যক্ষ করেছো বিগত কয়েক বছরে ।দেখতে পেয়েছো আমার  একের পর এক ধ্বংসলীলা – কখনো ঘূর্ণিঝড় তো কখনো ভূমিকম্প আবার কখনো বন্যা । এইসব একটার পর একটা বিপর্যয়ে তোমরা অসহায় হয়ে পড়েছো ।তোমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান থামাতে পারেনি কিছুই ।আমার তাণ্ডবের কাছে তোমরা তো তুচ্ছ, কিন্তু তা সত্ত্বেও অন্যায় করা থামাওনি এতোটুকুও ।
তাই আবারও বলছি বন্ধ করো প্রকৃতির ওপর অবিচার, বন্ধ করো গাছকাটা নইলে তোমাদের আরও বড় দুর্যোগের মধ্যে পড়তে হবে ।তাই সময় থাকতে সাবধান হও।
 তোমাদের লোভ-লালসা ধ্বংস করেছে আমার সম্পদ। অবাক হচ্ছ বুঝি? আমাজনের জঙ্গল যখন  দিনের পর দিন  আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিল , যখন হাজার হাজার  বন্যপ্রাণী আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছিল  তখন আগুন নেভানোর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা কি তোমরা করেছিলে ?একের পর এক জলাশয় বুজিয়ে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করো নি তোমরা  ?একটা বাড়ি বানাতে দশটা গাছটা কাটেনি? নদীর গতিপথে ইচ্ছাকৃতভাবে বাঁধ  দাওনি কি?
 হ্যাঁ সবাই এমনটা নয় ।এখনো পৃথিবীতে সচেতন মানুষ আছে ঠিকই কিন্তু তাও হাতেগোনা !তোমাদের ওই বাচ্চা গ্রেটা থুনবার্গ এর মত মেয়েটাকে দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত যে প্রকৃতি রক্ষার জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে । এরাই আমার আদর্শ সন্তান। এছাড়াও  পৃথিবীর বুকে আছে হাজারো হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী যারা আজও কষ্ট পায় আমার কষ্টে  ।কিছুটা হলেও চেষ্টা করে আমার কষ্ট লাঘব করার। কিন্তু এদের সংখ্যাও আজ বড় কম । কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছে যাদের কাছে একটা গাছের থেকে টাকার মূল্য অনেক বেশি!
 তাই আজ ভুল স্বীকার করো নইলে ভুল স্বীকার করার সময় আর তোমরা পাবে না । গাছকে পরম বন্ধু হিসেবে নয়  বরংচে নিজের ভাইয়ের মত স্নেহ করো ।নইলে আমার রুদ্ররূপ তোমরা প্রত্যক্ষ করবে ।
প্রকৃতি তোমাদের সুখ দিয়েছে ,স্বাচ্ছন্দ দিয়েছে বিলাসিতা দিয়েছে অথচ তোমরা আজ প্রকৃতির  ওপরেই এত অবিচার করছ! নিজের মায়ের প্রতি এমন অবিচার করো তোমরা বাড়িতে? তাহলে তোমরা কেমন সন্তান ?
 প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সন্তানহারা মায়ের কষ্ট তোমরা বুঝবে না , বোঝাতেও চাইনা তোমাদের, বোঝার দরকারও  নেই । আমার কষ্ট আমারই থাক ।তোমরা শুধু অন্যায় করা বন্ধ করো ।আর যদি না করো তবে আমার  ভয়ানক রূপ দেখবে তোমরা।
 তাই আজ আমি প্রকৃতি বলছি –আরো গাছ লাগাও ,প্রতিদিন গাছ লাগাও ।সবুজের সমারোহে   ভরিয়ে তোলো আমার কোল। আবারও ফিরিয়ে দাও আমার অতীত ,আমার হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের ।নইলে লক্ষ কোটি সন্তানহারা মা আর মুখ বুঝে সহ্য করবেনা, এই মাও যে  তার সন্তানদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে জানে তা প্রত্যক্ষ করাবে তোমাদের। তাই আবারও বলছি ——-

“গাছ লাগাও ,

           প্রাণ বাঁচাও”।

 

কলমে পারমিতা পাইন, দ্বাদশ শ্রেণি, বাঁকুড়া

3 COMMENTS

  1. নিতান্তই সার্থক লেখা। পারমিতার ভাষা বৈশিষ্ট্য ও বিষয় চয়ন খুব ভাল লাগল।
    সাধুবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here