আমি এক চাষি

কলমে প্রদীপ দে

0
494

ভরতপুরের রাজা ছিল নিমুচন্দ্র নাম,
রাজ্যটাকে করতো শাষন ছিল মাথায় খামখেয়ালি কাম।
একদিন সে ডাকলো সভা রাজ্যবাসি নিয়ে,
কোথায় কি চলছে খবর জানতে সকল চেয়ে।
বড় বড় সব মহাজন’ দেখালো জয় টাকার,
রাজার গলায় পড়াল সব সোনা হীরের হার।
সবার শেষে উঠল যেয়ে ভরতপুরের চাষা,
নম্র স্বরে হাত জোর করে বলল হেসে সভায়
” নমস্কার, হামি এক গোরিভ চাষি,
জানিনা হামি কি কবো,
হামি জানিনা কো ভালো ভাষা।”

এক পুটলি ভরা ছিল গোবিন্দভোগ চালে,
সেইটা নিয়ে রাখল চাষি রাজার চরণ তলে।

“প্রভু হাপনি গোহণ করুন হামার এই ক্ষুদ্দর দান,
চাষার আছে হেইডা সম্বল যা দিয়ে বাঁচে হামাগো প্রাণ।
দুধ বেইশি হার এই চাল দিয়ে করলে পায়েস বটে,
গন্ধ পাইয়ে খাবার লাই আসবে সব্বাই ছুটে।”

আনন্দে সব হাততালি দেয় বাজলো খুশির ঢোল,
সভার মাঝে হাসল সবাই, হলো রাজার চক্ষু গোল।

“চুপ কর বেটা চাষি,
চালের পুটলি ছুড়ে দিয়ে রাজা বলে,
“কান খুলে শোনো ভরতবাসির চাষিরা সকল,
এবার থেকে রাজার ঘরে জমা দেবে সবাই নিজেদের ফসল।”

চাষি কহিল, “হামরা কি খামু প্রভু, হামাগোর পোলা মাইয়ার কি হবে,”

রাজা রাগিয়া কহিল,
“তবে রে ব্যাটা চাষী, আমার সামনে তোমার এমন কথা,
এই সভাতেই ক্ষমা চাও তুমি, আর নত করো মাথা।”
উচ্চকণ্ঠে আবার হাকিল রাজা,
“এই কে আছিস, ব্যাটাকে ভাগাও এখান থেকে,”
মনের দুঃখে সকল চাষিরা চলিল ঘরের দিকে।

তারপর থেকে মাঠে যায় নাই কাজে আর কোন চাষি,
পেটের ক্ষুধার কত যে জ্বালা এবার বুজবে ভরতবাসি।
মাঠখানি সব শুকিয়ে গেছে কোনো ফসল ফলেনি সেথায়,
সারা রাজ্যে হাহাকার নামে খোঁজে দুমুঠো চাউল সবাই।

বাজার হাটে আর সবই আছে কিন্তু দুর্ভিক্ষ নেমে এলো,
ভরতবাসিরা রাজবাড়ি যেয়ে সব খুলে বলিল।

অবশেষে রাজা দলবল নিয়ে গেল চাষিদের ঘরে,
“ভুল হয়েছে ক্ষমা কর মোরে বলে হাতজোড় করে।
চাষি যদি আর নাহি করে চাষ কে বানাবে হেথায় ফসল,
টাকার জোরে কিনবে কেমনে চাল আটা আর ফল?
নিদানি জিবানি হিরানি তোমরা করেছ অনেক টাকা,
এবার চাষিদের লাগি করে দাও কিছু নইলে পেট রইয়ে যাবে ফাঁকা।
জীবনে অনেক করেছ টাকা আর কে হেথায় খাবে,
মরার সময় টাকার বস্তা নিয়ে কি উপরে যাবে?”
ঘোষণা করিল রাজা, সকল চাষির জন্য,
“লেখাপড়া আর চিকিৎসা সব বিনা খরচায় হবে,
যে যত ফসল করবে সেই হিসাবে বাড়তি টাকা পাবে।
যদি প্রকৃতির দুর্যোগে কোনো ফসল খারাপ হয়,
রাজ‍া দেখবে সব চাষিদের থাকবে না কোনো ভয়।”

“শোনো হে ভরতবাসি,
দেশ বাঁচাতে আগে তোমরা বাঁচাও সকল চাষি,
নইলে হেথায় মরবে ক্ষুধায় সকল ভরতবাসি।
কামার, কুমোর, মুচি মেথর কেউ রবে না দুঃখে,
ভরত আমার স্বর্গ হবে থাকবে সবাই সুখে।”

ভরতবাসি হলো খুশি বাজায় হাতে তালি,
ভরতরাজার জয় হোক, সবাই বলল মুখে বুলি।

কলমে প্রদীপ দে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here