বসানোর মাসখানেকের মধ্যেই মারা গেল অ্যালোভেরা গাছটা। সারাদিনের একাকিত্ব জীবনের এটাই একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠেছিল রঞ্জনার। বিয়ের পর গ্রামের বাড়ি ছেড়ে বরের সাথে চলে এসেছিল ব্যাঙ্গালোরে। স্বামী মহাশয় সারাদিনই ব্যস্ত তার আই টির জীবন নিয়ে। এদিকে ব্যস্ত শহরের একা ফ্ল্যাটে গুমড়ে মরতে লাগে রঞ্জনা। গতকাল রাতে সে লক্ষ্য করে অ্যালোভেরার গোড়ায় ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়েছে। সেই মতো পরচর্চাও শুরু করে তক্ষনাৎ কিন্তু সকালে পাতাগুলো ধরতেই একটা একটা খুলে খুলে পড়ে সেগুলো।রজত ডাক্তার নিয়ে এসেছে। সন্ধ্যেবেলা কাজ থেকে ফিরে দেখে রঞ্জনা মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। ডাক্তারবাবু দেখে নিয়ে রজতকে জিজ্ঞেস করে-‘বাড়িতে কি কোন অঘটন ঘটেছে রিসেন্টলি বা আপনাদের মধ্যে কোনো অশান্তি?’কোনো জবার খুঁজে পেলনা রজত।শেষ কবে সে ভালো করে রঞ্জনার সাথে কথা বলেছে তাই মনে করতে পারল না।রজত উত্তর দিল-‘না তো। তেমন কিছুই ঘটেনি’-‘উনি কিছু বিষয় নিয়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছেন। তার থেকে প্যানিক অ্যাটাক ও সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন।আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি।তবে সেটা সমায়িক,ওনার এখন ভীষণভাবে সাহচর্য দরকার’- ডাক্তারবাবু ওষুধ লিখে বেরিয়ে গেলেন ।এদিকে তারপর থেকে খাওয়া-দাওয়া প্রায় একপ্রকার উঠিয়েই দিয়েছে রঞ্জনা।রজত অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে কয়েকদিনের। সারাদিনই রঞ্জনার কাছে সময় কাটাচ্ছছে সে। নানা কথায় বুঝিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে রঞ্জনাকে। তবে ফল কিছুই হয় না।রঞ্জনা বোবার মত তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে।একদিন সকালবেলা কাজের মাসির হাতে কিছু একটা আছে লক্ষ্য করে তাকে দাঁড় করায় রজত। তাকে প্রশ্ন করতে সে জবাব দেয়-‘এটা দিদিমণির গাছ।রোজ ছাদে গিয়ে এটার কাছে বসে থাকত। আমি কদিন ছাদে যায়নি। আজ গিয়ে দেখি মরে পরে আছে। যাই গিয়ে ফেলে দিয়ে আসি’হঠাৎ করে কলেজ জীবনের কথা মনে পড়ে গেল রজতের। মেসের বকুলগাছটাও এইভাবে এদিন মরে যায় আচমকাই।ঘরছাড়া জীবনের সব লড়াইয়ে সাক্ষী হয়ে ছিল সেটা। কত বিনিদ্র রজনীর আর্তনাদ সহ্য করেছিল গাছটা। ঘন্টাখানেক পর ফিরে এসে রঞ্জনাকে ডাকল সে। তাকে পাঁজাকোলা করে ছাদে নিয়ে এল। সমানে গোটা দশেক অ্যালোভেরা, সঙ্গে কয়েক জাতের ফুলের গাছ। রঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বলল-‘তোমার বন্ধুরা তোমায় ডাকছে। যাবে না ওদের কাছে?’রঞ্জনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আসতে দেখল রজত। তবে তার ঠোঁটের কোণে জেগে ওঠা হাসি বুঝিয়ে দিল এবার সে সুস্থ। সে আর একা নয়।
কলমে শ্রয়ণ ভট্টাচার্য্য, খড়দহ