পরজন্ম

0
990

আচ্ছা আপনি পরজন্মে বিশ্বাস করেন ?
করি বৈকি । ভীষণ রকম করি ।
করেন? সত্যি ?
কি মুশকিল ! খামোকা মিথ্যে বলতে যাব কেন? করি, তাই বলছি।
চুপ করে গেলেন যে? কি এতো ভাবছেন বলুন তো ?
না, ভাবছি পরজন্মের মতো একটা বোগাস আইডিয়া কেউ বিশ্বাস করে কি ভাবে ?

বড্ড বাজে কথা বলেন আপনি । পরজন্ম একটা বোগাস আইডিয়া ? পরজন্ম না থাকলে এতো এতো জন্মাচ্ছে কি ভাবে ? একি অনন্তের কারখানা নাকি ? প্রোডাকশন হয়েই যাচ্ছে! আসলে যারা মরছে তারাই আবার জন্মচ্ছে।

হ্যাঁ, ডাবল ট্রিপল রেটে! শুনুন জীবনবৃন্ত থেকে ঝরে যাওয়া মানে শেষ হয়ে যাওয়া। তার আর কিছু থাকে না। পরজন্ম যে আছে তার কোনো প্রমান সাইন্সে নেই, আর যখন কোন প্রমান নেই তখন তার কোন অস্তিত্বও নেই। অন্তত সাইন্স তাই বলে।

হ্যাঁ, আপনার সাইন্স সব জানে ! বিজ্ঞান কি সব রহস্য সমাধান করতে পেরেছে? বিজ্ঞান বিজ্ঞান করে আপনারা এমন মাতামাতি করেন না যে মনে হয় বিজ্ঞানে সব প্রশ্নের উত্তর আছে। তাহলে মরে যাওয়ার পর কি হয় সেটার উত্তর দিতে পারে না কেন আপনার সাইন্স ?

মরে যাওয়ার পর কি আবার হয় ? জল, মাটি, হাওয়ায় মিশে যায় প্রাণ। এটা তো আপনাদের শাস্ত্রেও আছে। পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাওয়া।
হ্যাঁ, সেখান থেকেই তো ধার করে চালাচ্ছেন। কিন্তু আপনার বিজ্ঞানে কি এর কোন উত্তর আছে?
না নেই। নেই। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে আপনি একটা হাইপোথেটিক্যাল আইডিয়ায় বিশ্বাস করবেন।

আপনি মশাই পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া করছেন কিন্তু। হাইপোথেটিক্যাল? মানে তার সপক্ষে যেমন কোনো প্রমান নেই ঠিক তেমনি বিপক্ষেও তো কোনো যুক্তি নেই। তাহলে আপনি বলছেন কেন বোগাস আইডিয়া?

একশোবার বলবো বলবো বোগাস আইডিয়া।আর আপনাকেও বারন করব এ সব কুসংস্কারে বিশ্বাস করতে।
“দেখুন , আমার বিশ্বাস আমার কাছে। আপনি মশাই ভর সন্ধ্যেবেলায় এইরকম ঝগড়া জুড়েছেন কেন বলুন তো? আপনাকে তো বলিনি বিশ্বাস করতে, ” অভিমান ভরে কথাগুলো বলে সে আকাশের দিকে তাকালো।

“আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে। আমারই ভুল হয়েছে আপনার বিশ্বাসে আঘাত করা। আচ্ছা, যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নি যে পরজন্ম আছে তাহলে সেই জন্মে আপনি কি হতে চান? এইরকমই থাকতে চান না নতুন কিছু?”

” দাঁড়ান দাঁড়ান। আগে এই জন্মটাই ভাল করে বেঁচে নি। এতো তাড়া কিসের? সারারাত তো পড়ে আছে। তবে হ্যাঁ জিজ্ঞেস যখন করছেন তখন বলি, পরের জন্মে অন্য কিছু হতে চাই জানেন। ধরুন জুঁই বা নয়নতারা। আচ্ছা ধনেশ পাখি হলে কেমন হয় বলুন তো? সেই জন্মে আরো কটা দিন সময় পাব পৃথিবীটাকে প্রাণ ভরে দেখার। আপনি হাসছেন কেন বলুন তো তখন ?

হাসছি আপনার কথা শুনে। যেন পরের জন্মে আপনার মনে থাকবে এ জন্মের কথা।
হ্যাঁ, থাকবেই তো । নিশ্চয়ই থাকবে । আমি জাতিস্বর হব যে। আবার হাসে! ভাল হবে না বলে দিচ্ছি।।
আচ্ছা বাবা হাসবো না, কথা দিলাম।
আমারটা তো শুনলেন। আপনি কি হতে চান বলুন তো এবার ।
আমি ? আমি আবার কি হবো ? এরকমই থাকবো।
এমা ! বোর হয়ে যাবেন না একই জামা পরতে পরতে।

আপনি যে পরের জন্মে আরো বেশী দিন পৃথিবীটাকে দেখতে চান চোখ মেলে, তখন কয়েকদিন বাদে যদি বোর হয়ে যান, পৃথিবীকে একঘেঁয়ে লাগতে শুরু করে যদি।

তাই তো। এটা তো ভেবে দেখিনি….

দুজনের হাসির শব্দে মাটিতে এক গুচ্ছো জোনাক পোকা ঝিকমিকিয়ে জ্বলে উঠলো, আকাশের গায়ে লেগে থাকা অসংখ্য তারা সোহাগভরে ফুলঝুড়ির হয়ে ঝরে পড়ল। আর চাঁদের চোখ থেকে দুফোঁটা জল ওদের মাথায় পড়ল হীরের কুচি হয়ে জ্বলবে বলে শিশিরকণার বেশে।
পরদিন সকালে যখন রাঙা আলো নেমে এলো ঘাসের কোলে লুটোপুটি খাবে বলে তখন দেখলো দুটি শিউলি ফুলের মৃত দেহ পড়ে আছে ঘাসের ওপর। পরজন্মের প্রতীক্ষায়।

 

     -কলমে অদিতি দে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here