গ্রহণের কাল | অবশেষ

0
833

গ্রহণের কাল

গ্রহণের কাল  হলো কি তোমার পার,
আজকের তান্ত্রিকের জমাট বাধা কৃষ্ণ তিথিতে?
কালকেতুও কাঁদে নিরন্তর, গোধিকা হাতে,
তুমি কি করেছ পার দুঃসময় অপার?
ছলনাময়ীর জাল ছড়ানো সব গুলো মোড়ে!
কি খোজ নিরুত্তর আকাশের কাছে?
লেখা আছে পাথরকুচির পাতায় সব উত্তর।
অহল্যা গলে যাবে একদিন ঝকমকে-
লোহার, নিপুণ তীরের আঘাতে, অপেক্ষাতে ব্যাধ!
লক্ষ্যভেদ! লক্ষ্যভেদ! বলে চেচাচ্ছে,
বুড়ো মুণ্ডকেরা স্বয়ংবর সভার!
যদিও জানেনা তারা কি লক্ষ্য অন্তরে তোমার,
বিঁধে বসে আছ কতগুলো মাছ, চোখ, পাখির পালক!তবু আশা বুকে নিয়ে এখনো তো তুমি,
তীরন্দাজকে খোঁজ! ঘুমঘোরে শোন হ্রেষা ধ্বনি,
পুরাতন গন্ধের মতোন! জমে থাকে বাসি জামদানি!
এইসব নিয়ে ভালো আছো তো মেয়ে দুঃখ শায়েরী?
নেচে নেচে গান গায় অন্ধ তরংগেরে ছুয়ে,
শংখমালার চেয়েও বেশি পুরাতন শংখচিলেরা,
তীব্র করূণ তার সুর হুয়নি কি শেষ!
নীল জল কেঁদে কেঁদে নিঃশেষ, নেই আর অবশেষ!
তবু ভাগফলের শূন্যের মতো মিলিয়ে যায়নি কেন,
জীয়ল কূপের জল!
মেয়েটা সান্ধ্যভ্রমণে আসে পাখিদের সাথে করে খুনসুটি,
চোখ তার লোনা নদীটার মতো আজো টলমল!এখনো কার্ণিশে বসে একজোড়া অভিমানী চোখ,
খোঁজে উত্তর আকাশের কাছে!
লু হাওয়ায় যায় উড়ে আবেগের সংবৃত আবরণ,
চৈনিক রাণীদের রেশমের ওড়নার মতোন!
উষ্ণ বাতাসে উড়ে আরো কতো উষ্ণতা,
চুরি হওয়া ভালোবাসা নাকি বিক্ষুব্ধ অপ্রাপ্যতা!
বলে যাও কৃষ্ণবিবর পার কি হলো তার
অভিশপ্ত কাল?
বন্ধ করে আগ্রাসী ডিনারে ধেড়ে হাংগরের মতো-
ছায়াপথ গিলে খাওয়ার অভ্যাস,
সামান্য উত্তর তাকে দিয়ে যাও আজ,
আর কতোকাল সে দিবে পাহারা নক্ষত্রের পাল?
কৃষ্ণ বিবর দিয়ে যাও উত্তর!

মেয়ে তুমি নক্ষত্রের প্রহরী,
প্রতিটি রহস্যের রাত, নির্ঘুম ভোর একা জেগে,
সবগুলো তারা দিচ্ছ পাহারা!
ফিরে যায় দুঃস্বপ্নে আসা প্রেত ও পিশাচেরা,
নিজ আকাশের অধিকার ছেড়ে আজো পালায়না,
কোন ফুল্লুরা!

অবশেষ

সবটুকু রাস্তা হেঁটে শেষ,
আধো পূর্ণিমায় দেখতে বসেছি তাই,
জীবনের অবশেষ!
পাকা তরমুজের নষ্ট গন্ধের পচে যাওয়া ক্ষেতে,
নিমগ্ন নীরবতা শ্রীকান্তের শ্মশানের মতো-
জেঁকে আছে! সাদা কালো রিলে এক বিরহী নায়ক-
দুম করে মরে গেলো ম্যাটিনির শোতে!
কয়েক প্রজন্ম ধরে শোক নিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে পাটকাঠি,
ঝিরঝিরে বর্ষাতে ভিজে পান করে নিলো,
বরাদ্দ মদিরার শেষ পাত্রটি!
তীব্র আগুনেও তার আর হবেনা দহন!
এইতো পেয়েছি অমৃত বলে সবুজ কালো নকশার সাপে-
পাল্টালো খোলস; পাশে উঁকি দিয়ে শিকারী শংখচূড়,
পলকহীন, হিমাংকের হাসি হেসে বলে,
মূর্খ! সবাইতো ঠিক মরে যাবে অমরত্বের পাপে!
লাস্ট সাপারের ভাঙ্গা গ্লাসে আমরাও করেছি পান,
তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধের স্বাদে ব্যক্তিগত প্রাণ!
পুড়ে গিয়েছে সেই কবে পশ্চিমের পূন্যতোয়া নদী,
তারই মতো ছাই হবে মহাবিশ্বের সমস্ত সুন্দরী,
বাঁকা হাসি, কোমরের দোল!
নিস্তেজ, নিঃশেষ! সাদা কাশ ফুল ভাবছে ব্যাকুল,
এসেছিলো কেন তারা ফিরে যাবে যদি!
তবু ঢিলেঢালা জল এখনো পায়ের কাছে একান্তে,
শব্দ করে টলমল, বিক্ষত শিকারীর মতো-
আরতো পারিনা ছুঁতে! লক্ষ্যভ্রষ্ট জ্যা-মুক্ত তীর!
বসে চুপচাপ উপভোগ করি তবে,
গ্র্যান্ড ফাইনালে হেরে যাওয়া তীক্ষ্ণ মুহূর্তের,
নাটকীয় জীবনের বাকি অবশেষ!
পূর্বনির্ধারিত এই পরাজয়,
রেফারির বাঁশিতে কি বা আসে যায়!
ধবল বিলের পদ্মকে বড়শির মতো গেঁথে শামুকেরা,
কালো পাঁক শরীরে মেখে নিহত স্বপ্নের গল্প বলে!
দ্রবীভূত সরোবরে প্রমিথিউসের রক্ত মিশে চলে,
ফোঁটায় ফোঁটায়!
স্বর্গীয় শকুন দৃড় ঠোঁটে ছিড়ে খায় ঘনীভূত পেশীতে,
মোড়া বিদ্রোহী হৃদয়; ছড়াচ্ছে মাংসের কণা,
নর্দমার শতপদীটার প্যাচানো শরীরে,
মন বলে কিছু তার নেই;
তাই আজন্ম সুখী হয় শুধু সেই!
তবুও কিছুটা দুঃখ তাকেও কাঁদায় নাকি?
তাদের অদ্ভুত দুঃখে আমিও কেঁদেছি কতো রাত,
তারা কি আমার মতো খোলসের ভিতরে কষ্ট জমায়!
হয়তো এখনো কাঁদি! কেন কাঁদি?
কেউতো জানেনা! আমিও কি জানি!
এই অবসরে খুঁজি উত্তর; কিছু কাজ চিরায়ত দুষ্কর!
কয়েক মাইল দীর্ঘ ছেড়া বায়োডাটার পাতাটা,
ভাংগা জংশনে কয়েকটা বগি দাড়িয়ে পরপর,
কিছু তার জীবিত, কিছু শুষ্ক আখরোটের মতো মৃত,
হেঁটেছি এতোটা দূর! রেল লাইনের পার বিস্ময়ে ভরপুর!
সূর্য্য গ্রহণের দিনে রাহু পড়ে গিয়েছিল পাশের বাগানে,
তাকে ছুঁতে গিয়ে আত্মার এই নির্বাসন,
মায়ার নর্তকীরা কাঁদে পরিখার কৃষ্ণমৃগের বনে!
মাঝেমাঝে হাঁসফাঁস লাগে, কুয়াশায় খুঁজি জল,
অলৌকিকে হেসে বলে-‘যা ব্যাটা! দিলাম অতল!’
এখনো তো আছি পড়ে, অনেক গভীর এই খাদ!
বিড়াল তপস্বীর মতো ভান করে রাখা ধ্যান,
আর কতোকাল, হাসে শয়তান!
সীমান্ত পেরোলেই পাতা আছে পেরেকের ফাঁদ,
তবুও নিশ্চুপে হাই ডোজ সিডেটিভে ঘুমের মতোন,
দেখতে বসেছি এই অবশিষ্ট জীবন,
শোন পরম! দ্বিতীয়ার্ধে পেতে চাই দর্শকের আসন!
কবি পরিচিতি : সৌবর্ণ রায়, মেডিকেল অফিসার, ঢাকা, বাংলাদেশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here