আজকের গল্পের নায়ক এর নাম সোহাগ। সোহাগ এর জন্ম সিলেটের এক বস্তি এলাকায়। সোহাগের জন্মের পর শুধু মাকে দেখেছে। বাবাকে সে দেখনি, বাবা বেচেঁ ছিল না মারা গেছে তাও সোহাগ জানেনা। সোহাগ জানে এই পৃথিবীতে তার এক ভাই আর মা ছাড়া কেউ নেই। সে ভাই এর সাথে পলিথিন, প্লাস্টিক কুড়াতে যাই। আর সেই সব বিক্রয় করে তাদের সংসার চলে। সোহাগের মা অসুস্থ আর বড় ভাই রুবেল মাত্র সোহাগের দুই বছরের বড়। সোহাগ এখন ৪ বছরে পা দিয়েছে। তারা দুই ভাই এখনো ছোট তাই তাদের কেউ কাজ দেয় না। আর কাজ করার মতো শক্তিও তাদের নেই। তাই তারা প্লাস্টিক,কাগজ এই সব কুড়ায় আর বিক্রয় করে চাল কিনে।কোন রাতে খাবার জুটে তো কোন রাতে উপোস করে কাটাতে হয়। মায়ের ঔষধ কিনার ও টাকা নাই। দুই বেলা ভাত খাওয়ার টাকা নাই তো ঔষধ কিনবে কি করে। একদিন সে দেখলো এক পর্যটক মজারের জন্য হুজুরকে কিছু টাকা দিচ্ছে। সোহাগ টাকা চিনে না। কিন্তু ওদের কথা শুনে সোহাগ বুজতে পারলো। লোকটি ১০০০ টাকা দান করেছে। সোহাগ মনে মনে ভাবলো এই মানুষটাকে বলে দেখি যদি আমার মায়ের ঔষধ কেনার জন্য কিছু টাকা দেয়। আনকেল আমার মা অসুস্থ মায়ের ঔষধ কেনার জন্য কিছু টাকা দেন। লোকটি সোহাগ কে দুইটাকা দিয়ে বললো যা।
………আনকেল এই দুইটাকা দিয়ে মায়ের ঔষধ কিনা যাবে না।
……..এই বেটা মিত্যা বলার যাইগা পাসনা? যা এখন থেকে।
……..আমি মিত্যা বলছি না আমার মা সত্যি অসুস্থ।
…….বেটা এখান থেকে যাবি না পেটামু।
সোহাগ আর কথা না বলে সেখান থেকে নিরবে চলে আসে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে। মানুষ এই রকম কেনো দাদা? মাজারের জন্য ১০০০ টাকা দিতে পারে আমার মায়ের জন্য ১০০ টাকাও দিতে পারেনা!
সোহাগ আর তার ভাই কিছুই পেলেন বা আজ। প্রায় অনাহারে ঘুমাতে হচ্ছে, আর এই দিকে মায়ের অবস্তাও খারাপ। নিশ্বাস নিতে পাচ্ছে না। কিন্তু কি করবে ডাক্তার আনার টাকাও যে নেই। দুই ভাই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পারলো। সকাল বেলা সোহাগ ঘুম থেকে উঠে দেখে। মা আর আগের মতো শব্দ করছে না। সোহাগের ভাই বস্তির এক চাচাকে ডেকে আনলো, তিনি এসে বললো সোহাগ। তোমার মা আর বেঁচে নেই বাবা। সোহাগ আর রুবেলের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো। এই চাচার সহায়তায় মাকে দাফন করা হলো। সেই দিন তারা অনেককেদেঁছিল, কিন্তু কেউ আসেনি সান্তনা দিতে। তারপর রাত গরিয়ে দিন আসে, দিন শেষে রাত আসে। এই ভাবেই দিন কাটতে লাগলো। কাগজ প্লাস্টিক বিক্রয় করে খাবার জোগাড় করা। সোহাগ এখন নতুন একটা পথ পেয়েছে, নদী থেকে পাথর চুরি করে বিক্রয় করার। সিলেটের পাথর বিখ্যাত আর প্রচুর দাম ও রয়েছে এই পাথর গুলার। তবে পাথর নেওয়া সহজ নয়। ওখানে সেনা সদস্যরা পাহারায় থাকে। ওদের চোখে ফাঁকি দিয়ে পাথর চুরি করতে হয়। সোহাগ এখন ১০ বছর বয়স তাই তার এখন অনেক বুদ্ধিও হয়েছে। সে নিজেই বিভিন্ন বুদ্ধি করে পাথর চুরি করে। এই ভাবে দুই ভায়ের দিন কাটছিল। কিন্তু আল্লাহ যেনো গরিবের জন্যই সব কষ্ট লিখে রেখেছিল। রুবেল হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরলো। সোহাগ ডাক্তার দেখিয়ে ছিলো, কিন্তু তাও ভালো ডাক্তার নয়। সে প্রতিদিন আল্লাহর কাছে প্রর্থনা করতে। হে আল্লাহ আমার ভাইটাকে ভালো করেদিন। এই দুনিয়ায় আমার ভাই ছাড়া কেউ নেই। কিন্তু করুনাময় আল্লাহর যেনো তাদের প্রতি করুনা হলো না। হঠাৎ মধ্য রাতে রুবেল ও পারি জমিয়েছে মায়ের কাছে। সোহাগের কাছে আজো কোন টাকা নেই, যা ছিল ভাই এর জন্য খরচ করে ফেলেছে। ভাই এর দেহ বিছানায় পরে আছে, সোহাগকে আজ যে করেই হোক টাকা জোগার করতে হবে। সোহাগ নদীর দিকে হেটে চলেছে,তাকে পাথর নিতে হবে। ভাই এর কবর দিতে হবে। সোহাগ নদীতে নেমে পাথর নিলো। কিন্তু বিধিবাম হলে কিছুই করার নেই। এই সেনা তাকে ধরে ফেলে।আর তাকে সেনা প্রধানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেনা:- কিরে কি চুরি করস?
সোহাগ:- আমাকে মারলে মেরে ফেলুন।
কাটলে কাটুন। কিন্তু আমার এই পাথর চাই।
সেনা:- তোর সাহস তো কম নয়।
সোহাগ:- গত কলকে রাতে আমার ভাই মারা গেছে। আমার ভাই এখনো বিছানায় পরে আছে তাকে দাফন করতে হবে আমি এই পাথর বিক্রয় করে।তার দাফনের কাজ করবো।
সেনা ২:- কিন্তু তুই তো এখন থেকে যেতে পারবি না।
সোহাগ:- তাহলে আমাকে মেরে ফেলুন।
সোহাগের কথা শুনে সকল সেনারা হতবাক হয়ে পারেছে। সেনা প্রধানের মনে দয়া হল। উনারা নিজে দাড়িয়ে থেকে দাফন এর সব ব্যবস্থা করলেন। ভাইয়ের দাফন শেষ হলো। যে যার মতো বাড়ি ফিরে গেলেন কিন্তু সোহাগ কবরের পাশে বসে আছে। মা চলে গেছে অনেক আগে। আজ ভাই ও চলে গেলো সোহাগ এখন একা বড় একা। কি করবে সে বাড়িতে গিয়ে? কে আছে তার? নেই কেউ নেই। সোহাগ কাদঁছে, কেদেঁই চলেছে। চোখের পানি যে আর বাধা মানতে চাই না।সে কবরের পাশেই বসে আছে যেনো কার প্রতিক্ষায় আছে। মা এসে ছেলে বলে কোলে নিবে বা ভাই এসে কাদেঁ হাত দিবে। সে জানে তার মা আর ভাই কখনো ফিরে আসবেনা কিন্তু মন মানে না। মন চাই আরো অপেক্ষা করতে সারা জীবন অপেক্ষা করতে।
লেখক পরিচিতি :-
লেখক কাঞ্চন চক্রবর্তী (স্বাধীন) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানাধীন সুখছড়ী গ্রামে ১৯৯৬সালের জুন মাসের ১২ তারিখ এক ব্রাম্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মিলন চক্রবর্তী ও মাতা তাপসী চক্রবর্তী।