রোমাঞ্চ আমায় যেন তাড়না করে প্রতিমুহূর্তে । আর ইতিহাসের টান কখনই পেছন ছাড়ে না।বিশেষ করে ইতিহাসটা যখন বাড়ির খুব কাছের কোনো জায়গার। থাকা যদিও হয়না সেখানে,তবু পিছুটান কি করে আর যায় । এবারে আবার নতুন এক রোমাঞ্চের সূচনা।পেশায় চিকিৎসক হলেও জাসুসির স্বভাবটা যায়নি।তাই আরও শিহরিত হয়ে উঠছি গ্রামের বাড়ির পাশের রাজবাড়ি চালিত হাসপাতালে ‘rural posting ‘টা পেয়ে। ছোটবেলায় যে চত্তরে ঢোকা পর্যন্ত বারণ ছিল,আজ সেখানেই সবাই মাথায় তুলে রাখবে।বাবা–ঠাম্মার মুখে প্রায় শুনেছি মৃগঙ্কপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ির কথা,বীর রাজা বীরভদ্র সিংহ–এর কথা।মোঘল আমলের পরাক্রমী সেনাপতি মান সিংহ রাজা–কে তার প্রবল পরক্রমের ফলস্বরপ মৃগঙ্কপুরের রাজদায়িত্ব উপহার করেন। শোনা যায়,হলদিঘাটের যুদ্ধের বহু অস্ত্রসামগ্রী এই রাজ্মহলের কোনো এক প্রান্তে লুকনো আছে,সাথে আছে বহু ধনসম্পদ,কিন্তু আজ পর্যন্ত কেও তা খুঁজে পায়নি।তাছাড়া রয়েছে বহু গোপন কামরা আরও অনেক গোপন তথ্য। না,এসব ভাবতে ভাবতে আজ আবার ভোর হয়ে গেল।মা ঘুম থেকে উঠে পরেছে অথচ আমি মেডিসিনের বই সামনে খুলে এসবের গভীর চিন্তায় মগ্ন। হঠাৎ করেই মা চেঁচিয়ে উঠল–
–কিরে এখনো ঘুমোতে যাসনি?দুপুরে ট্রেন।বেরোতে পারবিতো সময়মতো?
-হ্যাঁ ঠিক পারবো ।
–আজ পর্যন্ত তো একদিনও পারলিনা।আজ কি সূর্য পশ্চিম দিয়ে দেখা দেবে নাকি?
–আরে উঠে পড়ব।আমায় একবার ডেকে দিও 10টা নাগাদ ।
–দেবো । এখন ঘুমোতে যাও।
–এই বাবান ওঠ। 10টা বাজে।বেশি দেরি করলে ট্রেনটা মিস করবি।
মায়ের ডাকে উঠে রেডি হতে নিলাম। হাল্কা খেয়ে OLA তে বেরিয়ে পড়লাম শিয়ালদহ স্টেশন । ১টা ১৫ মি; ট্রেন ছাড়ল স্টেশন থেকে।আমি আবার হারিয়ে গেলাম সেই সমস্ত চিন্তায়।মনে পড়ল সেই গ্যালারির কথা,যেখান রাজা ও তার পরিবারের সমস্ত উত্তরপুরুষদের অস্ত্র সাজিয়ে রাখা রয়েছে।রয়েছে মনিমুক্তভরা রাজার মুকুট।সেসব অনেক বছর আগেও নাকি ঢুকে দেখা যেত,কোনো বাধা ছিলোনা।এখন যদিও সেই গ্যালারী বন্দ ।ঢোকা যায় শুধুমাত্র সরকারি অনুমতি নিয়ে:যা পেতে আমার খুব বেশি সময় লাগবেনা।এসব ভাবতে ভাবতে মৃগঙ্কপুর চলে এলাম ।সন্ধ্যে ৭টা বাজে।ট্রেনটা ৪৫ মিনিট আগেই পৌছে গিয়েছে।ভেবে অবাক হলাম কিছুটা। পাড়াগ্রামে রাতটা তাড়াতাড়ি হয়,তাই সন্ধ্যে ৭টা তেও তেমন লোকজনের দেখা পেলামনা স্টেশন–এ। যারা রয়েছেন তারা অন্য কোনো ট্রেনের যাত্রী।স্টেশন থেকে বেরিয়ে রিক্সা ডাকব এমন সময় দুটি সদ্য কলেজ যাওয়া দুটি ছেলে ডাক দিল–
-‘বিপ্লবদা! ও বিপ্লবদা । আমরা তোমাকে নিতে এসেছি।‘
-‘তোরা কারা?কে পাঠিয়েছে তোদের?’
-‘আরে দাদা আমি কল্পেশ আর ও সুকুমার। আমাদের সুকৃতিদি পাঠিয়েছে। তোমাকে নিয়ে সোজা দিদির বাড়িতে যেতে বলেছে।‘
-‘তোরা বুঝলি কিকরে যে তোরা যাকে খুঁজছিস সে আমি?’
-‘সুকৃতিদি তোমার ফোটো দিয়ে পাঠিয়েছে তো! আমরা দিদির কাছে টিউশন পড়ি ।‘
সুকৃতি আমার বাল্যবান্ধবী । এখানে পোস্টিং পড়েছে সেটা আমি আগেই জানিয়েছিলাম ওকে।একটা ভাড়া ঘরের ব্যবস্থাও করতে বলেছিলাম। হয়তো সেই সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতেই আমায় ডেকে পাঠিয়েছে এই ভেবে আমি তাদের সাথে ঘোড়াগাড়িতে উঠে পড়লাম। রাস্তায় কিছুটা এগোতেই একটা বড়ো ঝোপ্ওয়লা বটগাছ দেখতে পেলাম।কিন্তু এই গাছতো আমি বাল্যকালে কখনই দেখিনি।দেখে যা অনুমান এই গাছ অন্ততঃ একশো বছর পুরোনো ।কিম্তু এতো পুরোনো গাছের কথা তো কখনও ঠাম্মা বা বাবা কারোর মুখেই শুনিনি।ভাবলাম একবার বাবাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি।
ফোনের দিকে তাকাতেই দেখি ফোন সুইচ অফ হয়ে পরে রয়েছে।অথচ এই কিছুক্ষণ আগেই,বটগাছটা পেরোনোর ঠিক আগের মুহূর্তেই আমি সচক্ষে দেখেছি ফোনে ৮০% চার্জ রয়েছে ।ফোনের সুইচ কিন্তু আর খুলল না। রোমাঞ্চ থেকে মনে ধীরে ভয়ের সঞ্চার হলো ।এ কোন মৃগঙ্কপুরে এসে পড়লাম আমি।
চারিদিক জনমানবশূন্য ।মনে মনে ভাবলাম sthethoscope টা কি গাছের বুকে নিয়ে হার্টবিট মাপব নাকি;এখানে তো লোকজনই থাকেনা,চিকিত্সা করাবে কে? জঙ্গলের গাছপালাগুলো ছুটে আসবে নাকি ক্লিনিকে?
সুকুমার হয়তো আমার মুখ দেখে বুঝতে পেরেছে আমার মনের অবস্থা।তাই বলে উঠল–
-‘ভাববেন না বিপ্লবদা।এখানে অনেক পেশেন্ট রয়েছে কিন্তু।একটু এগিয়ে গেলেই বুঝতে পারবেন।‘
ঘোড়াগাড়িটা একটু এগোতেই একটা প্রকান্ড গেট পেরিয়ে একটি লোকালয়ে প্রবেশ করলাম।এবার যেন সবকিছুই চেনা মনে হচ্ছে ।গাড়িটি থামল গিয়ে সুকৃতির বাড়ির ঠিক সামনের দরজায়।সুকৃতি গেটের বাইরেই রকে বসে অপেক্ষা করছিল।আমায় নামতে দেখে জিজ্ঞেস করল–
-‘তুই বিপ্লবই তো?’
-‘ কেনো কোনো সন্দেহ আছে?’
– ‘সন্দেহ তো আছে বটেই।‘
-‘কি সন্দেহ শুনি একটু!’
-‘ভাবছি এই নাটা কেবলা -মার্কা ছেলেটা স্মার্ট তালগাছ হলো কি করে?’
-‘শহুরে হাওয়ার দোষ হয়তো।কি বলিস?’
-‘হ্যাঁ তাই তো মনে হচ্ছে। ‘
-‘সব গল্প কি রকে দাড়িয়েই করবি নাকি ভেতরেও ডাকবি?’
– ‘ ও হ্যাঁ! এই দেখ ভুলেই গেছি।আয় ভেতরে চল শিগগির।বাবা অপেক্ষা করছে ।‘
-‘কাকু কেমন আছেন?’
-‘একদম ফিট।‘ ‘বলছি যে একটা সমস্যা হয়েছে।তোর ভাড়ার ঘর খুজে পাওয়া যায়নি।অনেক জায়গা খুজ্লাম কিন্তু কেও অচেনা লোককে ভাড়া দিতে রাজি না।‘
-‘তাহলে? এবার কি হবে?কোথায় থাকি!’
-‘কোথায় আর থাকবি!ঐ হাসপাতালের কোনো বেডে শুয়েই রাত টা কাটিয়ে দিবি!আর কি!’
-‘এতোগুলো ব্যাগ কোথায় রাখব?’
-‘নিজের কেবিনে!’
-‘হ্যাঁ ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস। আপাতত তাই করি।লোকে হাসপাতালে এলে চেনাপরিচিতি বাড়বে।তারপর ঘর ভাড়া দিতে কোনো সমস্যা করবেনা কেও।‘
-‘ওরে পাগল!এতক্ষণ ধরে তোকে গাধা বানালাম আর তুই তা হয়েও গেলি!’
-‘মানে?ঘর পেয়েছিস?’
-‘ না তা পাইনি।কিন্তু তোর থাকার ব্যবস্থা আমাদের বাড়িতেই।চল ঐ পশ্চিম কোণের ঘরটা তোর।জিনিসপত্র গুলো রেখে আসি গিয়ে।তারপর একসাথে খাওয়া হবে।‘
-‘আচ্ছা একটা কথা বলতো । আমি এখানে যতদিন ছিলাম ততদিন কোনো পুরোনো বটগাছ না দেখেছি না কারোও মুখে ঐ বট গাছের কথা শুনেছি!হঠাত্ করে প্রায় একশো বছর পুরোনো বটগাছ টা এলো কোত্থেকে বলতো?’
-‘ঐ বটগাছ আসল বটগাছ নয়।তুই রাতের অন্ধকারে দেখে হয়তো বুঝতে পারিসনি।আসলে সেই জায়গাতেই বহুকাল আগে রাজা বীরভদ্র সিংহ একটি বটগাছ রোপণ করেছিলেন।প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সেই রাস্তার ধার বেয়ে যাওয়া যাত্রীরা যাতে বিশ্রাম নেওয়ার উপযুক্ত স্থান পায় ।কিন্তু বীরভদ্র সিংহের পৌত্র উদয়শঙ্কর ঠিক প্রায় একশো বছর পরই গাছটা কেটে দেয়।কেটে ফেলার পূর্বে তিনি বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর দ্বারা গাছটির চিত্র অঙ্কন করান ।তার বর্তমান উত্তরপুরুষ বেলাসঙ্কর,যিনি তোর সিনিয়র ডাক্তার এখানকার,সেই চিত্র অবলম্বনে একটা মডেল তৈরি করেছেন। যা তুই দেখেছিস।‘
-‘কিন্তু তুই এগুলো জানলি কি করে?’
-‘ভুলে যাসনা আমিও কিন্তু অধ্যাপিকা।‘ ‘আর এসবের বেশিরভাগ তথ্যই বাবা শুনিয়েছে।‘
-‘তিনি জানলেন কি করে?’
-‘বাবার প্রপিতামহের প্রপিতামহ ছিলেন রাজা উদয়শঙ্করের অকাউন্টেন্ট।বাবা তার পূর্বপুরুষদের কাছেই শুনেছেন এতকিছু ।‘
-‘কিন্তু হঠাত্ করে উদয়শঙ্কর তার পিতমহের লাগানো সখের বটগাছ কেটে ফেলল কেনো?’
-‘তা তুই উদয়শঙ্করকেই জিজ্ঞেস কর গিয়ে।‘
-‘তা কিকরে সম্ভব!’
-‘কেনো!ভুত হয়ে!
এবার চুপচাপ খেয়ে নে। ভেবেছিলাম তুই বিশাল লাজুক।হয়তো প্রথম কয়েকদিন ঠিক করে কথাই বলবি না।কিন্তু এ তো পুরো বিপরীত!’
-‘আচ্ছা চল খেয়ে নি।খিদেই পেট ভেতরে ঢুকে পড়েছে।‘
খেয়েদেয়ে আমি নিজের রূমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।সারাদিনের journey আর কাল সকালবেলা উঠেই ডিউটি জয়েন করার তাগিদে চোখটাও লেগে গেল তাড়াতাড়ি। রাতে কখনই আমার ওঠার দরকার পরে না।কিন্তু আজ পড়েছে।কিন্তু জানিনা washroom টা কোনদিকে।কারেন্ট ও মনে হয় নেই।পারাগ্রামে এটা খুব সাধারন ঘটনা,রাতে কারেন্ট না থাকা।
ঘরের দরজা খুলতেই কানে ফিসফিস করে আওয়াজ পেলাম,সুকৃতি কার সাথে যেন একটা কথা বলছে।কি কথা হচ্ছে তা শুনতে পেলাম না ঠিক। তাহলে এ কি সুকৃতির গুপ্ত প্রেমিক? হলেও আমার কি!নিজের কজ সেরে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে উঠে দেখি সুকৃতি আমার ঘরের সোফায় এসে বসে রয়েছে।সামনের টেবিলে চা,কিছু বিস্কুট,আর ব্রেড সাথে জ্যাম।ঘুমোনোর সময় আমি দরজা খুলেই ঘুমই তাই অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি।চোখ খুলতেই সুকৃতি ডেকে বললো–
-‘আয় খেয়ে নে।আমিও তো বেরবো ।‘
-‘দাড়া ব্রাশটা করে আসি ।‘
-‘আচ্ছা।আমি অপেক্ষা করছি। তাড়াতাড়ি আয়।খেয়ে একসাথেই বেরবো।তোর হাসপাতালের পাশেই আমার কলেজ।‘
হাসপাতাল যাওয়ার পথে সুকৃতি আমায় একে একে নতুন তৈরি স্কুল,কলেজ,দাতব্য চিকিত্সালয় দেখিয়ে দিল।কিছুটা হেটে যেতেই আমার হসপিটাল চলে এলো।আমি ঢুকে পড়লাম।সুকৃতি ফিরে নিজের কলেজের দিকে গেল।হাটা পথে 5মিনিট । আমি একে একে সবার সাথে পরিচয়পর্ব সেরে নিলাম– মিস্টার ঘোষ,মিস্টার মিস্ত্রি ,মিস্টার সর্দার এবং লেডি ডাক্তার তানিয়ার সাথে। বেলাশঙ্কর দা এখনো আসেনি।খোজ নিয়ে জানলাম তিনি খুব কম সময়ের জন্যই এখানে আসতে পারেন।বেশিরভাগ সময়টা সেই দাতব্য চিকিত্সলয়েই গরিব মানুষদের চিকিত্সা করেন। বেলাদা এ গ্রামের হলেও তাঁকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি।আমার জন্মের কিছুদিন পরেই বেলাদা ও তার বাবা নাকি কলকাতা চলে যান।বেলাদা তখন সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছে।আমার ছেলেবেলা কেটেছে গ্রামেই।পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হই কলকাতায়।বাবা মা ,বাড়ির সবাই মিলে কলকাতায় থাকতে শুরু করি।কলেজ জীবন কাটে উত্তরবঙ্গে, নর্থ বেঙ্গল মেডিকাল কলেজে।বেলাদা কলকাতা মেডিকাল কলেজ থেকে পাস করে পারি দেয় বিদেশে। আমি এমডি করি কলকাতা মেডিকাল কলেজ থেকে।তাই এক পেশায় থেকেও দেখা হওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি।আজ হয়তো দেখা হলেও হতে পারে।
আউটডোর ওয়ার্ডে পেশেন্ট দেখছি এমন সময়ই বেলাদা এলেন।একটা ক্রিটিকাল অপেরশন করার আছে।সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে ওটি তে ঢুকে পড়লেন।মিস্ত্রিবাবু তার সহকারীকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিস্টার বোস ।আমার কলেজের প্রাক্তনী,সুদক্ষ সার্জেন। মাথায় একটা খটকা দিল।মিস্টার বোস কিনা একজনের সহকারী ! সন্দেহটা এই ভেবে উড়িয়ে দিলাম যে, বেলাদা বিদেশে সার্জারী পড়েছে।হয়তো সে অধিক পারদর্শী।এই ভেবে মনকে সান্তনা দিলাম। অপেরশন শেষ হলে বেলাদা বেরিয়ে এলো। আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে বললো–
-‘বিপ্লব কেমন আছিস? তোর আসার খবর শুনলাম রমেশকাকুর মুখে।কোনদিন দেখা তো হয়নি,তবে তোর ব্যপারে শুনেছি অনেকই ।‘
-‘আমি ভালো আছি বেলাদা ।তুমি কেমন আছো?
-‘ বেশ ভালই চলে যাচ্ছে সবকিছু। এই দিনে গড়ে 3টে অপেরশন,বাকি সময় টা দাতব্য চিকিত্সালয়। ছাড় না এসব বাবা।এটা বল কোথায় উঠেচিস এখানে?’
(আমি মিস্টার বোস এর দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি মুখ বেকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। )
-‘ ঐ যে সুকৃতিদের বাড়িতে।‘
-‘বাহ বেশ তো । তাহলে আজ একবার আয় সন্ধের দিকে রাজবাড়িতে।‘
-‘ আচ্ছা দেখছি দাদা ।সুকৃতিকে একবার জানিয়ে দিতে হবে।‘
-‘আমি কিন্তু অপেক্ষা করব।সাথে ওল্ড মঙ্ক ও।‘
-(হেসে বললাম) আচ্ছা দাদা।তবে বেশি হয়ে গেলে বাড়ি পৌছে দেওয়া তোমার দায়িত্ব ।‘
– ‘সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
আচ্ছা আসি আমি এবার(চলুন মিস্টার বোস)।
-‘ ওকে দাদা।‘
বেলাদা চলে যাওয়ার পর আমি আবার নিজের পেশেন্ট দেখতে শুরু করলাম।কখন যে সন্ধে হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি ।পেশেন্টদের ভির ও নেই ।দু–একজন রয়েছে মাত্র।ডাক্তার তানিয়ার night শিফটে ডিউটি পড়েছে আজ।সে এসে পরলেই আমি বেরোবো । ১৫ মিনিট পর তিনি হাজির হলেন।
–এই যে মিস তানিয়া। আপনি এসেছেন।আমি যাই এবার।‘
-‘ কোথাও যাওয়ার তাড়া রয়েছে নাকি তোমার? সুকৃতির সাথে আসার পথে দেখা হলো। খোজ করছিল তোমার। কোথাও বেরোবে নাকি?’
-‘ নানা তেমন কিছু নয়।অন্তত আমি তেমন কিছুই প্লান করিনি। সুকৃতি করে থাকলে আমি জানিনা এখনো। তুমি ওকে কি বললে?’
-‘ আমি বেশি কিছু বলিনি।এই বললাম মাত্র যে তোমার ছুটি হয়ে যাবে কিছুক্ষণেই।আমি পৌছনোর অপেক্ষামাত্র ।‘
-‘ ওকে, আমি আসি তাহলে। কোনো সমস্যা হলে ফোন করো । নম্বর টা আমার কেবিনের ডেস্ক–এ রাখা আছে।‘
-‘আচ্ছা তুমি চিন্তা কোরোনা । তুমি বেরিয়ে পড়ো ।‘
হাসপাতাল থেকে বেরতেই দেখি সুকৃতি সামনে দাড়িয়ে রয়েছে। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম–
-‘কিরে ফিরিস নি এখনো বাড়ি?এখানে বাইরে দাড়িয়ে কি করছিস? ভেতরে আসতে পারতিস তো।‘
-‘ আমি প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করছি এখানে।এই তানিয়া ঢুকল আমি তাই জিজ্ঞেস করলাম যে তোর কত দেরি। ও বললো এই ২ মিনিট ।ও পৌছনো মাত্র যা সময় লাগবে।কিন্তু তুই এতক্ষণ সময় নিবি বেরোতে!’
-‘ না আমি ঐ হাল্কা জেরা করছিলাম ওকে তুই কি বলেছিস তা নিয়ে।‘
-‘ তোর সেই নিজেকে detective ভাবার অভ্যেস আর গেল না। আর তুই আমাকে কি এমন বলেছিস বাবা যে তোর এতো ভয়!’
-‘ না তেমন কিছুই নেই ।তবে ঐ জেরা করাটা অভ্যেস হয়ে গেছে। যাকগে যেটা বলার ছিল– রাজাবাবু ডেকেছেন আজ সন্ধেই।ওল্ড মঙ্ক রেডি ওন দ গ্লাস।‘
-‘তুই ওগুলো খাস?’
-‘ না । এখনো পর্যন্ত না।তবে ওল্ড মঙ্ক কে ছাড়ে!’
-‘ এদিকে বলছিস খাসনি কক্ষনো আবার ওল্ড মঙ্ক করছিস বারবার!’
-‘ওরে ওল্ড মঙ্কের নাম সবাই জানে ।‘
-‘ কই আমি তো জানি না। যাকগে চল কিছু খেয়ে আসি। রামুকাকার দোকানের জিলিপি । মনে আছে, আমরা খেলা শেষ করে রোজ যেতাম জিলিপি খেতে।‘
-‘ হ্যা আর তুই আমারটারও অর্ধেক খেয়ে ফেলতিস । চল খেয়ে আসি।‘
রমুকাকার জিলিপি খেয়ে বাড়ি ফিরে স্নান করে আমি বেরিয়ে পড়লাম রাজবাড়ির দিকে।হাটা পথে 10মিনিট। গায়ের শেষ প্রান্তে।সন্ধে গড়িয়ে গেছে অনেক্ষন আগেই। রাজবাড়ির গেটের কাছেই দাড়িয়ে ছিলেন মিস্টার বোস। তিনি আমাকে drawing room এ নিয়ে গেলেন।সেখানেই বেলাদা বসে ছিলেন।
-‘এই যে বিপ্লব,আয় ,বস । please have a drink’
-‘না দাদা আজ না। ‘
-‘ তাহলে চা কফি,কোল্ড ড্রিঙ্কস , anything else?’
-‘ওকে,একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস।‘
-‘এই যে সুচিত্রা ,ওকে একটা coke দিয়ে যাও।‘
(সুচিত্রা রাজবাড়ির কাজের লোক)
ওল্ড মঙ্কের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বেলাদা বললো–
-‘ শুনেছি তুই রহস্য উন্ম্মোচন করতে খুব ভালবাসিস।‘
-‘ হ্যা ঐ আর কি! ছোট কিছু detective কার্যাবলি।‘
-‘তোকে বিশ্বাস করা যায় তাই বলছি কিছু ঘটনা। আমদের রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বীরভদ্র সিংহ মোঘল আমলে বেশ কয়েক যুদ্ধ করেন আর জয়লাভ ও করেন।মোগল সেনাপতি মানসিংহ তাঁকে উপহার স্বরূপ বহু মূল্যবান হিরে মুক্তমনি,সোনা দান করেন।তাছাড়া বহু অস্ত্র যা হল্দিঘাটির যুদ্ধে ব্যবহার হয়েছিল সেসব তিনি লুকিয়ে রাখেন কোন এক জায়গায়।একটি বক্সে তিনি একটি ধাধা লিখে যান, যা আজ পর্যন্ত কেও সমাধান করতে পারেনি। দাড়া ধাধার বক্সটা এনে দি । ‘
বক্স থেকে পুরোনো এক কাপড় পেলাম।তাতে সোনালি সুতো দিয়ে জরি করে লেখা–
“বাক্সবন্দি জবাব তোমার,
কোনো পথের ধারে ।
বিশ্রামের কোনো সুযোগ নেই,
আমার চোখের আরে।
খুজোনা আমায় তুমি শমী গাছের তলে,
বা কোনো রাজ্মহলে।
আছি আমি কস্সপের বোধে,
নুগার চারপাশের আলে।“
ধাধাটি পড়ে আমি বেলাদার উদ্দেশ্যে বললাম–
-‘শুনেছিলাম রাজবাড়িতেও অনেক অস্ত্র রাখা রয়েছে কোন গ্যালারীতে।‘
-‘হ্যা সেটা তো রয়েছেই। চল তোমায় দেখিয়ে আনি সেটা।‘
দ্বিতীয় তলায় গ্যালারী ।সিড়ি ভেঙে উপরে উঠে ঠিক বাদিকে গ্যালারী। দরজায় তালা দেওয়া থাকে, তালার চাবি থাকে বেলাদার কাছেই। দাদা তালা খুলে ভেতরের লাইট জেলে দিল।ভেতরে প্রবেশ করতেই যা দেখলাম তাতে কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে থাকতে হয়। এ দিল্লির লালকেল্লার অস্ত্র গ্যালারী বা হাজারদুঅরির অস্ত্র গ্যালারী থেকে কিছু কম যায়না ।তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বীরভদ্রের তালওয়র টা । তুলনা হয়না।সুন্দর।অপূর্ব।
অস্ত্রগুলো দেখতে দেখতেই সুকৃতি ফোন করেছে।গ্রামে হঠাত্ 8 জন মারা গেছেন। যারা মারা গেছেন, তারা সকলেই দাতব্য চিকিত্সলয়ে গেছিল আজ সকালে। পুলিশ কেস ।বেলাদা কে জেরা করা হবে।আমি বেলাদাকে খবরটা শোনাতেই বেলাদার যেন পায়ের নিচের মাটি সরে পড়ল।
-‘আমি আজ আসি বেলাদা।‘(বলে আমি বেরিয়ে পড়লাম। এই মুহুর্তে তাঁকে একা ছেড়ে দেওয়াই উপযুক্ত বলে মনে করলাম।)
-‘ তুই চললি? আচ্ছা আয়। তবে ওগুলো দেখিস একটু।আর চাবিটা আমি বোসকে দিয়ে দেবো।পরে এসে দেখে নিস পুরো গ্যালারীটা ।কিছু পুরোনো বইও রয়েছে।‘
–আচ্ছা, তাই হোক ।(কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে)ঐ বটগাছের মডেল তৈরি করার আইডিয়া কার ছিল?’
-‘বোস আমায় বলেছিল ।ঐ painting টা দেখে।‘
-‘আচ্ছা।আমি আসি তাহলে।‘
আমি বাড়ি ফিরে ভাবতে শুরু করলাম ।কিছুতেই কিছু গুচোতে পারছিনা।সব কেমন জানিনা গুলিয়ে যাচ্ছে।হঠাত্ বেশ অনেকগুলো শেয়ালের আওয়াজ শুনতে পেলাম।সুকৃতি খাওয়ার রেডি করছে টেবিলে।জিজ্ঞেস করলাম–
‘এখানে শেয়াল আছে?’
-‘না না গ্রামের মধ্যে আসার সাহস পায়না ।তবে ঐ বটগাছের আশেপাশের জঙ্গলে আছে 5 6টা । আয় খেয়ে নে।‘
খেয়ে উঠে নিজের ঘরে যেতেই হঠাত্ মেঘের গর্জন শোনা গেল। বৃষ্টি পড়বে হয়তো।বিদ্যুত চমকাচ্ছে।মনোরম পরিবেশ,তবুও কেনো জানিনা ঘুমটা এলো না। বারবার কিছু জিনিস মেলানোর চেষ্টা করছি,কিন্তু সবকিছুই আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে। বারবার মনে উঠে আসছে একটা প্রশ্ন– হঠাত্ 8 জনের মৃত্যু একদিনে।বেলাদার পেশেন্ট।এতদিন হয়নি, আজ হঠাত্ এতো বড়ো ভুল হলো কি করে! আবার একবার ভাবছি সেই ধাধা।প্রথম দুই পংক্তির অর্থ দাড়ায়– বাক্সের মধ্যে বন্দি করে সব ধন রাখা রয়েছে কোন রাস্তার ধারে।পরবর্তী দুই পংক্তির অর্থ– আমার চোখের আড়ালে কেও বিশ্রাম নিচ্ছে তা আমার একদম পছন্দ নয়।কিন্তু রাজা বীরভদ্র সহানুভূতিশীল ছিলেন।তিনিই সেই গাছ টা লাগিয়েছিলেন বিশ্রাম নেয়ার জন্যেই,তাহলে এখানে লিখেছেন কেনো যে তার বিশ্রাম নেওয়া লোকেদের পছন্দ নয়!কিছু একটা গরবড় আছে।আর উদয়শঙ্কর সেই গাছ কেটেই বা ফেলল কেনো।
আবার কানে এলো ফিসফিস শব্দ টি ।কিন্তু আজ ফাকি দিতে পারেনি ।মিস্টার বোস ।সুকৃতিকে বলছে তিনি কোথাও একটা যাবেন।বাড়ির মেন দরজা বন্দ হয়ে গেল ।বুঝতে পারলাম তিনি রওয়্না দিয়েছেন।আমি আবার নিজের ধাধার দিকে ধ্যান দিই। ‘খুজোনা আমায়_____’, অর্থ স্পষ্ট – শমী গাছের তলে ব রাজ্মহলে কোথাও সেই ধনসম্পদ নেই। কিন্তু পরের দুটো লাইন? কস্সপ কে?এদের পূর্বপুরুষ?
নাহ গ্যালারীতে এবার যেতেই হচ্ছে,ওখানে কোনো বই নিশ্চিত হবে যাতে এদের পুরো বংশের ছক পাওয়া যাবে। কাল এমনিই রাতের শিফটে ডিউটি।দিনটা ভালো কাজে ব্যবহার করা যাবে।এখন ঘুমিয়ে পড়ি।অনেক রাত হয়েছে।
সকালে উঠে দেখি সুকৃতি সেই আমার ঘরের সোফায় বসে ফুফিযে ফুফিযে কাদছে।আমি উঠে বসতেই বললো–
‘মিস্টার বোস আর নেই।‘
–কেনো কি হয়েছে?
-‘মাঝরাতে জঙ্গলের দিকে গেছিলেন । আজ সকালে বডি পাওয়া গেছে।জঙ্গলে একটা শমী গাছ রয়েছে ,ঠিক তার নিচে। শেয়াল এ পুরো বডি প্রায় খেয়ে ফেলেছে।পোস্টমর্টেম এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।‘
-‘কাল্ রাতে উনি তোকে বলেছিলেন কোথায় যাবেন?’
-‘না,কিন্তু তুই কি করে জানলি উনি এসেছিলেন?’
-‘তোদের ফিসফিস আমি কালরাতে আমি শুনেছি।এমনকি তার আগের দিন রাতেও তিনি এসেছিলেন।তাই নই কি?’
-‘ হ্যা, ঠিক ধরেছিস।‘
-‘দেখি আমি একটু পুলিশ স্টেশন যাব ।‘
পুলিশ স্টেশন থেকে আমি চাবি পেয়ে গেলাম যা বোসের pant এর পকেট থেকে পাওয়া গেছিল।একবার গিয়ে সেই বটগাছের মডেলের কাছে ঘুরে এলাম,শমী গাছের নিচেও গেলাম।কিন্তু কোথাও কোনো খুরোখুড়ীর চিন্হ মাত্র পেলাম না।তবে একটা লোহার কুড়োল পাওয়া গেল।আমি সেটাকে বয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলাম।একটা অবাক কান্ড লক্ষ করলাম।আমার টেবিলএ রাখা forcep সেই কুড়োল এ গিয়ে লেগে গেল।
চাবিটি নিয়ে তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম রাজবাড়ি। গ্যালারীতে গিয়ে খুজ্তে শুরু করলাম ।একটা পুরোনো বই হাতে পড়ল। বীরভদ্র সিংহর লেখা বই। তাতে লেখা রয়েছে,তিনি জন্মগত্ভাবে লঙ্কার অধিবাসী।তার জন্ম রাবন্পুরমে।তাদের বংশের ছকটা ও পেলাম।কিন্তু তাতে কস্স্প বলে কেও নেই।হঠাত্ মনে পড়ল কস্সপ ছিলেন 20তম বুদ্ধ যার বোধিতে বটগাছের ভুমিকা ছিল।তিনি বটগাছকে নুগা বলে অভিহিত করেছিলেন।আজও লঙ্কায় বটগাছের নাম নুগা বা মহনুগা।দক্ষিন ভারতেও কিছু জায়গায় নুগা বলা হয় বটগাছকে।কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট যে , ধাধার লেখা আর এই বই এর লেখার কোনো মিল নেই।আরও কিছু বই ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে চোখে পড়ল উদয়শঙ্করের লেখা একটি বই।দুই লেখা যেন হুবহু মিলছে।
রাজবাটি থেকে বেরনোর সময় বেলাদা ও বোস বাবুর ঘর খুজে নিলাম ভালো করে।বোসের ঘরে বহু সার্জারী বই।বিছানা তা দিয়েই ভরা । টেবিলে একটি অভিধান দেখতে পেলাম।সম্ভবত শ্রীলঙ্কান ভাষার ।যে পাতা টি খোলা রয়েছে, তাতে বটগাছ(banyan tree) শব্দটি রয়েছে।
বিছানার নিচে একটা curare এর ভায়ল পেলাম।পেলাম একটা বিদিশি বেসরকারি হাসপাতালের বিল।প্রায় 1কোটি 22লক্ষ টাকা ।বিলে নাম লেখা সুচিত্রা বোস ।pancreatic cancer এর রুগির বিল।
বেলাদার ঘরেও একবার ঢুকে দেখলাম। কোন বই কোন কিছুই নেই ঘরে।কোন surgical instruments ও খুজে পেলাম না।যা ভেবেছিলাম।খুজে পাওয়া টা কামনা করিনি কখনই।
আজ অনেক কাজ।যারা মারা গেছেন প্রত্যেকের বাড়ি থেকেই সেই ওষুধগুলো নিয়ে এলাম যা খেয়ে এমন অবস্থা।ওষুধ গুলো নিয়ে ল্যাব টেস্ট এ পাঠিয়ে দিলাম। রিপোর্ট আসবে কাল।পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও কাল ই আসবে।
আজকের মতো কাজ শেষ।দেখতে দেখতেই বিকেল হয়েছে।কিছু খেয়ে নিয়ে হাসপাতালে রিপোর্ট করলাম।সারারাত ডিউটি সেরে সকালে বাড়ি ফিরলাম।সারাদিনের ঝাকুনিতে শরীর ঝালাপালা হয়ে গেছে।একটু ঘুমিয়ে নিলাম ।বিকেল 5টায় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলো।মৃত্যুর কারন বিদ্যুত্পৃস্ট হওয়া। পুলিশ এদিকে জেরায় কিছু পায়নি। বেলাদা কে তাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।কিছুক্ষণ পরেই medicine গুলোর রিপোর্ট ও চলে এলো।স্যাম্পেল এ curare রয়েছে। পুলিশ ,সব ডাক্তার,বেলাদা,সুকৃতি,সুচিত্রা সবাই কে ডেকে পাঠালাম।
সবাই এসে উপস্থিত হলে ওসি সাহেব আমায় জিজ্ঞেস করেন–
–কিহে মশায় ,সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছেন কেনো?’
-‘অনেক রহস্য রয়েছে।রহস্যভেদ করতে।‘
-‘আচ্ছা তাহলে বলুন না‘
–প্রথম প্রশ্ন বেলাসঙ্কর সিংহের কাছে–আপনি কতদিন ধরে ডাক্তার হওয়ার ঢং টা করছেন?আসলে আপনি কলকাতায় কোনো মেডিকাল কলেজে পরেননি।পড়েছেন scotish church কলেজ এ।আপনার ঘরে রাখা সমাবর্তনের ছবিতে আপনি যে ড্রেসটা পড়ে রয়েছেন টা কলকাতা মেডিকাল কলেজের নয়।এটা জানতে আমার বেশি সময় লাগেনি।অমি নিজেই মেডিকাল কলেজের ছাত্র ।আপনার সমাবর্তনের ছবিতে সৌম্যদীপ কে দেখে আমি তাঁকে কল করি।জানতে পারি আপনার কাহিনি। সুচিত্রার pancreatic cancer এর অপেরশন করতে টাকাটা আপনি দিয়েছিলেন,তাই তো?যাতে আপনি মিস্টার বোসের ডিগ্রি টার সদব্যবহার করতে পারেন।OT তে ঢুকতেন আপনার দুজ্ন,অপেরশনটা করতেন মিস্টার বোস ।তাইনা বেলাদা। তাই মিস্টার বোসের পক্ষে আপনাকে ফাসানো সহজ হয়েছে।আপনার দেওয়া ওষুধের মধ্যে curare মেশানো সহজ হয়েছে,আর সেই ওষুধ খেযে মারা যান 8জন । অর্থাৎ আপনাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ।আপনার অমূল্য ধন এর খোজ আমার আগে তিনিই করেছিলেন।ভেবেছিলেন সেই সম্পদ খুরে বের করে নিজের বোন সুচিত্রা আর প্রেমিকা সুকৃতিকে নিয়ে অনেক্দুরে চলে যাবেন।কিন্তু তিনি বর্ষার রাতে বেরিয়ে বিদ্যুত্পৃস্ট হয়ে মারা যান। কুড়োলটা সম্পূর্ণ লোহার না হলে তিনি হয়তো বেচে যেতেন ।কিন্তু 8জনকে মরার মুখে ঠেলে দিয়ে তিনিও কর্মের ছুট পাননি। কি তাই তো?
বেলাদা ও সুচিত্রা সম্মতিসূচক ইঙ্গিত দিলেন।
–কিন্তু আপনার পুর্বপুরুষ বীরভদ্র সিংহ কিন্তু নিজের সম্পদ লুকোতে যাননি।সেই কাজটি করেছিলেন উদয়শঙ্করবাবু ।তার লেখা বই আমি পড়েছি সেই গ্যালারী থেকে নিয়ে। সুদক্ষ কবি ছিলেন তিনি।আর এই ধাধাতে তার প্রতিভার সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায়। আইনত আপনি কোন দোষ করেন নি বেলাশঙ্কর বাবু।কিন্তু এরপরও এই পেশাকে মলিন করবেন না।
তাহলে এবার যাওয়া যাক সেই বটগাছের তলায়।নুগা শব্দের অর্থ বটগাছ।আমার ধারনা,সেই বটগাছের আলেই পাওয়া যাবে বীরভদ্রের অমূল্য ধনসম্পদ।
একে একে সবাই বটগাছের মডেলের কাছে গিয়ে খুরতে আরম্ভ করলাম।কিছুটা খুরতে পাওয়া গেল একটা সোনার বিরাট বড়ো বক্স।বেলাদা নিজেই সেই বাক্সটা খুলতে বললেন আমাকে।আমি বক্সটা খুলতেই বেরিয়ে এলো উজ্জল রশ্মি।
বেলাদা ঘোষনা করলেন, এখানের সমস্ত ধন– হাসপাতাল,স্কুল,কলেজের উন্নতির কাজে ব্যবহৃত হবে।
রাজার সম্পদের সদব্যবহার হলো।
লেখক পরিচিতি : শান্তনু দাস , বর্ধমান মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার সাথে সাথে লিখতে ভালোবাসে ছোট থেকেই। অবসর সময় কাটে কবিতা ও গল্প লিখে।