জীবনের গুপ্তধন

0
1344
Picture CopyRight @ http://mcknowledge.info/

অগ্নিশ আজ গাড়ি একটু জোরেই চালাচ্ছে। রাত একটা, সল্টলেক আনন্দলোক হসপিটাল এর সামনের দিবারাত্র খোলা থাকে যে ওষুধের দোকান টা তাতে ও ওষুধ তা পায়নি। তাই কাকুরগাছি ই এস আই এর সামনে যেতেই হবে। রাতে গাড়ির চাপ কম, যেটুকু তা লরির চাপ। পি এন বি থেকে হাডকো র দিকে ঘুরেই গাড়ির বেগ একটু বাড়ালো অগ্নিশ। আর একটু, এখানে নিশ্চই পাবো, মনে মনে ভাবে ও।
পেতেই হবে, বাড়িতে সুজাতা খুব কষ্ট পাচ্ছে, আয়া আর কতো দেখবে। এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে এসে পড়ে ওষুধের দোকানের সামনে। প্রেস্ক্রিপশন দেখে ওষুধ নিতে পাঁচ মিনিট। গাড়ি ঘুরিয়ে আরো জোরে ফিরতে হচ্ছে তাকে।
ফিরলো অগ্নিশ, গাড়ির চাবিটা কমপ্লেক্স এর গার্ড এর হাতে দিয়ে, পঁয়ষট্টি বছর এর আধখাওয়া দেহটাকে নিয়ে প্রায় দৌড়ে যায় লিফট এর কাছে, ওর ফ্লাট চার তলায়। লিফট টা আজ নামছে না কেন? গ্রীল এর ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করে অগ্নিশ। নেমেছে, এবার খালি ফ্লাট এ গিয়ে ইনজেকশন তা দেওয়ার অপেক্ষা,ব্যাস নিশ্চিন্ত। সুজাতা ঘুমোবে। ফোন বার করে আয়া কে দরজার কাছে দাঁড়াতে বলে ও। সময় নষ্ট করা যাবে না।
ফ্লাট এর দরজার সামনে এসে কলিং বেল টেপার সাথে সাথে দরজা খোলে আয়া, অগ্নিশ এগিয়ে যায় সুজাতার ঘরের দিকে, যন্ত্রনায় কুঁকড়ে গেছে ও। কাতরাচ্ছে। সময় নষ্ট না করে অগ্নিশ ও কে ইনজেকশন টা দিয়ে দেয়। সুজাতা মলিন মুখে হেসে বলে, খুব যন্ত্রনায় ফেলেছি বলো? কি করবে, সব ই কপাল। ওষুধের অসীম ক্ষমতায় এক দু মিনিটের মধ্যে সুজাতা ঘুমিয়ে পড়ে। ব্যাস অগ্নিশ নিশ্চিন্ত, আয়া কে সুজাতার ঘরে শুতে বলে ও চলে যায় দক্ষিণ এর একফালি বারান্দার ইজি চেয়ারে। এলিয়ে পরে অগ্নিশ, ঘুম আসবে না এখন, ভাবতে থাকে নিজের আর সুজাতার কথা।।।।

অগ্নিশ, গ্রামের ছেলে। যদিও পড়াশোনা কলকাতার কলেজ এ। কম বয়সে, চাপা রঙের সুঠাম ছেলেটা আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মেয়েদের মন কেড়েছিল।। কত মেয়ে এবড়োখেবরো হাতের লেখায় প্রেম ও নিবেদন করেছিল তার ঠিক নেই। তার ওপর একটু গম্ভীর গলা, আর বিভিন্ন বন্ধুদের,নেতা হয়ে থাকাটাও একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল হয়তো। পাড়ার লোকের বিপদে দাঁড়িয়েছেও একসময় প্রচুর।

অগ্নিশ এর বাবা পাশের গ্রামের হাই স্কুলের গণিত ও সংস্কৃত শিক্ষক, গম্ভীর, স্থিতধী,দূরদর্শী বলে খ্যাত। ওনার ভুল হয় না, হতেই পারে না, এমন বিশ্বাস গ্রামের লোকেদের। তবে তিনি এই বিশ্বাস ভাঙবার সুযোগ ও দেননি কোনোদিন। নিজের মেরুদন্ড র কব্জি তে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন নিজের ছেলে ও ছাত্রদের।
অগ্নিশ ও কোনো ভাবেই বাবার সম্মান বা নিজের ইমেজ নষ্ট করেনি কখনো। শত অপ্সরার প্রেম নিবেদন ও তাকে টলাতে পারেনি। বাস্তবে অগ্নিশ ও বাবা কে খুব বিশ্বাস করতো। তবে বাবার এক ছাত্রী, সে যেন এই কঠিন মনে একটু ঢেউ তুলেছিলো, তেমন কিছু নয়, গ্রামের পুজোয় মণ্ডপে মাঝে মাঝে আর চোখে তাকাতে গিয়ে পরস্পরের চোখাচোখি হয়েগেছে বহুবার, আর সন্ধিপূজো রাতে পড়লেও অগ্নিশ মণ্ডপে যেতই, সেটা অবশ্য পুজোর টানে নয়, প্রদীপ জ্বালাতে আসা বিশেষ কারো কে দেখার জন্য।

মেয়েটার কথা মা কে একবার বলেছিলো চুপিচুপি, মা বলেছিলেন,পড়া শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়া, এদিকে আমি তোর বাবার কাছে কথাটা পেড়ে রাখি।

অগ্নিশের মন তখন নীল আকাশের স্বাধীন পাখির মতো, হালকা হওয়ায় ডানা মেলে উড়ে চলে, সরকারী চাকরী করে কত আর মাইনে হবে? তাই অগ্নিশ বিদেশি অর্থলগ্নি সংস্থায় চাকরী নিলো। চোখে তখন স্বপ্নের ঘোর, ঘরে না এলেও মনে তার নিত্য উঁকিঝুঁকি। কিন্তু জীবন ঠিক গণিত নয়, যে সর্বদা দুই যোগ দুই চার হবে, কখনো কখনো তিন বা পাঁচ করে দেয় জীবনের খাতা।

অগ্নিশ এর ক্ষেত্রে তিন হলো। বাবা বেঁকে বসলেন, তিনি আগেথেকেই সুজাতা কে পুত্রবধূ বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। অগ্নিশ মা কে বোঝানোর কথা বললো, বাবার সাথে সরাসরি কথাও বললো সাহস করে, কিন্তু বাবা এক কথার মানুষ।।।
তাই এক অঘ্রানের গোধূলীর আলোয় দুটি বিপরীত মেরুর মানুষের জীবন লাল সুতোয় বাঁধা পড়লো।।
অগ্নিশ এই বেঁটে, কালো,গোলগাল মেয়েটা কে নিজের জীবনের অংশ বলে মানতে পারছিলো না, আর সুজাতা ও কলকাতা চড়া, বহু মেয়ের আখাঙ্কিত অগ্নিশ কে ভরসা করতে পারেনি, তখনও।
আজকের দিনে যখন ছেলেরা বিয়ের বিষয়ে বাবা মায়ের বিচারবুদ্ধি কে কেন গুরুত্ব দেয় না, এবং তা না দিলে, নিজের জীবন টা কেমন হতো তাই ভাবতে ভাবতে হাসি পায়,যাক সে কথা
বাবার কথায় বিয়ে হলেও,সুজাতা কে কি ঠিকঠাক স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারলো, এই প্রশ্নটাও মনে উঁকি দিলো। কত অবহেলাই না করেছে সে।
তবুও মদন ও রতির অমোঘ বানে দুজনে ধরাশায়ী হলো দুবছর পরে। ফুটফুটে একটা ছেলে, অগ্নিশ তার নাম রাখলো “দুর্নিবার” বা রুকূসোনা।
ছেলেটাও কি একটু বেশি বাবা কে পেতে পারতো না। ও জন্মানোর পরেই অগ্নিশ জোর করে দূরে বদলি নিয়েছিলো।তাতে জীবনের প্রথম সুপারিশ খাটাতে হয়েছিলো, সেটাও মনে পড়ে যায়। বছরে দু বার বাড়ি আসত তাও পাঁচ সাত দিনের জন্য, তাতেও তো সুজাতা কিছু বলতো না, ও খালি আর একটা সন্তানের স্বপ্ন দেখেছিল, অগ্নিশ নানা কারণ দেখিয়ে সে স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছিলো। তার পরেই সুজাতা কেমন খিটখিটে হয়ে গেল, খুব তাড়াতাড়ি রেগে যেত, যেমন খাঁচার টিয়া পাখি দানা ঝাপটায় আর নিজের ব্যর্থতায় খাঁচার ওপর রাগ দেখায়, তেমন।
এই সময় সুজাতা হটাৎ একটু বেশি রাগী, বদমেজাজি হয়ে উঠেছিলো, আর তার যত রাগ গিয়ে পড়তো ছোট্ট রুকু র ওপর। অগ্নিশের বাবা বিষয়টা লক্ষ্য করলেন, আর সবদিক ভেবে অগ্নিশ কে জীবনের প্রথম চিঠিটিতে সুজাতা আর রুকু কে নিজের কাছে নিয়ে আসার কথা বলেন এবং সেটা যে মানতেই হবে সেটাও জানিয়ে দেন।
বাবার এই কথাটাও অগ্নিশ মেনেছিলো, আর নিজের পরিবার কে নিজের কাছে এনে রেখেছিল। তবে সে খানেও কি অমানবিক ছিল অগ্নিশ, রুকুর ভবিষ্যৎ ভালো করার অছিলায়, নামী বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করেছিলো খালি সুজাতা কে একা করে দেওয়ার জন্য,আর নিজে ভর্তি হলো সদ্য ভারতে আসা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখতে। তখন কলকাতা মেট্রোরেল প্রজেক্ট এর হাত ধরে, কলকাতা কম্পিউটার কে জানতে চাইছে, অগ্নিশ সারাদিন সেই শিখতেই অবসর সময় কাটিয়েছে। যদিও মাঝে মধ্যে সময় পায়নি যে তা নয়, কিন্তু তা যে সুজাতা কে দেওয়ার নয়। এক থাকতে থাকতে,সুজাতার জীবন টাও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল, রাগ করাটাও তার অধিকারের বাইরে চলে গিয়েছিল।
সুজাতা পাড়ার প্রাইমারী স্কুল এ পড়াতে যাওয়ার প্রায় ছয়মাস পর অগ্নিশ তা জানতে পারে, তখন রাগ হয়েছিলো, কিন্তু সেও রাগ দেখায়নি।।
জীবন তিনটে সমান্তরাল সরলরেখার মতো চলছিলো।
আরো বছরপাঁচেক পর অগ্নিশ যখন নিজের তথ্য প্রযুক্তির অফিস খোলে তখন সুজাতা কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করলেও সে অফিসে আসে নি, কেউ তাকে আসতে বলেও নি।।
নিজের ব্যবসা চালু হওয়ার পর অগ্নিশ এর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।।। সরকারি ও বেসরকারি কাজ, অফিস স্টাফ দের কম্পিউটার শিক্ষা এসব থেকে মোটা টাকা ঘরে আসতে থাকে।
রুকু ও মাধ্যমিক পরীক্ষাতে রাজ্যে তৃতীয় হওয়ার সুবাদে নামী রামকৃষ্ণ মিশন এ চান্স পায়। এর পরের পাঁচ বছর, অগ্নিশের বৃহস্পতি তুঙ্গে অবস্থা। ব্যবসা, রুনুর পড়াশোনা সব ভালো হতে থাকে।
বাবার ওপর রাগটা দিন দিন বেড়েছে, শেষে রেগে গিয়ে বাবার মুখাগ্নিও করেনি, মনেহয়েছিল এই লোকটার একটা ভুল এ জীবনটা নষ্ট করেছে। এটাই তার ঠিক শাস্তি।
এই অব্দি ভাবতে ভাবতে, সুজাতা একটু জল চাইলে ভাবনায় ছেদ পরে অগ্নিশের।
উঠে গিয়ে একটু জল খাইয়ে দেয়, সুজাতা বলে যায় ঘুমিয়ে পড়ো, রাত দুটো বাজে মনে হয়।।।।
সুজাতার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অগ্নিশ, ভাবতে থাকে সেই যে দিন রুকু ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিদেশে পাড়ি দিলো, সে দিন কত আনন্দ পেয়েছিল, নিজে কে চরম সফল মনে হচ্ছিল সেই দিন।
তার পর রুকু ও কেমন পাল্টে গেল, আস্তে আস্তে যেন নিজেকে বাবা মায়ের থেকে সরিয়ে নিল।
সেদিন কান্না পেয়েছিল অগ্নিশের। সুজাতা বুঝিয়েছিলো “দেখো, যে ছেলে চিরকাল বাবা মা কে ছেড়ে থেকেছে তার কাছে বাবা মায়ের মূল্য কতটুকু থাকে,তাই দুঃখ কোরোনা, ও যেখানে থাকুক ভালো থাকুক আমরা বাকি জীবনটা ঠিক দুজনে দুজনের খুঁটি হয়ে কাটিয়ে দেবো”।
চমকে উঠেছিলো অগ্নিশ, চিরকাল অবহেলা,অপমান সহ্য করার পরও এ কি বলছে সুজাতা। সত্য তো ও কোনো আবদার না করে, অপমান সহ্য না করলে, আজ ও অগ্নিশ বেসরকারি অফিসের কেরানী ই থাকতো।।
বাবার দূরদর্শিতা কে মেনে নিয়েছিলো সে। সুজাতা নিজেকে প্রমাণ করেছে বহুবার।
অগ্নিশের তখন পঞ্চান্ন, ও সুজাতা কে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে চেষ্টা করেছিল। নিজের অফিস মোটা টাকায় বেচে সুজাতার জন্য জীবনে প্রথমবার কোনো উপহার কিনলো। সল্টলেকে চারতলায় একটা বিশাল ফ্লাট উপহার দিয়েছিল সুজাতা পঞ্চাশ তম জন্মদিন এ।
তারপর প্রায় সাত বছরে ওরা নিজেদের সব চাহিদা, না পাওয়া আনন্দ মিটিয়েছিলো। শুধু আর একটা সন্তান এর চাহিদা ছাড়া।
সেই দিন গুলোতে, সুজাতা কে অবলম্বন করে অগ্নিশ বাঁচতে শিখলো।

হটাৎ সুজাতার কথা মনে পড়ে যায়, কি জানি ঘুমোচ্ছে তো? এখন সুজাতা কে দেখতে গেলে ও সবার আগে দেখে পেটের ওঠানামা। মনে সবসময় ভয় থাকে, হয়তো আর ওঠানামা দেখবে না।

এই ভয়টাকে লাস্ট তিন বছর ধরে লালন করছে অগ্নিশ। টাটা থেকে ফেরত পাঠানোর পর, ছেলেকে ফোনে বিদেশে চিকিৎসার কথা বলেওছিলো, রুকু তার দুর্নিবার মন নিয়ে কোনো সাহায্য করতে পারবে না বলে দিয়েছে। এবার খালি, অপেক্ষা, আর অপেক্ষা।
সুজাতা,এখন স্বান্তনা দেয়, বলে”আরে যতদিন আছি ততদিন তো মরিনি”

সুজাতা কে অগ্নিশ যন্ত্রনা কমানোর জন্য মরফিন দিতে বাধ্য হয়, ডাঃ বলেছেন সেই দিন আসন্ন।

ভোর পৌনে চারটে, অগ্নিশ উঠে পড়ে, সারারাত জেগে থাকলে আবার সারাদিনের লড়াই করা যাবে না। আস্তে আস্তে সুজাতা কে দেখতে যায়, ও ঘুমোচ্ছে।

সকাল পাঁচটা, সকাল থেকেই আকাশটা মুখগুমরে আছে, যদিও এই আকাশ,এই মেঘলা দিন অগ্নিশের খুব ভালো লাগে। কেমন যেন মন উদাস হয়ে যায়, খুব রোমান্টিক লাগে। মনেহয় সুজাতা আর সে ঝুল বারান্দায় পাশাপাশি বসে, চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখবে। সুজাতার শরীর খারাপ হওয়ার পর,একটা পাপ বোধ, একটা জ্বালা অগ্নিশ কে ঘিরে রাখে সবসময়। আয়া র ডাকে ঘোর কাটে অগ্নিশের। আয়া কি যেন বলছে, দিদি সাড়া দিচ্ছে না, কেন?
বাবু, দিদি সারা দিচ্ছে না কেন?
অগ্নিশ ঝাঁঝিয়ে উত্তর দেয়, ও মরফিন এর জন্য হবে, এই তো কিছু আগে দেখে এলাম, অতো চেঁচাস না তো।

বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো, তবু ঘুম চোখে ও উঠে যায়, সুজাতা ঘুমিয়ে আছে, খালি তার পেটের কাছটা আর ওঠানামা করছে না।। অগ্নিশের মন কু গেয়ে ওঠে, নাড়ি দেখার চেষ্টা করে, না নাড়ি ও পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে কি?
টেলিফোনে ডাক্তারকে কল দিয়ে, সাতপাঁচ ভাবতে থাকে অগ্নিশ। কি কি করতে হবে, তার একটা লিস্ট করে মনে মনে। ভাবে এখন শক্ত হওয়ার সময়, এখন একা হওয়ার সময়।
ডাক্তার এসেছে, সব শেষ বলে, আরো কি সব বলছে, অগ্নিশ ধীরে এগিয়ে যায় সুজাতার কাছে, কপালে হাত বুলিয়ে বলে, তুমিও মাফ করলে না? কি হতো আর কটা রাত জাগলে?কি ক্ষতি হতো ওষুধ আনতে একটু দৌড় করালে?যাক তুমি অন্ততঃ জিতবে না,তোমায় আমি জিততে দেব না।

অনেক কাজ বাকি,সুজাতার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী দেহ নিয়ে যাবে,মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, ওদের খবর দিতে হবে। গ্রামের লোকেদের ও খবর দিতে হবে, তাদের আগে রাগ থাকলেও এই কয়েক বছরে সুজাতার চেষ্টায় বরফ কিছুটা গলেছে। আর অন্য কারণে তাদের আসতেও হবে, শিগগিরই।

এখন বিকেল, সুজাতার দেহ নিয়ে গেছে কলেজ, সার্টিফিকেট, ও বিজ্ঞান গবেষণায় এই সাহায্য করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেছে।
গ্রামের লোকেরাও এসে গেছে, তাদের সবথেকে যাকে বেশি বিশ্বাস করা যায় তাকে কাছে ডেকে অগ্নিশ পাশের ঘরে নিয়ে যায়। ছেলেটা কে ও বিশেষ করে আসতে অনুরোধ করেছিলো, কারণ ছেলেটার নাম “রুকু”।
ছেলেটা অবাক হয়ে যায়, বলে “কাকু কি হয়েছে”?
পাশের ঘরে ঢুকে অগ্নিশ ছেলেটার হাতে একটা ডায়রি দিয়ে বলে, বাবা কাল সকালে এটা খুলো, অনুরোধ করি রাতে খুলো না। ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে হা বলে চলে গেল পাশের ঘরে।
এখন এখন অগ্নিশ পুরো একা, এই বাড়ি,গাড়ি সব বিক্রি করে সব টাকা বাবার স্কুল কে দান করেছে, রুকুর কাছে দূর্নিবার এর ঠিকানা দিয়ে গেছে, মেডিক্যাল কলেজ এ নিজের দেহটাও দান করে গেছে, আজ ও পুরো একা,,,,,,

সারা রাত্রি জেগে থাকে অগ্নিশ, আজও ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি পড়ছে, প্রিয় সময়, এখন অনেক ভোর, সময় হয়েছে সেই বহু প্লান করে রাখা সময়।
বহুদিনের লুকিয়ে রাখা বড় ছুরিটা বার করে অগ্নিশ, গলার কাছে নিয়ে আলতো চাপে কাজ শেষ করে সে, রক্তের ধরা ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসে, ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টিতে সে দেখে তাকে নিতে এসেছে সুজাতা, বাবা আর মা। তাদের চোখেমুখে কোনো রাগ কোনো বিরক্তি নেই।
আজ আর অগ্নিশ একা নয়, সেও মিলে যায় পরিবারের সাথে।

হটাৎ রুকুর ডাকে ঘুম ভেঙে যায় অগ্নিশের, তবে কি তার পরিকল্পনা স্বপ্ন হয়ে মনে করিয়ে দিল?না এসব কিছুই করা হলো না, গ্রামের ছেলে রুকু কথা রাখেনি, রাতেই ডাইরী তা পড়ে ফেলেছে,সারারাত সে অগ্নিশের মাথার কাছে বসেছিল, ঘুম ভাঙল বললো “কাকু চলো না ফিরে গ্রামের বাড়িতে” খুব কথা বলে ছেলেটা, বলে চললো গ্রামের মানুষের কথা, সেই বাঁশঝাড়ের কথা,খেলার মাঠ, ধানক্ষেত, পুকুর পাড়ের জোড়া তালগাছের কথা, কত অসুবিধা আছে তবুও কত শান্তি সেখানে, সব্বাই কেমন জড়িয়ে আছে সবার সাথে।
সুজাটাও তো এই কথাই বলতো, গ্রামে ফেরার কথা, সেখানে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে হাজার সন্তান কে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টার কথা।

অগ্নিশ উঠে পড়ে, হ্যাঁ এই পথটাই সুজাতা কে নিজের করে পাওয়ার ঠিক পথ।
বেশ হবে যদি সুজাতার দেখা স্বপ্ন টা সফল করা যায়, জীবন তো কম অভিজ্ঞতা দেয়নি অগ্নিশ কে, তাই নিয়ে লড়াই শুরুই করা যাক।।

ক্যালেন্ডার পাল্টালো কয়েকটা, আজ অগ্নিশ “সুজাতা কম্পিউটার একাডেমী” তে প্রতিদিন খুঁজে পায় কত দুর্নিবার কে। তাদের সুখ, দুঃখ, রাগ,ভালোবাসার অগ্নি কাকু যেন কত আপনার। আর প্রতি মুহূর্তে খুঁজে পায় সুজাতা কে, অনেক বেশি আপন করে।

এখন প্রতি রাতই অগ্নিশের মধুরাত।

।।চিরঞ্জীব চক্রবর্তী।।

 

Writer Chiranjib Chakroborty

লেখক চিরঞ্জীব চক্রবর্তীর কলম থেকে ,একটা ছোট্ট গ্রামের খুব সাধারণ মানের ছেলে।কবিতা বা যা কিছু লেখা শুরু, আর্য‍্যা(স্ত্রী) র কথায়,ওর পড়ার জন্যে। শখ:1. মানুষের সাথে মেশা, 2.বিজ্ঞান কে বিজ্ঞান হিসাবে শেখা, 3.রাতের নিঝুম রাস্তায় একা হেঁটে রাতের মিস্টি কথাশোনা।পেশা: স্কুল এ জীবন বিজ্ঞান শেখা,ও শেখানো।স্বপ্ন: পৃথিবী টা কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর করে রাখা(জেগে দেখা স্বপ্ন)।

 

 

লেখকের আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন 
নতুন-জীবন-স্বাধীনতা-দিবস  স্বাধীন-বুড়োর-মৃত্যুকামনা  ভুল-ভেবেছি রূপকথা-চুপকথা

 

SOURCEChiranjib Chakroborty
Previous articleবন্ধ‍্যা কবিতা
Next articleস্বাধীনতার ভোজ
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here