Health is Wealth” একথা সর্বজন বিদিত।

“All work and no play makes Jack a dull boy.”

“The battle of Waterloo was won in the playing field of Eton.”

” তোমরা সবল হও,গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।”

উপরের তিনটি উক্তির নেপথ‍্যে আছে সুস্থ ও সবল দেহ গঠনের প্রচ্ছন্ন আহ্বান ও ইঙ্গিত।শরীর ও স্বাস্থ্য অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। সবল সুস্থ শরীরই একমাত্র জীবন উপভোগের মাধ‍্যম। শাস্ত্রে সেজন‍্য বলা হয়েছে–“শরীর্ আদ‍্যম্ খলুধর্ম সাধনম্।” শরীরই সুখ-সম্পদের আদি ও অন্তিম আশ্রয়।সে জন‍্যই চাই সুস্থ, সবল ও নীরোগ শরীর।

” Education is the manifestation of perfection already in man” কিন্তু এই ‘perfection’ আনতে হলে প্রয়োজন সুস্থ মন আর সুস্থ মনকে রূপ দেয় সুস্থ দেহ। সুস্থ দেহের জন‍্য প্রতিদিন সময় ধরে নিয়ম করে যোগাভ‍্যাস করা প্রয়োজন।কারণ কথাতেই আছে-“রোগ সারাতে যোগ।”

●’যোগ‘ শব্দের উৎপত্তি  অর্থ:- সংস্কৃত শব্দ ‘ইয়োগা’ থেকে বাংলায় ‘যোগ’ শব্দের উৎপত্তি।’যোগা’ শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত ভাষায় ‘যুজ’ ধাতু থেকে। ‘ইয়োগা’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘ যুবক’ বা ‘যৌবন’।বাংলায় ‘যোগ’ এর অর্থ গ্রন্থিভূক্ত করা বা সমন্বয় সাধন করা।অর্থাৎ মানুষের দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার কৌশল।

যোগা কী:– অনেকের মতে যোগ ব্যায়াম হল এমন এক চর্চা  যার মাধ্যমে দেহের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঠিক চালনা, যোগাযোগ ও সুস্থতা বজায় থাকে।

যোগ ব্যায়াম হল জীবনের সাথে প্রকৃতির যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার একটি মাধ্যম। তাই বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের চালনা দ্বারা প্রকৃতির বাস্তবতাকে শরীরের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়।যোগব্যায়াম সাধারণত তিনটি প্রধান কাঠামোর ওপর নির্মিত যেমন–ব‍্যায়াম,শ্বাস এবং ধ‍্যান।

যোগব্যায়ামের উৎপত্তি:- যোগব্যায়ামের উৎপত্তি এই ”পুণ‍্যতীর্থে” “মহামানবের তীরে”।যোগব্যায়াম আসলে একটি শাস্ত্রীয় কৌশল,যা পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের মুনি ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং দীর্ঘজীবনের জন‍্য বিভিন্ন কলা-কৌশল আবিষ্কার করেন তা যোগব্যায়াম নামে পরিচিত।আজ থেকে প্রায় চারশো বছর আগে পতঞ্জলি সর্বপ্রথম কিছু আসনের কথা বলেন এবং মানুষের মধ‍্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।পরে ধীরে ধীরে এই কলা কৌশল সারা পৃথিবী তে ছড়িয়ে পরে।

প্রকার:-

আসনানি সমস্তানি যাবন্তো জীবজন্তুবঃ।

চতুরশীতি লক্ষাণি শিবেন কথিতং পুরা;

তেষাং বিশিষ্টানি ষোড়শানাং শতং কৃতম।

তেষাং মধ‍্যে মর্ত‍্যলোকে দ্বাত্রিংশদাসনং শুভম।।(খেরণ্ড সংহিতা)

অর্থাৎ দেবাদিদেব মহাদেব চুরাশি লক্ষ আসনের কথা বর্ণনা করেছেন,তারমধ্যে ষোড়শশত শ্রেষ্ঠ,কিন্তু মানুষের শারীরিক তথা মানসিক উন্নতি লাভের ক্ষেত্রে দ্বাত্রিংশত অর্থাৎ বত্রিশ প্রকার আসন বিশেষ ভাবে প্রসিদ্ধ।

আসনের সংখ‍্যা নিয়ে শাস্ত্রকারদের “নানা মুনির নানা মত”প্রচলিত থাকলেও হঠযোগ প্রদীপিকা অনুসারে সকল যোগাসনের মধ‍্যে চারটি আসন প্রধান,যথা (১)পদ্মাসন (২)সিদ্ধাসন (৩) সিংহাসন এবং (ঘ)ভদ্রাসন।এদের মধ‍্যে সিদ্ধাসন কে সর্বশ্রেষ্ঠ আসন বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

গোটা পৃথিবীতে মোট ১৪ রকমের যোগাসন চর্চা করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যোগাসন মোট ১৪ প্রকারের হয়ে থাকে:

. হস্ত যোগাসন– এটি সাধারণত শরীরে স্বস্তি ও মস্তিস্ককে আরাম প্রদান করে থাকে। পিঠ টানটান করে সোজা হয়ে বসে হাত দুটো ওপর দিকে করে জড়ো করে এটি করা হয়ে থাকে।

. আয়েঙ্গার যোগাসন এতে পদ্মাসনকে বোঝানো হয়। মস্তিষ্কে শান্তি ও চাপ কমাতে এটি খুব কার্যকরী।

কুন্ডলিনী যোগাসন  তন্ত্র ও ধ্যানের মাধ্যমে সাধনা করে নিজের অন্তরের কুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগিয়ে তোলার নাম হল কুণ্ডলিনী যোগাসন। এর দ্বারা মনের জোর ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

. অষ্টাঙ্গনা যোগাসন এই   ধরণের যোগাসনে  বেশ শারীরিক পরিচর্যা ও ব্যায়াম হয়ে থাকে। এতে ওজন কমানো ও নানারকমের শক্তি পরিচর্চযা করা যায়।

. বিনায়ক যোগাসন– এটি ভারতবর্ষের একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে করা হয় যা বিশেষ করে বিনায়ক মহাবিদ্যালয় থেকে প্রচারিত।

. বিক্রম যোগাসন এই যোগাসনে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দ্বারা গভীর নিশ্বাস নিয়ে একটি গরম তাপমাত্রার ঘরে অনুশীলন করা হয়।

. হট যোগাসন বিক্রম যোগাসনের মত হট যোগাসনও গরম তাপমাত্রায় করা হয়, কিন্তু তার জন্যে যে কোনো গরম তাপমাত্রার ঘর প্রয়োজন তা নাও হতে পারে।

. কৃপালু যোগাসন এটি অনেকটা হাত যোগাসনের মত। কৃপালু যোগাসনে ভগবানকে স্মরণ করে সাধনা করা হয়।

. জীবমুক্তি যোগাসন ভক্তি, অহিংসা ও ধ্যান বাড়ানোর জন্যে যেই শারীরিক, নৈতিক ও আধ্যাতিক যোগাসন করা হয় তাকে বলা হয় জীবনমুক্তি যোগাসন।

১০. ইন যোগাসন এই যোগাসন একটু ধীর গতিতে অনেক্ষন সময় নিয়ে করা হয়।

১১. রেস্টোরেটিভ যোগাসন নতুন করে নিজের দৈহিক ও মানসিক স্থিতিকে আবিষ্কার করে সেই পথে এগোনোর নাম হল রেস্টোরেটিভ যোগাসন।

১২. মাতৃত্ব পূর্ব যোগাসন এই  ধরণের যোগাসন গর্ভাবস্থার আগে বা গর্ভাবস্থার সময় করা হয় যার ফলে পরবর্তীকালে একটি সুস্থ সবল শিশু জন্মায় ও মায়ের শারীরিক অবস্থা ভাল থাকে।

১৩. অনুসরা যোগাসন– এই যোগাসনের মাধ্যমে আধ্যাতিক চিন্তাভাবনা বাড়িয়ে তোলা হয়।

১৪. অন্যান্য অদ্ভুত প্রকারের যোগাসন এমন অনেক যোগাসন রয়েছে যা অন্যান্য যোগাসনের তুলনায় একটু অদ্ভুত কিন্তু বেশ প্রচলিত। যেমন হাসি বা কান্নার মাধ্যমে যোগাসন, কোনো পশু বা পাখির সাহায্যে যোগাসন, ইত্যাদি।

উপকারিতা:-

কথায় আছে “রোগ সারাতে যোগ”।মতি নন্দীর  ‘কোনি’ উপন‍্যাসের ক্ষিতীশ সিংহের শরীর কে চাকর বানানোর যে উপদেশ আছে তা যোগের মধ্যে দিয়েই সম্ভব।যোগাসনের পরিপূর্ণ প্রয়োগে মানুষের ভিতরের সুপ্ত অসীম শক্তিকে জাগ্রত করা যায়।

যোগাসনকে জীবনের নিয়মিত অংশ করে তুলতে পারলে দেহ-মনের সুস্থতা আসে।মেদবিহীন শক্তিশালী নমনীয় শরীর,উজ্জ্বল ত্বক,সুস্বাস্থ্য ইত‍্যাদি যা আমাদের সকলের চির আকাঙ্ক্ষিত তার মূল চাবিকাঠি আছে যোগাসনের হাতে।নানারকম শারীরিক সমস্যা যেমন-উচ্চ রক্তচাপ,মধুমেহ,করোনারি আর্টারি ব্লক ইত‍্যাদি শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে যোগাভ‍্যাস।

যোগ ব্যায়ামের দ্বারা প্রতিটি ইন্দ্রিয়কে সজাগ করে জগতের সাথে ঘনিষ্টতা আনা সম্ভব হয়। আত্মবিশ্বাস ও সাত্ত্বিকতা খুঁজে পাওয়ার জন্য যোগাসন করা খুবই প্রয়োজনীয়

মানসিক ও শারীরিক চাপ কমিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যোগাসন নানা ভাবে উপকার প্রদান করতে পারে।

অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য উপকারিতা:-

অভ্যন্তরীণ ভাবে স্বাস্থ্যের উপকারিতা প্রদান করতে যোগাসনের ভূমিকা প্রবল। রক্ত সঞ্চালন থেকে শুরু করে শরীরের যেকোনো ব্যথা -যন্ত্রণা দূর করতে যোগ ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। 

রক্ত সঞ্চালন:-

যোগাসনের সাহায্যে শরীরে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সঠিকভাবে প্রবেশ করে। তাই রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে বজায় রাখা যায়। এর ফলে সমস্ত অঙ্গগুলি ঠিক করে কাজ করে ও ত্বকে ঔজ্জ্বল্য আসে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:-

প্রতিদিন নিয়ম করে যোগাসন করলে রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেনের সঠিক চালনা হওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে আসে। এতে শরীর ঠাণ্ডা হয়।

 শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির সমস্যায়:-

হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে  যোগাসন অত‍্যন্ত উপকারী। এতে ফুসফুসের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে সঠিক ছন্দে আসে ও আরাম পাওয়া যায়।এই জাতীয় সমস্যার মোকাবিলায় সিদ্ধাসন খুবই কার্যকরী। মেরুদণ্ড সোজা রেখে পা গুটিয়ে বসে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। এটি দেখতে অনেকটা পদ্মাসনের মতোই। সিদ্ধাসনে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় সেই সঙ্গে ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও বাড়ে।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে:-

প্রতিদিন যোগাসন করলে হজম ক্ষমতা বেড়ে যায় যার ফলে গ্যাসের সমস্যা সহজে সমাধান হয়। এছাড়া পেটের অন্যান্য সমস্যাও নিরাময় হয়।হজমের সমস্যা কমাতে পবনমুক্তাসন বা সুপ্ত বজ্রাসন করা যেতে পারে। পবনমুক্তাসনে চিৎ হয়ে শুয়ে প্রথমে ডান পা ভাঁজ করে পেটের সঙ্গে লাগাতে হবে। বাঁ পা তখন সোজা থাকবে। এর পরে একই ভাবে বাঁ পা ভাজ করে পেটে লাগতে হবে। ডান পা তখন সোজা থাকবে। গ্যাস, অম্বল, হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমিয়ে খিদে বাড়ায়।

 ধৈর্য্য শক্তি বাড়ে:

শরীরের নানারকমের ব্যথা কমানো ছাড়াও, মস্তিস্ক শান্ত করতে সাহায্য করে যোগাসন। এর ফলে ধৈর্য্য ক্ষমতা বাড়ে ও মনের শান্তি বজায় থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:-

যোগাসন অভ্যাসের সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার যোগাযোগ রয়েছে।বর্তমান পরিস্থিতিতে যা অত‍্যন্ত জরুরি। যোগাসনের সাহায্যে শরীরের কোষগুলি নষ্ট হওয়া রোধ করা যায় ও শরীর ধীরে ধীরে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফিরে পায়।

শরীরে শক্তি সতেজতা আসে:-

যোগাসনের মাধ্যমে শরীর নতুন করে শক্তি সঞ্চারিত হয় যার ফলে সতেজতা ফিরে আসে।

পাচনতন্ত্রের বিকাশ:

পাচনতন্ত্র যত সঠিকভাবে কাজ করবে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করাও তত সহজ হবে। যোগাসন করার ফলে পাচনতন্ত্রের বিকাশ ঘটে।

অনিদ্রা দূর :-

যোগাসনের মাধ্যমে মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা হয় যার ফলে মেজাজ শান্ত থাকে। এর ফলে চাপমুক্ত থাকতে পারা যায়। যার কারণে রাতে অনিদ্রার সমস্যা কেটে যায়।

কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:

যোগাসনের ফলে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল থাকে ও রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। এই সব কিছুর কারণে কোলেস্টরল অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ও ভালো কোলেস্টরল উৎপন্ন করা যায়।

শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ:

সোডিয়ামের অভাবে শরীরে নানারকমের সমস্যা দেখা যায় যেমন রক্তচাপ কমে যাওয়া, থাইরয়েড, ইত্যাদি। যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণে থাকে ও নানারকমের শারীরিক সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য:

ট্রাইগ্লিসারাইড শরীরে বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আজকাল ডাক্তাররা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষদের বিশেষ ধরণের যোগাসন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যার ফলে ট্রাইগ্লিসারাইড কমে আসে।

 লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য:

লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ সঠিক থাকা অর্থাৎ হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকা। এর ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যোগাসনের সাহায্যে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় ও লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায়।

নিরাপদ হার্ট:-

যোগাসনের দ্বারা শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ ভালো হয় যার ফলে হার্টবিটের রেট সঠিক থাকে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম থাকে। নানানারকমের রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

এস্থেমা:

যোগাসনের দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে ফলে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির সমস্যা দূর হলে ফুসফুস সহজে কাজ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে এস্থেমা বা ব্রঙ্কাইটিসের মত নানা সমস্যা সেরে যায়।

 আর্থারাইটিস বা বাতের ্যথা থেকে মুক্তি:

যোগাসন নানা ভঙ্গি ও দৈহিক কেরামতির দ্বারা করা হয় যার ফলে হাড়ের অনেক সমস্যা কমে যায় ও হার শক্ত হয়। এর ফলে আর্থ্রাইটিসে ভোগা মানুষদের জন্যে এটি খুব উপকারী।

ক্যান্সার নিরাময়:

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে যোগাসন নিয়মিত করলে শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস হয় ও উন্নতমানের কোষ গঠিত হয়। এতে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেকটা কমে যায়।

 মাইগ্রেনের যন্ত্রণা মুক্তিতে:

মাইগ্রেন বা সাইনাসের মত নানারকমের নার্ভের সমস্যার কারণ হল অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ক্লান্তি ও চিন্তা। প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম করলে স্নায়ু শান্ত হয় ও মাইগ্রেনের ব্যথা নিরাময় হয়।

ব্রঙ্কাইটিস দূর করতে :

ঠাণ্ডা লেগে শ্বাসকষ্ট, বুকে কফ জমে গেলে বা ব্রঙ্কাইটিস হলে  যোগাসন করলে খুব শীঘ্র ফলাফল পাওয়া যায়। এমনকি, রোজ যোগাসনের অভ্যেস করলে যাদের ব্রঙ্কাইটিসের ধাঁচ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এর প্রবণতা অনেকটা কমে আসে।

কোষ্টকাঠিন্য দূর করা:-

নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলে শরীরের নিচের অংশে দারুন চাপ পরে ও পাচনতন্ত্র সঠিক হয়। এর ফলে কোষ্টকাঠিন্য রোধ করা যায়।

বন্ধ্যাত্ব বা রজোবন্ধ:

বন্ধ্যাত্বের কারণে যারা সন্তান জন্ম দিতে পারেনা, তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় যোগাসন খুব ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে থাকে। এমন অনেক যোগাসন আছে যা নিয়মিত করার ফলে বন্ধ্যাত্বের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া মহিলাদের রজোবন্ধ হওয়ার ফলে যেসব শারীরিক বা মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলিও অনায়াসে সেরে যায়।

 সাইনাস বা অন্যান্য এলার্জি:

বায়ু দূষণ বা অন্যান্য যে কোনো কারণে আজকাল প্রায় সকলেরই সাইনাস বা এলার্জির সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে প্রাণায়াম বা যোগাসন গুরুত্ব সহকারে করলে অনেকটা আরাম ও মুক্তি পাওয়া যায়।

 পিঠে ব্যথা কমায়:

পিঠে ব্যথা কমাতে দারুণ উপকারিত প্রদান করে যোগাসন। প্রতিদিন ৩০ মিনিট পিঠ সোজা করে পদ্মাসন করলে খুব শীঘ্রই পিঠের ব্যথার উপশম হয়।

◆ ঘাড়ের যন্ত্রণা কমাতে:– ঘাড়ের যন্ত্রণার জন্য আইসোমেট্রিক প্রেসার অভ্যাস করলে ফল মিলবে। দু’হাত মাথার পিছনে নিয়ে মাথাকে হাত দিয়ে ঘাড় সোজা করে চাপ দিতে হবে। এ ভাবে মাথাকে চার দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চাপ দিতে হবে। চিৎ হয়ে শুয়ে (ভুজঙ্গাসন) থেকে চিবুকে হাত দিয়ে চাপ দিলেও ঘাড়ের উপর চাপ পড়ে।

পেট  নিতম্বের চর্বি কমাতে: পেট ও নিতম্বের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে অর্ধকূর্মাসন খুবই কার্যকরী। মাটিতে বজ্রাসনে বসুন। এইবার হাত দুটি সোজা করে মাথার ওপরে তুলে নমস্কারের ভঙ্গিতে জড়ো করুন। পেট ও বুক যেন ঊরুর সঙ্গে লেগে থাকে। এই অবস্থায় মনেমনে কুড়ি পর্যন্ত গুনতে হবে।  পরে ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসে শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।

যোগাসনের বাহ্যিক স্বাস্থ্য উপকারিতা: –

অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যের জন্যে যোগাসনের উপকারিতার পাশাপাশি তবে যোগাসন বাহ্যিকভাবেও শরীরে নানারকমভাবে উপকার প্রদান করে ।

দ্রুত বুড়ো হওয়া আটকায় :

বয়স বাড়লেই যে শরীরে বার্ধক্যর ছাপ আসতে হবে তা নয়। যোগাসনের মাধ্যমে শরীরে ডিটক্সিফিকেশন করা যায় যার ফলে বার্ধক্য শরীরে ছাপ ফেলে না। যোগাসনের ফলে মানসিক চাপও কম হয় যা মনকেও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

শক্তি প্রদান করে:

যোগাসন করলে শরীরের সবকটি অংশে সঠিকভাবে অক্সিজেন পৌঁছায়, ফলে শরীরে শক্তি থাকে ও কর্মক্ষমতা বজায় থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে:

যোগাসনের ফলে পাচনতন্ত্র ভালো হয় ফলে ওজন কমে।

 শরীরের যাবতীয় কার্যকারিতা:

যোগাসনের অর্থ হল শরীরের সমস্ত অংশকে প্রকৃতির সাথে আত্মস্থ করা। এর ফলে শরীরের চালনা ও উৎফুল্লতা বজায় থাকে।

শরীরকে ভেতর থেকে মজবুত রাখে:-

শরীর ভেতর থেকে শক্ত থাকলে সবসময় সুস্থ থাকা যায়। এর ফলে শরীর নিজের ওজন ধরে রাখতে পারে এবং কোনোরকম ব্যাথা বা জ্বালা হলে নিজে থেকে সারিয়ে তুলতে পারে।

 মাংসপেশী টানটান করে:

প্রতিদিন যোগাসন করার ফলে শরীরের মাংসপেশি শক্ত পোক্ত হয় ও সুন্দরভাবে টানটান হয়ে যায় যা শারীরিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে।

 দেহের সহনশীলতা বাড়ায়:

শরীর ভেতর থেকে শক্তপোক্ত থাকলে শরীরের সহনশীলতা বাড়ে। এটি বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্যে খুব প্রয়োজনীয়। যোগাসন শরীরের সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

যোগাসনের মানসিক স্বাস্থ্য উপকারিতা

শরীর ও মনের মধ্যে একটি অসাধারণ যোগসূত্র তৈরী করে যোগাসন।  মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও যোগাসনের উপকারিতা অতুলনীয়।

ফুরফুরে মেজাজ:-

যোগাসন করলে শরীর ও মনে একটা আলাদা সতেজতা ও ঔজ্বল্ল্য ফুটে ওঠে যা খুব সহজেই মেজাজ ফুরফুরে করে রাখে।

মানসিক চাপ কমায়:-

নিয়মিত যোগাসন করার ফলে মানসিক চাপ ও ক্লান্তিভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে মানসিক চাপ কম হয়।

 উত্তেজনা কমায়:-

নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সঠিক নিয়ন্ত্রণের ফলে উত্তেজনা ও দুঃশ্চিন্তা কমে আসে ও মন ভালো থাকে।

 বিষন্নতা কমায়:

মনের কষ্ট বা বিষন্নতা দূর করার অসাধারণ উপায় হল যোগাসন। বিষন্নতা বোধ করলে চোখ বন্ধ করে যোগাসন অভ্যাস করলে বিষন্নতা বোধ কমে।

 আত্মসংযমবোধ বাড়ায়:-

জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আত্মসংযমবোধ থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। যোগাসনের মাধ্যমে মনের জোর বাড়ে ও তার সাথে আত্মসংযম বোধ বাড়ে।

মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক:-

যোগাসন চর্চা বা অনুশীলন করলেই মনোযোগিতা বাড়ে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য খুব উপযোগী।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির সহায়ক:

যোগাসন করে শরীরে ক্লান্তিভাব কমে, মনসংযোগ বাড়ে ফলে স্মৃতিশক্তি বা মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিখুঁতভাবে কাজ করার ক্ষমতা:- কঠোর নিয়মানুবর্তিতা যোগাসনের অঙ্গ।এর কারণে চরিত্রেও নিয়মানুবর্তিতা ও নিখুঁত কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে।

 জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী:

প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করার ফলে স্নায়ুগুলি সজাগ হয় ও শক্তিপ্রদানকারী হরমোন উৎপন্ন হয়। এর  ফলে নেতিবাচক মনোভাব, বিষণ্নতা দূর হয়ে জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিশক্তি তৈরি হয় কাজের উদ্যম বাড়ে।

যোগাসনের নিয়ম :-

যোগাসন করার কিছু বিশেষ নিয়ম আছে।সেগুলি হল–

সঠিক পোষাক:-

ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোষাক পরে যোগাসন করতে হয়। তার সাথে অবশ্যই দরকার একটি যোগাসন করার ম্যাট যার ওপরে বসে অনুশীলন করতে হবে। যোগাসন সবসময় খালি পায়ে করা উচিত।

খাওয়ার নিয়ম:-

খেয়াল রাখতে হবে যেন যোগাসন করার আগে পেট খালি থাকে। অর্থাৎ যোগাসন করার অন্তত ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া যায় এবং হয়ে যাওয়া ২ ঘণ্টা পর খাওয়া যায়। না’হলে শরীরে অস্বস্তি হতে পারে।

নিঃশ্বাস প্রশ্বাস:-

যোগাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শেখার বিষয় হল নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখা তাতে ফল পাওয়া যায়।

জোর না করা :-

জোর করে না করে ধীরে ধীরে করা উচিৎ নাহলে শরীরে ব্যথা আরো বেড়ে যাবে।

অনেকের ধারণা, যোগাসন করতে গেলে খুব সাবলীল ও রোগ শরীর প্রয়োজন হয়। কিন্তু একথা একেবারে ভুল। আপনার ওজন যাই হোক না কেন, আপনি তা নিয়েই নিজের সুবিধা মত যোগাসন করতে পারেন।

অন্যান্য ্যায়ামের সাথে পার্থক্য:-ব‍্যায়ামের উদ্দেশ্য যদি মাংসপেশির স্থূলত্ব ও অমিত ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় ,তাহলে তা যোগা-ব‍্যায়ামের দ্বারা সম্ভব নয়।আর ব‍্যায়ামের উদ্দেশ্য যদি শরীরকে সুস্থ,সবল ও কর্মক্ষম রাখা,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা হয় তাহলে যোগ-ব‍্যায়ামের বিকল্প নেই।লোহা বা ওই জাতীয় সামগ্রী নিয়ে ব‍্যায়াম করলে মাসল ম‍্যান হওয়া যায় কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না।আর জিম ছেড়ে দিলে কিছু দিনের মধ‍্যে শরীরে স্থৃলত্ব আসে কিন্তু কয়েকদিন যোগাসন বন্ধ রাখলে সেরকম কিছু হয় না।

ওষুধ খেলেই যেমন রোগ নিরাময় হয় না,সঙ্গে কিছু নিয়ম পালন করতে হয় তেমনি শুধু যোগাভ‍্যাসে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় না,কিছু নিয়ম বিধি নিষেধ পালন করতে হয়।নিয়মিত যোগাভ‍্যাসের পাশাপশি পুষ্টিযুক্ত খাবার,বিশ্রাম,সংযম,নিয়মানুবর্তিতা,আত্মবিশ্বাস মনোবল ও একাগ্রতা থাকা প্রয়োজন।বর্তমান করোনা পরিস্থিতে সমগ্র বিশ্ব যখন বিধ্বস্ত তখন তা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে যোগাভ‍্যাস।কারণ যোগাভ‍্যাসের মাধ‍্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়,ফুসফুস শক্তিশালী হয়।তাই আবালবৃদ্ধবনিতা প্রত‍্যেকের নিয়মিত সঠিক পদ্ধতির যোগাসন অভ‍্যাস করা অত‍্যন্ত জরুরী।

কলমে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here