মন নিয়ে

0
684

রাহি মজুমদারপেশেন্ট নাম্বার এইটআট নম্বররাহি মজুমদারমুখ নীচু করে একমনে  হাতের  আঙ্গুলগুলো নিয়ে খেলছিল রাহি বছর সাতাশের কাছাকাছি  বয়েস ।উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের   রং মুখশ্রী যেন   তুলি দিয়ে  আঁকা ।কিন্তু অসুখের  জন্য  এক বিষণ্ণ বিকেলের  ম্লান  ছায়া  পড়েছে  সারা মুখ জুড়ে শরীরও শীর্ণকায় ।মিঃ সুশোভন মজুমদারের  চেহারায় অভিজাত বনেদীয়ানার ছাপ স্পষ্ট রাহি তার   একমাত্র  মেয়ে মা   মরা মেয়েটি তার  বড়  আদরের।

কিন্তু তার   আদরের  ধন রাহি   একদম ভালো নেই  ইদানীং কি এক অজানা  অসুখে  মুখের  হাসি মিলিয়ে  গেছে ,চোখের  কোণে কালি , কিচ্ছু খেতে চাইছে  না বেশ কয়েক মাস  ধরে , ঠিকমতো ঘুমোচ্ছেও না , সারাদিন  কি যেন  ভাবে  আর হাতের আঙ্গুলগুলো নিয়ে খেলা করে   তাই কাছের বন্ধুদের পরামর্শে  শেষ পর্যন্ত ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলির কাছে ছুটে  এসেছেন সুশোভন  মজুমদার

দরজা  ঠেলে  ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলির  ঘরে  ঢুকলেন  সুশোভন বাবু সঙ্গে রাহি , ডঃ গাঙ্গুলির  কাছে  রাহিকে   নিয়ে এই  তার  দ্বিতীয় বার  আসা। ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলির এই ঘরটায়  কেমন যেন  একটা সম্মোহন  আছে , পা আটকে  যায়  স্থাণুবৎ ।লম্বা  এল শেপের  ঘরটার  দুপাশের  দেওয়ালের  রং  টকটকে লাল আর  ঘরটা  যেখানে  শেষ  হয়েছে সেখানে  দেওয়াল  জোড়া একটা পেন্টিং অ্যাবস্ট্রাক্ট  আর্ট চট করে  কিছু বোঝাও যায়  না  কিন্তু  একবার  দেখলে চোখ ফেরানোও যায় না

            

ডঃ গাঙ্গুলির  বয়স  একদম বেশি নয় এই চল্লিশের ঘরে ; সুপুরুষ সৌম্যদর্শন  মানুষটি ভীষণ   হাসিখুশি ; প্রাণখোলা  স্বভাবের ঘরে ঢুকতেই  ডঃ গাঙ্গুলি  বললেন , “আসুন মিঃ মজুমদার , কেমন আছে  মেয়ে ?”

ভালো  নয় ডাক্তার , একবার ওকেই জিজ্ঞাসা  করুন   না ! সব সময় কেমন  উদাস  হয়ে  থাকে , খেতে চায় না কিচ্ছু , কথাবার্তাও বিশেষ বলে না , সারাদিন  চুপ করে  থাকে  আর হতের  আঙ্গুল  নিয়ে  নাড়াচাড়া  করে

এবারে   ডঃ গাঙ্গুলি  ফিরলেন   রাহির   দিকেনরম করে ডাকলেন , “রাহি !” এতক্ষণ  মুখ নীচু করে বসেছিল  রাহি ,  ডাক্তার  গাঙ্গুলির ডাকে মুখ   তুলল

কেমন আছ ? ” প্রশ্ন করলেন  ডঃ গাঙ্গুলি

সম্মতিসূচক  ঘাড় নাড়ল রাহি

বাবা  যে বলছেন, কিচ্ছু খাচ্ছ না ? ঘুম হচ্ছে  তো ?” 

আমার  ক্ষিদে  পায় না একগুঁয়ে  জেদি উত্তর  রাহির

তাহলে   তুমি  ইচ্ছে  করে খাচ্ছ না , তাই তো ?”

আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না …”

এবার ডঃ গাঙ্গুলি মিঃ মজুমদারের দিকে   তাকালেন আমি একটু পেশেন্টের সঙ্গে আলাদাভাবে   কথা  বলতে   চাই আপনি একটু বাইরে গিয়ে   বসবেন ?”

ওহ  সিওর !”

মিঃ মজুমদার  বাইরে চলে যেতেই রাহিকে  জিজ্ঞেস  করেন ডঃ গাঙ্গুলি ,” তাহলে তুমি ভালো  হতে  চাও না , রাহি ?”

আমার তো কিছু হয় নি, তাহলে  ভালো হওয়ার প্রশ্ন আসছে  কোথা থেকে ?” রাহির  কথার মধ্যে  যে জোর   যে আত্মবিশ্বাস   ছিল , তাতে  চমকিত হন  ডঃ গাঙ্গুলি

তাহলে  এই যে  দিনের পর দিন  তুমি খেতে পারছ নাঘুম   হচ্ছে না  এটা কি তাহলে ? অসুখ নয় ?”

আমি প্রেমে পড়েছি ডাক্তার …” অভিজিৎ গাঙ্গুলির চোখের দিকে সরাসরি তাকায় রাহি

বাহ ! তো সেই ভাগ্যবানটি  কে ? যার জন্য রাধার   কি  হইল অন্তরে ব্যথা ?”

সে হল আপনি ডাক্তারআপনি …”

প্রথমটায় হকচকিয়ে  গেলেও মূহুর্তের  মধ্যে  অট্টহাসিতে   ফেটে পড়েন , ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলিকলকাতার একজন  উদয়ীমান তরুণ সাইকিয়াট্রিস্ট তিনি , রোগীদের  বিভিন্ন রকম  অভিব্যক্তির অভিজ্ঞতাও তার কম  নয় ! কিন্তু এত সরাসরি  অ্যাপ্রোচ  ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলিও কখনও পাননিডাক্তার লক্ষ্য করলেন তার প্রতিক্রিয়ায় রোগিনীর মুখ শুকিয়ে পাংশুবর্ণ হয়ে গেছে

নিজের সহজাত সপ্রতিভতায় পরিস্থিতি সামাল দিয়ে শান্ত আর গম্ভীর স্বরে ডাক্তার  গাঙ্গুলি বললেন ,”বেশকিন্তু রাহি প্রেম তো ভালো জিনিস ; স্বাস্থ্যকর ; প্রেমে  পড়ে তুমি এরকম  না খেয়ে দেয়ে  অসুস্থতাকে  ডেকে আনছ কেন ?”

কারণ আমার প্রেম যে একতরফা ডাক্তার  , আমি তো কোনোদিন  আপনাকে পাব   না …” ডুকরে ওঠে রাহি !

আচ্ছা ডাক্তার  আপনি  কি  বিশ্বাস করেন   মন  আছে ? মনের শক্তি গতিবেগ  আলোর চেয়েও বেশী ?”

না রাহি , মন বলে কিছু নেই ! আমাদের ডাক্তারি শাস্ত্র বলে  মানুষের আছে শরীর  এবং মস্তিষ্ক বা ব্রেন আমাদের   যা কিছু অনুভূতি সূক্ষ বা স্থুল    সবই হরমোনের খেলা , যার উৎপত্তিস্থল  হল মস্তিষ্ক  বা ব্রেন মানুষের প্রতিটি প্রতিক্রিয়া  অনুভূতিই একান্ত ভাবে  মস্তিষ্ক নির্ভর। সুতরাং তোমার তথাকথিত প্রেম রসায়ন  একান্ত ভাবেই কয়েকটি হরমোন  সেরাটোনিন ডোপামাইন  প্রভৃতির  ক্ষরণের ওপর নির্ভরশীল ।কিন্তু রাহি আজ তো আর  সময় নেই , এই নিয়ে  আমরা পরের দিন আলোচনা করব না হয় !

পরের পেশেন্ট বসে আছে যে !তুমি কথা দাও ততদিন তুমি ঠিকঠাক খাওয়া ঘুম সব  করবে

আবার কবে আমাদের দেখা  হবে ডাক্তার ?আপনি কি জানেন  না আপনাকে দেখতেই আমি এখানে ছুটে আসি ?”

রাহির  কথায় থমকে  যান ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলির মতো ডাকসাইটে সাইকিয়াট্রিস্টও , চিলতে  হাসি খেলে  যায় ঠোঁটে ,বুকের  মধ্যে ওঠাপড়া  করে ভালোলাগার  গোপন স্রোত

শিগগিরিই আমাদের  দেখা  হবে   রাহি ; খুব শিগগিরিই …”

পরের পেশেন্টের জন্য বেল দেন ডঃ গাঙ্গুলি ..

দুই

তখন রাত প্রায়  তিনটে অত রাতেও ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলির স্টাডিতে  আলো জ্বলছে সাইকিয়াট্রির একটা মোটা বইয়ের  ওপর  ঝুঁকে  পড়ে পাতার পর পাতা  পড়ে যাচ্ছেন  ডঃ গাঙ্গুলি, কিন্তু কিছুতেই রাহির কেসটার কোনো যুতসই ব্যাখ্যা  খুঁজে পাচ্ছেন না একের পর এক

সিগারেট ধরাচ্ছেন  ডঃ গাঙ্গুলি আর অ্যাশট্রেতে  জমা  হচ্ছে  সিগারেটের  ছাইরাহির কেসটা গত দুমাসে  বেশ খারাপের দিকেই টার্ণ নিয়েছেখাওয়া দাওয়া  ছেড়ে দিয়ে  সে এখন প্রায় শয্যাশায়ীঅ্যাকিউট ডিপ্রেশানের পেশেন্টকোনো কথাও বলছে  নাবাধ্য  হয়ে  সুশোভনবাবু ডঃ গাঙ্গুলির  পরামর্শেই রাহিকে কৈখালির কাছে   এক নার্সিংহোমে  ভর্তি করিয়েছেন  গত সপ্তাহেডঃ গাঙ্গুলিও নিয়মিত ভিজিট   করছেন দুবেলাকিন্তু হলে কি হবে পেশেন্টের রেসপন্স  খুবই কম ; এখনও ওষুধ খাওয়ানোন যাচ্ছে না , ইঞ্জেকশান দিতে হচ্ছে খাবারও সেভাবে খেতে পারছে না ; কোনো কথা বলছে না , কেমন যেন গুম হয়ে  রয়েছেরাহির কেসটা স্টাডি

করে  ডঃ গাঙ্গুলি দেখেছেন, রাহি বেশ কয়েক বছর  ধরেই একটা স্বপ্নের ইউটোপিয়ান  জগতে  বাস  করে ; কোনো পুরুষের  শারীরিক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হলে  সে খুব দ্রুত তার প্রেমে  পড়ে যায়আর শুধু প্রেম নয় তাকে নিয়ে সে রীতিমত অবসেসড  হয়ে যায়এভাবেই সে একাধিক সম্পর্কে  জড়িয়েছে জীবনেবলা বাহুল্য  এই সবগুলি সম্পর্কই ছিল  একতরফাঅনেকে আবার  রাহির দুর্বলতার সুযোগ নিতেও ছাড়ে নি আসলে মন প্রেম শরীর  সব কিছুই রাহির মস্তিষ্কে  কেমন জট  পাকিয়ে   গেছে  না হলে ডঃ গাঙ্গুলিকে ওরকম দুম করে  সে প্রপোজ করে   বসে ? কতদিনেরই বা পরিচয় তার ডঃ গাঙ্গুলির  সঙ্গে ?

              একটা ক্ষীণ আলোর সূত্র অবশ্য পেয়েছেন  ডঃ গাঙ্গুলি; রাহির খুব কাছের কেউ যার  সম্বন্ধে  সে অবসেসড যদি তার কাউন্সেলিং  করতে পারেআর  একটা হতে  পারে মিউজিক থেরাপিছোটোবেলা  থেকেই গান, বিশেষতঃ  রবীন্দ্র নাথের গান রাহির  বড়ই প্রিয়সে নিজেও একসময় বেশ ভালোই গাইতসেই গানের টীচারই সম্ভবতঃ তার  প্রথম ক্রাশএমনটাই তো বলেছিলেন  সুশোভন মজুমদারডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে চিকিৎসার স্বার্থেশেষ চেষ্টা একবার তাহলে করেই দেখবেন ডঃ গাঙ্গুলি ?

তিন

স্নান সেরে  ওয়ার্ডরোব থেকে শাড়ি বার  করছিল  আর   গুনগুন করে   রবীন্দ্র সংগীতের  কলি ভাঁজছিল   রাহি , ” তোমায় নতুন করে পাব  বলে   হারাই ক্ষণে  ক্ষণ / মোর ভালোবাসার   ধনতুমি আমার  নও আড়ালের / তুমি আমার চিরকালেরবেছে বেছে কালো ঢাকাইটা বের  করল  রাহিকালো শাড়িতে তাকে  মানায়  বেশঅভিজিৎ মুখে না   বললেও তার চোখের  দিকে তাকালেই সে বুঝতে পারেএকটু পরেই ড্রাইভার  গাড়িটা নিয়ে এসে দাঁড়াবে  রাহিদের  দরজায়মুখে প্রসাধনের  শেষ  প্রলেপটুকু দ্রুত  বুলিয়ে নেয় রাহি , ঠোঁটের লিপস্টিক  আরেকটুখানি  গাঢ় করেতরতর  করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে  সেড্রইং রুমে  বসেছিলেন মিঃ মজুমদার বাবার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে সে

বলে , ” আসি ? ” রাহির  মাথায় হাত রাখেন  মিঃ মজুমদার মনে মনে  বলেন , ” দীর্ঘজীবী হও  মাসুস্থ হয়ে ওঠ তাড়াতাড়িবলেন , “সাবধানে  যেও, তাড়াতাড়ি ফিরো।আলতো ঘাড় নেড়ে  গাড়িতে  ওঠে  রাহি ড্রাইভারকে   নির্দেশ দেয়  চলো

                           ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলির  বাড়িতে  রাহির  মিউজিক  থেরাপির ক্লাস  শুরু হওয়ার  কথা  ঠিক সন্ধ্যে  সাতটা  থেকে সাড়ে  ছটার  মধ্যেই পৌঁছে  যায় রাহি বেল  বাজাতেই একজন  বয়স্ক  লোক ভেতর  থেকে  দরজা  খুলে  দিল রাহিকে  নিয়ে  গেল গান ঘরে , মেঝেতে মোটা কার্পেট  পাতা ঘরে  হালকা  নীল আলো জ্বলছে , ঘরের  কোণা থেকে ভেসে  আসছে  ধূপের  মন  কেমন করা   সুবাস ঘরে ঢুকেই রাহির  চোখ  স্থির  হয়ে  যায় বুক শেলফের  ওপর বসানো বিশাল  বুদ্ধ  মূর্তির  দিকে কালো পাথরের  বিশাল  মূর্তির দিক থেকে  চোখ ফেরাতে পারে না রাহি চুম্বকের  মতো আকর্ষণ করতে   থাকে   তাকে ডঃ গাঙ্গুলি শুধু গানের  সমঝদারই নন , নিজেও অসাধারণ সেতার  বাজান ; কত ধরণের  যন্ত্র যে আছে  তার  এই গান ঘরে বাইরের  লোক  তার পেশাদারি  পরিচয়টাকেই চেনে  তার  অন্তরের  শৌখিন শিল্পী  মানুষটাকে  আর  কয়জন চেনে  ?ইদানীং ডঃ গাঙ্গুলির  গবেষনার  বিষয়  হল মানুষের  মনের  ওপর  মিউজিক থেরাপির  প্রভাব তার বেশ কয়েকজন  পেশেন্টের  ওপর  তিনি  নিজে  হাতে কলমে এই পরীক্ষা

চালাচ্ছেন রাহি মজুমদার  তাদের   একজন রাহির  কেসটার জটিলতা  প্রথম  থেকেই তার কাছে  ভীষণ  চ্যালেঞ্জিং  লেগেছিল তার দৃঢ়  বিশ্বাস  রাহির  কেসটায় তিনি সফল  হলে  চিকিৎসা  বিজ্ঞানের  ক্ষেত্রে  এক নতুন দিগন্ত  খুলে  যাবে আর তাছাড়া  তিনি  তো মিঃ  মজুমদারকে  কথা   দিয়েছেন

                           গান ঘরের  সোফায় কতক্ষণ  বসেছিল  রাহি, তার নিজেরও মনে  নেইকখন যে   সাদা  পাজামা  পাঞ্জাবি পড়ে  ডঃ গাঙ্গুলি সেতার  তুলে  নিয়েছেন  কোলে  তাও সে বলতে পারবে  নাশুধু যখন সেতারের তারে  একের পর এক  রবীন্দ্র সংগীত  ঝংকৃত  হতে  থাকে  তখন  সে কেবলি সুরের   সমুদ্রে  ডুবে  যেতে   থাকে ;  তার   চিন্তাগুলি একের  পর  এক স্তর  অতিক্রম  করে  সুর  সমুদ্রের গভীরে আরো গভীরে  ডুব   দেয়

 চার

সেদিন  রাত্রে   একটা  অদ্ভুত  স্বপ্ন  দেখে   রাহি এক বিশালাকায়  পদ্মফুলের  ওপর  সে  বসে   আছে ; হাতে  বীনার   মতো  একটা যন্ত্র সে একাত্ম  হয়ে  যন্ত্রটা বাজাচ্ছে।  সুরের মুড়কিগুলো তার চারপাশে  সৃষ্টি করেছে  আলোর  বৃত্ত আর তার পায়ের   কাছে  বসে   আছে   সাদা পাঞ্জাবী  পরা  একজন সৌম্য   দর্শন পুরুষ

পাঁচ

রবীন্দ্রসদনের  বিশাল  প্রেক্ষাগৃহ আজ শিল্পী  রাহি   মজুমদারকে  রবীন্দ্রসংগীতের  জগতে  তার   সারাজীবনের  অনন্য  অবদানের   জন্য  লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে পুরস্কৃত  করবে বাংলা  সংগীত  একাডেমী সঙ্গে  দর্শকদের  উপরি পাওনা  রাহি মজুমদারের একক সংগীত সন্ধ্যা। আজ রাহি পরেছেন  হালকা  ঘিয়ে   রঙের একটা তসর   সিল্ক খোঁপা আলগা  করে  বাঁধা খোঁপায়   জড়ানো বেলের মালা কপালের  পাশে  কিছু ছুল   সাদা   হয়ে  এসেছে মঞ্চে  ওঠার   আগে  দর্শকাসনের  একেবারে   সামনে বসা   একজন  সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পরা  বৃদ্ধকে  পা ছুঁয়ে  প্রণাম করলেন  রাহি বৃদ্ধ  বয়েসের  ভারে  একেবারেই  অর্থব চোখেও ভালো দেখেন   না।  রাহি পা ছুঁয়ে  প্রণাম করতেই মাথায় হাত  দিয়ে  অস্ফুট স্বরে  বিড় বিড়   করে  আর্শীবাদ  করলেন। এরপর  দৃপ্ত পায়ে  মঞ্চে উঠে  এলেন   রাহি। রবীন্দ্র নাথের  প্রতিকৃতিতে  মাল্যদান করে  বলতে  শুরু  করলেন  তার  কথাতার জীবন পরিক্রমার কথাবলতে

বলতে   আবেগে  গলা   বুজে  আসছিল তার … ” আজ  যার  কথা  না বললে আমার  সংগীত  জীবনের  পরিক্রমার  কথা   অসম্পূর্ণ থেকে  যাবে  তিনি হলেন  ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলিআজ তাকে আমরা দর্শকাসনে পেয়েছি ; কিন্তু আজ তিনি খুবই অসুস্থ ; অসুস্থ মানসিক ভাবে , বার্ধক্য জনিত  কারণেকিন্তু স্যর না থাকলে  বোধহয়  আমার  সাধনা  সম্পূর্ণ হত  না , আমার  গুরু মেন্টর ভালোবাসা   সবই তিনিপ্রেক্ষাগৃহে বোধহয়  পিন পড়লেও শব্দ  পাওয়া যাবেরাহি  ততক্ষণে গান শুরু করেছেন … “তোমায় নতুন  করে পাব বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ ? মোর ভালোবাসার  ধন …? তুমি আমার  নও  আড়ালের তুমি আমার চিরকালেরচোখ বোজা , যেন  ধ্যানমগ্ন হয়ে আছেনদর্শকাসনে  ডঃ অভিজিৎ গাঙ্গুলির দু চোখ বেয়ে তখন জলের ধারা

 

সুকন্যা সাহা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here