মীরার দুপুর উপন্যাসের প্রেক্ষাপট বাস্তবধর্মী। মীরার স্বামী হীরেন অসুস্থ। প্রায় অথর্ব হয়ে বাড়িতেই বসে আছে। কিন্তু সংসারও তো চালাতে হবে। তাই মীরা তার পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করতে থাকে। তাদের কাছ থেকে টাকা ধার করে কোনও রকমে চালাতে থাকে থমকানো সংসার। শেষে, মীরার অন্য পুরুষ-এর সংসর্গ সহ্য করতে না পেরে হীরেন গলায় ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করে। উপন্যাস এখানে শেষ হতেই পারত! কিন্তু না, এর পর পাঠক দেখে, মীরা বিন্দুমাত্র হা-হুতাশ করে না। ঠান্ডা মাথায় সে হীরেনের ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনগুলো খোঁজে। যাতে পুলিশের কাছে প্রমাণ দেওয়া যায়— রোগযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই হীরেন আত্মহত্যা করেছে। মীরাই সম্ভবত বাংলা উপন্যাসের প্রথম ‘অ্যান্টি হিরোইন’। ১৯৫৩ সালে লেখা এই উপন্যাস ‘মীরার দুপুর সম্বন্ধে কেউ তাঁকে বলেন ‘সুন্দরের কারিগর’, কেউ বলেন, ‘শব্দের জাদুকর’— তিনি বাংলা সাহিত্যের এক সাম্রাজ্যের অধীশ্বর— ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী।

৪৭/২, বেলেঘাটা বারোয়ারিতলা লেন। এখানকার বাসাটা ভারী অদ্ভুত— বাড়ির মাঝখানে একটা বড় উঠোন। বিচিত্র পেশার মোট এগারো ঘর ভাড়াটে। তাঁদের বেশির ভাগই পূর্ববঙ্গের। এমনই একটি ঘরের দৃশ্য— খোলা দরজার সামনে বিশাল এক ফাঁকা মাঠ। সেটা ঘরের দক্ষিণ দিক। তাই প্রচুর আলো এসে পড়ছে ঘরের ভিতরে ছিপছিপে একহারা শরীরটার ওপর। আধশোওয়া হয়ে লোকটি কেদারায় বসে আছেন, ভাবছেন আর লিখছেন। সামনের চেয়ার-টেবিলের উপরে কিছু কাগজ আর কলম। সময়টা ১৯৫৪-৫৫ সাল। ‘বারো ঘর এক উঠোন’ জন্ম নিচ্ছিল আস্তে আস্তে, বললেন পারুলদেবী। স্বামী জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর কথা বলতে গেলে এই দৃশ্যই তাঁর মনে পড়ে বার বার।

জন্ম, শৈশব ও শিক্ষা জীবন১৯১২ সালের ২০ অগস্ট, এখনকার বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ‘ধনু’। এ জায়গা ছিল তাঁর মাতুলালয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন তাঁর বাবা অপূর্বচন্দ্র নন্দী। পরে অবশ্য ওকালতি পেশায় যোগ দিয়েছিলেন। জন্মের বেশ কয়েক দিন পরে মা চারুবালাদেবী তাকে নিয়ে চলে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এই শহরেই, তিতাসের পাড়ে কাটে ধনু অর্থাত্ জ্যোতিরিন্দ্রের ছেলেবেলা।

বয়স তখন সাড়ে চার। মাকে ছাড়াই বাবার সঙ্গে প্রথম বার মামাবাড়ি যায় ধনু। সমবয়সী দুই মামার কাছ থেকে পাখির পালক, বেলেপাথর আর সকালের কুড়োনো শুকনো বকুল ফুল ও তার গন্ধ ছোট্ট মনে দাগ কাটে।

জ্যোতিরিন্দ্র নাম নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাইনর স্কুলে ভর্তি হলেন। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছিল ছবি আঁকা, বেলেপাথর দিয়ে পাহাড় বানানো এবং পরবর্তী কালে সাহিত্যের পাঠ। শৈশবের চারুহারু, ঠাকুরমার ঝুলি, ঠাকুরদার ঝুলি শেষ করে তাঁর জীবনের প্রথম পড়া তিনটি উপন্যাস ছিল রমেশচন্দ্রের ‘রাজপুত জীবনসন্ধ্যা’, ‘মাধবীকঙ্কণ’ ও ‘মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাত’। বয়স তখন এগারো কি বারো হবে! এর পর একে একে পড়লেন— জলধর সেনের ‘বিশুদাদা’, ‘পাগল’ আর ‘অভয়া’ ও যতীন্দ্রমোহন সিংহের ‘ধ্রুবতারা’।

মাইনর স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে বাবার শিখিয়ে দেওয়া ‘যাও পাখি যাও উড়ে’ কবিতাটি আবৃত্তি করে প্রথম পুরস্কারের বইটি নিয়ে সোজা মায়ের রান্নাঘরে গিয়ে বসে ছোট্ট জ্যোতিরিন্দ্র। প্রথম হওয়া এবং পুরষ্কার পাওয়ার থেকেও তখন তার বেশি প্রিয় কড়াইতে রান্না হওয়া ডালের গন্ধ। সে দিনের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার, মহকুমা হাকিম, ডেপুটি মুন্সেফ, উকিল-মোক্তার, ডাক্তার-কবিরাজ মিলিয়ে প্রায় তিনশো ছাত্র-অভিভাবক।

মাইনর স্কুলের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা হাইস্কুলে ভর্তি হন জ্যোতিরিন্দ্র। সেখানেই ক্লাসের এক মাস্টারমশাইয়ের উৎসাহে কবিতা লেখা শুরু। কবিতার খাতার নাম ছিল ‘ঝরনা’। এই স্কুলেও আবৃত্তি করে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন জ্যোতিরিন্দ্র— রবীন্দ্রনাথের ‘গল্পগুচ্ছ’-এর প্রথম খন্ড। ১৯৩০ সালে এই স্কুল থেকেই ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেছিলেন তিনি।

১৯৩২-এ কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করে ওই কলেজেই স্নাতক স্তরে ভর্তি হলেন জ্যোতিরিন্দ্র। এর পর ১৯৩৫ সালে প্রাইভেটে বিএ পাশ করেন তিনি।

বিবাহ ও কর্মজীবনতখন জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী কলকাতার জে ওয়ালটার থমসন-এ কর্মরত। কামিনীকুমার ধরচৌধুরী ও ক্ষীরোদাদেবীর মধ্যম কন্যা পারুলের সঙ্গে ১৯৪৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর বিয়ে হয়। ইংরেজ আমলের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছিলেন পারুল, ভাল বাঁশি ও সেতার বাজাতে পারতেন।

বিয়ের আগে পারুলদেবীকে দেখতে গেলেন গিয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্র। সঙ্গে নিয়ে গেলেন বন্ধু গণেশ দত্তকে। গণেশবাবুর গায়ের রং ছিল মিশমিশে কালো। বিয়ের পরে তিনি পারুলদেবীকে বলেছিলেন— ও পাশে থাকলে আমায় একটু দেখতে ভাল লাগবে, তাই নিয়ে গিয়েছিলাম গণেশকে।

বিয়ের পরে নবদম্পতি বসবাস শুরু করল কলেজ স্ট্রিটের একটি বাড়িতে। সেখান থেকে প্রথমে রূপবাণী সিনেমার কাছে রামচাঁদ লেনের বাড়ি, তার পর বেলেঘাটার বারোয়ারিতলা লেনের ‘এগারো ঘর বাসিন্দা’-র বাড়িতে বসবাস করেন তাঁরা। বেলেঘাটার বস্তি, বাগমারি রোডের ভাড়াবাড়ি, তিলজলার সরকারি ফ্ল্যাট— মোট সাত বার বাড়ি পাল্টান জ্যোতিরিন্দ্র। তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন তিলজলা হাউজিং-এই (ব্লক এল/এ, ফ্ল্যাট ফোর)।

কলকাতায় আসার পর প্রথম চাকরি বেঙ্গল ইমিউনিটিতে। তার পর টাটা এয়ারক্রাফ্ট, জে ওয়ালটার থমসন-এর পাশাপাশি কাজ করেছেন ‘যুগান্তর’ সংবাদপত্রের সাব-এডিটর হিসেবে। কাজ করেছেন মৌলানা আজাদ খান সম্পাদিত ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায়। ইন্ডিয়ান জুটমিলস অ্যাসোসিয়েশনের ইংরেজি ও বাংলা ভাষার মুখপত্র ‘মজদুর’ সম্পাদনাও করেছেন ও পরে জনসেবক পত্রিকাতেও।

সীমিত আর্থিক ক্ষমতার ভিতরেই কন্যা স্মিতাকে হোলি চাইল্ড ও দুই পুত্র দীপঙ্কর ও তীর্থঙ্করকে টাকি গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপার্পাস স্কুলে পড়িয়েছেন লেখক।

বেশ কিছু দিন গ্যাস্ট্রিক আলসারে ভুগে, শারীরিক অবনতির জন্য হ্যারিংটন নার্সিংহোমে ভর্তি হন জ্যোতিরিন্দ্র। সরল, আত্মাভিমানী, অন্য ধারার এই লেখক প্রয়াত হন ১৯৮২ সালের ১ অগস্ট।

ব্যক্তি জ্যোতিরিন্দ্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকাকালীন, ছোটবেলায় ঠাকুর্দার সঙ্গে সূর্য ওঠার আগে বেড়াতে বেরতো জ্যোতিরিন্দ্র। এক দিন এক সাহেবের বাংলোর বাগানে দু’টি সদ্য ফোটা গোলাপ তার নজরে পড়ে। পাপড়ির গায়ে হাল্কা শিশিরে ভোরের আলোর ছটা। ঝকমক করছিল ফুল দু’টি। বাতাসের আলতো পরশে সামান্য কাঁপছিলও। একটা সোনালি নীল প্রজাপতি একটা না-ফোটা কলির বোঁটায় চুপ করে বসে— প্রকৃতির সেই রূপ দেখে আর চোখের পলক পড়েনি ছোট্ট ছেলেটির। ভাল লাগা কাকে বলে, ভাল দৃশ্য কী— সেই কচি বয়সেই টের পেয়েছিল সে

সমবয়সী অন্য শিশুদের মতো হইহই করে খেলাধুলো করা, বায়না ধরার ধাত তার মোটেই ছিল না। ছিল না মেলায় যাওয়ার উৎসাহ বা পুজোর সময় তিতাসের বুকে ভাসান অথবা পয়লা ভাদ্রে নৌকোদৌড় দেখার কোনও আগ্রহ।

তবে স্বল্পবাক মানুষটি আড্ডাবিমুখ ছিলেন না। পরবর্তী কালে কলকাতায় থাকাকালীন কফি হাউসে যেতেন, আড্ডাও মারতেন। আসলে অপচয় পছন্দ করতেন না। তাঁর ছিল ভোরে ওঠার অভ্যেস। বিকেলে হাঁটতেও বেরোতেন নিয়ম করে।

‘লেখক’ জ্যোতিরিন্দ্রছোটবেলার কবিতা লেখা কলেজ জীবনে সাহিত্যচর্চায় রূপান্তরিত হয়। স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯৩১ সালে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এক বছর গৃহবন্দি থাকাকালীন তার সাহিত্যচর্চার উপরেও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা জারি। এই সময়ে জ্যোৎস্না রায় ছদ্মনামে ‘সোনার বাংলা’ ও ‘বাংলার বাণী’ পত্রিকায় তাঁর লেখা কয়েকটি গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৩৬ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ‘রাইচরণের বাবরি’।

কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত কলেজ ম্যাগাজিনে জ্যোতিরিন্দ্রের লেখা ‘অন্তরালে’ গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলার অধ্যাপক সুধীর সেন তা পড়ে মুগ্ধ হলেন। পরে প্রেমেন্দ্র মিত্রের নজরে আসে জ্যোতিরিন্দ্রর লেখা। তাঁর সম্পাদিত নবশক্তি, সাপ্তাহিক সংবাদে গল্প প্রকাশের সুযোগ করে দেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। তাঁর লেখা ছোট গল্প ‘ভাত’ ও ‘গাছ’ (ইংরেজিতে), ‘ট্যাক্সিওয়ালা’ ও ‘নীল পেয়ালা’ (জার্মান ভাষায়), ‘সিঁদেল’ (ফরাসিতে), ‘একঝাঁক দেবশিশু’ ও ‘নীলফুল’ (হিন্দিতে) এবং ‘বলদ’ (মরাঠি ভাষায়) অনূদিত হয়।

১৯৩৭ সালে পাকাপাকি ভাবে কলকাতায় চলে আসেন জ্যোতিরিন্দ্র। ছোটগল্পকার হিসেবে নজর কাড়ার পর ১৯৪৮-এ ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন ধারাবাহিক উপন্যাস ‘সূর্যমুখী’।

কলেজ স্ট্রিটের বাড়িতে থাকাকালীন তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য বই ‘শশাঙ্ক মল্লিকের নতুন বাড়ি’। ‘সূর্যমুখী’ উপন্যাসটি লেখেন রামচাঁদ লেনের বাড়িতে থাকাকালীন। বিবাহের তিন বছর পরে তিনি অতুল্য ঘোষের কাগজ ‘জনসেবক’-এ কাজ করেন প্রায় তেরো বছর। তার পর লেখায় মনোযোগ দেন।

তাঁর লেখার অনুপ্রেরণা ছিলেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য, প্রেমেন্দ্র মিত্র ও সাগরময় ঘোষ।

সৃষ্টি ও স্বীকৃতি ছোটগল্প

খেলনা, শালিক কি চড়ুই, চন্দ্রমল্লিকা, চার ইয়ার, গিরগিটি, বনানীর প্রেম, মহিয়সী, খালপোল ও টিনের ঘরের চিত্রকর, বন্ধুপত্নী, নদী ও নারী, পাশের ফ্ল্যাটের মেয়েটা, দিনের গল্প রাত্রির গান, জয়জয়ন্তী, সমুদ্র, তারিণীর বাড়িবদল, ছিদ্র, ক্ষুধা, বুনোওল, আজ কোথায় যাবেন, আম কাঁঠালের ছুটি, ভাত, ট্যাক্সিওয়ালা, গাছ, চোর, পার্বতীপুরের বিকেল, ছুটকি বুটকি, বনের রাজা

উপন্যাস

সূর্যমুখী, মীরার দুপুর, বারো ঘর এক উঠোন, গোলাপের নেশা, গ্রীষ্ম বাসর, নিশ্চিন্তপুরের মানুষ, সমুদ্র অনেক দূর, আলোর ভুবন, হৃদয়ের রং, স্বর্গোদ্যান, আকাশলীনা, নিঃসঙ্গ যৌবন, নাগকেশরের দিনগুলি, প্রেমের চেয়ে বড়, বনানীর প্রেম, অপারেশন, সুনন্দার প্রেম, নীড়, ঝড়, হরিণমন, সর্পিল, দুই সমুদ্র, লড়াই, স্বর্গখেলনা, দ্বিতীয় প্রেম, এই তার পুরস্কার, লাস্ট চ্যাপ্টার, রাবণবধ, হৃদয়জ্বালা, তিন পরী ছয় প্রেমিক, অভিনয়, রাঙা শিমুল, নীল রাত্রি, বিশ্বাসের বাইরে, ছোটো পাখি নীল আকাশ, বনহরিণী, সোনার ভোমরা, প্রেমিক, যুবতীর মন নদী, কলকাতার নট, সাঁকোর ওপরে নীরা ও সপ্তরথী, শেষ বিচার, আততায়ী, জীবনের স্বাদ, জ্যোৎস্নার খেলা, মন বদলায়, সাদা ফুল কালো কীট, অবেলায়, অনুভার স্বপ্ন, বসন্ত রঙিন, স্বাতী ও দীপু, প্রণয় এক প্রাণ শিল্

সম্মান

আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ১৯৬৫ সালে।
আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হন ১৯৬৬ সালে।

• গৌরকিশোর ঘোষ
এক ধরণের সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্ব যা জ্যোতিরিন্দ্র ছাড়া অন্য কোনও লেখকের রচনায় ধরা পড়ে না।

• সন্তোষকুমার ঘোষ
প্রকৃতিকে এমন জীবন্ত হয়ে উঠতে দেখিনি আর কারওর লেখায়।

• সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ
আপনার লেখায় আপনি আধুনিক সাহেব-সাহিত্যের সীমা পেরিয়ে গেছেন। একুশ শতকের সাহেবরা আপনার লেখা পড়ে রিসার্চ করবে। আপনি আঠারো উনিশ শতকের ফরাসী ন্যাচারালিজমের পজিটিভ অংশটা বাংলার মাটিতে নতুন করে ফলিয়েছেন।

• সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
…তাঁকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। তিনি আমার প্রিয় লেখক। তিনি লেখকদের লেখক।

• শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়
তাঁর লেখা পড়ে লিখতে শেখা যায়।

প্রকাশনা
পুর্বাশা, দেশ, চতুরঙ্গ, ভারতবর্ষ, মাতৃভূমি, পরিচয় ইত্যাদিতে লেখা।
পুর্বাশা থেকে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘খেলনা’ (১৯৪৬)।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (লেখক)
লেখালিখির শুরুতে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর লেখা গোগ্রাসে পড়তাম। লেখা পড়ে মনে হয়েছে সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে তিনি এক জন আউটস্ট্যান্ডিং লেখক। লেখার চোখ, বর্ননার ভঙ্গি, আর কারওর মতো লেখেন না। দেশ পত্রিকায় ‘মাছের দাম’ একটি গল্প পড়েছিলাম। এক বারে অন্য রকম একটি লেখা। গল্প বলতে কিছুই ছিল না। কেবল এক জন লোক বাজারে গিয়েছেন, চারধারের পরিবেশ দেখছেন। ‘বনের রাজা’ গল্পটিতে অসাধারণ এক ঠাকুরদা ও নাতির সম্পর্ক উঠে এসেছে। মাথা খারাপ করে দেয় ‘বন্ধুপত্নী’, ‘সিদ্ধেশ্বরের মৃত্যু’র মতো বেশ কিছু গল্প। খুব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভূতি নিয়ে লেখা ‘বন্ধুপত্নী’ আমাকে ২-৩ বার পড়ে বুঝতে হয়েছে। ছোটগল্পে মাস্টারপিস লেখক ছিলেন। ছোটগল্পের ক্ষেত্রে একটা অন্য ধরনের মনস্তাত্বিক তাত্ত্বিকতা ছিল। কারওর সঙ্গে মিল ছিল না। প্রকৃতিকে চিনতেন সূক্ষ্ম অনুভূতি দিয়ে। অত্যন্ত সাধারণ ভাবে দিন যাপন করতেন। তবে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর কাছে ছোটগল্পের পাশাপাশি উপন্যাসের প্রত্যাশা ছিল অনেক। সে ক্ষেত্রে হতাশ হতে হয়। ‘বারো ঘর এক উঠোন’ ভাল হলেও জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর মাপের হয়নি। উপন্যাসের ক্ষেত্রে অনেক সময়ের ব্যাপার থাকে। দীর্ঘ সময় লাগে এক একটি উপন্যাসের জন্য। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ব্যাপার থাকে। অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলতেন। তবে ছোট ও বড় গল্পের এই জনপ্রিয় লেখক পাঠককুলকে আচ্ছন্ন করেছেন। কল্লোল যুগে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর গল্প প্রকাশিত হওয়া মানেই বিরাট ব্যাপার ছিল।

অরবিন্দ গুহ (ইন্দ্রমিত্র)
লেখা খুবই ভাল। আমার স্থির বিশ্বাস নায্য প্রাপ্য তিনি পাননি। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘বারো ঘর এক উঠোন’। লেখক হিসেবে অত্যন্ত আধুনিক ছিলেন। তিনি তাঁর সমসাময়িকদের থেকে সব সময় আলাদা ছিলেন। আজও তাঁর লেখা পড়লে বোঝা যায় আর পাঁচজনের থেকে তিনি আলাদা। আমার বিবেচনায় ঔপন্যাসিকের থেকে গল্পলেখক হিসেবে তিনি বেশি আকর্ষক। রূঢ় বাস্তবকেও কবিত্বময় করে তুলতে পারতেন জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী।

তথ্য ও সাক্ষাৎকার: পাপিয়া মিত্র।
ঋণ: জ্যোতিরিন্দ নন্দী (পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি),
কালপ্রতিমা সাহিত্যপত্র,
জ্যোতিরিন্দ নন্দী: আমার সাহিত্যজীবন আমার উপন্যাস।


কলমে মনোজিৎকুমার দাস

প্রাবন্ধিক ও গল্পকার।লাঙ্গলবাধ, মাগুরা, বাংলাদেশ

Write and Win: Participate in Creative writing Contest & International Essay Contest and win fabulous prizes.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here