সুগত দিল্লিতে এক নামকরা কোম্পানির সফ্ট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি পেয়েছে প্রায় দুবছর হলো। বাবা মা থাকেন বর্ধমানে। তাদের একে বারেই ইচ্ছা নয় ছেলে দিল্লি তে একা একা থাকুক ।তাই ছেলের সঙ্গে পরামর্শ করে পেপারে বিজ্ঞাপন দিলো ছেলের উপযুক্ত পাত্রী র জন্য। পেয়ে ও গেলো উপযুক্ত পাত্রী, হুগলী জেলায় ত্রিবেণী তে বাড়ি বছর তেইশ বয়স, ফর্সা সুন্দরী ও বটে ছেলের বয়স সবে সাতাশ ছেলের সঙ্গে বেশ মানানসই ও হবে।তাই আর কিছু না ভেবে ছেলের কাছে তাঁরা পাত্রী র ফটো পাঠালেন ।সুগত র ও মেয়ে দেখে বেশ পছন্দ হলো সপ্তা খানেকের ছুটি নিয়ে বাড়ি এলো।বাবা মাকে নিয়ে মেয়ে র বাড়ি গিয়ে বিয়ের ঠিক ঠাক করে এলো দু মাস পর বিয়ের দিন ধার্য হলো। সুগত আবার দিল্লি ফিরে গেল।বেশ কিছুদিন কাটলো অবশেষে বিয়ের দিন কাছাকাছি চলে এলো সুগত ও বর্ধমানে ঢলে এলো।বিয়ে সম্পন্ন হলো।বিয়ের পনেরো দিন পর নববধূ নিয়ে দিল্লি তে চলে এলো ।চাকরি পেয়েছে সবে দুবছর হয়েছে আবার অনেক ছুটি ও নেওয়া হয়েগেছে কাজের চাপ ও এইজন্য খুব বেড়েছে আর তাই হানিমুনে যাওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি । তাও সুগত সুযোগ পেলেই অনুরাধা কে নিয়ে টুকটাক বেড়িয়ে আসে ।এভাবেই মাস সাত আট কাটে একদিন সুগত অফিস থেকে এসে দেখে অনুরাধার খুব শরীর খারাপ ।তাড়াতাড়ি ডাক্তার রের কাছে নিয়ে যায়।ডাক্তার সুগত কে সুখবর শোনায় অনু মা হতে চলেছে।যাইহোক মাস দশেক পর অনু জন্ম দেয় পুত্র সন্তানের।অনুরাধা বাচ্চা সামলাতে সংসার সামলাতে বেশ হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে , তাই সুগত অনেক চেষ্টা করে ওই কোম্পানির ই কোলকাতা র ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার নিলো যাতে অনুরাধা র মা বাবা ও নিজের মা বাবা দুপক্ষই অনুরাধা কে একটু সাহায্য করতে পারে।কলকাতার শোভাবাজার সুগত দের একটা ছোটো বাড়ি আছে, বাবা যখন কলকাতায় চাকরি করতেন ও সুগত যখন কলকাতায় পড়াশোনা করতো তখন ওরা ওই বাড়িতে থাকতো এখন বাবা রিটায়ার্ড হয়ে যাওয়ায় বাবা ,মা বর্তমানে বর্ধমানে র গ্রামের বাড়িতে থাকেন।এখন সুগত স্ত্রী অনুরাধা ও বাচ্চা কে নিয়ে ওই বাড়িতে ই থাকে।অনুরাধার বয়স ও কম তার উপর বিয়ের পর পরই এতো চাপ এসে যাওয়ায় অনুরাধা নিজেকে ঠিক মতো গুছিয়ে রাখতে পারেনা।সুগত কেও ঠিক মতো সময় দিতে পারে না।সুগত র চিরকাল অভ্যাস বেশ রাত করে কমপিউটারে কাজকর্ম করে তারপর শুতে যাওয়া ।অনুরাধা আগে জেগে অপেক্ষা করতো সুগত র জন্য মাঝে মাঝে ঘুমিয়েও পড়তো তাতে বেশ অভিমান ও করতো সুগত ।কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পর সারাদিন প্রচুর খাটাখাটনি হয় তাই আর জেগে থাকতে পারেনা। এভাবে দুজনের মধ্যে একটু একটু করে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে, যা দুজনের কেউই বুঝতে পারে না। এরই মধ্যে সুগত র অফিসে সুগত রই ডিপার্টমেন্টে জয়েন্ করে সহেলি নামের একটি মেয়ে বয়স বছর সাতাশ সুন্দরী নয় তবে টিপটপ ,স্মার্ট ,কথায় বেশ চাতুর্য আছে, যা সুগত কে বেশ আকর্ষণ করে।বেশ কয়েক মাসের মধ্যেই সুগত কে কব্জা করে ফেলেছে সহেলি। সহেলি র সঙ্গে সময় কাটাতে সুগত র বেশ ভালো লাগে ।
সুগত এখন ইচ্ছা করেই অনুরাধার তৈরি করা টিফিনটা আনতে ভুল যায় অথবা টিফিন নিয়ে এলেও, আবার ফেরত নিয়ে যায়।এখন বেশির ভাগ দিনই সহেলি র সাথে টিফিনে বাইর খেতেই পছন্দ করে সুগত। এখন আগের চেয়ে একটু রাত করে বাড়ি ফেরে সুগত কারণ অফিস ছুটির পর সহেলি কে নিয়ে প্রায় ই সপিং এ যায় বাইরে খাওয়া দাওয়া সারে।বাড়িতে এসে বলে কাজের প্রচুর চাপ,শরীর ভালো লাগছে না খাওয়া র ইচ্ছা নেই।অনুরাধা প্রায় ই এরকম দেখে ভাবে স্বামী র শরীর সত্যি ই বুঝি খারাপ তাই ডাক্তারের কাছে যেতে বলে।ইদানিং অনু লক্ষ্য করেছে সুগত ভীষণ বদমেজাজি হয়ে গেছে, পান থেকে চুন খসলেই রেগে যায় এমন কি গায়ে হাত তুলতে ও বাকি রাখে না।বোঝাতে গেলেও বোঝা না।অনুরাধা বোঝে সুগত এখন অনুরাধা র কোনো খেয়াল রাখে না,কারণ সুগত খিদে নেই বলে যখন খায় না,তখন যে অনুরাধা ও না খেয়ে শুয়ে পড়ে সেটা সুগত খেয়াল ই করে না।অনুরাধা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় সেইসব দিন গুলোতেই যেদিন বিবাহ বার্ষিকী,অনুরাধা জন্ম দিন ও ছেলের জন্ম দিন কিছুই সুগত র মনে পড়ে না।অনুরাধা নিভৃতে একান্তে কাঁদে কিন্তু সুগত র মাথায় যে বদ্ বুদ্ধির জন্য এতো পরিবর্তন তা অনুরাধা কখনও ভাবতেই পারেনা।বেশ কয়েকবার সুগত বাইরে ডিউটি পরেছে বলে সহেলি কে নিয়ে দীঘা,বকখালি এসব জায়গায় ছোটো ছোটো ট্যুর করে এসেছে। সুগত সহেলি কে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে তুমি বিয়ে করবে না? সহেলি উত্তরে জানিয়েছে আমি চাকরি করি,তোমার স্ত্রী র মতো পরনির্ভর শীল নয় so,আমি কারোর বাঁধা দাসী হয়ে কাটাতে পারবো না,আমি আমার জীবন আমার মতো করে কাটাবো তোমার বউয়ের মতো করে নয়।সুগত সহেলি র কথা শুনে একটু অস্বস্তি বোধ করলেও কোনো উত্তর না দিয়ে হেসে উড়িয়ে দেয়।এইভাবেই চলতে থাকে একদিন অফিসে ,আদালতে বাজারে ,হাটে,সব জায়গাতেই শোনা যাচ্ছে একটাই কথা চীনে নাকি করোনা নামক কি মারণ ভাইরাস ছড়িয়েছে, যা ভীষণ ছোঁয়াচে।মানুষ মানুষের সংসপর্শে এ রোগ ছড়াচ্ছে তাই মানুষের থেকে মানুষের দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে ধীরে ধীরে ধীরে এ ভাইরাস আমেরিকা, ইটালিতে,ফ্রান্স, জার্মান,স্পেন পৃথিবীর সব দেশে ছড়াতে ছড়াতে ভারতেও এসেপড়লো ।প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন কলকারখানা, অফিস, আদালত,স্কুল কলেজ, বাজার , হাট, বাস ,ট্রেন এমনকি প্লেন ও বন্ধ অর্থাত্ লকডাউন।এবার সহেলি আর সুগত দুজোনেই পড়লো বিপাকে ।মন আর বাড়িতে টেকে না । সুগত সবসময় সহেলি র সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে কিন্তু অনেক সময়ই যোগাযোগ করা যায় না কারণ সহেলি অন্য ফোন ব্যস্ত থাকে অথবা কখনো কখনো ফোন রিসিভ করে না ,মেসেজ করলে মেসেজের রিপলাই কখনো দের কখনো বা দেয়না ।এদিকে অনুরাধা স্বামীকে পেয়ে ছেলে সামলানো র দায়িত্ব টা স্বামীর ঘাড়ে চাপিয়েছে,তাই বলে নিজে কিন্তু বিশ্রাম করছে না, স্বামীর জন্য ভালো ভালো রান্না করছে খাওয়াচ্ছে স্বামী র আদর যত্ন ও করছে স্বামী কে সময় ও দিতে পারছে,আর নিজেকেও বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছে ।যা দেখে সুগত র মনে একটু একটু করে পরিবর্তন আসতে লাগলো।সুগত বুঝতে পারলো সত্যি তো অনু এতো সুন্দর রান্না করে,তাও শুধু শুধু আমি কেন এবারের মহিলার সঙ্গে বাইরে থেকে বিষ কিনে খেতাম।ধীরে ধীরে সুগত নিজের ভুল বুঝতে পারে, ভাবে কেন আমি অনুরাধা আর নিজের ছেলে কে দিনের পর দিন ঠকিয়েছি এভাবে অনুরাধা র সঙ্গে দুরত্ব টা ও কমতে থাকে।।লকডাউনের মধ্যেই আট–ই এপ্রিল ছিল পূর্ণিমা সেদিন রাতে সুগত ছেলে কে তাড়াতাড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে অনু কে নিয়ে ছাতে গেলো পূর্ণিমা র চাঁদের আলোয় অনু কে লাল ব্লাউজ আর হলুদ শাড়ি তে অপরূপ সুন্দর দেখাচ্ছে কপালের উপর চুল গুলো একটু আলতো হাওয়ায় উড়ে এসে পড়ছে সত্যি আজ অনু কে খুব সুন্দর লাগছে অনুরাধা কপাল থেকে আলতো হাতে চুল সরিয়ে সুগত জড়িয়ে ধরে বললো অনু তুমি এতো সুন্দর আমি কখনো দেখিনি ।মনে মনে ভালো সহেলি স্মার্ট হতে পারে,টিপটপ হতে পারে তবে এতো কোমল এতো সুন্দর নয় এতো সংসারি ও নয় আর এভাবে ভালোবাসতেও জানেনা। সুগত আরো ভাবে তবে কেনো আমি আমি ওই উচ্ছৃঙখল অসভ্য মেয়ে র ফাঁদে পা দিয়েছিলাম আমার এমন সুখের সর্গ ফেলে আমি কি করতে চলে ছিলাম ।সুগত সিদ্ধান্ত নেয় ওই মনমোহিনীর কাছ থেকে মুক্তি পেতে হলে লকডাউনের পর অফিস খুললে খুব তাড়াতাড়ি অন্যত্র ট্রান্সফার এর ব নিয়ে অনুরাধা ও ছেলেকে নিয়ে সেখানে চলে যাবে।যেখানে অনু র আর আমার মাঝে কোনো সহেলির ঢোকার ফাঁক ফোঁকর থাকবে না।সুগতর এই পরিবর্তন একমাত্র করোনার জন্যই সম্ভব হলো অর্থাত্ করোনা অনুরাধার কাছে আশীর্বাদ হয়েই এসেছে।।।
কলমে শিপ্রা সমাদ্দার