“মা, মা”
বাবাই ডাকলো আমায়।
দেখে যাও! এই বইয়ের ছবিগুলো দেখে যাও মা।”
রাজ্যের কাজ পড়ে আছে এখন আমার। আমি নাকি এখন ছবি দেখবো?
বলতেও পারি না কিছু। কিছুই তো দিতে পারি না ছেলেটাকে।
একটাই নেশা বাবাই এর। পড়া। সে যেখান থেকেই হোক না কেন,ঠোঙা, পুরোনো কাগজ থেকে শুরু করে যা পাবে তাই।
খবরের কাগজওয়ালারা বাবুদের বাড়ি থেকে কিলো দরে কাগজ কিনে এনে মাপে। সেখানটায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ছেলেটা। ভালো বই দেখলেই টপ করে তুলে নেয়।
বদলে হয়তো গায়ে গতরে খেটেও দেয় একটু। আমাকে তো আবার সব কথা বলেও না।
“কই গো!”
উফফ, জ্বালিয়ে খেলো দেখছি। বাসন নিয়ে সবে বসেছি। ভাতের হাঁড়িটা মেজে ভাত বসলে তবে তো খেতে পাবি। তা নয় চিৎকার, চেঁচামেচি।
মনে মনে গজগজ করে আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে এসে দাঁড়ালাম।
“দেখো মা, এই বইটায় কি রকম সব ছবি? এক এক ঘরে এক এক রকম রং। স্টাডি মানে পড়ার ঘরে হালকা সবুজ, কিচেন মানে রান্নাঘরে গাঢ় হলুদ সব আলাদা আলাদা রং। বেডরুমে হালকা নীলরং তাতে নাকি ভালো ঘুম হয়। বেডরুম মানে…’
হোক না আমার এক চিলতে ঘরেই শোবার, পড়ার, রান্নার ব্যবস্থা, কিন্তু বেডরুম মানে আমি জানি। শোবার ঘর ! ক্লাস সিক্স অবধি পড়েছি তো।
বাবাইকে সে কথা বলতে গিয়েই মনে পড়ে গেলো একটা দরকারী কথা।
“ভাগ্যিস রঙের কথা বলে ডাকলি বাবাই। একটা কাজ কর না সোনা। পাঁচ কিলো চুন এনে রেখেছি, তাড়াতাড়ি ভিজিয়ে দে না বাবা। কাল একবার ঘরটায় কলি ফিরিয়ে দেব।”
কলমে অদিতি ঘোষদস্তিদার, নিউ জার্সি, উত্তর আমেরিকা
পেশায় গণিতের অধ্যাপিকা। নেশা লেখা। আনন্দবাজার পত্রিকা, সানন্দা, সৌতি, অন্বেষা, গুটিপোকার সুতোসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত ।প্রধানত ছোট ও অণুগল্প লিখতে ভালোবাসি।