পঁচিশে আগস্ট, ভারতে তখন দিন পেরিয়ে সাঁঝের আমন্ত্রন;
হঠাৎ আকাশ, বাতাস কাঁপিয়ে,
গগনবিদারী হুঙ্কার, ভারতের ঘরে ঘরে
রাস্তায়, জনপদে, মাঠে, ময়দানে
বিদেশেও, যেখানে ভারতীয় মানবসত্তা,
দেশাত্মবোধের আবেগে বহমান,দীপ্যমান —
সিন্ধু এসেছে সিন্ধু, সিন্ধু জেগেছে সিন্ধু,
সিন্ধু ভেঙেছে এতবছরের স্বর্ণালু অনাবৃষ্টি,
একদিন ছিল যা চোখের আড়ালে, একটি জলের বিন্দু।
সিন্ধুর তোড়ে সব বাঁধা ভেঙ্গে, ভারতবর্ষ আবার,
আবার একটা শ্রেষ্ঠত্বর শিরোপা তুলে নিয়ে,
যেন বলছে সারা পৃথিবীকে, বজ্রকন্ঠে,
ভারত আমাদের এই ভারতবর্ষ,
বিশ্বসভায় আবার শ্রেষ্ঠ আসন নিল-
বিদেশী শক্তির সব শৌর্য,
সব বীরত্ব নিমেশে মিলিয়ে গেল।।
নতুন এক “সিন্ধু সভ্যতার” কথা আজ যেন নতুন করে
বিশ্ববাসীকে জানান দিয়ে গেলো,
সেই আকাশফাটানো আওয়াজ,
যে আওয়াজ বোঝাতে চায়, সিন্ধু নামের অর্থ –
“অদম্য মনোবল নিয়ে এক আপোষহীন লড়াই,
সারাটা জীবন সেই অর্জুনের মতো
পাখীর চোখটাকেই শুধু দেখা, দেখে যাওয়া ;
দিনের পর দিন, মাস পেরিয়ে বছর –
গ্রীষ্ম, পেরিয়ে বর্ষা, বর্ষা পেরিয়ে শরৎ, শীত, বসন্ত,
চড়াই থেকে উৎরাই, আবার চড়াই,
আপোষহীনতার মন্ত্রে,
সুবর্ণখচিত শিখর ছোঁয়ার লক্ষ্যে।।
সিন্ধু এলো তুফানের মতো, চোখে তাঁর আগুন
বুকে তাঁর আগ্নেয়গিরির দুরন্ত লাভা
মৃদু বাতাস নয়, ঝড় নয় সে আজ সাইক্লোন নিয়ে এলো!
হ্যা আজ সিন্ধু এক সাইক্লোন, এক হ্যারিকেন, এক টর্নেডোর
অন্য একটি নাম;
যে নামে মিশে আছে এক হার না মানা জেদের গল্প,
যে নামে আজ শিহরিত হয় সারা বিশ্বের ময়দান-
যে তাঁর অদম্য মনোবলে ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে পারে
সমস্ত প্রতিরোধ,
অন্যপক্ষের সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তির কলাকৌশল ;
যা কিছু তাঁর সাফল্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে
সব কিছু ধুলোয় মিশে যায়, সেই সিন্ধু ঝড়ে,
শ্যাটলকক যে তখন তাঁর হাতের যাদুমন্ত্রে নিতান্তই বিবশ।।
একশো তিরিশ কোটির দেশে অনেক দারিদ্র্য আর অভাবের মাঝেও,
সিন্ধুরা জেগে ওঠে, জাগিয়ে রাখে —
আজ সব ঘরে আবার নতুন করে সূর্যোদয় ;
নতুন দীপের আলোয়, আজ অকাল দীপাবলি।
মলুপাড়ার নবারুন আজ সাত বছর বেকার,
মাস্টার ডিগ্রির সার্টিফিকেট আজকাল
আর সে ছুঁয়েও দেখেনা, হতাশায়,
নিজের প্রতি ঘৃনায়,অনুকম্পায়-।
পঁচিশের রাতে টিভির সামনে সিন্ধুর ব্যাক হ্যান্ড স্ম্যাশ যখন,
ব্যাডমিন্টন কোর্টের জাল স্পর্শ করে,
বিদেশিনীকে ধরাশায়ী করে, তাঁর নাগালের বাইরে চলে গেল,
আর আকাশের দিকে সিন্ধুর বজ্রমুষ্ঠি ঝলকে উঠল,
চোখে তখন তাঁর আগুন আর জল মাখামাখি –
সিন্ধুর কান্না ভেজা গলায় শুধু শোনা গেল,
“আমি পেরেছি, হে ভারতবর্ষ, হে দেশ আমার,
আমি তোমাকে আজ দিতে পেরেছি, যা এতদিন পারিনি”–।।
নবারুনের মায়ের চোখের কোল বেয়ে,
আনন্দাশ্রু ঝরে পড়ল, আরও অনেকের মতো ;
নবারুনের মা আগুনঝরা কন্ঠে বলে উঠলেন
বলে উঠলেন, “সিন্ধু পেরেছে”, আপোসহীন লড়াইয়ের মন্ত্রে,
তুইও পারবি নবারুন, হার মানিসনা,
আমরা যে সিন্ধু পারে বেড়ে ওঠা,
একেকটা আগ্নেয়গিরি”,
শুধু হতে পারিনা, কেন জানিস!
শুধু তাঁর মতো করে,”হারতে পারবোনা”,
এই কথা বলতে পারিনা নিজেকে,
নিজের ঘুমিয়ে পড়া মনটাকে–
হারিয়ে ফেলি সেই জেদ “-
জানি তুইও পারবি, নিশ্চয়ই পারবি,
এমন হার না মানা জেদ নিয়ে, শিখর ছুঁতে —
তোর লক্ষ্যে ঠিক পৌঁছে যেতে,
আমরা যে সেই বিরল স্বর্নকন্যা,
সিন্ধু উপত্যকার মানুষ”;
হ্যা আমাদের সেই সিন্ধু উপত্যকা।।
কবি পরিচিতি : ডাঃ নীলাঞ্জন চ্যাটার্জী,পশ্চিমবঙ্গ .বিশিষ্ট আইনজ্ঞ,নট- নাট্যকার মিহির কুমার চট্টোপাধ্যায় ও সাহিত্য – শিল্প অনুরাগিনী নিয়তি চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় – এর সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ কলেজ জীবনের প্রারম্ভেই।
সেই সময় থেকেই, “ভারতবর্ষ”, “দিশারী” সহ নানা পত্রিকায় কবির, কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে।
কবি, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পেশার বাইরে সেবামুলক কাজের জন্য স্থাপন করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ডাঃ চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখা, সংবাদপত্রে ও “প্রসাদ” পত্রিকায় ইতিপূর্বে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে।