“চুরির ডেফিনিশন কি?” গরম ফুলকপির সিঙ্গাড়ায় শেষ কামড়টা দিয়ে, টেবিলের ওপর খালি প্লেটটা নামিয়ে অনিল প্রশ্ন করল |
অনিল বিশ্বাস, কলকাতার বিখ্যাত ল ফার্মের নামজাদা এটর্নি।
জমিয়ে আড্ডা মারছিল কয়েকজন মিলে তাদের বন্ধু বরেনের মেয়ের বিয়েতে| বয়স প্রত্যেকের পঞ্চাশের ওপর , কিন্তু যখন এক জায়গায় হয় দেখলে মনে হবে যেন কয়েকজন টিনএজর একজায়গায় জড়ো হয়েছে| কে বলবে তখন দেখলে যে এদের মধ্যে লুকিয়ে আছে কয়েকজন তাবড় কোম্পানির সিইও, নামজাদা ডাক্তার, দু একজন জাঁদরেল প্রফেসর, খানদুয়েক দুঁধে উকিল, জনাকয়েক চিফ ইঞ্জিনিয়ার, কয়েকজন প্রখ্যাত লেখক, গায়ক, বাদক আর সাংবাদিক |
বরেন মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে ব্যস্ত থাকার জন্য কিউরিয়াস ক্যাটাররের একজন বয়স্ক লোককে ওদের ঠান্ডা আর গরম পানিও এবং গরম গরম জলযোগ সার্ভ করার জন্য ব্যবস্থা করে গিয়েছিল | কিউরিয়াস ক্যাটাররের মিস্টার বাসু অল্প সময়ের মধ্যেই ভাব জমিয়ে নিয়েছিলেন বরেনের বন্ধুদের সাথে| অদুরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করছিলেন সবাইকে | পানিও ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি এনে হাজির করছিলেন নতুন পানীয়ের গ্লাস|
আর প্লেট খালি হওয়ার আগেই হাজির করছিলেন রকমারি ভাজাভুজি | বরেনের বন্ধুরা টিপস দিতে গেলে উনি বিনয়ের সাথে প্রত্যাখান করছিলেন| অনিল প্রথমবার জোর করে টিপস দিতে গেলে হাতদুটোকে জড়ো করে বলেছিলেন “যা মাইনে পাই তাতেই চলে যায় স্যার| একা লোক কতই বা খরচা | আপনারা ভালো লোক ভগবান আপনাদের ভালো করবেন|”
দিলিপ শুনে নিচু স্বরে টিপ্পনি কেটেছিল “শালা ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির এসেছে |”
মিস্টার বাসুর কানে কথাটা গিয়েছিল কিনা তাঁর ব্যবহারে অবশ্য সেটা বোঝা যায় নি |
“আমরা তো ছোটবেলার থেকেই জানি যে না বলে অন্যের জিনিস নেওয়াকেই চুরি বলা হয়|” দিলীপের উত্তরটা এল আলুর চপের অর্ধেকটা মুখে পুরে দেওয়ার পরে| দিলিপ সাক্সেনা, চোখের ডাক্তার, বন্ধুদের মধ্যে সবথেকে খাটো|
“তুই যে খোটুয়া ছিলি সেই খটুয়াই রয়ে গেলি| তাই যদি হবে তো তোদের ওই কৃষন কানাইয়া তো সব থেকে বড় চোর| সে তো ছোটবেলার থেকেই মাখন চুরি করে খেত|” ছয়ফুট লম্বা ও চওড়া চেহারার কলেজ প্রফেসর প্রিতম সিং বলে উঠল|
“না সে কথা বলা ঠিক নয় | ছোটবেলায় চুরি করা আর বড় হয়ে চুরি করা এক জিনিস নয়| আর তাছাড়া কৃষন কানহাইয়া তো ভগবান| সব কিছুই তো ভগবানের| নিজের জিনিস নেওয়াকে কি আর চুরি বলা যায়?” দিলিপ ঠেকা দেওয়ার চেষ্টা করল|
“দ্যটস নট ফেয়ার | ভগবান বলে তার সাত খুন মাপ | আর কম বয়স বলে তার সবকিছু মাপ হয়ে যাবে| আরে বড় হয়ে ওই কৃষন কানহাইয়া তো কত মেয়েদের মনও চুরি করেছে , সেটাও তো এক ধরনের চুরি, নাকি?” প্রখ্যাত গিটারিস্ট নেভিল ডিসুজা টিপ্পনি কাটল|
“লেট আস অল বি সিরিয়াস ফর এ সেকেন্ড| আই থিঙ্ক ইউ অল আর ডিভিয়েটিং ফ্রম দা অরিজিনাল কয়েসচেন অফ স্তিলিং এন্ড আই ফুললিএগ্রি উইথ দিলীপ| প্রখ্যাত কলেজের ইংলিশ প্রফেসর ও দশাশই চেহারার মিখাইল গোমেজ চশমাটা নাকের নিচে নামিয়ে বাজখাই গলায় তাঁর মন্তব্য পেশ করলেন| সাধারনত গোমেজের কথার ওপর কেউ কথা বলতে সাহস পায় না| তাই গোমেজের হঠাৎ দেওয়া ধমখানিতে আড্ডাটা ক্ষনিকের জন্য থমকে গেল| সবাই মন দিল মিস্টার বাসুর সদ্য সার্ভ করা সামনের টেবিলে রাখা গরম গরম বেগুনিগুলোর ওপর |
“আরে ইয়ার আই ডিডিন্ট মিন টু স্টপ তা কনভার্সেশন | আচ্ছা লেট এস ডু ওয়ান থিং | তোমাদের কারো কোন এক্সপিরিয়েন্স আছে এই ব্যাপারে? যদি থাকে তাহলে বল এক এক করে | উই আর অল অ্যাডাল্টস ইউ নো ওয়াট এই মিন| আই থিঙ্ক ইট উইল বি এন ইন্টারেষ্টিং ওয়ে টু স্পেনড দা টাইম| লেট অস স্টার্ট ফ্রম দিলীপ|”
দিলীপের মনে হল কলেজের ছাত্রদের যেভাবে আদেশ করেন ঠিক সেইভাবেই গোমেজ সাহেব তার দিকে বলটা ঠেলে দিলেন|
গোল হয়ে বসা বন্ধুদের মধ্যে বাম দিক থেকে ক্লকওয়াইস এলে দিলীপের নামটাই প্রথমে পড়ে| দিলীপ পাস দিল| একে একে সবাই পাস দিল| এমনকি গোমেজ সাহেব নিজেও কিছু মনে করতে পারলেন না| মনে হল তিনি একটু দুক্ষিত হলেন সভাভঙ্গ করার জন্য| সবাই হাল ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে রইল কিছুক্ষণ , তারপর এক এক করে পানীয়র গ্লাস তুলে নিয়ে চুমুখ দিতে শুরু করল|
হঠাৎ এক ভদ্রলোকের গুরুগম্ভীর গলার আওয়াজে সবাইকার চমক ভাঙ্গল| নজরটা গিয়ে পড়ল সেইদিকে যে দিকে থেকে আওয়াজটার উৎপত্তি |
“কিছু মনে করবেন না| কাছাকছি বসে থাকার জন্য আপনাদের অনেক কথাই অনিচ্ছা সত্বেও আমার কানে আসছিল| অবশ্য আপনারাও যে খুব একটা নিচুস্বরে কথা বলছিলেন তা নয়| আপনাদের সাথে আলাপ না থাকলেও বরেন আমারও বন্ধু তাই আমাকেও এখানে বসার জায়গা দিয়েছে| কিছু যদি মনে না করেন এবং আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমার একটা এক্সপিরিয়েন্স এর কথা আপনাদের বলতে পারি| শুনতে হয়ত আপনাদের খারাপ লাগবে না| তাছাড়া সময়টাও কেটে যাবে|”
সবাই একবাক্যে রায় দিল যে ভদ্রলোক অনায়াসে তাঁর গল্প শুরু করতে পারেন|
“শুরু করার আগে নিজের পরিচয়টা আগে সেরে ফেলি| অধমের নাম ইন্দ্রনীল সেন, প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর| না না আপনারা যা ভাবছেন তা নয়| এরকম অনেক ছোটখাটো ব্যাপার থাকে যা লোকে পুলিশকে বলতে চায় না অথচ একটা হেস্তনেস্ত দেখতে চায়| সেই সব ব্যাপার নিয়েই আমার কারবার বুঝলেন না| যেমন ধরুন কোন স্ত্রী তার স্বামীকে সন্দেহ করেন, অথচ তাকে হাতেনাতে ধরতে পারছেন না| তারা তখন কি করবেন? ওদের মত লোকেরাই তখন আমার মত লোকের কাছে| বেশ নিস্ মার্কেট মশাই , রুজিরোজগার খারাপ হয় না| এছাড়া আরও অন্য ধরনের কাজও যে করিনা তা নয় | যা পাওয়া যায় বুঝলেন না, তবে এটার থেকেই আমদানিটা সবচেয়ে বেশি | আপনাদের মত লোকেদের হয়ত দরকার পড়বে না , তবু যদি কখন দরকার হয় তাহলে এই অধমের কথা স্বরণ করবেন| “ ইন্দ্রনীল তার পকেট থেকে ভিজিটিং কার্ড প্রত্যেকের হাতে একটা করে ধরিয়ে দিলেন|
“ যা বাবা , একি মাইরি | লোকটা তো আচ্ছা ধান্দাবাজ | গল্প বলার নাম করে নিজের ব্যবসা শুরু করে দিল| “
দিলিপ ফিসফিস করে বলে উঠল |
ইন্দ্রনীল তাঁর স্বভাব সুলভ গুরুগম্ভীর গলায় শুরু করলেন ”আমি লেখক নই তাই কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না| তেল আর জলে মিশ খায়না বলে একটা কথা আছে | কিন্তু রতনলাল আর অজিতকে দেখলে সেটা বোঝা যেত না| রতনলালের সঙ্গে অজিতের বন্ধুত্ব অন্তত কুড়ি বছরের তো হবেই| ব্যবসাটা যে কিসের ছিল তা আমি ভালো করে জানিনা| তবে খোঁজ নিয়ে যেটুকু জেনেছিলাম তাতে মনে হয় ছোটখাটো রাস্তাঘাট সারানোর কনস্ট্রাকসনের ব্যাপারে তারা জড়িত ছিল| তাছাড়া এই গল্পের সঙ্গে তাদের কাজের ব্যাপারে খুব একটা সম্পর্ক আছে বলা মনে হয় না| শুধু এইটুকু জানি যে অজিতের কাজ ছিল হিসেবপত্র রাখা| ওদের মধ্যে রফা হয়েছিল ফিফটি ফিফটি পার্টনারশিপ | বন্ধুত্বটা যে কি করে হয়েছিল এটাই পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য | রতনলাল খাঁটি ঘি খাওয়া মারোয়ারী, অজিত ভেতো বাঙালি | রতনলালেরা জাত ব্যবসাই, অজিতেরা জাত কেরানি | রতনলাল বেঁটে মোটাসোটা টাক মাথা , অজিত লম্বা রোগা মাথাভর্তি চুল | অমিল যদি ওখানেই শেষ হত তা হলে কথা ছিল না| যে অমিলটা ছিল সব থেকে বড় সেটা হল অজিতের সততা আর রতনলালের অসাধুতা | অজিতের সততা রতনলালের অজানা ছিল না, কিন্তু রতনলালের অসাধুতার কথা অজিতের জানা ছিল না| অজিত সবাইকে নিজের চোখ দিয়ে দেখত | সবাইকে ভাবত নিজের মতই সৎ| অজিত তার ভাগের সব টাকাই রাখত রতনলালের কাছে বিশ্বাস করে| রতনলালের ছিল দুটি নেশা | এক ছিল এন্টিক জিনিষ জমানোর শখ | পৃথিবীর নানান জায়গা থেকে নিয়ে আসত সে হরেকরকমের কিউরিও| কখন সে কিনে আনত রাজাদের ব্যবহার করা দামী আসবাব পত্র, অয়েল পেন্টিং , ঘড়ি অথবা দামী জুয়েলারী| আরো একটা নেশা ছিল রতনলালের| সেটা হল শেয়ার বাজারে টাকা খাটানো| এক কে দুই আর দুই কে চার করার স্বপ্ন দেখত রতনলাল| রতনলালের একটি পৈত্রিক বাড়িতেই ছিল তার এই এন্টিক জিনিষ রাখার জায়গা| বাড়িটা ছিল দোতলা , বেশ বড়সড় আর অনেকটা জায়গা নিয়ে| একতলার একটা কোনে ছিল তাদের অফিস, সেইখানে বসেই অজিত তাদের ব্যবসার হিসেব-নিকেশ রাখত| বাড়িটার বাকি ছিল খোলামেলা এবং তার প্রত্যেকটা জায়গায় সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা ছিল রতনলালের
নানারকমের কিউরিও | বাড়িটিতে প্রবেশ করার একটাই দরজা এবং দুটি চাবি| একটি চাবি থাকত অজিতের কাছে| অজিতের ওপর এতটাই বিশ্বাস ছিল রতনলালের |”
ইন্দ্রনীল দম নেওয়ার জন্যই বোধ হয় একটু থামলেন|
মিস্টার বসু সাথে সাথে এগিয়ে এসে একটি হুয়িস্কির একটি গ্লাস বাড়িয়ে দিলেন তাঁর দিকে| ইন্দ্রনীল একটি চুমুক দিয়ে পাশের টেবিলে গ্লাসটা রেখে দিলেন|
“আপনার এই ধানাইপানাই আর কতক্ষণ চলবে বলতে পারেন? আসল ব্যাপারটা কি খুলে বলুন না| “
দিলীপ একটু ঝাঁঝাল সুরে বলে উঠল |
ইন্দ্রনীল এতটুকু দমে না গিয়ে বললেন “আসলে পুরো ব্যপারটা বলতে চাই যাতে আপনারা সব শুনে এর একটা বিহিত করতে পারেন| কিছু বাদ দিতে চাইনা| আমি জীবনে অনেক কেস সলভ করেছি| আমাদের মতো লোকদের নিয়ে তো আর বমকেসের মতো লেখালেখি হয় না , তাই আপনারা জানেন না| একটা দুটো কেস সলভ করতে পারিনি এটা তার মধ্যে একটা | আমি চাই আপনাদের ভেতর যদি কেউ সব কিছু শোনার পর এর একটা বিহিত করতে পারেন| আপনাদের যা বলছি তার বেশির ভাগই আমি জেনেছি রতনলালের মুখে | বাকিটা অবশ্যই যোগাড় করেছি থিওরি অফ ডিডাকসনের সাহায্যে | আপনারা যদি শুনতে না চান তো আমি এই মুহুর্তে বন্ধ করে দিতে পারি|”
“দিলীপ ওনাকে বলতে দে, বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে |” গরম বেগুনীতে আর একটা কামড় দিয়ে অনিল দিলীপকে থামিয়ে দিল|
“প্ল্যানটা ছিল ষাট বছর বয়সের পর ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে দুজনে রিটিয়ার করে যে যার নিজের নিজের পথ বেছে নিয়ে চলে যাবে| রতনলাল কাটাবে তার এন্টিক জিনিষপত্র নিয়ে আর অজিত কাটাবে বিভিন্ন তীর্থে ঘুরে | দেখতে দেখতে একদিন সেই সময়টা এসে গেল| অজিত গেল রতনলালের কাছে তার পাওনা টাকাটা চাইতে| রতনলাল যত্সামান্য কিছু টাকা ধরিয়ে দিল অজিতের হাতে , যা তার প্রাপ্য টাকার অঙ্কের সিকিভাগেরও কম| অজিত সৎ ছিল কিন্তু হিসেবে ছিল পাকা| অজিতের বুঝতে অসুবিধে হল না যে তার বন্ধু তাকে ঠকিয়েছে| পয়সার জন্য কেউ এতটা নিচে নামতে পারে এটা ছিল অজিতের অজানা | ঘুনাক্ষুরেও সে তার বন্ধুকে সন্দেহ করে নি| দুই বন্ধুর মধ্যে কিছুক্ষণ কথাকাটাকাটি হল | শান্তশিস্ট অজিত পেরে উঠল না ধূর্ত রতনলালের সঙ্গে| যাওয়ার আগে অজিত রতনলালকে শুধু এইটুকু বলে গেল যে সে চিরকাল সৎপথে থেকেছে, ভগবানের ওপর তার অগাদ বিশ্বাস | ভগবান এর একটা বিহিত করবেন| ভগবানের ক্রোধ রতনলালের ওপর পড়বেই| রতনলাল ধরেই নিয়েছিল অজিত এই রকমের ব্যবহার করবে| তাই অজিতের কোন অভিশাপ তার কানে গেল না| বাড়ির একটা চাবি তখনও অজিতের কাছেই ছিল | অজিত বলেছিল ব্যবসার শেষ হিসেব নিকেশ করে দুদিন পরে এসে চাবিটা ফেরৎ দিয়ে যাবে শেষ বারে মতো| অজিতের সততার ওপর এমনই বিশ্বাস ছিল রতনলালের| যদিও তার প্রতিটি এন্টিক পাহারা দেওয়ার জন্য সিকিউরিটির ব্যবস্থা করাই ছিল | চাবিটা ফেরৎ দিতে এসেছিল অজিত দুদিন পরে| অজিত সেদিন সঙ্গে এনেছিল একটি এটাচি কেস|“
ইন্দ্রনীল হুয়িস্কির গ্লাসটা তুলে গলাটা ভিজিয়ে নিলেন|
“চাবিটা ফেরৎ দেওয়ার জন্য দেখা করার কথা ছিল সন্ধ্যে সাতটার সময়| রতনলাল অফিস ঘরে ঢুকে দেখল অজিত বসে আছে চেয়ারে | তাকে দেখেই এটাচিকেসটা খুলে কি একটা জিনিষ রাখল তারপরেই চাবিটা পকেট থেকে বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিল| অজিত এটাচি কেসের ডালাটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে| সেই দেখাই দুই বন্ধুর শেষ দেখা|তখনো অবধি কোন রকম সন্দেহ করেনি রতনলাল তার বন্ধুকে| “
ইন্দ্রনীল হুয়িস্কির গ্লাসটা তুলে গলাটা আবার ভিজিয়ে নিলেন| ইন্দ্রনীলের শেষ কথাগুলি শুনে এই প্রথম মনে হল সবাই খুব আকর্ষিত |
“ঘটনার প্রায় ছমাস পরে একদিন রতনলাল ঝড়ো কাকের মতো চেহেরা নিয়ে আমার অফিসে এসে হাজির| একটা ছোট খাটো ব্যাপারে রতনলালের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল আগে থেকেই| আমি একটু অবাক হলাম ওকে দেখে| কথাবার্তা অসংলগ্ন | যা বলল তার থেকে এইটুকু বুঝলাম যে অজিত তার এন্টিক কালেকসন থেকে দামী একটা কিছু হাতিয়েছে| কি নিয়েছে বারবার জিগ্যেস করতেও বলতে পারল না| শুধু এইটুকু বুঝতে পারলাম যে এটাচি কেসটার ডালাটা বন্ধ করার পরে অজিত একটা মুচকি হাসি হেসে নাকি তার দিকে তাকিয়েছিল | সন্দেহটা রতনলালের নাকি তার থেকেই হয়েছে| প্রথম যখন হাসিটা দেখেছিল তখন কোন সন্দেহ করেনি, কিন্তু যত দিন যেতে লাগল ততই সেটা বিশ্বাসে পরিনত হল| এখন শয়নে স্বপনে সেই হাসিটার কথা মনে পড়ছে| অজিত নাকি ওই হাসিটা দিয়ে তাকে ব্যঙ্গ করে বলছে তোমার নাকের ডগা দিয়ে নিয়ে গেলাম ধরতে পরলে না| অতএব আমাকে সে নিযুক্ত করতে চায়| আমাকে খুঁজে বের করতে হবে কি নিয়ে হওয়া হয়েছে অজিত| যতটাকা লাগে সে দেবে আমাকে| আমার হাতে তখন কাজ খুব একটা ছিল না| তাই গেলাম রতন্লালের সাথে এন্টিক রাখার বাড়িটিতে | যেহেতু জিনিষটি ছোট যা অনায়াসে এটাচি কেসে ঢুকে যাবে তাই বড়সড় জিনিষ বাদ দিলাম| ছোট জিনেষের একটা ক্যাটালগ বানালাম| রতনলাল এন্টিক কিনত বটে তবে তার কোন হিসেব রাখত না| কটা ঘড়ি , কটা হীরের আংটি তার আছে তার সঠিক উত্তর তার কাছে ছিল না| বলাবাহুল্য কয়েকদিন পরিশ্রম করার পর হাল ছেড়ে দিতে হল| চোরকে ধরা গেল না| আর তাছাড়া শুধু একটা মুচকি হাসির জন্য কাউকে চোর বলা যায় কিনা আমার নিজের মনেও সন্দেহ ছিল| “
ইন্দ্রনীল কথা বন্ধ করে তাকালেন সবাইকার দিকে| প্রতিক্রিয়াটা লক্ষ্য করলেন|
“এই হল আমার গল্প এবার |এবার বলুন আপনাদের কি মনে হয়? হাঁ ভুলে যাওয়ার আগে বলে দেই যে খবরের কাগজের মারফতে জেনেছি যে রতনলাল গত হয়েছেন দুদিন আগে| মানসিক অশান্তিতেই যে তিনি মারা গেছেন এ ব্যাপারে ডাক্তারদের মনে কোন সন্দেহ নেই| রতনলাল মারা যাওয়ার পর থেকেই বিবেক আমায় কুরে কুরে খাচ্ছে| আমি প্রফেশনাল , রতনলালের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছি কিন্তু কেসটা সলভ করতে পারিনি| “
“আচ্ছা আপনি কি কোন এন্টিক স্ট্যাম্প বা ছোট কোন পেন্টিং ছিল কিনা লক্ষ্য করে ছিলেন? শুনেছি কালেক্টার দের কাছে এগুলি নাকি অমূল্য “ প্রশ্ন কলেন গোমেজ সাহেব|
“বা কোন পুরনো বই, বা বিখ্যাত কোন লোকের হাতে লেখা চিঠি | “ দিলীপের প্রশ্ন |
“এমন তো হতে পারে যে রতনলালের মেয়ে ঘটিত কোন দুর্বলতা ছিল যা তার বন্ধু অজিতের জানা ছিল | এবং সেই সংক্রান্ত কোন চিঠি বা ফটোগ্রাফ অজিতের পক্ষ্যেচুরি করা সম্ভব | “ প্রিতমের গলা শোনা গেল |
“দেখুন আপনারা যা যা বললেন আমি তার প্রত্যেকটা কথাই যাচাই করেছি কিন্তু কোনটাতেই কাজ হয়নি| যেমন স্টাম্পের অপর রতনলালের আগ্রহ ছিল না, বই অনেক ছিল কিন্তু ঠিক কোন বই চুরি বলা খুব মুস্কিল যেহেতু বইয়ের কোন হিসেব ছিল না| রতনলাল অসৎ ছিল বটে কিন্তু মেয়েঘটিত কোন ব্যাপারে আসক্তি ছিল না| তাই ব্ল্যাকমেলিং এর ব্যাপারটাও বাদ দিতে হয়েছিল| “
“রতনলাল যে সিকিভাগ টাকা দিয়েছিল এটা কি করে জানলেন? রতনলাল নিশ্চয় আপনাকে সেকথা বলেনি| “ অনিল লইয়ারের মত জেরা করল|
“আশ্চর্যের ব্যাপার হল যে নিজেই একথা আমাকে বলে ছিল | অবশ্য বলেছিল যে শেয়ার বাজারে টাকা খাটাতে গিয়ে লোকসান হয়েছিল| তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা ওটা বাজে কথা , অজিতকে পুরো টাকাটা ও কখনই ফেরত দিত না| এই ধরনের লোকেরা চিরকাল তাই করে আসছে| অজিতের উচিত হয়নি রতনলালের কাছে টাকা গচ্ছিত রাখা| ”
“ আমার মনে হয় অজিত লোকটা ঠিক কাজই করেছে| চোরের ওপর বাটপারি করেছে| রতনলাল লোকটা পাজি ওর উচিত শাস্তি হয়েছে” দিলীপের ঝাঁঝাল উত্তর |
“ ইউ মিন চুরি করাটা তুমি সমর্থন করছ ? আইক্যান্ট বিলিভ ইট| আফটার অল ইউ ক্যান্ট টেক ল ইন ইওর ওন হ্যান্ড| আমার মতে লোকটার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত |” গোমেজ সাহেব তাঁর রায় দিলেন গম্ভীর গলায়|
“এটা সত্যি যে কোন সৎ যদি কখন অভিশাপ দেয় সেটা ফলে| সেই কারণেই রতনলাল সব কিছু পাওয়া সত্বেও ভোগ করতে পারল না| সব কিছু ফেলে রেখে চলে যেতে হল| “ রিপোর্টার মৈদুল মন্তব্য করল|
“তাই যদি হবে তাহলে সব বদমাইস লোকেরাই তাহলে পটল তুলত | আরে ওরাই তো সব সৎ লোকেদের টাকা পয়সা চুরি করে বড়লোক হয়| সব সৎলোকেরাই অজিতের মতো ওরকম অভিশাপ দিয়ে আসছে আদি অনন্তকাল ধরে| তাহলে আর পুলিশের দরকার কি? আমি তোকে আগেও বলেছি তোর রিপোর্টার না হয়ে পুরুত হওয়া উচিত ছিল” অনিল বিশ্বাসের গলায় ধমকের সুর|
“আচ্ছা একটা কথা আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে | রতনলাল ছয় মাস বাদে কেন আপনার কাছে এলেন চুরি যাওয়ার ব্যাপারে খোঁজ করার জন্য? এতদিন ওয়েট করে ছিলেন কেন? আরও আগে এলে হয়ত আপনার পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল| পুলিশের কাছেই বা রতনলাল যায়নি কেন? “ প্রিতম সিং তার বড়সড় চেহারাটা চেয়ার সমেত উঠিয়ে এগিয়ে এসে ইন্দ্রনীলের দিকে ফিরে প্রশ্নটা করলেন|
“ এই প্রশ্নটা আমিও করেছিলাম রতনলালকে| উত্তরে রতনলাল বলেছিল যে প্রথমে তার কোন সন্দেহ হয়নি|এতটাই বিশ্বাস ছিল তার অজিতের ওপর| কিন্তু যত দিন যেতে লাগল ততই তার মনে পড়তে লাগল তাকে দেখে অজিতের এটাচি কেসের ডালাটা বন্ধ করা আর মুখ টিপে মুচকি হাসিটা | সেই মুচকি হাসিটা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল | একটা বদ্ধমূল ধারণা ওর মনের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করল| অজিত কিছু একটা হাতিয়েছে|
তার এত শখের অমূল্য জিনিষ কেউ তার চোখের ওপর দিয়ে নিয়ে যাবে আর সে দাঁড়িয়ে দেখবে এটা সে কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারছিল না| পুলিশের কাছে গিয়ে কোন লাভ নেই কারণ ওই সব জিনিষের কোন অফিসিয়াল রিসিট ওর কাছে ছিল না| তাছাড়া আমার ধারণা রতনলাল যে রকম ধুরন্ধর সে নিশ্চই ব্ল্যাক টাকায় ওই সব কেনাকেটা করত| বুঝতেই পারছেন যে পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘ| আর কোন উপায় না দেখে অজিতকে শায়েস্তা করার জন্য আর হাতেনাতে ধরার জন্য সে এসেছিল আমার কাছে| “
বিখ্যাত বাউল গায়ক গোরা ভৌমিক প্রশ্ন করলেন “ছয় মাস অনেকটা সময়, রতনলাল কি করে ভাবল যে অজিত জিনিষটা কোথাও চড়া দামে বেচে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেবে?”
“ঠিক বলেছেন | আমি এই প্রশ্নটাও করেছিলাম ওনাকে| তার উত্তরে আমায় রতনলাল বলেছিল তা সত্বেও তার জানা দরকার কি জিনিষ অজিত চুরি করেছিল| আমার ব্যক্তিগত ধারণা অজিতকে শাস্তি দিতে পারুক না পারুক অজিত যে সৎ নয় তার মতই একজন চোর সেটা প্রমান করার জন্যই সে উঠে পড়ে লেগেছিল| “
“আচ্ছা আপনি কি অজিতের খোঁজ করেছিলেন? সে এখন কোথায় ? তার পুরো নামটাই বা কি?” গোমেজের আবার প্রশ্ন |
“হাঁ তা করেছিলাম বৈকি| সে রতনলালের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কয়েক দিন তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়ায়, তারপর পয়সাকড়ি ফুরিয়ে গেলে কলকাতায় ফিরে আসে| শুনেছি সে বর্তমানে একটা ক্যাটারিং কোম্পানিতে কাজ নিয়ে ঢুকেছে| কোম্পানির নামটা জানা হয় নি | তার পুরো নাম অজিত কৃষ্ণ বাসু|”
“আরে আমাদের মিস্টার বসু নয়ত ? ওনাকে ডেকে জিগ্গেস করলেই তো হয়|? “ দিলীপের আগ্রহ ফেটে পড়ার মতো | একটা চাপা উত্তেজনায় সবাইকার মধ্যে লক্ষ্য করলেন ইন্দ্রনীল |
“ একটু আস্তে সবাই | শান্ত হোন| হাজার হোক লোকটা সৎ| যতক্ষণ না অন্য কিছু প্রমাণিত হচ্ছে | আমরা সত্যি জানিনা উনি চুরি করেছেন কিনা? শুধু রতনলালের কথার ওপর ভিত্তি করে কাউকে হেনস্ত করা উচিত নয়| এই ধরনের জেরা করায় আমি অভ্যস্ত তাই আমাকেই কাজটা করতে দিন | “ ইন্দ্রনীলের গলায় ব্যক্তিত্বের প্রভাব প্রথম লক্ষ্য করল সবাই|
ঠিক সে সময় মিস্টার বাসু একটা নতুন পানীয়ের গ্লাস নিয়ে হাজির হয়ে নামিয়ে রাখলেন হলেন ইন্দ্রনীলের সামনের টেবিলে | শেষ হয়ে যাওয়া গ্লাসটা তুলে নিলেন | মনে হল ইন্দ্রনীলের দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলেন| চলে যাচ্ছিলেন গ্লাসটা হাতে নিয়ে কিন্তু ইন্দ্রনীলের প্রশ্নে ঘুরে দাঁড়ালেন|
“অজিত বাবু আপনি রতনলালকে চেনেন? “
“বিলক্ষণ , খুব ভাল রকম চিনি| কেন বলুন তো ?”
“কি করে চেনা হল আপনাদের?”
“ওর সঙ্গে এককালে ব্যবসা করতাম| খুবই বন্ধুত্ব ছিল এক সময়| “ এতটুকু অবাক না হয়ে উত্তর দিলেন মিস্টার বাসু|
“আপনি যখন নিজের থেকেই বললেন যে আপনারা ব্যবসা করতেন তখন আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল| ইচ্ছে হলে উত্তর দেবেন অথবা দেবেন না যা খুশী আপনার| কোনটাতেই আমি আপত্তি করব না| আপনার সঠিক আর বেঠিক উত্তরে এখন আর কিছু আসে যায় না| শুধু আমার কৌতুহল চরিতার্থ করার জন্যেই জানতে চাই| সত্যি করে বলুন তো আপনি কি রতনলালের কোন জিনিষ তার অজান্তে নিয়ে এসেছিলেন চলে আসার দিন? আর সেটা কি অমূল্য কোন জিনিষ? “
“হাঁ আমি নিয়েছিলাম বৈকি| তবে সেটা সত্যি অমূল্য কিনা , এমন কি তার দাম যে কত তা আমি আজও নির্ণয় করে উঠতে পারিনি| “
“ব্যাটাকে দেখলে মনে হয় ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেন না| অথচ ঘটে ঘটে এত বুদ্ধি |” দিলীপের ফিসফিস করে বলা কথাটা শুনতে পেয়ে গোমেজ কটমট করে তাকালেন তার দিকে | দিলীপ চুপ করে গেল |
“আপনি জানতেন যে রতনলালের প্রানের চেয়েও বড় ছিল তার তিলতিল করে জমানো ওই কিউরিও সংগ্রহ আর আপনি এটাও জানতেন যে তার ওই কিউরিওর কোন হিসেবই সে রাখত না| তাই কোন জিনিষ হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে সে জানতেও পারবে না| অতএব ধরে নিতে পারি যে আপনার ওকে না জানালেও চলত | কিন্তু আপনি ইচ্ছে করেই আপনার বন্ধুকে জানিয়ে এসেছিলেন যে আমি তোমার একটা অমূল্য জিনিষ নিয়ে গেলাম, তুমি কিছুই করতে পারলে না| ঠিক কি না?”
“একেবারে ঠিক স্যার| আপনার কোন ভুল হয় নি | “
“আপনি তো শুনেছি সৎ লোক আপনার একবারও মনে দুঃখ হয় নি?”
“না স্যার আমার কোন দুঃখ হয় নি|”
“আপনার একবারের জন্য ধরা পড়ার কথা,জেলে যাওয়ার কথা মনে হয় নি?
“ না স্যার একবারের জন্যেও নয়, একদিনের জন্যেও নয়|”
”পাক্কা ঘুঘু মাইরি | দিনে দুপুরে ডাকাতি করতে পারে|” দিলীপের ফিসফিসে গলার আওয়াজ পাওয়া গেল| গোমেজ সাহেবের তরফ থেকে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না|
“ঠিক আছে আমরা সব শুনলাম | এখন বলুন আপনার কি আপত্তি আছে আমাদের কাছে বলার কি জিনিষ সেদিন আপনি আপনার এটাচি কেসের মধ্যে ভরে নিয়ে এসেছিলেন? আপনাকে আমি এত জনের সামনে বলেছি আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কোন ইচ্ছে আমার বা আমাদের নেই| “
“ না আপত্তি করার কোন কারণ তো নেই স্যার| আর আপনাকে তো আগেই বলেছি যে জেলে যাওয়ার ভয় কোনদিন আমার ছিল না, এখনো নেই| সত্যি কথা বলতে কি আমি কিছুই নিয়ে আসিনি রতনলালের কাছ থেকে| আমার এটাচি কেস সেদিন খালি ছিল| “
“এত অমূল্য সম্পদ তাহলে গেল কোথায়? আপনি কোথায় সেটাকে লুকিয়ে রাখলেন?”
“কোথাও লুকিয়ে রাখার তো দরকার ছিল না স্যার|”
“তাহলে কি চুরি করেছিলেন সেদিন আপনি? আপনি কথার পিঠে কেবল কথা বসিয়ে যাচ্ছেন আসল কথটা এড়িয়ে গিয়ে| আর একবার আমি আপনাকে চান্স দিচ্ছি|” একটু ঝাঁঝের সাথেই প্রশ্নটা করলেন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর ইন্দ্রনীল সেন|
শান্ত স্বরে উত্তর এল “ আমি সেদিন শুধু রতলালের মানসিক শান্তিটা আমার সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম, ডালাটাকে বন্ধ করে| সেটাকে ঠিক চুরি বলা যায় না, যায় কি স্যার?”
মিস্টার বাসু মাথা উঁচু করে পানীয়ের গ্লাসটা হাতে নিয়ে চলে গেলেন|
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সেই দিকে।
লেখক পরিচিতি : সুব্রত মজুমদার , ইউনাইটেড স্টেটস