“না ওইটা হবে না,যা ভাবছেন ভাবুন, আমরা যেমন ভাবে যাতায়াত করে অভ্যস্ত ,সেভাবেই যাব”-না না এটা কোন ব্যক্তিবিশেষের সংলাপ নয় এটা অনেক মানুষের মনের ভেতরে প্রবেশ করে তুলে আনা সামগ্রিক সংলাপের মডেল মাত্র !
আইজ্ঞে, আমি ভিড় ট্রেন, বাসে বাদুড়ঝোলা ভিড় দেখে নর-নড়ন চরণ হয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নওজোয়ান দের কথা বলছি! বয়সের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক মধ্যবয়সী মানুষকেও দেখি ভেতরে ভিড় থাকুক, আর নাই থাকুক ,খালি সিট কি তিল ধরণের জায়গা নেই দাঁড়ানোর ওসব ভাবনা এনাদের কোন হেলদোলে আনে না !
উঠেই গেটের গোড়ায় দাঁড়িয়ে একাগ্র মনে আপন ভাবনায় ডুব নয়তো মোবাইলে মনোযোগ বা বাইরের অপার সৌন্দর্য দর্শনে মনোনিবেশ! তাতে কোন বয়স্ক পুরুষ কি মহিলা যাত্রী উঠতে পারলেন, কি, না পারলেন, পিছলে পড়ে যাবেন কিনা,এসব ভাবতে বড়ই বয়ে গেছে ভারী! “কি আছে যাত্রীরা ,না হয় পরের ট্রেনে,বা বাসে যাবেন তাতে কি আছে , আমরা তো দিব্যি আছি কাউকে ডিসটার্ব না করে !”
এরপরেও যদি সমবেত প্রচেষ্টায় একটু মেজাজ চড়ানো যায় তবে হয়তো হাতে নাতে কিছুটা ফল আসে কদাচিৎ! বড়জোর ভদ্রতার খাতিরে সামান্য কয়েকজন নিজেদের ঝাঁকিয়ে সরে গেছি এই বার্তা দেন অনুগ্রহ করে। মুড়ির টিনে মুড়ি ঢালতে গিয়ে উপছে পড়লে,যেমন আমরা চাপড়ে চাপড়ে জায়গা বের করি আর মুড়ি ঢালি ,অনেকটা সেই রকম হলেও না হতো কিন্তু এদের চাপড়াবেই বা কে আর জায়গাই বা বের করবে কারা ব্যস্ততার বিড়ম্বনায়!
তাই এই গেটে দাঁড়ানোজোর ভরত যাত্রী গনের কোন হেলদোল থাকে না! বাসে যদিও বা কনডাকটার বলে এক ব্যক্তি থাকেন, তিনি মাঝেমধ্যে দাপড়ে পাদানিতে নিজের একটা সিট ম্যানেজ করে বীর পুরুষ দের সরিয়ে দেন কিন্তু ট্রেনে আমরা সবাই রাজা অবস্থা ! মাঝে মধ্যে হকার গুলো অবশ্য একটু আধটু গুঁতো দিয়ে সরায় গেটের সামনে থেকে তবু বেশির ভাগই মুখ চেনা বলবে কাকে!অগত্যা এরা সেই নামা ওঠার রাস্তা আটকে যাত্রা করতেই অভ্যস্ত ও এই ভাবেই করবে তাতে আমার ,আপনার অসুবিধা হলো তো বয়েই গেছে এদের!
সেদিন বাসে এক ভদ্রলোক ,দেখলাম একদম খালি গায়ে, উঠে আমার পাশে বসলেন । আমার অবাক হবার আগেই উনি বিনয়ের সঙ্গে জানালেন গায়ে জামা না রাখতে পারার অপারগতার কথা,রাখলেই নাকি অস্বস্তি হয়! জানি না ডাক্তারি পরিভাষায় একে কি বলে ! কিন্তু সে অর্থে খালি চোখে বাহ্যিকভাবে তেমন কিছু চোখে পড়লো না স্কিনে যদিও । তবুও অন্যের অসুবিধা হতে পারে ভেবে যে উনি স্বীকার করলেন এটাই অনেকে করেন না সেটাই দুর্ভাগ্যের ও দুর্ভোগেরও!
কিছু মানুষ দেখা যায়, ট্রেনের রিজার্ভ সিট পেয়ে গেলে যেন যা খুশি করতে পারি এই মানসিকতার চাবি কাঠি পেয়ে যায় ! কখনো জামা খুলে ,স্যান্ডো গেঞ্জী ও বারমুডা পরে, সিটে পা তুলে পরিবারের সাথে খোশ গল্পে এমন মাতন করেন বা সজোরে মোবাইল গান বাজিয়ে! বাকিদের অসুবিধা হলো কিনা বা পাশের সিটের কোন মহিলার অস্বস্তির জার্নি হচ্ছে না তো ,এই ভাবনায় থোড়াই কেয়ার!
যা খুশি করতে পারি যেখানে খুশি, এই মানসিকতায় চলা সেই মানুষটাই আবার নিপাট ভদ্র লোকের মত সুর নরম করে বাধ্য জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে যায় বিশেষ কড়া পরিস্থিতিতে,মেট্রোতেও! যেই দেখে কই কেউ কিছু বলছে না,বেলেল্লেপনা করার অফুরন্ত সুযোগ ! অমনি এই সব ভাবনা,স্বাধীন পরিস্থিতিতে বেয়াদবি বাড়তে থাকে !যদিও মেট্রোর কথা আর না মনে করানোই সমীচীন, এই কিছুদিন পূর্বে,মেট্রো কামরার ঘটনাও সব সীমা লঙ্ঘন করার নজির রেখেছে !
ট্রেনের কামরায় বসে দিব্যি খোশমেজাজে ধূমপান এমনই একটি বিষয় !একা বারণ করতে যান উল্টে অপবাদ জুটবে তবু কেউ করুক বা না করুক আমি প্রতিবাদ করি! একটু বারণ করার প্রচেষ্টা নিদেনপক্ষে সে না শুনলেও বেশ কয়েকজন কে বার্তা দেওয়া যায় যে এটা করা উচিত নয় প্রকাশ্যে! অনেক সময় সাপোর্ট করার যাত্রীও দু একজন জুটে যায় এটা দেখেছি।
যে মানুষটা রাস্তায় যেতে যেতে বহু বার থুতু ফেলে,সেই মানুষটাই কোনো অফিসে বহু মানুষের ভিড়ে দিব্যি ঘন্টার পর ঘন্টা চুপ করে অপেক্ষা করতে পারে!একদম ডিসিপ্লিন মেনে । অর্থাৎ এটা প্রমান করে ভালো,কি খারাপ উভয় গুনাবলী সুপ্ত হয়ে থাকে সকল মানুষের মধ্যে ।নিয়ম নীতি বিহীন পরিবেশ পাল্টে যেতে সহায়ক করে বেশি করে। যে মানুষটাই মেট্রো স্টেশনে আদব কায়দায় নিপাট ভদ্র লোক আবার এই জন ই অন্য স্থানে অন্য রূপে !
আমাদের মেনে নেওয়া,সহনশীলতা, ও নিয়ম নীতি না থাকা পরিবেশ ,মানুষকে ভদ্রতার মুখোশ থেকে বেরিয়ে অমানুষ হতে অনেক সময় সাহায্য করে! তাই অনুরোধ ,প্রয়োজনে প্রতিবাদ করুন, চুপ থাকা নয়, আমার কি দরকার ,বেশ আছি ঝামেলা হয় যদি এসব স্বার্থপর ভাবনায় না গা এলিয়ে যতটা সম্ভব । অবশ্য নিজের নিরাপত্তার দিকটা ভাবনায় রেখেও অন্যায় প্রতিবাদ করলে,প্রতিবাদের বিষয়টা সামান্য হলেও ছড়িয়ে দিলে একটুখানি হলেও পরিবেশকে সুস্থ রাখা যায় ।এ বিষয়ে আপনারা কি বলেন শোনার অপেক্ষায় রইলাম। যদিও এই ধরণের মানুষ গুলোর সামাজিকীকরণ, বেড়ে ওঠার পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক মেলামেশা,শিক্ষাদীক্ষা রুচিবোধ এমন অনেক বিষয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে তার আচার আচরণ তৈরিতে সেটা মেনেও বিষয়টাকে একটা দিক ধরে উত্থাপন করলাম।
— রাণা চ্যাটার্জী (পূর্ব বর্ধমান )
পরিচিতি: ছোটবেলা থেকেই কবিতা,ছড়া, সৃজনশীলতার ওপর আত্মিক টান বর্ধমান শহর নিবাসী রাণা চ্যাটার্জীর।প্রতিভা,সারল্যের মেলবন্ধন ও অনুভূতিপ্রবণতায় অবিরাম সৃষ্টি করে চলেছেন কবিতা,ছোটগল্প,বাচ্ছাদের জন্য ছড়া, নিবন্ধ,কার্টুন। নক্ষত্রানি সম্মান,কবির “মেঘ বালিকা তোমায়”,”ছন্দ ছড়ায় জীবন” কাব্যগ্রন্থ ও নিয়মিত পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশ রাণা চ্যাটার্জী’র আগামী উজ্জ্বল করুক।
[…] লেখকের আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন "অথঃ-যাত্রী-কথা" […]
খুব সুন্দর হইছে | আমি এই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলাম |
[…] "বনধ-অবরোধ" "পরকীয়া" "শ্রীমতির গল্প" "অথঃ-যাত্রী-কথা" […]