রাই আর রাহুলের নতুন বিয়ে বাড়ির অমতেই বলা যায়।তাই শ্বশুরবাড়ীতে ঠাঁই হলো না রাইয়ের।নতুন ভরা সংসারের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলেও রাই জানে সে ঠিক মানিয়ে ফেলবে পরে বাড়ির লোকজনদের।আপাতত ওরা রাজারহাটের একটা ফ্ল্যাটে প্রায় ফাঁকা ফ্ল্যাটে ভাড়া নিল নিরিবিলিতে।রাহুলের অফিস সেক্টর ফাইভে।ওই পস জায়গায় ওর পক্ষে খরচা বহন করা সম্ভব ছিল না তাই এই দিক টাতেই নিতে হল।নিরিবিলিতে জায়গা টা খারাপ না।এমনি বেশ হাওয়া খেলে আর প্রসারিত জায়গাতেই ফ্লাট।বেশ কম ভাড়াতে এই দু কামরার ছোট ফ্লাট টা মন্দ না।আসলে ওদের ফ্ল্যাট তিন তলাতে ওদের সামনে যারা থাকে তারা নাকি এখন বিদেশে ছেলের কাছে আছে।আর পুরো দুটো তলায় একটা তে পুরো অফিস ভাড়া দেওয়া আর একটাতে দোকান।সারাদিন বেশ জমজমাট।রাতে কিন্ত নিঝুম বলা যায়।অফিস তো আগেই বন্ধ হয়ে যায় শুধু একদম নিচের তলায় দোকান আছে সেটাই যা খোলা থাকে রাত ৮ টা অবধি।রাহুল আর তার প্রিয়া রাই দুজনে মিলেই ঘর পছন্দ করে।ওরা এক বছর বাদে ভালো জায়গায় চলে যাবে।সব জিনিস পত্র ওরা নিয়ে এসে গুছিয়ে নিলো দুই দিনের মধ্যে।রাহুলের অফিস শুরু ১০ টায়,ওকে নয়টার মধ্যে বেরিয়ে চলে যেতে হয়।আর রাতেও ফেরে কোনোদিন ৯ টা বা ১০ টা।অফিসে তাড়াতাড়ি হলেও যানজটের জন্য দেরি হয়ে যায়।সেদিন রাতে রাহুল আসার আগে রাই রান্না সেরে স্নান করতে আসে বাথরুমে।
হঠাৎ ও ঢোকার আগেই ওর যেন মনে হল কেউ বাথরুমে আছে।লাইট জ্বলতেই দেখে কেউ নেই।ও স্নান করে বেরোবে এমন সময় পাওয়ার অফ।ও বেরোতে যাবে হঠাৎ ও দেখলো কল থেকে জল পড়া শুরু হয়ে গেছে।রাই ভাবলো,’আমি তো কল খুলে রাখিনি,বন্ধ করেই রেখেছিলাম।জলের এত শব্দ বা জল তো পরছেও।কি জানি ভুলো মন আমার!রাহুলের কথা ভাবতে ভাবতে যে কি করি!’ ও কল টা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় পাওয়ার এসে আলো জ্বলতে দেখে সব ঠিক আছে।খানিক হতভম্ব হয়ে গেল।এরপর রাহুল আসতেই ওকে জড়িয়ে ধরে বললো রাই সব ঘটনা। রাহুল বললো,’ধুর পাগলী,এসব তোর মনের ভুল।কপালে চুমু দিয়ে বললো,চল ফ্রেস হই তারপর একসাথে খাবো।’ রাতে একসাথে খেতে খেতে সারাদিনের গল্প শুনতে লাগলো।শুতে শুতে ওদের ১২ টা বেজে যায়।তারপর বিছানায় শুয়ে পরস্পর অলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় নিজেদের ভালোবাসার আলাপচারিতায় মধ্যে যখন মগ্ন তখন হঠাৎ ওরা খুব জোরে একটা চাপা স্বরের কান্না শুনতে পেল।রাহুল আলো জ্বেলে খুঁজতে গেল ব্যালকনিতে কি হয়েছে জানতে।দেখে কেউ কোত্থাও নেই।কান্নাও নেই।রাত ১ টা তখন।আবার লাইট নেভালেই সেই আওয়াজ!সারারাত ওরা একটা সি এফ এল জ্বালিয়ে কোন মতে জেগে ঘুমোল।রাই বেশ ভয়ে ছিল।রাহুল সকালে বললো যে,’সোনা তুমি চিন্তা করোনা, আজ এর একটা বিহিত করবো তাড়াতাড়ি ফিরে।’ রাই ভয়ে কেঁপে কাছে গিয়ে বললো,’আজ দোকান বন্ধ হওয়ার আগে ফিরো কিন্ত।’ রাহুল কপালে আলতো চুমু দিয়ে বললো,’সিউর,ম্যাডাম।’রাইয়ের কোন দিকে মন বসছে না।দুপুরে সামান্য ঘুমিয়েছে।রাতে রান্না সেরে নিয়েছে কোন মতে।রাহুল বারবার ফোন করে খবর নিয়েছে, বলল’৭ টার মধ্যে বেরিয়ে যাব।৮ টায় ঠিক পৌঁছে যাব।’সেই অপেক্ষায় আছে।রাত আট টা বেজে গেছে।দোকানও বন্ধ কিন্ত রাহুল আসছে না কেন এই চিন্তা আর ভয়েই আছে রাই।মাকে ফোন করেও কিছু বলেনি পাছে মা চিন্তা করে!আবার সেই পাওয়ার অফ।রাই ভয় পেয়ে গেল।হঠাৎ শুনতে পেল সেই আওয়াজ একদম আগের দিনের মত।আওয়াজ টা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে আর ওদের বেড রুম থেকে আসছে।ও কাছে যেতেই হাড় হিম হয়ে গেল।দেখলো লাল শাড়িতে কেউ গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে।আর তার শাঁখা-পলা দেওয়া হাত টা যেন ক্রমশ এগিয়ে আসছে রাইয়ের দিকে।রাই পিছাতে পিছাতে দেওয়ালে মাথা ঠুকে গেল।অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
রাহুল এসে দেখে যে রাই পড়ে আছে আর মাথা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে।তারপর রাহুল ওকে ওষুধের দোকানে স্টিচ করিয়ে ফিরলো বাড়িতে।সারারাত দুজনে জেগে সকালেই এই ঘটনা জানালো দোকানে আর অফিসে।দোকানদার বেশ বয়স্ক।তার কাছ থেকে উদ্ধার হলো যে বছর দুই আগে এখানে একজন দম্পতি থাকতো।তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ভদ্রলোকের স্ত্রী আত্মহত্যা করেছিল।তার পর থেকেই বন্ধ ছিল ফ্ল্যাট।সেই অতৃপ্ত আত্মাই রোজ রাতে আসে হয়তো।ওদের নতুন ভালোবাসায় হয়তো বাধা দিতে ফিরে আসে অতৃপ্ত জীবনে।রাহুল ফ্ল্যাটের মালিকের সাথে কথা বলে সব কিছু খুলে বললো।তারপর বলল,’আপনি পুজো-আর্চা না করে কেন আমাদের এরকম ভাবে বিপদে ফেললেন।’মালিক বললেন,’আমি নতুন রং করলাম কিন্ত ভাবিনি এরকম ঘটনা ঘটতে পারে।আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।আপনারা উঠে যান।আমার আর ও কমিউনিটি ফ্ল্যাটে যান।একটু বেশী টাকা লাগবে সেটা আপনি এক বছরে দিয়ে দেবেন এক্সট্রা টা।’রাহুল রাইকে আপাতত ওর মায়ের কাছে রেখে ওদের বাড়ি থেকেই যাতায়াত করে।এক মাস পর ওরা ফ্ল্যাটে যাবে।এবার ওদের শাশুড়ি মা যাবে কদিনের জন্য।
কলমে সুনন্দা যশ
পেশায় রিসার্চ স্কলার, নেশায় আর ভাবনায় লেখা আর ভালো বইয়ের পোঁকা।শিখতে আর পড়তে ভালো লাগে