1955 খ্রিস্টাব্দের 5-ই জুলাই তেলেঙ্গানা রাজধানীর হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন পি.ভি সিন্ধু। তার পিতা ও মাতা, উভয়ই ছিলেন সফল ভলিবল খেলোয়াড়। কিন্তু সিন্ধু পেশা ও আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ব্যাডমিন্টনকেই। ছোটবেলা থেকেই তার খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। পিতা-মাতার সহযোগিতা এবং ভালোবাসায় তিনি আজ ভারতীয় ইতিহাসের পাতা জুড়ে এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত!!
সিন্ধু, মেহবুব আলীর তত্ত্বাবধানে সেকেন্দ্রাবাদের ‘রেলওয়ে ইনস্টিটিউট অফ সিগন্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেলিকমিউনিকেশনে’ প্রথম ব্যাডমিন্টন শিখতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ‘পুল্লেলা গোপীচাঁদের’ ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে ভর্তি হন। বলা বাহুল্য, তার কোচিং ক্যাম্পটি বাড়ি থেকে 56 কিলোমিটার দূরে থাকা সত্বেও তিনি প্রতিদিন নিয়মমাফিক সেখানে পৌঁছে যেতেন। যা খেলাধুলার প্রতি তার প্রবল ঝোঁক এবং উৎকর্ষতার এক অন্যতম নিদর্শন স্বরুপ!
2009 সালে সিন্ধু কলম্বোতে সাব- জুনিয়র এশিয়ান ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্রোঞ্জ পদক প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এবং পরের বছরেই নিজে উবার কাপে ভারতীয় জাতীয় দলের একজন সদস্য হয়ে উঠেছিলেন। তারপর থেকেই একের পর এক চূড়ান্ত ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন পি ভি সিন্ধু। 2012 সালে চীনের অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী লি- জুয়েরুইকে পরাজিত করে সবাইকে অবাক করেছিলেন! এবং 2013 তে সিন্ধু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রথম মহিলা একক পদকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার অসামান্য পারদর্শিতার জন্য তিনি ভারত সরকার কর্তৃক অর্জুন পুরস্কারেও সম্মানিত হন। তিনি বিশ্ব ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে পরপর দুটি পদক জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে রৌপ্য পদক জিতেছিলেন তৎকালীন সর্বকনিষ্ঠ বিজয়ী খেলোয়াড় পি. ভি. সিন্ধু।
একের পর এক স্বর্ণপদক, রৌপ্য পদক এনে ভারতবর্ষকে গৌরবমন্ডিত করে তুলেছেন এই অনন্যা! সিন্ধু বরাবরই ছিলেন অক্লান্ত পরিশ্রমী। একজন খেলোয়াড় হিসেবে তার নিষ্ঠা, সততা এবং চেতনার জুড়ি মেলা ভার!! ভারতের পঞ্চম মহিলা অলিম্পিক পদকপ্রাপ্ত সিন্ধু বাংলার সোনার মেয়ে। আমাদের দেশ, ভারতবর্ষের গর্ব। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে পরপর অলিম্পিকে দু-দুটি পদক জয়ের নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই অনন্যা, আমাদের সকলের মনের মনিকোঠায় চির বিদ্যমান।
মাত্র 26 বছর বয়সের মধ্যে মোট 5 টি স্বর্ণপদক, 6 টি রৌপ্য পদক এবং 10 টি ব্রোঞ্জ পদক উপহার দিয়েছেন ভারতবর্ষকে। পি. ভি.সিন্ধু আমাদের দেশের গর্ব। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, খেলরত্ন প্রভৃতি বিবিধ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বাংলার এই সোনার মেয়ে! তিনি ভারতকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্টিত করতে পেরেছেন। ভারত মায়ের অমূল্য ধন হচ্ছেন পি. ভি. সিন্ধু। 2019 সালে অলিম্পিকে প্রাপ্ত স্বর্ণপদকে তার নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় শোভাবর্ধন করে। সিন্ধু এখনও তার অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে ভারতবর্ষকে গৌরবোজ্জ্বল করে চলেছেন।
ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মেয়ে তিনি নন। জীবনে বহু বাধা অতিক্রম করে; বহু প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে, বারবার সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। আমাদের তেরাঙ্গা পতাকায় সোনার মুকুট পরিয়েছেন!! এবং উচ্চতার শিখরে পৌঁছেছেন যিনি, তিনি আর কেউ নন… আমাদের দেশের মেয়ে; দশের অনুপ্রেরণা পি. ভি. সিন্ধু।। এই অনন্যা আমাদের গর্ব। আমাদের অহংকার। অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া সহায়হীন হাজারো মেয়ের পথের দিশা এবং অন্যতম নক্ষত্র পি. ভি. সিন্ধু।
তার বিবিধ পদক ভারতবর্ষের জন্য শুধু উপহারই এনে দেয়নি, দিয়েছে যথাযোগ্য সম্মান এবং সফলতা। কোটি কোটি ভারতবাসীর অনুপ্রেরণা পি. ভি. সিন্ধু কে জানাই আমার শতাধিক কুর্নিশ।।
‘সিন্ধু বাংলার সোনার মেয়ে
লেলিহান শিখার ন্যায় উজ্জল।
সিন্ধু ভারতীয়দের চোখের মনি;
হাজারো মেয়ের মনোবল’।।
কলমে শ্রাবনী ঘোষ