রাতে আকাশটা একদম পরিষ্কার৷ নমিতা পাশ ফিরে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে৷ পেছন থেকে ওকে ওকে জড়িয়ে রেখেছে অর্ক৷ 
– “তুমি আর আমায় আগের মত ভালবাস না৷” কথাটা অভিমানের সুরেই বলল নমিতা৷ – “এই তো ভালবাসছি৷” এই বলে গভীর চুমুতে উন্মাদ করে তোলে নমিতাকে৷ 
নমিতা উত্তাল সমুদ্রে ভাসতে থাকে৷ ভেসে ভেসে শান্ত হয়৷ – “ও কাজগুলো ছেড়ে দাও৷ কতদিন আর ওদের হয়ে লোক মারবে বল৷” নমিতা বুকের ওপর চাদরটা টেনে বসে পড়ে৷ – “এ জগতের সব কাজ ছেড়ে দিলাম তো আজ থেকে৷ ” অর্ক হেয়ালি করেই বলল৷ – “অত হেয়ালি ভাল লাগে না আমার৷ আর তো কটা দিন তারপর আমি চাকরীটা পেয়ে যাবো৷ তুমি কাজ না করলে চলবে কী করে বল!? বাচ্চাদুটো তো না খেয়ে মরবে! ” দুসন্তানের মা হলে যা হয়৷ দুটো মেয়ের বাবা এই অর্ক খুব নামকরা খুনি৷ নমিতার সাথে প্রেম হবার পর থেকে নিজেকে একটু একটু করে গুটিয়ে নিয়েছে বিপথ থেকে৷ তবে সঙ্গ ছাড়ার কোন পথ সে পায় নি৷ বিগত বছর খানিকের মধ্যে বেশ কটা মার্ডার হয় ঝুপিপাড়ায়৷ সবকটারই প্রত্যক্ষদর্শী অর্ক৷ নিজের গ্যাং এর বিপক্ষে গলা তোলার সাহসটা ভালই জমিয়েছে৷ গতকাল সকালে সকাল কোর্টে সাক্ষ দিয়ে এল ও৷- ” কোন কিছু না জেনেই এত কথা বলছ? কাছে এস আর একটু আদর করি ৷” এই বলে আবারো অর্ক জড়িয়ে ধরে নমিতাকে৷ – “আমি তোমা………. উউউউমমমমমম” আবার অর্ক ঠোঁট দিয়ে থামিয়ে দেয় নমিতার কথা৷ – “কী হয়েছে তোমার বল তো?এত এত ভালবাসছ৷ কখনো তো এমন করো নি৷ ” অর্ক চিৎকার করে হেসে বলতে লাগলো, – “আমার সময় খুব কম রে পাগলি তাই আদর করছি৷ আর তো তোকে এমন করে পাবো না৷ “নমিতার হেয়ালি পছন্দ নয়৷ এবার গালাগাল দিয়ে উঠলো সে৷ – “দেখ এসব বালছাল কথা বলতে এসো না৷ না শুতে ইচ্ছে হয় শোবে না তাই বলে অলুক্ষুনে কথা বলবে? হ্যা? ” -” আমি একটু বের হবো বুঝলে৷ ” -” তা কোথায় যাবে এত রাতে? “-“ভিমার দোকানে যাবো৷ একটু মাল না গিললে হচ্ছে না৷”নমিতা রেগে আবার কিছু বলতে যাবে তখনই – “আজকেই শেষবার৷ আর খাবো না কথা দিলাম৷”নমিতা একটু দমে গিয়ে ব্রা এর হুক লাগাতে লাগাতে বলল -“সকালে লুচি খাবে?”- “চিড়ে দই এনে রেখেছি ওটাই মাখিও”-“কী সব শশানের খাবার তুলে এনেছ ঘরে৷ জানোই তো আমি ওসব খেতে পারি না৷”-” কালকে একদিন৷ প্লিজ৷ গজা, বেউড়া, হাড়ু, কাঞ্চা ওদেরও দিও৷”নমিতা ঘুরে চোখ লাল করে আছে৷ অর্ক বলল-“সময় কম আর কথা মাল ঢেলে শুনবো৷ ড্রয়ারের ভেতর একটা বড় ব্যাগ আছে কাল সকালে ওটা একবার খুলবে তো ৷”মুখ ভ্যাঙ্গিয়ে নমিতা বলল – “কী? গুপ্তধন? খুললে তো যত সব লোহা লক্ক……..”অর্ক হঠাৎ এমন করে বুকে জড়িয়ে ধরল নমিতা ভয় পেয়ে গেল রীতিমত৷ বিড়বিড় করে কতগুলো কথা বলতে লাগল-“মেয়েদের দেখে রেখো সবসময়৷ আমার সব ভুল ক্ষমা করে দিও৷ আমি শুধরে উঠতে পারলাম না বলে আমায় দোষী করো না গো৷ “নমিতা চুপ করে অর্কের বুকে চোখের জল ফেলছে৷ একটু স্বাভাবিক হয়ে অর্ক  দুটো ঘুমন্ত মেয়েকে খুব করে আদর করে নিল৷ মাথার কাছে বড় বড় দুটো বিলেতি চকলেটের প্যাকেট রাখলো৷ দরজা থেকে বেরিয়ে অর্ক আবারো নমিতাকে চুমু খেল কপালে৷ গালে হাত বুলিয়ে বলল-” যাচ্ছি”-“যাই বলতে নেই৷ বলতে হয় আসি৷ আর তুমি তো ভীমার দোকানে যাচ্ছ তাতে আমার এত হাঁকডাক কিসের?”-“কে জানে কী হয়”-অর্ক! নমিতা রেগে যায়৷ অর্ক অল্প অল্প গিয়ে বারবার ফিরে তাকায় নমিতার দিয়ে৷ 
অর্ক চলে যাওয়ার পর নমিতা ঘর গোছাতে থাকে একরাশ আনন্দ নিয়ে৷ তার ভালবাসার মানুষ আজ থেকে মুক্ত৷ নিজে নতনু পথে হাঁটবে৷ অন্যায় ছেড়ে স্বাভাবিক মানুষ হয়ে বাঁচবে৷ বিছানা গুছিয়ে যখন রান্নাঘরে যাবে তখন প্রায় ভোর হতে গেল৷ হঠাৎ কলিংবেলটা বেজে উঠলো৷  নমিতা দরজা খুলতে খুলতে বলতে লাগলো -” এতক্ষন সময় লাগে তোমার ব……..”একটু স্তব্ধ হয়ে যায় দরজার ওপাশে দেখে৷ পুলিশ! 
নমিতা বিশ্বাস করতে পারছে না কিছুতেই অর্ক নেই৷ রাত ১০টা থেকে থেকে যখন অর্ক রাত সাড়ে ৩টে অবধি ওর কাছেই ছিল তখন কী করে মারা যাবে সে!? পুলিশের ভাষ্য মতে কোর্ট সুনানীর পরই পুলিশ কস্টিডি থেকে পাওয়া যাইনি ওকে৷ তবে জিপিএস দিয়ে ভম্বল গ্যাং এর ডেরায় গতকাল রাত ১২টোয় ওর লাশ পাওয়া যায়৷ পোস্টমর্টমে বলছে ১০ নাগাদ খুন হয় অর্ক৷
সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের সময় নেই৷ অর্ক এখন ওর সামনে রক্ত মেখে শুয়ে আছে৷ নমিতা অর্কের ঠোঁটে হাত বোলাতে বোলাতে বলতে থাকে?- “কী চুমু খাবেনা?”অমনি হঠাৎ নমিতা দৌড় দিয়ে ওর ফ্ল্যাটে চলে গেল৷ টেবিলে গিয়ে দেখে দই চিড়ে৷ এবার ও পুরোনো ওয়ারড্রবের ড্রয়ারট খুলতে লাগলো৷ হ্যা সত্যিই একটা টাকায় ভর্তি ব্যাগ আছে ৷কিছুর আভাস পেয়ে নমিতা পেছন ফেরে দেখে৷ অর্ক!!-“তোকে গুছিয়ে দিলাম পাগলি৷ এগুলো দিয়ে তুই দিব্বি চলে যেতে পারবি৷”-“দুরে চলে যাস৷ এসিপি অরিন্দম তোকে একটা চাকরি দেবে৷ দুরে পোস্টিং নিস্৷ মেয়েদের দেখে রাখিস পাগলি৷” বলতে বলতে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল অর্ক৷ নমিতা শুধু বোবার মত চেয়ে রইল সেই জানালার দিকে৷

কলমে বর্ণীল মনীষা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here