কেমিস্ট্রি

0
1230

সুজাতার মাথা গরম সকাল থেকে ছেলের বউ বাবলির কান্ড দেখে। রোজ সকালে উঠে চা খেয়ে আগে স্নান করে পুজোটা সেরে ঘরের কাজে লাগেন। আজ উঠতে একটু দেরি হয়েছে, স্নান সেরে উপরে উঠে দেখেন ঠাকুর ঘর খোলা। অবাক হয়ে দেখেন বাবলি…. যাই হোক দেখে মনটা ভরলো কিন্তু তারপরেই দেখেন বাবলি বাসি নাইটিটা পড়েই পুজোর আসনে হাত দিয়েছে…. সর্বনাশ! 
চেঁচামেচি শুরু করে দেন সুজাতা, ওনার চিৎকার শুনে 
সবাই ছুটে আসে, সুজাতার স্বামী অসীম, ছেলে রীতেশ আর সব সময়ের কাজের লোক নীতু। ওনার বাক্যবানে বাবলি দিশেহারা, কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে যায়। রীতেশ আসতেই শুরু করে দেয় 
- তুমি বলো মাকে সাহায্য করো.. মন জয় করো। দেখলে তো….. উনি আমাকে ভালো করে বোঝাতে পারতেন, আমার মা নেই বাবার কাছে মানুষ, আমি কি এতো জানি? আমি ওনার মেয়ে হলে এমনি করতেন? দুদিন পর সন্ধ্যেতে আবার হৈচৈ। সুজাতা আজ বেগুনের তরকারি আর রুটি 
লাঞ্চ বক্সে দিয়েছিলেন, রীতেশ ঝাল ঝাল টমেটো, ধনেপাতা দিয়ে বেগুনের তরকারি খেতে ভালোবাসে। 
বাবলির বেগুন দুচোখের বিষ, অফিস থেকে ফিরে সুজাতাকে খুব করে শোনালো জেনে শুনে বাবলিকে বেগুনের তরকারি
 দিয়েছে। 
সুজাতাও ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কেঁদে স্বামীর কাছে নালিশ করলেন 
- তুমি বলো আমার দোষ, ছেলের বউ হয়ে শাশুড়িকে কেমন মুখ ঝামটা দিল আর রীতেশ ও কিছু বললো না। 
আবার দুদিন থমথমে পরিবেশ। 
সপ্তাহ খানেক বাদে দেখা গেলো সকালের চা হয় অসীম না হয় রীতেশ বানাচ্ছে। কিছুক্ষন পর এক মহিলা এসে হাজির রান্নার জন্য। সুজাতা হা হা করে উঠলেন ,
 ‘রান্নার লোক লাগবে না’…. 
অসীম বললেন ,
 ‘আহা করুক না এ খুব ভালো রাঁধুনী আমি খোঁজ নিয়েছি… তুমিই বা আর কতোদিন হাত পুড়িয়ে রাঁধবে?’

এখন সুজাতা স্বামী বা ছেলের হাতে বানানো চা খেয়ে নিশ্চিন্তে পুজো করেন। 
জলখাবার, অফিসের ভাত, লাঞ্চ দেবার চিন্তা নেই। বাবলি ও রান্নার মাসি কে দিয়ে নিজের পছন্দের খাবার বানিয়ে নেয়।
দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল, বাবলি কয়েকদিন আগেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিল। দু তিনদিন শ্বশুরবাড়ি কাটিয়ে বাপের বাড়ি যাবার আগে ইচ্ছে, এছাড়া দুজনেই কাজের চাপে বিয়ের পরই অফিস জয়েন করেছে হানিমুনটা ডিউ রয়ে গেছে এবার সেটাও সেরে ফেলার ইচ্ছে।

নবমীর দিন বাবলি বাবার কাছে গেল সঙ্গে রীতেশ। 
বাবা ওদের দেখে খুব খুশি হলেও অসুবিধায় পড়লেন। 
রান্নার লোক ছুটি নিয়েছে, বাবা একা জেঠুদের বাড়ি খাচ্ছিলেন এখন ওরা আসায় লোক বেড়ে গেল। জেঠিমার শরীর ভালো নেই, জামাইকে ভাল মন্দ রেঁধে খাওয়াবার ক্ষমতা ওনার নেই। তাই বাধ্য হয়ে বাবলিকে রান্না ঘরে ঢুকতে হলো। 
পাড়ার বন্ধু যারা এসেছে সব মা বাবা, ভাই বোনের সাথে ঠাকুর দেখতে ব্যস্ত। বাবলির বাবা তাস নিয়ে মেতে আছেন। বাবলির যেন খালি খালি লাগে এখন সবচেয়ে খারাপ লাগে, যখন দেখে পাড়ার মেয়েরা মায়ের সাথে ঠাকুর বরন করতে যাচ্ছে। 
বাবলি কার সাথে যাবে… আর ও তো জানেও না কেমন করে ঠাকুর বরন করতে হয় …কার কাছে শিখবে ও, চোখে জল আসে বাবলির। 
হঠাৎ মনে পড়ে ওর আর এক মা তো আছেন, তাড়াতাড়ি রীতেশকে বলে 
- ‘বাড়ি চলো।’ 
- ‘কেন আমাদের তো কাল ফেরার কথা?’ 
- ‘না…. এখনই চলো 
বাড়ি’ । এসে দেখে সুজাতা তৈরী হচ্ছেন ঠাকুর বরণ করতে যাবার জন্য। 
- ‘আমি ও যাবো মা।’ 
বলেই বাবলি তাড়াতাড়ি লাল ঢাকাইটা পড়ে নেয়, 
তারপর শাশুড়ির সাথে মন্ডপে যায়, একই থালা থেকে দুজনে বরন করে। 
সিঁদুরে মাখামাখি হয়ে শাশুড়ি বউ বাড়ি ফেরে 
দেখে অসীমের চোখ জুড়িয়ে যায়। ভগবানকে ধন্যবাদ দেন, যাক শাশুড়ি বউ, মা মেয়ে হতে পেরেছে। 
রাতে খেতে বসে রীতেশ বলে 
- বাবলি প্যাকিং করে নাও… পরশু তো বেরোব আমরা। 
- ‘হুম না…… ।’বাবলি বললো।
- ‘কেন না? 
- আমরা থাইল্যান্ড যাবো না, সবাই মিলে সিমলা যাবো।’ 
- ‘কেন? তোমার তো শখ থাইল্যান্ড হানিমুন করতে যাবার…. ‘
- ‘থাইল্যান্ড পরে যাবো, এখন 
আমরা বাবা মা কে নিয়ে সিমলা বেড়াতে যাবো।’ 
- ‘সে কি? 
-হ্যাঁ, মাকে ছাড়া যাবো কি করে? থাইল্যান্ড যাবার অনেক ফরমালিটি আছে তার থেকে সিমলা চলো।’ 
- ‘তা কি করে হয়?’ 
-‘খুব হয়।’ 
- ‘এ আবার কি কথা?’ 
সুজাতা বলেন। 
- ‘ঠিক কথা মা…. ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি….. এতোদিনে পেলাম, তোমাকে 
ছেড়ে যাবো না’। 
- ‘তোমাদের হানিমুন…. আমরা কেন যাবো?’ অসীম আপত্তি করলেন। 
- ‘সে জানি না, গেলে সবাই যাবো না হলে কেউ নয়’। 
- ‘কিন্তু থাইল্যান্ড যাবার টিকিট, হোটেল বুকিং, পয়সা সব যাবে।’ রীতেশ বলে। 
- ‘যাক সে টাকা আমি তোমাকে দিয়ে দেব। কাল সকালে তৎকালে টিকিট বুক করো পরশু যাবো আমরা।’
বলে উঠে চলে যায় বাবলি, সুজাতাও প্যাকিং করার জন্য খুশি খুশি নিজের ঘরে যান। 
অসীম রীতেশকে বললেন 
- ‘দেখলি… সব ঠিক হয়ে গেল তো… আমি জানি সুজাতা বাবলি দুজনেই ভাল মনের মানুষ কিন্তু কাজ নিয়ে 
দুজনে একে অপরের প্রতি বিরক্ত হচ্ছিল তাই কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়াই ওদের সম্পর্ক ভালো করার রাস্তা হিসেবে মনে হয়েছিল আমার। এখন দেখ দুজন দুজনকে কতো ভালোবাসছে।’ 
- ‘সত্যি বাবা ,you rock.
’বলে ওঠে রীতেশ।

 

লেখিকা পরিচিতি : জয়শ্রী দাস মিত্র ,আমি বহু বছর প্রবাসী, কিন্তু বাংলা আমার হৃদয়ের সাথে জুড়ে আছে আর বাংলা সাহিত্য ও। চেষ্টা করি মনের কথাকে শব্দের মালায় বাঁধতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here