বৌমা গরম চা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেই, মীনাদেবী বলে উঠলেন,
-“বৌমা, চায়ে চিনি এবার দু-চামচের জায়গায় এক-চামচ দিয়ো, বাজারের যা অবস্থা ! আর টুকুন কি এখনো ঘুমিয়ে, এবার একটু নড়াচড়া করতে বলো, আর কতদিন এভাবে চলবে !”
মুখ নিচু করে ঘাড় নাড়ে পৌলোমী, খুব শান্ত, ভদ্র, মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়লেও, মুখে রা নেই, ভীষণ চুপচাপ, তবে অসহ্য হয়ে গেলে আগের থেকে এখন কথা বলে ! বিয়ের পর তো প্রথম প্রথম মুখ দিয়ে কোনো কথাই বেরুতো না ! ঘরের বাইরে যেতেই মীনাদেবী একবার ডাকলেন,
-“বৌমা, তোমার বাপের বাড়ির কোনো খোঁজ খবর জানো ?”
খানিকটা চমকে গিয়ে শ্বাশুড়ির মুখের দিকে তাকায় পৌলোমী,
-“কেন, কি হয়েছে ?”
-“পেপারে দিয়েছে ওখানে মেট্রো রেলের কাজ চলছে, ওখানে তো খুব ঝামেলা হচ্ছে, বাড়ি ভেঙে পড়ছে, রাস্তা বসে যাচ্ছে, যত্ত সব কেলেঙ্কারি, তা তোমাদের তো ওখানে বাড়ি, তাই বলছিলাম, একবার খোঁজ নিলে হয় না !”
-“আমি ফোন করেছিলাম মা, ওনারা বললেন যে ঠিক আছেন, বিশেষ একটা অসুবিধা হচ্ছে না !”
মীনাদেবীর মনে হলো যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো, কিছুটা আস্বস্ত হবার পর জিজ্ঞেস করলেন,
-“ভালো করে খবর নিয়েছো তো বৌমা, ওনাদের কোনোকিছুর অসুবিধা হচ্ছে না তো ?”
-“নিয়েছি মা, আজ সকালেই মা ফোন করেছিল, বলছিলো তোর শ্বাশুড়ি মাকে বলিস, আমাদের জন্য যেন কোনোরকম দুশ্চিন্তা না করেন, আমরা ঠিক নিজেদের সামলে নোবো !”
* * *
তখন দুপুর হবে, বাড়ির সবাই খাওয়া দাওয়ার পর একটু ভাত ঘুম দেবার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছেন । বাইরের দরজায় বেল দিতেই, মীনাদেবী চিৎকার করে উঠলেন,
-“বৌমা, দেখোতো এই ভরদুপুরে আবার কে এলো বাড়িতে ?”
ওপর থেকেই বৌমার চিৎকার শুনে, চমকে উঠলেন মীনাদেবী,
-“মা, বাবা, ভাই, বোন সবাই এসেছে !”
মীনাদেবীর জ্বরটা যেন আবার ধুম করে ফিরে এলো, নিজের মনেই বলে উঠলেন,
-“সর্বনাশ, প্রায় তো নিশ্চিন্ত হয়ে গেছিলাম, আবার কেন ?”
উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন,
-“বৌমা ! বলে দাও, চাল শেষ, ডাল তো পাওয়াই যাচ্ছে না, আটায় পোকা, তোমার শ্বশুর মশাইয়ের পেনশনটা আগের মাস থেকে ব্যাংকে ঠিকঠাক পড়ছে না । চার আর চারে আটটা পেট এখন চলবে কেমন করে ?”
প্রায় মিনিট পাঁচেক পর, বৌমা ঘরে ঢুকতেই, মীনাদেবী বৌমার চোখেমুখে প্রসন্নতার ছাপ দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
-“কি বৌমা, বলে দিয়েছো, ওনারা কি বললেন ? চলে গেলেন নাকি ?”
বৌমার মুচকি হাসিতে উত্তর এলো,
-“হ্যাঁ মা, বলে দিয়েছি !”
মীনাদেবী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-“ওনারা কি বললেন ?”
বৌমা উত্তর দিলো,
-“ওনারা বললেন, মীনাটা ছোটবেলা থেকেই একটু কুচুটে ছিল, কিন্তু এখন এতো শয়তান আর ছোটোলোক হয়ে গেছে তা তো জানতাম না, ভাগ্গিস এসেছিলাম, ছি: !”
মীনাদেবী, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-“সে কি বৌমা, ওনারা আমার নাম ধরে ডাকলেন ! এতো কথা বললেন !”
বৌমা হেসে উত্তর দিলো,
-“আসলে নিজের পেটের সন্তান তো, তাই বোধহয় ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পেরেছেন ! তবে মিষ্টির প্যাকেটটা দিয়ে আরো বলে গেছেন, আমরা থাকতে নোই, নেমন্তন্ন করতে এসেছিলাম, সামনের সপ্তাহে বাড়িতে পুজো আছে ! আর, ওকে বলে দিও, শেষ বয়সে একটু ভদ্র সভ্য হতে, নিজেদের বাবা-মাকে যে এভাবে বলে, সে অন্য লোকের সাথে কিভাবে মেলামেশা করে !”
লেখক পরিচিতি: জয়ন্ত ঘোষ
বিঃ দ্রঃ লেখাটি জানুয়ারি,২০২০, “মাসিক জনপ্রিয় লেখনী” প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত।
Warning: Attempt to read property "roles" on bool in /home3/weavesdi/public_html/www.monomousumi.com/bengali/wp-content/themes/morenews/inc/template-functions.php on line 941