আমি অনিমেষ। বেশ কয়েক দিন ধরে ভাবছি একটা মোবাইল কিনব। সেদিন বাসে করে অফিসে যাওয়ার সময় পকেট থেকে মোবাইলটা চুরি গেল। কত তথ্য ছিল তার মধ্যে কিন্তু কি আর করা যাবে যা গেছে তা তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না। আজকাল বাস গাড়িতে এরকম চুরি প্রায়ই হয় বলে শোনা যায়। কিন্তু এখন যে একটা নতুন মোবাইল কিনব তার টাকাও নেই আমার কাছে।
কয়েকজন বন্ধুকে বলে রাখলাম যদি কেউ সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল বিক্রি করতে চায় তবে যেন সে আমায় খবর দেয়।
বেশ কিছুদিন পর আমার এক অফিসের বন্ধু তুষার আমায় খবর দেয় যে তার কাছে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কিপ্যাড মোবাইল আছে, মাত্র ২০০০ টাকায় বিক্রি করতে চায়। আমি ওর কথায় রাজী হয়ে গেলাম। তার পরের দিন অফিসে গিয়ে ওর কাছ থেকে মোবাইলটা কিনে নিলাম। কালো রংয়ের কিপ্যাড মোবাইল, ভালো কাজ করে।
বেশ কয়েক দিন কেটে গেল তারপর শুরু হলো ওই মোবাইলটাকে ঘিরে কিছু অলৌকিক ঘটনা। আমি বাড়িতে একা আলাদা একটা ঘরে থাকি আর মা-বাবা পাশের একটি ঘরে থাকে। একদিন রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে আমি আমার ঘরের দরজায় খিল দিয়ে মোবাইলটা খাটের পাশের টেবিলের ওপর রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মোবাইলে সকাল ছয়টার অ্যালার্ম দিয়ে রাখি, যাতে সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে পারি- অফিসে যেতে যাতে দেরি না হয়। আমি বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম হঠাৎ মোবাইলের অ্যালার্ম বেজে উঠলো। ধরমরিয়ে উঠলাম ঘুম থেকে। দেখি রাত দুটো বাজে, আমি তো সকাল ছয়টার অ্যালার্ম দিয়েছিলাম তাহলে রাত দুটোয় অ্যালার্ম কি করে বাজলো? মোবাইলটা হাতে নিয়ে সবে দেখতে গেছি এমন সময় মোবাইলের রিং বেজে উঠল। অচেনা নাম্বার- এত রাতে কে ফোন করছে- কে জানে?
কলটা রিসিভ করলাম- শুনলাম ওপার থেকে একটা পুরুষের আর্তনাদ, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে- (আর বলছে আমায় এখান থেকে বের করো)। আমি জিজ্ঞাসা করলাম তাকে- কে বলছেন? কেন এইভাবে কাঁদছেন? আপনি কি কোন সমস্যায় পড়েছেন?
কিন্তু এর কোন উত্তর আমি পেলাম না, হঠাৎ কলটা কেটে গেলো। আমি আবার ওই নাম্বারে কল করলাম কিন্তু শুনলাম (এই নাম্বারের কোন অস্তিত্ব নেই)।
ভাবলাম আগামীকাল সকালে এই নাম্বারে আরেকবার কল করে দেখব। কিন্তু সকালে উঠে দেখি মোবাইলে গতকাল রাতের সেই নম্বরটাই নেই। সেটি কল লিস্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। এটা কি করে সম্ভব! খুব অবাক হলাম আমি।
আজকে সারাদিন ঠিকঠাক গেল। রাত দুটোর সময় আবার সেই আননোন নাম্বারে কল এল। আজ কান্না ও আগের মতোই কথা শুনতে পেলাম। এখন প্রত্যেকদিন এই একই জিনিস ঘটে। প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে এইভাবে।
আজকে সিদ্ধান্ত নিলাম রাতে জেগে থাকবো আর এই রহস্যের সমাধান খুঁজবো। রাতে ঘুমে চোখ ঢলে আসছে তাও জেগে আছি। ঠিক রাত দুটোই সেই নাম্বারে আবার কল এল। আমি কলটা রিসিভ করলাম আজকেও সেই একই কথা শুনছি। আমি আজকে ফোনের ওপারের জনকে বললাম- কি হয়েছে আপনার? আমি কিভাবে আপনার সাহায্য করতে পারি? সে উত্তরে যা বলল তাতে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠল। সে বলল- (আমি খুব যন্ত্রণায় আছি, আমায় এখান থেকে উদ্ধার করো। আমার শরীর পচে গেছে, আমি মাটির তলায় চাপা পড়ে রয়েছি)।
আমি ভয়ে কলটা কেটে দিলাম।
ভাবলাম আগামীকালই তুষারকে জিজ্ঞাসা করব মোবাইলটা সে কোথা থেকে কিনেছে।
পরের দিন অফিসে গিয়ে তুষারকে সব কথা জানালাম আর তাকে প্রশ্ন করলাম যে- সে কোথা থেকে মোবাইলটা কিনেছিল।
তুষার বলল-আমিই মোবাইলটা কিনিনি, এটা আমারও মোবাইল নয়। আমি সেদিন পার্কে মর্নিং ওয়ার্ক করতে গিয়েছিলাম। সেখানে পার্কের একটা কোনের দিকে মোবাইলটা পড়ে থাকতে দেখি। সেখানে কাউকে বিচলিত বা কিছু খুঁজতে না দেখে মোবাইলটা আমি নিজের কাছে রাখি। আর সেই সময় তুই একটা সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কিনতে চাইছিলি তাই কিছু টাকা নিয়ে তোকে এই মোবাইলটা বিক্রি করে দিলাম।
আমি এই কথা শুনে অবাক হলাম এবং যেখান থেকে তুষার এই মোবাইলটা পেয়েছে সেখানে আমাকে নিয়ে যেতে বললাম। সেদিন বিকালে বাড়ি ফেরার সময় তুষার আমায় নিয়ে গেল সেই পার্কে কিন্তু তার বাড়ি ফেরার তাড়া থাকায় সে বাড়ি ফিরে গেল তাড়াতাড়ি।
সন্ধ্যে হয়ে গেছে আমি সেই পার্কে একা। পার্কটা বেশ বড়ো, পার্কের মধ্যে অনেক ঘন গাছপালা রয়েছে। পার্কের পিছনদিকে একটা কোনের কাছে আমি দাঁড়িয়ে ভাবছি নিশ্চই এখানে কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। আমি পার্কটার চারিদিকে ঘুরে দেখলাম কিন্তু কিছুই রহস্যজনক খুঁজে পেলাম না। পার্কের সেই কোনটায় দাঁড়িয়ে বাড়ি ফেরার কথা ভাবছি এমন সময় কে যেন আমার ডান পা টেনে ধরল। আমি ভয়ে পিছন ফিরে দেখি একটা পচা গলা হাত মাটির তলা থেকে উঠে এসে আমার পা চেপে ধরেছে। আমি ভয়ে আর্তনাদ করতে চাইলাম কিন্তু গলা থেকে আওয়াজ বেরোলো না। এমন সময় কানে ভেসে এল রাত দুটোর সময় আসা- কলের ওপারে থেকে আসা সেই কণ্ঠস্বর। সে একই কথা বলছে যে- (আমায় এখান থেকে বের করো)।
এর পরেই আমার পায়ের চেপে ধরা হাতটা হটাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি এক প্রকার ছুটে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরলাম।
মনে মনে অনেক প্রশ্ন জমা হতে শুরু করলো। এই রহস্যের সমাধান আমায় করতেই হবে। সেদিন রাতেই আমি পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিলাম। আমার সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইলটা পুলিশের হেফাজতে রেখে এসেছি। আমার কথায় পুলিশ প্রথমে বিশ্বাস করছিল না। তারপর আমার অনুরোধে তারা পার্কের সেই জায়গাটা খুঁড়ে দেখে এবং একটি অর্ধ গলিত যুবকের মৃতদেহ খুঁজে পায়।
পরে পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে- (একদিন গভীর রাতে সেই যুবকের এক বন্ধু তার সাথে কোন কারনে বিরোধের ফলে তাকে হত্যা করে এবং সেই যুবকের দেহ পার্কের সেই জায়গায় পুঁতে রেখেছিল মাটির তলায়)। পরে সেই হত্যাকারী ধরা পড়েছে এবং আদালত তাকে উচিত শাস্তি দিয়েছে।
এই রহস্যের সমাধান হল। (হয়ত আমার কাছে সেই যুবকদের আত্মা সাহায্য চেয়েছিল) কিন্তু সেই মোবাইলটা মাটির তলা থেকে কিভাবে উপরে উঠে এসেছিল? এই প্রশ্নটা এখনো আমার মনে উঁকি দেয়।

কলমে মৌসুমী রায়, হরিদেবপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
লেখার শুরু ২০২০ সাল থেকে। পূর্বে কিছু গল্প ও কবিতা কয়েকটি ই-পত্রিকায় ও প্রিন্টেড পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে.
Warning: Attempt to read property "roles" on bool in /home3/weavesdi/public_html/www.monomousumi.com/bengali/wp-content/themes/morenews/inc/template-functions.php on line 941