সকাল সাতটা বেজে গেছে।“তর মায়ের অহনো ঘুম ভাঙলো না, দেখ্ কী একখান মাইয়া আনসে ঘরে বাপি।” শাশুড়ির বকবকানিতে ঘুম ভেঙে যায় সুতপার।এক লাফে বিছানা ছাড়ে। ঈশশ্, কাল রাতে ঘুমের ওষুধ খাওয়াটাই কাল হয়েছে। তোজোকে দুবার ঝাঁকুনি দিয়ে উঠতে বলে,চায়ের জল আর ওদিকে কম আঁচে দুধ বসিয়ে ছুটে বাথরুমে যায় সুতপা। তিন মিনিটে ফিরে আসে। দুধটা দেখতে দেখতেই দাঁত মাজে। চায়ের জলের থেকে দুকাপ গরম জল তুলে মধু মিশিয়ে , বাকি জলটায় চাপাতা ভিজিয়ে দেয়।মুখ ধুয়ে আসে। শাশুড়িকে মধু-গরমজলটা দেয়।ওনার বিড়বিড় চলছে। ওসবে অবশ্য এখন কান দেয় না সুতপা। অভ্যেস হয়ে গেছে। কানে যাতে না ঢোকে এফ.এম এ গান চালিয়ে দেয়। ‘মায়ের বাপি’ ঘর থেকে চেঁচিয়ে ওঠে।“উফ্ একটু ঘুমোতে দেবে না নাকি? মাথাটা সকাল সকাল ধরে যাবে।” আজকাল এসব কথারও উত্তর দেয়না সুতপা।দরজাটা টেনে দিয়ে আসে।ছেলের জন্য চাউমিন বানাতে বানাতে গুনগুন করতে করতে দুটো সেলফি ও তুলে ফেলে।সেলফি পাঠিয়ে দেয় সুদীপ্তকে। অনেকক্ষণ ঘ্যান ঘ্যান করছিল। “ভাগ শালা, খুশি থাক”। সুদীপ্ত ওর এক ফেবু ফ্রেন্ড। ব্যাস, কোনো সম্পর্ক নেই। ছেলেগুলো ছুকছুক করলে ভালই লাগে সুতপার। কী আর আছে জীবনে। চায়ের ডেচকির ঢাকনাটা খুলতেই ভাপে চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে যায়।কাচ মুছে নেয় নাইটিতে।আরেকবার গিয়ে ছেলেকে তাড়া দেয়। “ওই ই কর, ঘুম থেকে উঠে ফোন নিয়ে বসে থাক। আছাড় মেরে দেবো কোন একদিন, দেখবি। সেদিন বুঝবি।” তোজো অগত্যা স্নানে যায়।“দয়া করে একটু ভালো করে চান করিস, উফ্ গায়ে যা বোঁটকা গন্ধ” !শাশুড়ির টিপ্পনী আসে, “সবসময় ছেলেডার পিছনে পইড়্যা থাকো ক্যান? অরে ও একটু শান্তি দিবানা?” সুতপা গানের ভলিউম বাড়ায়। নিজেও গাইতে থাকে আর ভাত বসাতে থাকে।“কাশ অ্যায়সা হো তেরে কদমো পে চুনকে মনজিল চলে”।
“বেহায়া মাইয়্যা ছেলে একডা”। ভাত আর ডাল বসিয়ে তোজোর টিফিন, তোজোর এখনকার খেয়ে যাওয়ার ব্রেড টোস্ট, পোচ,জলের বোতল রেখে সুতপা ইউটিউবে মিউজিক চালিয়ে জুম্বা নাচতে শুরু করে। বডিটাকে শেপে আনতে হবে। এরকম ঢ্যাপসা থাকলে চলবেনা। শাশুড়ি চেঁচাতে থাকেন, “বাপের জন্মে দেহি নাই, বাড়ির বৌ সক্কালবেলা নাইচ্যা মরে।মরণ হয় না আমার। সংসারে থাইক্যা আর হইব কি?” সুতপা কোনদিকে তাকায় না, নেচে যায়। নাচার মাঝখানেই তোজো টিফিন নিয়ে টেবিলে রাখা হেলথ ড্রিঙ্ক খেয়ে স্কুলে বেরিয়ে যায়। নীচে পুল কার আসে। নাচের মধ্যেই ভাত নামিয়ে ফ্যান ঝরাতে দিয়ে দেয় সুতপা গিয়ে। এরমধ্যে সুমন একবার বাথরুমে যেতে গিয়ে ব্যঙ্গের হাসি হাসে।সুতপা তাকায় না।ভাত ডাল হয়ে গেছে।তরকারি ঠিকে ঝি কেটে দিয়ে যায়। তাড়াতাড়ি বাঁধাকপি একদিকে বসিয়ে, অন্যদিকে মাছ বসিয়ে দেয়। ওর মধ্যে আটা মেখে ফেলে সুমনের আর শাশুড়ির টিফিনের। সুমনকে এক ফাঁকে চা দিয়ে আসে। সুমনকে ধাক্কা দিয়ে বলে “আর গরম করে দিতে বললে কিন্তু গায়ে গরম চা ঢেলে দিতে পারি, সুতরাং খেয়ে নাও।” সুমনের টিফিন টিফিন বক্সে ভরে দিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয় সুতপা। শাশুড়িকে একটা রুটি, তরকারি, আর একটা ডিমসেদ্ধ দিয়ে আসে। আবার একঘণ্টা পরে শসা দেবে একটা। সুমন স্নানে যায়। এসে খেতে বসে “ধুর, বাঁধাকপি করেছ কেন?” “যা সব্জি এনে রাখবে তাই তো হবে। গতকাল তো বললে আলু-পটলের তরকারি নাকি আর খাওয়া যায় না।” “আমার এসব ভালো লাগে না।” “রোজ চিকেন খাও তবে।” “একটু ভালো করে যদি রাঁধতে তবু” ! “রাঁধুনি রাখো”। “তোমার সঙ্গে কথায় কেউ পারবে?” “চেষ্টা করো কেন?” বলে সুতপা গিয়ে ঘরে বিছানা গোছাতে থাকে। ওয়াশিং মেশিনের জামাকাপড়গুলো ছাতে যখন মেলতে যায় তখন চলে যায় সুমন অফিসে। “মা আসছি” শুনতে পায় ও ছাদ থেকে। ও আর কে? এবার বেশ কিছুক্ষণ ফাঁকা।,প্রথমে ফেসবুকটা খোলে সুতপা।সকালে ছবিটা পাঠিয়েছিল ঐ মর্কট রাজ টাকে, মালটা লিখেছে “উফ্ কী সেক্সি!” নিজে নিজেই হাসে সুতপা। ‘শালা, সবাইকে এরা ছিপ ফেলে আর সেক্সি বলে। তো বলছিস বল, আমার জীবনে আর কী আছে? শুনতে ভালোই লাগবে। ‘বান্ধবীরা একটা গ্রুপে অ্যাড করেছে। এটা নাকি পরকীয়া গ্রুপ। লোকের ইন্ট্রো পড়ে পড়ে বেশ খানিকক্ষণ হাসলো সুতপা। শাশুড়িকে শসা কেটে দিয়ে এলো। একটা শাড়ি অ্যাড টু কার্ট করে রাখলো, পরে সুমনের থেকে টাকা হাতাতে পারলে নেবে , মৌসুমী সেদিন কী ভালো একটা কানের দুল পরেছিল। ওই বুটিকের পেজে এ সব দেখে এসেছে। সুতপা, এবার চট্ করে স্নানটা করে পুজোটা দিয়ে ফেলতে হবে। শাশুড়ি আরেকটা বাথরুমে স্নান করতে যাওয়ার আগে,গরম জল বসিয়ে দেয় সুতপা। ঠান্ডাজলে ওনার স্নান করলেই অসুবিধা । ওনাকে জলটা দিয়ে নিজে স্নানে ঢোকে ও। গায়ে গতমাসে কেনা চকোলেট বডি স্ক্রাব ঘষতে থাকে।এমন সময় বাথরুমের তাকে রাখা ফোনটায় টুং করে মেসেজ আসে, হাতটা মুছে দেখে সৌভিক,
“কী করছিস রে?” “স্নান” ।“তাহলে তো দেখতে হয়” “বোকা…. স্নান শেষ হলে তোকে নেমন্তন্ন করব দেখতে। এখন ফোন ভিজে যাবে।” স্নান সেরে জামাকাপড় পরে, বাথরুমের আয়নায় লাগানো লাল টিপটা কপালে লাগিয়ে সৌভিক কে ছবি পাঠায় ও। “যাহ্ শালা, নাকের বদলে নরুণ পেলাম।” “যা পেলি, তাই তোর বাপের ভাগ্য, কলেজ লাইফ থেকে জ্বালাচ্ছিস। এখন ভাগ।” এবারে পুজো দিয়ে সিডি প্লেয়ারে গান চালিয়ে খবরের কাগজ নিয়ে বসে সুতপা । আরে দারুণ অফার দিচ্ছে, ইন্ডাকশনটা কিনে নিলে মায়ের, তোজোর জল গরম করতে খুব সুবিধে হত।
উফ, রাইস কুকারে তো দারুণ অফার, কবে থেকে একটা রাইস কুকারের শখ। ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয় সুমনকে অফারগুলো, তারপর টেবিল গোছায়, ফুলদানির পুরোন ফুল ফেলে,তারপর সৌরভ গাঙ্গুলির ছবিতে চুমু খায়। দাদা বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েছে। “সবার তুমি দাদা হও, আমার নও, বুঝলে!!” এক গাল হাসে। তারপর ভাবতে বসে, “এখনো কি আমার চাকরি করার বয়স আছে?চল্লিশই তো” নাহ্ দু-তিনটে গেছিল পেপার দেখে চুপিচুপি, সব ইনসিওরেন্স এজেন্ট। তোজো সেদিন বলছিল “Dont tell me, তুমি আমার জন্য sacrifice করেছ, তোমার মধ্যে সেরকম কোন ট্যালেন্ট ছিলনা তাই তুমি তাকে utilise করতে পারোনি।” নাহ্ কাঁদেনি সুতপা। খুঁজেছিল কাজ। জুতসই কিছু এত বছর পরে নতুন করে পাচ্ছে না। অনলাইন শাড়ির ব্যাবসা করলে কেমন হয়?ওটা তো অনেকেই করে আজকাল।কিন্তু রিটার্ন-ফিটার্ন নিয়ে যদি সমস্যা হয়? শাড়িতে যদি কোয়ালিটি খারাপ হয়,কে দায়িত্ব নেবে?, ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে জিজ্ঞেস করেছিল সুমনকে, তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে সুমন বলেছিল “তুমি করবে ব্যবসা?একসাথে এক হাজার টাকা গুনতে জানো? যত্তসব! যেন এরকম কোন হুজুগ না দেখি এ বাড়িতে। তোমার কিসের অভাব? বাজারে নামলে এত সুখ ঘুচে যাবে। ” সুমনের মেসেজ এলো, “অফার পাঠিয়েছ কেন? টাকা কি গাছে ফলে? দু-পয়সা তো রোজগার করোনা। শুধু খরচার তাল। ফালতু।” মেসেজটার দিকে বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল সুতপার। ও ডিলিট করে দিল। যা কিছু অসুবিধা দেয় , ও সরিয়ে দেয় আজকাল। সন্ধেবেলা তোজো বাড়ি ফিরলে ওকে টিফিনে লুচি আলুভাজা বানিয়ে দেয় সুতপা। “লুচি-আলুভাজা খাব? ধুর।” বলে বেরিয়ে যায় বইয়ের ব্যাগ হাতে, টিউশানে চলে যায়। সুতপা চুপচাপ ওই লুচি আলুভাজাটা খেয়ে নেয়। তারপর ম্যাগাজিন পরতে বসে।
দুদিন পরে তোজো স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই আছড়ে ছুঁড়ে ফেলল ব্যাগ। “কী হল?, এটা আবার কী অসভ্যতা?”
“অসভ্যতা তো তুমি করেছ। লজ্জা করেনা?।”
“কেন? কী করেছি?” “আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছ? রেন্ডি মেয়েছেলে একটা”
“এক চড়ে দাঁত ফেলে দেব তোর। সামলে কথা বলবি।” “দেখো, কী করে বেড়াচ্ছ তুমি। এই ছবি তুমি পাঠিয়েছ দ্রোণ দা কে, ও হল সুপ্রতিমের কাজিন। দ্রোণদা, সুপ্রাতিমের দাদাকে পাঠিয়েছে ও সুপ্রতিমকে পাঠিয়েছে সুপ্রতিম আমাকে পাঠিয়েছে।ছিঃ ছিঃ”
“দেখি”, দেখল স্ক্রিণ জুড়ে সুতপার একটা ব্রা পরা ছবি।
“এই ছবি আমি পাঠাইনি রে।” “মিথ্যে কথা বলবেনা, লজ্জা করল না একবারও বুড়ো বয়সে চব্বিশের ছেলেকে এসব পাঠাচ্ছ?”
“বললাম তো এটা আমি পাঠাইনি, এটা ফটোশপ, আমি নিশ্চিত।”
“ধরা পড়লে সবাই সতী হয়ে যায়, ছেনালি করতে লজ্জা করল না?”
“তোর মুখের ভাষা এত জঘন্য হল কবে থেকে? সবে তো ক্লাস এইট!”
“আমাকে ভদ্রতা শেখাতে এসো না। নিজে একটু ভদ্রলোকের বৌ-এর মতো আচরণ করো, আজ আসুক বাবা।”
“খাবি তো?” “না” “ও”, সুতপা ফ্রিজে তুলে রাখে খাবার, তারপর গা ধুতে চলে যায়। বাড়ি থমথম করছে। সুতপা ম্যাগাজিন ওল্টাচ্ছে। সুমন বাড়ি ফিরে খাবার টেবিল শুদ্ধু উল্টে দেয়। সুতপা ঘর থেকে উঠে বারান্দায় চলে যায়।
“এই যে , বারান্দায় গেলে পার পেয়ে যাবে ভেবেছ?”
“পার পাওয়ার কিচ্ছু নেই। আমি যা করিইনি তার জন্য আমি খামোখা লজ্জিত হতে যাব কেন?”
“তোমার নির্লজ্জতা দেখে অবাক হচ্ছি।”
“তোমাদের আচরণ দেখে লজ্জা পাচ্ছি আমিও।” “বিচ্”, বলে বেরিয়ে যায় সুমন।
সুতপা দু-তিনটে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
আজ সকাল থেকে শাশুড়ি শুরু করেছে “ওর বাড় বাড়ন্ত দেইখ্যাই বুঝছি, কিসু উল্ডাপাল্ডা করতে আসে, এই বৌ-এর জন্য মুখ দেখাইবার জো নাই কারুর কাসে।”
সবাই বলেছে সুতপার হাতে খাবে না। সুতপা চুপচাপ নিজের খাবার খেয়ে, বাকি খাবার ফ্রিজে তুলে দিয়েছে। রাতে ওটাই খাবে। ওর এই নির্লিপ্ত ভাবটায় মাথায় আগুন ধরে যায় সুমনের। ঠাস করে একটা চড় মারে সুতপার গালে। সুতপার চোখে আগুন, “আরেকবার যদি গায়ে হাত তোল আই উইল মেক সিওর যে তুমি জেলের পিছনে আজকের রাতটা কাটাও।”
সুমন বেরিয়ে যায়। সুতপা মন দিয়ে ফেসবুকে কিছু চ্যাট করে। তোজো দেখতে থাকে মায়ের কীর্তিকলাপ। দুদিন ওদের বাড়িতে হোম-ডেলিভারি হয়েছে খাবার। আর সুতপা নিজেরটা রান্না করে খেয়েছে, ম্যাগাজিন পড়েছে, গান শুনেছে।
তৃতীয় দিন খবরের কাগজে আর অনলাইন নিউজ পোর্টালে তোজো দেখল, সুমন দেখল, দ্রোণ অ্যারেস্টেড। ফোটোশপ করে সুতপার ও অন্য মহিলাদের ছবি বিকৃত করে ব্ল্যাকমেল করার জন্য।
দুজনেই হতভম্ব। কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা। তোজোর খুব খারাপ লাগছে। মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। বড় খারাপ কথা বলা হয়ে গেছে। আসলে বন্ধুরা এত খিল্লি করছিল। বন্ধুদের গ্রুপে নিউজটা পোস্ট করে ও প্রথমে। সুতপার ফ্রেন্ডলিস্টে ছিল পুলিশ কমিশনারের পি.এ.; ছিল দ্রোণের এলাকার লোকাল থানার ওসি ও। তারাও মধুর মধুর মেসেজ লিখে পাঠায়। অন্য সময় পাত্তা দিত না সুতপা, একটা দুটো সাধারণ উত্তর দিয়ে ছেড়ে দিত। এই দুদিন ও লিখেছে “আমাকে এত ভালোবাসো , আর আমার সঙ্গে এত বড় একটা অন্যায় হল, কিছুই করবেনা তুমি? এই ভালোবাসো? আমার তো মরে যেতে ইচ্ছে করছে…” ইত্যাদি। ফলাফল দ্রোণের দ্রুত গ্রেপ্তার।একে বলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা।
সন্ধে হয়েছে। বারান্দায় উদাস দাঁড়িয়ে রয়েছে সুতপা। তোজো আসতে আসতে এসে দাড়ায়। “স্যরি মা, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার তোমাকে বিশ্বাস করা উচিৎ ছিল। তুমি যে এই দুদিন এত কী করে সহ্য করলে?কষ্ট হল না?”চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বারান্দার বাইরের একফালি আকাশের দিকে তাকিয়ে সুতপা বলে,“মনে রাখিস তোজো, আমি হাউজওয়াইফ, সতের বছরের সহ্য ক্ষমতা আমাকে অক্ষয় করেছে। এটাই আমার শক্তি।”

কলমে মৌমিতা ঘোষ
Warning: Attempt to read property "roles" on bool in /home3/weavesdi/public_html/www.monomousumi.com/bengali/wp-content/themes/morenews/inc/template-functions.php on line 941